মু. আহসান হাবীব
কুরআনের জ্ঞান মানুষকে সত্যের সুস্পষ্ট আলো প্রদান করে। যিনি কুরআনের ভেতর নিজেকে ডুবিয়ে দিতে পেরেছেন তিনি কামিয়াব হয়েছেন। আর যিনি কামিয়াব হয়েছেন তার চাওয়া-পাওয়ার বলে আর কিছু রয় না। সব-ই তার অধীন হয়ে যায়। কারণ স্বয়ং স্রষ্টাকে তিনি উপলব্ধি করতে সক্ষম হোন। আর স্রষ্টা যার উপলব্ধি হয় তিনি কি সাধারণ থেকে আলাদা নয়? সত্য কিতাবকে কেবল রিডিং কিংবা হেফজ করলে চলে না। সত্য কিতাবের বাণী গুলো নিজের ভেতর ধারণ করতে হয়। এবং নিজেকেই হয়ে উঠতে হয় একজন জীবন্ত কিতাব। যিনি সত্য কিতাবকে নিজের মাঝে সম্পূর্ণভাবে ধারণ করতে পারলেন মূলত তিনিই হয়ে উঠলেন একজন জীবন্ত সত্য কিতাব। এ কিতাবের সংস্পর্শে যে আসবে সেও আলোকপ্রাপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা অর্জন করবে। তবে সে ব্যাপারে শতভাগ কোনো নিশ্চয়তা নেই।
সত্য কিতাবের গভীরে প্রবেশ করার কোনো রেডিমেড পদ্ধতি আছে কী? হয়তো আছে অথবা নেই। তবে যিনি পূর্ণ-বিশ্বাসের সাথে এ কিতাবের ভেতরে নিজেকে ডুবিয়ে রাখতে পারবেন তার কাছে ক্রমান্বয়ে সত্য স্পষ্ট হয়ে উঠবে। অথবা কোনো জীবন্ত কিতাবের সংস্পর্শে যেয়েও সে উদ্দেশ্য হাসিল হতে পারে সে ইঙ্গিত উপরে প্রদান করা হয়েছে। আর এই সত্যই তাকে মুক্তি দিবে সমস্ত সংশয় ও অসত্য থেকে। যেহেতু সত্য ও স্রষ্টা অভিন্ন সেহেতু যিনি সত্য প্রাপ্ত হয়েছেন তিনি মূলত স্রষ্টাকেই পেয়েছেন। স্রষ্টাকে পাওয়া মানে স্রষ্টাকে দেখা নয়; বরং স্রষ্টা যে একজন সত্যিই আছেন সেটা অন্তরে শতভাগ বিশ্বাসের সাথে উপলব্ধি হওয়া। এই উপলব্ধির স্বাদ একেকজনের কাছে একেকরকম। মনে রাখা জরুরি, সীমালঙ্ঘনকরীরা কখনোই সত্য উপলব্ধি করার উপযুক্ত নয়।
স্র্রষ্টা নেই কোথায়? স্রষ্টা সবকিছুতেই বিরাজমান। মাওলানা জালালউদ্দিন রুমি বলেন, ‘যেখানেই আমি তাকাই প্রভু কেবল তোমাকে দেখতে পাই।’ সত্য বা স্রষ্টা উপলব্ধি করবার জন্য সত্যানুসন্ধানী হতে হয়। সত্যানুসন্ধানের পূর্ণাঙ্গ গাইডলাইন হলো- কুরআন ও হাদিস। সূরা ইয়া-সীনের ৬৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আমি রসুলকে কাব্য শেখাই নি। তাছাড়া কাব্য এ উপদেশবাণী প্রকাশে মানানসইও নয়। এটি সহজে বোধগম্য কুরআন এবং সুস্পষ্টভাবেই সত্যের দিক-নির্দেশক।’ সুতরাং, কুরআন ও হাদিসের যত গভীরে ডুবে যাওয়া যাবে এর রহস্য ততই উন্মোচিত হতে থাকবে। এই উন্মোচিত হওয়া রহস্য গুলোই একেকটা সত্যের অংশ। আর পূর্ণ সত্য হলো- স্বয়ং স্রষ্টা বা আল্লাহ।
কুরআন ও হাদিস হলো জ্যোতির ন্যায়। যিনি যত এর নিকটে যাবেন তিনি ততই আলোকিত হবেন। আর আলোকিত হওয়ার অর্থ হলো সত্যকে কাছে পাওয়া। আর সত্যকে কাছে পাওয়ার অর্থ হলো- আল্লাহকে কাছে পাওয়া।
শেষত, যারা সত্যকে অস্বীকার করে তাদের শেষ পরিণতি অবশ্যই অত্যন্ত ভয়াবহ। নিশ্চয়ই আল্লাহ আমাদের অতি নিকটেই অবস্থান করেন। তিনি সবকিছু দেখেন ও জানেন।
লেখক -মুহাম্মদ আহসান হাবীব।ডাক্তার বাড়ি, দক্ষিণ গিদারী, গাইবান্ধা।