সব
facebook apsnews24.com
নিরাপদ খাদ্য এবং ভোক্তা অধিকার আইন জেনে রাখুন - APSNews24.Com

নিরাপদ খাদ্য এবং ভোক্তা অধিকার আইন জেনে রাখুন

নিরাপদ খাদ্য এবং ভোক্তা অধিকার আইন জেনে রাখুন

মো. তাজুল ইসলাম

নাগরিকের মৌলিক মানবাধিকার হিসাবে জীবন ধারণের জন্য খাদ্যের সংস্থান করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। রাষ্ট্রকে নাগরিকদের নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা দিতে হয়। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো তাই করে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO)বলছে “খাদ্য নিরাপত্তা হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে পৃথিবীর সব স্থানের সকল মানুষের সুস্বাস্থ্যে নিশ্চিতে পর্যাপ্ত প্রয়োজনীয় পছন্দের খাবার পাওয়ার দৈহিক ও আর্থিক সুযোগ সৃষ্টি করা।” ভেজালমুক্ত নিরাপদ খাদ্যগ্রহণ ‍সুস্বাস্থ্যের জন্য অতীব জরুরী তাই এ বিষয়ে কি আইন রয়েছে আমাদের দেশে আসুন সেই আইনগুলো খুব সংক্ষেপে জেনে নিই।

নিরাপদ খাদ্য নিয়ে অতীতে দেশের জনমানুষকে খুব একটা চিন্তা করতে হতো না। তার কারণ ব্যবসায়ীরা নৈতিকতা, নীতিজ্ঞান ও মূল্যবোধে উজ্জীবিত ছিল। বিবেক তাড়িত হয়ে বেআইনি ও অবৈধ ভাবে ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফা লাভের আশা করতেন না। বিগত দু’তিন দশকের আগে পরে আমাদের দেশের একশ্রেণীর ব্যবসায়ীদের মধ্যে অধিক মুনাফা লাভের প্রবণতা দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, কাপড়ের রং খাদ্যে বা পানীয়ের মধ্যে ব্যবহার, মাছ ও ফল দ্রুত না পঁচতে রাসায়নিকের ব্যবহার ইত্যাদি।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) বলছে খাদ্য নিরাপত্তার ৪টি পিলার বা স্তম্ভ আছে যথা- সহজলভ্যতা (availability), প্রবেশাধিকার (access), উপযোগিতা (utilization) ও স্থিতিশীলতা ( stability। বাংলাদেশে শুধু নয় সারা বিশ্বে নিরাপদ খাদ্য ভোক্তার অধিকার হিসাবে রাষ্ট্র নিশ্চিত করবে।

নিরাপদ খাদ্য ভোক্তার অধিকার বলে গণ্য হয়। পৃথিবীর প্রতিটি দেশ নিরাপদ খাদ্যকে ভোক্তার অধিকার হিসেবে নেয় এবং এর ব্যত্যয় সেসব দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ বিবেচিত হয়।

এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশও ব্যতিক্রম নয়। আমাদের দেশে ২০০৯ সালে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন প্রণীত হয় এবং নিরাপদ খাদ্যের জন্য যখন মানুষ দিশেহারা তখন খাদ্যে ভেজাল রোধ সংক্রান্ত সব আইন ও অধ্যাদেশ পর্যালোচনা করে ‘দ্য পিওর ফুড অর্ডিন্যান্স ১৯৫৯’- রহিত করে ‘নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩’ প্রণীত হয়।

আর্ন্তজাতিক মানদন্ডে ও আমাদের সংবিধান মতে সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার ও সংসদ পিওর ফুড এ্যাক্ট ২০১৩ ও পিওর ফুড বিধিমালা ২০১৪ (the Pure Food Act, 2013 (PFA) followed by Pure Food Rule, 2014) প্রণয়ন করেছে। এ আইন অনুযায়ী, নিরাপদ খাদ্যব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত কোনো ব্যক্তি বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কোনো সদস্য কোনো অপরাধ বা ক্ষতি সংঘটন বা সংঘটনের প্রস্তুতি গ্রহণ বা সংঘটনে সহায়তা সংক্রান্ত কোনো ঘটনার বিষয়ে কেউ ভিডিও বা স্থিরচিত্র ধারণ বা গ্রহণ করলে বা কোনো কথাবার্তা বা আলাপ-আলোচনা রেকর্ড করলে ওই ভিডিও, স্থিরচিত্র, অডিও ওই অপরাধ বা ক্ষতিসংশ্লিষ্ট মামলা বিচারের সময় সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে।

নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ (২০১৩ সানের ৪৩ নং আইন) এর ৯০টি ধারা, ১৩ টি অধ্যায়, ৩৩ টি খাদ্য ভেজাল ও খাদ্য সংক্রান্ত বিষয়ক সংজ্ঞা এবং নিরাপদ খাদ্য বিধিমালা ২০১৪ প্রণয়ন করা হয়েছে।নিরাপদ খাদ্য আইনে নিরাপদ খাদ্য বলতে প্রত্যাশিত ব্যবহার ও উপযোগিতা অনুযায়ী মানুষের জন্য বিশুদ্ধ ও স্বাস্থ্যসম্মত আহার্যকে বুঝানো হয়েছে।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ বা নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩ এ ‘ভেজাল’ শব্দটিকে সংজ্ঞায়িত না করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এ বলা হয়েছে ‘ভেজাল’ অর্থ পিউর ফুড অর্ডিন্যান্স, ১৯৫৯ এর ধারা ৩(১) এ সংজ্ঞায়িত Adulteration এবং স্পেশাল পাওয়ারস অ্যাক্ট, ১৯৭৪ এর ধারা ২৫সি বা অন্য কোনো আইনে উল্লিখিত Adulteration বা ভেজাল।

‘ভোক্তা’ বলতে সাধারণ অর্থে আমরা যেকোনো পণ্যের ক্রেতা বা গ্রহীতাকে বুঝি। কিন্তু ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এ ভোক্তাকে সুনির্দিষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। আইনটিতে বলা হয়েছে, ভোক্তা অর্থ এমন কোনো ব্যক্তি যিনি (ক) পুনঃবিক্রয় ও বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য ব্যতীত- (অ) মূল্য পরিশোধে বা মূল্য পরিশোধের প্রতিশ্রুতিতে কোনো পণ্য ক্রয় করেন : (খ) যিনি ক্রেতার সম্মতিতে (ক)এ উল্লিখিত কৃত পণ্য ব্যবহার করেন; ব্যবসায়ীদের যেসব কাজ ভোক্তা অধিকার বিরোধী কাজ হিসেবে গণ্য হবে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ সেসব কাজের বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে।

