এস এম মাসুদ রানা, কুড়িগ্রামঃ কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার সীমান্ত লাগোয়া পাথরডুবি ইউনিয়নের বাঁশজানি গ্রামের প্রাশ ২’শ বছরের পুরনো দক্ষিণ বাঁশজানি ঝাকুয়াটারি জামে মসজিদের সংস্কার কাজ বন্ধ করে দিয়েছে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বিএসএফ। প্রায় দুইশত বছরের পুরোনো মসজিদটি ঝুঁকি পূর্ণ হওয়ায় ব্যাবস্থাপনা কমিটি সর্বসম্মত ভাবে পাশেই নতুন মসজিদ নির্মাণে কাজ শুরু করেন। ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) বিষয়টি জানতে পেরে নির্মাণ কাজে বাধা দিলে অবিভক্ত ভারতবর্ষে নির্মিত পুরাতন মসজিদটির নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
স্থানীয় মুসুল্লিরা জানান, দুই বাংলার ঐতিহ্যবাহী এই মসিজিদটি বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্তের আন্তর্জাতিক মেইন পিলার ৯৭৮-এর সাব পিলার /৯ এস এর পাশে অবস্থিত। সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হচ্ছে দেশ ভাগ হলেও “এই মসজিদে ভারত-বাংলাদেশ দুই দেশের মুসল্লিরা প্রায় ২শ বছর ধরে এক সংঙ্গে নামাজ আদায় করে আসছেন। সীমান্তের উত্তরদিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কোচবিহার জেলার সাহেবগঞ্জ থানার ঝাকুয়াটারী গ্রাম, দক্ষিণে বাংলাদেশের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার পাথরডুবি ইউনিয়নের বাঁশজানি গ্রাম। ভারত – বাংলাদেশ সীমান্তের শূন্যরেখায় বাংলাদেশের ভূখণ্ডে থাকা মসজিদটির নাম ‘ঝাকুয়াটারী সীমান্ত জামে মসজিদ’।
১৮২০ সালে অবিভক্ত ভারত-বাংলাদেশের দক্ষিণ বাঁশজানি-ঝাকুয়াটারী গ্রামে মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে ব্যাপক জনশ্রুতি পাওয়া যায়। দেশ ভাগ হলেও বিভক্ত হয়নি মসজিদটি। দুই দেশের মুসল্লীদের সেতু বন্ধনে কালের সাক্ষি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রাচীন এই মসজিদটি।
প্রাচীন এ মসজিদটির পাকা ভবন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও জরাজীর্ণ হওয়ায় মসজিদ ব্যাবস্থাপনা কমিটি ও এলাকাবাসী গত এপ্রিল মাসে সেখানে নতুন একটি মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নেন।
সরকারি-বেসরকারি আর্থিক অনুদান ও দু-দেশের মুসুল্লিদের সহযোগিতায় মসজিদটির নতুন ভবনের বেশ কিছু কাজ দৃশ্যমান হলে, হঠাৎ করে চলতি মাসের ৫ তারিখ সীমান্তের নো-ম্যানস ল্যান্ড এর ১৫০ গজের ভিতরে পাকা স্থাপনা নির্মাণের বিষয়ে বিধি নিষেধ থাকার অজুহাতে মসজিদ নির্মাণে বাধা দেয় বিএসএফ। ফলে দুই বাংলার মুসুল্লিদের সেতুবন্ধনের অনন্য প্রতীক এই প্রাচীন মসজিদটির নির্মান কাজ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি কফিলুর রহমান জানান, ঐতিহাসিক এই মসজিদটির একটি স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ করে ২শ বছরের ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে অবিলম্বে দুই দেশের প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ কামনা করেন এলাকা বাসী।
সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য এরফান আলি জানান, গত ২১ মে (শুক্রবার) কুড়িগ্রাম-১ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব আছলাম হোসেন মসজিদটি পরিদর্শনে আসলে তাকে বিষয়টি অবহিত করেছি। এছাড়াও প্রশাসনের উর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে মসজিদ নির্মাণে বিএসএফ কর্তৃক সৃষ্ট বাধার বিষয়টি অবগত করিয়েছি । তারা দ্রুত বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন।
কুড়িগ্রাম-২২ ব্যাটালিয়ন বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ জামাল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঐ স্থানটিতে অনেক পুরাতন ঐতিহ্যবাহী একটি মসজিদ রয়েছে। দীর্ঘ দিন থেকে দুই দেশের মুসলমানরা এই মসজিদে নামাজ আদায় করে আসছে। মসজিদটির ভবন নির্মাণে বিএসএফ আপত্তি জানিয়েছে। আমরা খুব দ্রুত এর প্রতিউত্তর পাঠাবো ঐতিহাসিক এই পুরনো মসজিদটি নির্মাণে যেন তারা বাধা না দেন।। ##