সব
facebook apsnews24.com
"পাওয়ার কামস উইথ রেসপন্সিবিলিটি"-প্রসঙ্গ ভ্রাম্যমান আদালত - APSNews24.Com

“পাওয়ার কামস উইথ রেসপন্সিবিলিটি”-প্রসঙ্গ ভ্রাম্যমান আদালত

“পাওয়ার কামস উইথ রেসপন্সিবিলিটি”-প্রসঙ্গ ভ্রাম্যমান আদালত

সাজিদ মাহমুদ ভুইয়া

যখন তখন যেখানে সেখানে ক্ষমতার প্রয়োগ। বলছি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কথা। সাধারনত ভ্রাম্যমাণ আদলতে বিচার কাজ করে থাকেন যারা। যিনি বা যাহারা হুটহাট করে বিভিন্ন জায়গাতে অভিযান পরিচালনা করে মোবাইল কোর্ট বা ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অন ডিমান্ড সাজা প্রদান করে থাকেন। আমরা সাধারন মানুষ অনেকেই তাদেরকে হিরো বা ফাটাকেষ্টো উপাধি দিয়ে থাকি। তবে সবসময় তাদের বিচারিক পদ্ধতি কি আইনসম্মত? বা আমরা কতটুকু তাদের এ ধরনের কাজ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল?

দিন দিন প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে এই ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম। যেখানে সেখানে আদালত বসিয়ে নিজের ইচ্ছামত সাজা প্রদানের মত ঘটনা ঘটছে অহরহ। ভাবখানা দেখলে মনে হয় সম্ভবত সুপ্রিম পাওয়ার তাদেরই হাতে। মাঝে মধ্যেই দেখা যায় হাইকোর্টে থেকে তলব করা হয় এসকল অতিউৎসাহী নির্বাহীদেরকে। পরে দেখা যায় তারাই আবার মহামান্য হাইকোর্টে হাজির হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা দাবি করেন যা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রকাশিত হয়। তাদের এ ধরনের ক্ষমা চাওয়ার কারন হচ্ছে বিচারের সময় তারা তাদের ক্ষমতার অতিরিক্ত ক্ষমতা ব্যবহার করেছে অথবা ক্ষমতার অবৈধ ব্যবহার করেছে।

প্রেক্ষাপট ১-  সম্প্রতি বরিশালে এক আইনজীবীর ৭ দিনের কারাদণ্ড  দিয়েছেন  আদালত তার বীরুধে অভিযোগ ছিল তিনি টিসিবির পণ্য বিক্রয়ে বাধা প্রদান করেন এবং টিসিবির  এক কর্মকর্তা কে লাঞ্ছিত করেন। পরবর্তীতে যদিও তার জামিন মঞ্জুর করেন। তবে এঘটনায় বিচার বিভাগীয় ততন্ত দাবি করে আইনমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছেন  এডভোকেট  এস এম জুলফিকাল আলী জুনু ।

প্রেক্ষাপট ২- কুড়িগ্রামের সেই ডিসির কথা সবাই মনে আছে নিশ্চয়। যার দুর্নীতির খবর প্রকাশ করায় বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল হককে মধ্যরাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে ১ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল আধা বোতল মদ ও ১৫০ গ্রাম গাজা উদ্ধারের। এ বিষয়ে গত ৪ এপ্রিল,২০২০ তারিখে ঢাকা ট্রিবিউনে খবর প্রকাশিত হয় যেখানে, সাংবাদিক আরিফের পক্ষে শুনানির শুরুতে আরিফের পক্ষে আইনজীবী ইশরাত সাজা প্রদানের বিষয়ে বিভিন্ন অসঙ্গতি তুলে ধরেন। এছাড়া পরবর্তীতে ডিসির সাথে সাংবাদিক আরিফের একটি অডিও ক্লিপ প্রকাশিত হয়।

প্রেক্ষাপট ৩বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট  র‍্যাবের সরোয়ার আলম। তাকে সহ তিনজন ম্যাজিস্ট্রেট কে অদক্ষ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিল মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ। ভ্রাম্যমাণ আদালতে ১২১ শিশুর বেআইনিভাবে বিচারের জন্য এমন মন্তব্য করেছিলেন হাইকোর্ট বিভাগ। যাদের মধ্যে ২৩ শিশুর জবানবন্দি নেয়া হয়েছিল মাত্র ৩২ মিনিটে।