আইনটিতে বলা হয়েছে, ভোক্তা অধিকারবিরোধী কার্য অর্থ– (ক) কোনো আইন বা বিধির অধীন নির্ধারিত মূল্য অপেক্ষা অধিক মূল্যে কোনো পণ্য, ঔষধ বা সেবা বিক্রি করা বা করতে প্রস্তাব করা; (খ) জ্ঞাতসারে ভেজাল মিশ্রিত পণ্য বা ঔষধ বিক্রি করা বা করতে প্রস্তাব করা; (গ) মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিকারক কোনো দ্রব্য, কোনো খাদ্যপণ্যের সাথে যার মিশ্রণ কোনো আইন বা বিধির অধীন নিষিদ্ধ করা হয়েছে, উক্তরূপ দ্রব্য মিশ্রিত কোনো পণ্য বিক্রি করা বা করতে প্রস্তাব করা; (ঘ) কোনো পণ্য বা সেবা বিক্রির উদ্দেশ্যে অসত্য বা মিথ্য বিজ্ঞাপনে ক্রেতা সাধারণকে প্রতারিত করা; (ঙ) প্রদত্ত মূল্যের বিনিময়ে প্রতিশ্রুত পণ্য বা সেবা যথাযথভাবে বিক্রি বা সরবরাহ না করা; (চ) কোনো পণ্য সরবরাহ বা বিক্রির সময় ভোক্তাকে প্রতিশ্রুত ওজন অপেক্ষা কম ওজনের পণ্য বিক্রয় বা সরবরাহ করা; (ছ) কোনো বিক্রি বা সরবরাহের উদ্দেশ্যে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ওজন পরিমাপের কার্যে ব্যবহৃত বাটখারা বা ওজন পরিমাপক যন্ত্র প্রকৃত ওজন অপেক্ষা অতিরিক্ত ওজন প্রদর্শনকারী হওয়া; (জ) কোনো পণ্য বিক্রি বা সরবরাহের ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুত পরিমাপ অপেক্ষা কম পরিমাপের পণ্য বিক্রয় বা সরবরাহ করা; (ঝ) কোনো পণ্য বিক্রি বা সরবরাহের উদ্দেশ্যে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে দৈর্ঘ্য পরিমাপের কার্যে ব্যবহৃত পরিমাপক ফিতা বা অন্য কিছু প্রকৃত দৈর্ঘ্য অপেক্ষা অধিক দৈর্ঘ্য প্রদর্শনকারী হওয়া; (ঞ) কোনো নকল পণ্য বা ঔষধ প্রস্তুত বা উৎপাদন করা; (ট) মেয়াদ উত্তীর্ণ বা ঔষধ বিক্রি করা বা করতে প্রস্তাব করা; বা (ঠ) সেবা গ্রহীতার জীবন বা নিরাপত্তা বিপন্ন হতে পারে এমন কোনো কার্য করা, যা কোনো আইন বা বিধির অধীন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩-এ যেসব বিধিনিষেধ ভোক্তাদের নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতের জন্য আরোপ করা হয়েছে তা হলো। (ক) খাদ্যে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর যেকোনো বিষাক্ত দ্রব্যের ব্যবহার না করা; (খ) খাদ্যে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আইনে নির্ধারিত মাত্রার অতিরিক্ত তেজস্ক্রিয় বা ভারী ধাতু ব্যবহার না করা; (গ) প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ভেজাল খাদ্য বা খাদ্য উপকরণ উৎপাদন, আমদানি, বিপণন ইত্যাদি না করা; (ঘ) প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নিম্নমানের খাদ্য উৎপাদন না করা; (ঙ) খাদ্যে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নির্ধারিত মাত্রার অতিরিক্ত সংযোজন দ্রব্য বা প্রক্রিয়াকরণ সহায়ক দ্রব্যের ব্যবহার না করা; (চ) শিল্প কারখানায় ব্যবহৃত তেল, বর্জ্য, ভেজাল বা দূষণকারী দ্রব্য ইত্যাদি খাদ্য স্থাপনায় না রাখা; (ছ) প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মেয়াদ উত্তীর্ণ খাদ্যদ্রব্য বা খাদ্য উপকরণ আমদানি, প্রক্রিয়াকরণ, মজুদ, সরবরাহ বা বিক্রি না করা; (জ) প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নির্ধারিত মাত্রার অতিরিক্ত কীটনাশক বা বালাইনাশকের ব্যবহার না করা; (ঝ) প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অনুমোদন গ্রহণ ব্যতিরেকে বংশগত বৈশিষ্ট্য পরিবর্তনকৃত খাদ্য, জৈব খাদ্য, ব্যবহারিক খাদ্য, স্বত্বাধিকারী খাদ্য উৎপাদন না করা; (ঞ) প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আইনের অধীন নির্ধারিত পদ্ধতিতে মোড়কীকরণ ও লেবেলিং না করা; (ট) মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বিবেচিত প্রক্রিয়ায় খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন না করা; (ঠ) রোগাক্রান্ত বা পচা মৎস্য, মাংস, দুগ্ধ বিক্রি না করা; (ড) হোটেল রোস্তরাঁ বা ভোজনস্থলে নির্ধারিত মানদণ্ডের ব্যত্যয়ে পরিবেশন সেবা প্রদান না করা; (ঢ) ছোঁয়াচে ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তি দিয়ে খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুত, পরিবেশন বা বিক্রি না করা; (ণ) প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নকল খাদ্য উৎপাদন বা বিক্রি না করা; (ত) খাদ্য ব্যবসায়ী কর্তৃক আমদানি, উৎপাদন ও বিক্রির রসিদ সংরক্ষণ করা; (থ) নিবন্ধন ব্যতিরেকে খাদ্যের আমদানি, উৎপাদন ও বিক্রি না করা; (দ) খাদ্য ব্যবসায়ী কর্তৃক খাদ্যসংশ্লিষ্ট যেকোনো বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে সহায়তা দান; (ধ) খাদ্যদ্রব্য বিপণন বা বিক্রির উদ্দেশ্যে বিজ্ঞাপনে অসত্য বা বিভ্রান্তিকর তথ্য না দেয়া; (ন) খাদ্যদ্রব্যের গুণগত মানবিষয়ক যেকোনো ধরনের মিথ্যা বিজ্ঞাপন প্রস্তুত, মুদ্রণ বা প্রচার থেকে বিরত থাকা।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এ যেসব কার্যকলাপকে অপরাধ গণ্য করা হয়েছে তা হলো-(ক) আইন ও বিধি দ্বারা নির্ধারিত হওয়া সত্ত্বেও পণ্যে মোড়ক ব্যবহার না করা; (খ) মূল্যের তালিকা প্রদর্শন না করা; (গ) সেবার মূল্যের তালিকা সংরক্ষণ ও প্রদর্শন না করা; ধার্যকৃত মূল্যের অধিক মূল্যে পণ্য, ঔষধ বা সেবা বিক্রি করা; (ঘ) ভেজাল পণ্য বা ঔষধ বিক্রি করা; (ঙ) খাদ্যপণ্যে নিষিদ্ধ দ্রব্য মিশ্রণ করা; (চ) মিথ্যা বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্রেতাসাধারণকে প্রতারিত করা; (ছ) প্রতিশ্রুত পণ্য বা সেবা যথাযথভাবে বিক্রি বা সরবরাহ না করা; (জ) ওজনে কারচুপি করা; (ঝ) বাটখারা বা ওজন পরিমাপক যন্ত্রে প্রকৃত ওজন অপেক্ষা অতিরিক্ত ওজন প্রদর্শন করা; (ঞ) পরিমাপে কারচুপি করা; (ট) দৈর্ঘ্য পরিমাপক কার্যে ব্যবহৃত পরিমাপক ফিতা বা অন্য কিছুতে কারচুপি করা; (ঠ) পণ্যের নব প্রস্তুত বা উৎপাদন করা; (ড) মেয়াদ উত্তীর্ণ কোনো পণ্য বা ঔষধ বিক্রি করা; (ঢ) সেবাগ্রহীতার জীবন বা নিরাপত্তা বিপন্নকারী কার্য করা এবং (ণ) অবহেলা, দায়িত্বহীনতা বা অসতর্কতা দিয়ে সেবাগ্রহীতার অর্থ, স্বাস্থ্য বা জীবনহানি ঘটানো; মামলা ও বিচার হবে কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর ১৮৯৮ অনুযায়ী, আইনে যা-ই থাকুক না কেন, সরকার বা নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধি, নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক এই আইনের অধীনে লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আইনের অধীন কোনো অপরাধ বিচারার্থে বিশুদ্ধ খাদ্য আদালত আমলে নিতে পারবেন।

