মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম
বিশ্ববাসী করোনায় নাকাল ও হিমশিম খাচ্ছে এটি মোকাবেলায়। পবিত্র রমজান মাস ও চলছে। এই মাসের শেষে মুসলমানদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। কত জল্পনা ও কল্পনা করে মুসলিম এই ঈদ উৎসবকে ঘিরে। কিন্তু এবার সবকিছু ছাপিয়ে করোনাকালে রমজান ও শেষে ঈদ উৎসব পালন কতটুকু আনন্দের ও আমেজের হয় তা এখনই বলা মুশকিল। করোনা থাবা দিনে দিনে উর্দ্ধমুখী। বাংলাদেশেও আক্রান্তের সংখ্যা ও সাথে পাল্লা দিয়ে মৃত্যেুর সংখ্যা বাড়ছে।কে জানে কি কপালে জুটবে। হয়তো কেউ এই পৃথিবীতে থাকবো না সত্য কিন্তু করোনা ভাইরাস সেই না থাকাটা দানবরুপে ত্বরান্বিত করছে বলে মনে হচ্ছে। এর মাঝে আমরা নৈতিকতা, সততা, দায়িত্ববোধ কতটুকু টিকিয়ে রাখতে পারছি সেটিও প্রশ্নবিদ্ধ। রাজনৈতিক নেতার ঘরে গরিবের ত্রানের চাল, তেল, ডাল রেশন কার্ডের টাকা সবই পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু এসবের বিচার হচ্ছে কি হচ্ছে না তা বলার সময় ফুরিয়ে যায়নি। মোদ্দাকথা হলো আমরা কিভাবে এসব অপকর্ম, দূর্নীতি ও চুরি থেকে কবে বের হতে পারব। নাকি পারবো না ইচ্ছা করে।
আমি মনে করি এই করোনা ভাইরাস ওইসব দুর্নীতিবাজ, চালচোর ও ত্রাণ আত্নসাৎকারীদের জন্য কিছু অন্তর্নিহিত মেসেজ নিয়ে এসছে বা দিয়ে যাচ্ছে। এখান থেকে সেই বার্তা নেওয়ার মতো ক্ষমতা যারা দুর্নীতিবাজ, চালচোর ও ত্রাণ আত্নসাৎকারী তাদের আছে কিনা সেইখানে প্রশ্ন। করোনা কি ধরনের শিক্ষা দিচ্ছে তা ইতোমধ্যে আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে জেনেছি তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু পুনরায় মনে করে দিলে অত্যুক্তি হবে না মনে করি। যেমনঃ আমেরিকা তার শ্রেষ্ঠত্ব কিছুটা হলেও হারিয়েছে!চীন কোন মিশাইল খরচ না করেও যেন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ জিতে গেলো! ইউরোপীয়রা আসলে অতোটা মেধাবী নয়, যতোটা মনে হয়!ধনীর চেয়ে গরিবের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি! এই গ্রহে, মানুষ-ই প্রকৃত ভাইরাস, এটম বোমা নয়। একজন দামী খেলোয়ারের চেয়ে একজন স্বাস্থ্য কর্মী বেশি দরকারী! ব্যবহার না হলে, তেলের তেমন কোন মুল্য নেই!চিড়িয়াখানায় পশু পাখির অনুভূতি কেমন হয়? প্রকৃতি চাইলে খুব দ্রুত নিজেকে সাজিয়ে গুছিয়ে নিতে পারে, মানুষের সাহায্য ছাড়াই!অধিকাংশ চাকুরী ঘরে বসে করা সম্ভব! ছোট-বড় সবাই জাংক (ফাস্ট ফুড) খাবার ছাড়া বাঁচতে পারে! ছোট ছোট দোষীদের হয়তো জেলে রাখার দরকার নাই! স্বাস্থ্য সচেতন বা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নভাবে বাঁচা কঠিন কাজ নয়! রান্নাঘর শুধু মেয়েদের জন্যে না! পৃথিবীতে এখনও বহু ভালো মানুষ আছেন! শুধুমাত্র প্রেম-পিরিতি দিয়ে পৃথিবী চলে না! ধর্মান্ধতা ধর্মেরই পরিপন্থী! বিদেশে ব্যাংকে প্রচুর টাকা থাকলেও, বিপদে কাজে আসে না!