এসব ঘটনা ছাড়াও কান ধরে উঠবস করানো, এসিল্যান্ড দিদি বলায় লাথি দেয়া সহ করোনা ভাইরাসের মধ্যে এক ব্যক্তি কে পেটাতে বলেন এক মহিলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট যা আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিলো। এধরনের আচরণ তারা কিসের ভিত্তিতে করেন? এই প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেন না দেখেই প্রায়ই নিঃশর্ত ক্ষমা দাবি  করেন হাইকোর্ট বিভাগের কাছে। 

‘মোবাইল কোর্ট অ্যাক্ট, ২০০৯’ পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ধারা ৭(১) অনুযায়ী ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করার সময় কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপরাধ আমলে নেয়ার পর মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকারী এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট সংক্ষিপ্ত অভিযোগ লিখিতভাবে গঠন করে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে পাঠ ও ব্যাখ্যা করে শোনাবেন এবং অভিযুক্ত ব্যক্তি গঠিত অভিযোগ স্বীকার না করলে তিনি তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা জানতে চাইবেন। উপধারা ২ অনুযায়ী অভিযুক্ত ব্যক্তি অভিযোগ স্বীকার করলে তার স্বীকারোক্তি লিপিবদ্ধ করে তাতে অভিযুক্তের স্বাক্ষর বা ক্ষেত্রমত, টিপসই এবং দুইজন উপস্থিত স্বাক্ষীর স্বাক্ষর বা, ক্ষেত্রমত, টিপসই গ্রহণ করবেন এবং অতঃপর ম্যাজিস্ট্রেট তার বিবেচনায় যথাপোযুক্ত দণ্ড আরোপ করিয়া লিখিত আদেশ প্রদান করিবেন এবং উক্ত আদেশে স্বাক্ষর করিবেন।

মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সাজা হলে যে অভিযোগে বিচার হচ্ছে সেই অভিযোগে অন্য আইনে যে সাজাই থাকুক এই আইনের ৮ ধারার অধীন  দুই বছর এর অধিক কারাদণ্ড আরোপ করা যাইবে না। এবং কোন অভিযুক্তকে ঘটনাস্থলে দোষী সাব্যস্ত করিয়া কেবল অর্থদণ্ড আরোপ করা হইলে ৯ ধারার অধীন উক্ত অর্থদণ্ডের নির্ধারিত টাকা তাৎক্ষণিকভাবে আদায়যোগ্য। (সুত্রঃ বিডি লজ)

পরিশেষে বলতে চাই নিজেকে ম্যাজিস্ট্রেট না ভেবে প্রজাতন্ত্রের একজন সেবক ভাবতে পারলেই ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ করা সম্ভব হবে। মনে রাখা উচিত “পাওয়ার কামস উইথ রেসপন্সিবিলিটি”।

লেখকঃ সাজিদ মাহমুদ ভুইয়া, শিক্ষানবিশ আইনজীবী, ঢাকা জজ কোর্ট, ইমেইল- shajidmahmud@gmail.com

মতামত লেখকের ব্যক্তিগত।

আপনার মতামত লিখুন :

“পাওয়ার কামস উইথ রেসপন্সিবিলিটি”-প্রসঙ্গ ভ্রাম্যমান আদালত

“পাওয়ার কামস উইথ রেসপন্সিবিলিটি”-প্রসঙ্গ ভ্রাম্যমান আদালত

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বনাম জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বিতর্কঃ বাস্তবতার নিরিখে উত্তর

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বনাম জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বিতর্কঃ বাস্তবতার নিরিখে উত্তর

A witness can never be the Judge of any case: Mobile Court Fact

A witness can never be the Judge of any case: Mobile Court Fact

বাল্যবিবাহ রোধ করতে মনিটরিং আরো বাড়ানো দরকার

বাল্যবিবাহ রোধ করতে মনিটরিং আরো বাড়ানো দরকার

গ্রামবাসীর সাহায্যে পড়াশোনা করা   ম্যাজিস্ট্রেট নাজিম এখন বেপরোয়া

গ্রামবাসীর সাহায্যে পড়াশোনা করা ম্যাজিস্ট্রেট নাজিম এখন বেপরোয়া

‘কালেমা পড়ে নে, তোকে এনকাউন্টার দেয়া হবে’ কুড়িগ্রামে মোবাইল কোর্ট….

‘কালেমা পড়ে নে, তোকে এনকাউন্টার দেয়া হবে’ কুড়িগ্রামে মোবাইল কোর্ট….

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার: ApsNews24.Com (২০১২-২০২০)

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
০১৬২৫৪৬১৮৭৬

editor@apsnews24.com, info@apsnews24.com
Developed By Feroj