আইনে বলা হয়েছে, কোনো অপরাধ সংঘটনের সঙ্গে সঙ্গে আইনের ৪৯ ধারার অধীন স্থাপিত বিশুদ্ধ খাদ্য আদালতের স্থানীয় সীমার মধ্যে লিখিত মামলা দায়ের করবেন। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ দিনে বা রাতে যেকোনো সময় অপরাধীকে গ্রেপ্তারের জন্য পরোয়ানা জারি করতে পারবে। অভিযোগ দায়েরের ৯০ দিনের মধ্যে অভিযোগপত্র দাখিল করা না হলে মামলাটি নিরাপত্তা খাদ্য কর্তৃপক্ষের বিবেচনার জন্য উপস্থাপিত হবে এবং তারা এ অপরাধের তদন্ত কার্যক্রম পর্যালোচনা করবে।

গুরুত্বপূর্ণ বাধ্যবাধকতা হিসাবে আইনে বলা হয়েছে যে, মেয়াদোত্তীর্ণ কোনো মাছ, খাদ্য বা পশুখাদ্য বা খাদ্যপণ্য আমদানি বা মজুদ বা বিতরণ বা বিক্রয় করা যাবে না। যদি কোনো ব্যবসায়ী মনে করেন, তিনি যেসব খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন বা প্রক্রিয়াকরণ বা সরবরাহ বা বিক্রয় করেছেন, সেগুলোর ক্ষেত্রে কোনো আইন বা বিধি মানা হচ্ছে না, ভোক্তার জন্য অনিরাপদ, তবে তার কারণ উল্লেখ করে তিনি তা দ্রুত সন্দেহজনক ও প্রশ্নবিদ্ধ খাদ্যদ্রব্য বাজার বা ভোক্তার কাছ থেকে প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করবেন এবং উপযুক্ত কর্তৃপক্ষকে তা জানাবেন।

ক্ষতিপূরণের বিষয়ে আইনে বলা হয়েছে কোনো ব্যক্তি বা সত্তাকে হয়রানি বা জনসমক্ষে হেয় করা বা ব্যবসায়িক ক্ষতি সাধনের অভিপ্রায়ে মিথ্যা বা হয়রানিমূলক মামলা বা অভিযোগ করলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা সত্তা ওই ব্যক্তি বা সত্তার বিরুদ্ধে উপযুক্ত আদালতে মামলা বা অভিযোগ করতে পারবে।

জরিমানা ও শাস্তির বিধান আরো সুনির্দিষ্ট যেমন জীবননাশক বা মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কোনো রাসায়নিক বা ভারী ধাতু বা বিষাক্ত দ্রব্য মিশ্রিত কোনো খাদ্যদ্রব্য উত্পাদন, আমদানি, প্রস্তুত, মজুদ, বিতরণ, বিক্রয় বা বিক্রয়ের অপচেষ্টা করলে অনূর্ধ্ব সাত বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হবে। পুনরায় একই অপরাধ করলে সাত বছর থেকে অনূর্ধ্ব ১৪ বছরের কারাদণ্ড বা অন্যূন ১০ লাখ টাকা জরিমানা।

