নাহিদ শাহীন
আইন ও বিচার-বোঝার আছে জানার আছে..
ন্যায় বিচার চাওয়া আর ন্যায় বিচার পাওয়া এক বিষয় না। কেনো? কারণঃ
আমাদের প্রচলিত আইনে ন্যায় বিচার প্রাপ্তির দুটো বড় ও প্রধান অন্তরায় হচ্ছে- ১। তদন্ত ও ২। সাক্ষী; যে দুটো বিষয়কে কেন্দ্র করে বিচার প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রিতারও জন্ম দেয়।
এর দায় বিচারক ও রাষ্ট্রের উপর সরাসরি দেয়া ঠিক হবেনা। তবে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপে মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হলে বিচারিক কাজ দ্রুততম সময়ে শেষ হয়। আবার সব মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হবে তাও কিন্তু না। তবে এখানেও দূর্বল তদন্ত প্রতিবেদন এবং সাক্ষীর সাক্ষ্য প্রদানের অনাগ্রহ ও প্রত্যক্ষ সাক্ষীর অভাবের কারনে অভিযোগকারী বাদীপক্ষ ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হতে পারে এবং আসামীপক্ষের শাস্তি কম ও অনেকাংশে খালাসও হয়ে যেতে পারে।
তবে যেক্ষেত্রে একজন আসামী কিংবা একাধিক আসামী দোষ স্বীকারমূলক জবানবন্দি অর্থ্যাৎ ১৬৪ প্রদান করে সেক্ষেত্রে আইনের বিধান মোতাবেক বিচার প্রক্রিয়া একরকম হয়। আবার এই দোষস্বীকারমূলক ১৬৪ ধারা দুই প্রকার হয়ঃ একটি নিজেকে জড়িয়ে দোষস্বীকার, অপরটি নিজেকে না জড়িয়ে দোষস্বীকার- এমন ক্ষেত্রে আইনের বিধান মোতাবেক বিচার প্রক্রিয়া ভিন্ন হয়ে থাকে।
এ বিষয়ে বিস্তারিত পরিচ্ছন্ন আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে।
তবে বিচার ব্যবস্থা নিয়ে আমাদের দেশে সব সময়ই বিতর্ক আলোচনা সমালোচনা হয়-হচ্ছে। এটি যুগের, জাতি ও রাষ্ট্রের মন- মানসিকতার বিষয় মাত্র।
পূর্বে ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে যে দুটো বিষয় নিয়ে বলতে গিয়ে খেই হারিয়েছে সেই জায়গায় আবার ফিরে আসা যাক।
তদন্ত ও সাক্ষীর দূর্বলতা ন্যায়বিচারে প্রতিবন্ধকতা কেমন?
যেমন তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত করতে গিয়ে সঠিক তদন্ত না করে বাদী কিংবা বিবাদী/আসামী কর্তৃক প্রভাবিত হয়ে যেকোন একটি পক্ষের পক্ষে প্রতিবেদন দাখিল করলে বা রির্পোট/ চার্জশীট দাখিল করলে এবং পক্ষ দ্বারা খেয়াল খুশিমতো নিজেদের সাক্ষীর নাম চার্জশীটে অন্তর্ভুক্ত করলে অপর পক্ষ নিশ্চিত ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এ ক্ষেত্রে না-রাজী একটি দাপ মাত্র। না-রাজী গ্রহন করে আদালত দু একটি উদাহরণ ব্যতিত সরাসরি মামলা আমলে গ্রহনও করেন না। তাই আবারও আইনের যেকোনো প্রতিষ্ঠান বরাবরে তদন্ত প্রতিবেদন চেয়ে আদালত আদেশ প্রদান করে থাকেন। তারমানে দাঁড়ায় সত্যকে মিথ্যা মিথ্যাকে সত্যভাবে উপস্থাপনের সহজ সুযোগ থেকেই যাচ্ছে। সঠিক নির্ভুল যা ঘটনা তার পূর্ণ বিবরন সত্যতা ও চাক্ষুষ সাক্ষীর সংশ্লিষ্টতায় প্রতিবেদন দাখিল হয়না সেটি কিন্তু বলা যাবেনা একদম।
এটির অনেকগুলো শাখা প্রশাখা বিরাজমান আমাদের বিচার ব্যবস্থায়।
এবার সাক্ষী নিয়ে বলা যাক। সাক্ষী সাক্ষ্য প্রদানে নিরুৎসাহী হয় নাকি?
অনেকাংশেই হয় আবার সাক্ষী দিতে এসেও প্রকৃত সঠিক ঘটনা বনর্ণাপূর্বক জবানবন্দি না দিতে পারায় আসামী পক্ষ জেরায় সে সুযোগ গ্রহন করে। অনেক ক্ষেত্রে আদালত ঘটনাস্থলের আশেপাশের নাম ঠিকানার সাক্ষীদের সমন, গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করেও ওই ঠিকানার সাক্ষীদের খোঁজে পেয়ে আদালতে হাজির করতে ব্যর্থও হয়। এদের ভাসমান সাক্ষীও বলা হয়ে থাকে, অর্থ্যাৎ ঘটনাস্থলের আশপাশ থেকে যে কাউকে ডেকে এনে সাক্ষী করানো যার বসবাস ওখানেই নয়।
সেক্ষেত্রে বিচারক সাক্ষ্য ও মামলার চার্জশীট বিশ্লেষণ করে নিজের ক্ষমতায় ভিন্নভাবে ন্যায়বিচার নিশ্চিতে রায় ও আদেশ দিতে পারেননা বা করেনও না।
তবে ১৬৪ ধারা প্রদানের কারনে কোনো সাক্ষীর সাক্ষ্যের গুরুত্ব ছাড়াও বিচারক সঠিক ও ন্যায়গত পদ্ধতি মেনেই আসামীর বিরুদ্ধে রায় প্রদান করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারেন।
এখানে সামন্য লেখায় ও পাঠকের ধৈর্য বেধে রেখে তাদের পড়ায় আকৃষ্ট করা সহজ নয়।
কারণ এ বিষয়ে আইনের ধারা ও ব্যাখ্যা যুক্ত করে বিস্তারিত লেখা ছাড়া এর পুরো বিষয় বোঝানো মুশকিল।
আগ্রহী পাঠক পেলে
বাকী অংশ পরে…………লেখার ইচ্ছে রাখি।
তবে আমি যেহেতু বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে দৈনন্দিন প্রাকটিস করে এসব বিষয়ের সম্মুখীন হই বা আইনজীবীগন সর্বোপরি মহান বিচারকগণ হয়ে থাকেন তা থেকে সামন্য আলোকপাতের চেষ্টা করেছি। এখানে ভুল হলে শোধরে সংশোধনের সুযোগদানে বাধিত করবেন আমার বিশ্বাস।
মোহাম্মদ নাহিদুল ইসলাম ( নাহিদ শাহীন), আইনজীবী, ঢাকা জজ কোর্ট, ঢাকা।
১৫।০৩।২০২০