ফ্লাইট বন্ধ থাকার কারণে টাকার কাছে পৌঁছানো যায় না! বেঁচে থাকার জন্য আসলে তেমন বেশি কিছু দরকার নাই! (সূত্রঃ ডেইলি মেইল, বাংলা অনুবাদ) দোকানে আড্ডা না দিয়েও সময় কাটানো যায়! নিজের পরিবার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ! আমাদের বেশিরভাগ পরিশ্রম বিনা কারণে! মানুষের সামর্থ খুবই সিমীত! প্রকৃতির সামনে মানুষ কিছুই নয়, প্রকৃতি মানুষকে আশ্রয় দিয়েছে মাত্র! মরণঘাতী রোগ হলে অনেক সম্পদ আর ক্ষমতা কোন কাজে আসে না! কিছু মানুষ কখনও ভালো হবে না! বেঁচে থাকাই সবচেয়ে কঠিন ও গুরুত্বপূর্ণ! মানুষ আসলেই সবচেয়ে দুর্বল প্রাণী! ইত্যাদি নানা নীতিবাক্য ও বাস্তব সত্য আমাদের দেশের রাজনীতি বিদ ও নেতাগণ এগুলো জানলেও সামান্য ত্রাণের চাল, তেল ও টাকা মেরে দেওয়ার লোভ সামলাতে পারছেন না। খুবই হতাশাজনক। যেখানে খোদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলছেন গরিবের ত্রাণে দূর্নীতি হলে কোন ছাড় নেই তার পরেও লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। সচেতন থাকুন, সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করুন।
কোরআন হাদীসের আলোকে রমজান মাসের গুরুত্ব অনেক। মুসলমান হিসাবে কম বেশি সকলেই তা জানি। রোযার মাস হলো গোনাহ মাফ করিয়ে নেয়ার মাস।পিতা-মাতাকে সেবাদানের মাধ্যমে জান্নাত লাভের মাস। আল্লাহ বলেছেন রোযা আমার জন্য এবং আমি এর প্রতিদান দিব। হাদীসে আসছে রোযাদার ব্যতীত অন্য কেউ জান্নাতের রায়হান নামক দরজা দিয়ে কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। রোযা ঢাল স্বরুপ। এখন কিসের ঢাল তা জানা জরুরী। রোযা ঢাল হিসাবে আপনাকে বা আমাকে খারাপ কাজ থেকে হেফাজত করবে। চালচুরি, আত্নসাৎ ও যে কোন দূর্নীতি এগুলো অন্যায় গর্হিত ও খারাপ কাজ। এগুলো থেকে যদি আপনি বা আমি বিরত না থাকি তবে মনে করতে হবে রোযা ঢাল হিসাবে কাজ করছে না। তাই এই রমজান মাসে তওবা করি যেন আমরা বাকী জীবনে কোন খারাপ বা পাপ কাজ না করি। তাহলেই চালচুরি দূর্নীতি ও আত্নসাৎ, ধোকাবাজী এবং মানুষ ঠকানো কমবে। রোয়ার শিক্ষা অন্য সময়েও কাজে লাগাতে হবে।
করোনা কাউকে ছাড় দিতে আসেনি, কে ধনী, কে গরিব না বাছ বিচার করে সবাইকে স্পর্শ করে যাচ্ছে নির্মমভাবে।একবার যদি করোনা ধরে ফেলে আমাকে আপনাকে তবে শোধরানোর সময় পাব কিনা সন্দেহ আছে। যদি সময় না পায় তাহলে সব আত্ন অহমিকা মূহুর্তের মধ্যে চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যাবে। পড়ে থাকবে শুধু কর্ম। এমনিতেই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে অতি আপনজনও কাছে আসছে না। তেমনি আপনি আমি যদি করোনার সাথে চাল চোরের গালি নিয়ে মৃত্যুবরণ করি তবে সারাজীবন বিশ্বাস হারিয়ে চলে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে বিশ্বাস নিশ্বাসেরও চেয়ে গুরুত্ব বহন করে।বিশ্বাস না থাকলে বেঁচে থেকেও মৃত। একারনে করোনার কঠিন শিক্ষা বাদেও মাহে রমজান মাসের যে শিক্ষা আমরা মুসলমানরা কুরআন হাদীসের আলোকে জানি তা কাজে লাগাতে হবে।নিজেদের বাস্তব জীবনে রমজান মাসে করোনা সংকট হতে রেহাই পেতে হলেও এ যাত্রায় অন্তত তওবা এস্তগফার পড়ে ভালো হওয়ার অঙ্গিকার করি। আর তাতে যদি করোনা মহামারি কেটে যাই তাহলে সেটাই মঙ্গল।
লেখকঃ আইন বিশ্লেষক, কলামিস্ট এবং গবেষক। ইমেইল-bdjdb1984du@gmail.com