এছাড়া দূষণ মিশ্রিত কোনো খাবার বিক্রি করলে; ভেজাল খাবার বিক্রয় বা বিক্রয়ের অপচেষ্টা করলে; হোটেল বা রেস্তোরাঁ বা প্রতিষ্ঠানের অবহেলা; মিথ্যা বা হয়রানিমূলক মামলা করলে; শর্ত ভঙ্গ করে কোনো খাদ্যদ্রব্য মজুদ বা প্রস্তুত করলে; অনুমোদিত ট্রেডমার্ক বা ট্রেডনামে বাজারজাত করা কোনো খাদ্যপণ্য নকল করে বিক্রয়ের চেষ্টা করলে; খাদ্যদ্রব্য উত্পাদন বা সংরক্ষণের স্থানে শিল্প-কারখানার তেল বা খনিজ বা বর্জ্য থাকার অনুমোদন দেওয়াসহ এমন ২০ ধরনের অপরাধের জন্য অনূর্ধ্ব সাত বছর থেকে কমপক্ষে দুই বছর শাস্তি এবং অনধিক ১০ লাখ টাকা অথবা কমপক্ষে তিন লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। একই অপরাধ পুনরায় করলে শাস্তি ও জরিমানার পরিমাণ আরও বাড়ানোর বিধান রাখা হয়েছে।

সম্প্রতি মহামান্য হাইকোর্ট একটি রিট পিটিশনে নির্দেশনা দিয়ে বলেছেন, খাদ্য ভেজালের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় ভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করে ভেজালকারীদের অতিদ্রুত চিহ্নিত করতে হবে। একই সাথে ৫২টি বিভিন্ন কোম্পানির ভেজাল খাদ্য পন্য ধ্বংশের নির্দেশ দেন।

হাইকোর্ট আরো বলেছেন যে, নিরাপদ খাদ্য আইনের কিছু বিষয় বাদ দিয়ে নতুন ভাবে সংশোধন ও পরিমার্জন করা। যেমন, পৃথক আদালত, রাসায়নিক পরীক্ষার সেন্ট্রাল ল্যাব, খাদ্য নিরাপত্তা আইনের গঠিত সকল কমিটির বিকেন্দ্রীকরণ ইত্যাদি যাতে করে স্থানীয় পর্যয়ে উক্ত কমিটি সমূহ খাদ্যে ভেজাল রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ দুটি মিলিয়ে পড়লে উক্ত আইনদ্বয়ে যেসব কাজ করার বিষয়ে বিধিনিষেধ অথবা যেসব কাজ অপরাধ গণ্য করা হয়েছে তা সব নাগরিককে জানতে হবে। কেননা উক্ত বিধিনিষেধ ব্যত্যয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বা অধিদফতরকে ভেজাল পণ্য বাজেয়াপ্ত ও আটকের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। যাতে করে ভেজাল কার্যক্রমের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের আটক এবং মোবাইল কোর্ট অথবা উপযুক্ত আদালতে বিচার কার্য সম্পন্নের ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে।

নিরাপদ খাদ্য ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দিতে বর্তমান সরকার নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। কবির ভাষায় পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে তুলতে হবে। নিরাপদ খাদ্য ও ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত হলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার ভিত্তি আরো দৃঢ় ও মজবুত।

লেখক: কলামিস্ট ও আইন বিশ্লেষক

বিচারক, বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস। ইমেইল-bdjdj1984du@gmail.com

আপনার মতামত লিখুন :

স্বাধীনতা দিবসের ভাবনাগুলো

স্বাধীনতা দিবসের ভাবনাগুলো

১৭ মার্চ স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য একটা স্মরণীয় দিন

১৭ মার্চ স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য একটা স্মরণীয় দিন

সর্বনাশা পরকীয়া, কারণ ও প্রতিকার

সর্বনাশা পরকীয়া, কারণ ও প্রতিকার

মুক্তিযুদ্ধ ও গৌরব গাঁথা মার্চ মাস

মুক্তিযুদ্ধ ও গৌরব গাঁথা মার্চ মাস

মূল্যবোধের অবক্ষয় এর শেষ কোথায়!

মূল্যবোধের অবক্ষয় এর শেষ কোথায়!

সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচলনের কথা সবসময়ই বলতে হবে

সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচলনের কথা সবসময়ই বলতে হবে

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার: ApsNews24.Com (২০১২-২০২০)

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
০১৬২৫৪৬১৮৭৬

editor@apsnews24.com, info@apsnews24.com
Developed By Feroj