মুহাম্মদ আহসান হাবীব
সাফল্যের একমাত্র সরলপথ হলো আল্লাহর নির্দেশিত পথ। মহান রব তাঁর বান্দাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং দান করেছেন উত্তম জীবন-বিধান আল-কুরআন। আর তাদের মাঝে আদর্শ হিসেবে পাঠিয়েছেন সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব মুহাম্মাদ (স.) ও তাঁর জীবনদর্শনকে। যাতে তাঁর প্রদর্শিত পথকে অনুসরণ করে মানবসম্প্রদায় সত্যকে খুঁজে পেতে পারে খুব সহজেই। যারা একনিষ্ঠভাবে কুরআন ও মুহাম্মাদ (স.) এর রেখে যাওয়া হাদিসকে অনুসরণ করবে তারা কখনোই বিপথগামী হতে পারে না। বরং সাফল্যের সরল পথ লাভ করা তাদের জন্য অতি সহজ। সত্যে বিশ্বাসীরা সবসময় শুকরিয়া আদায়ে সচেতন। জীবনের প্রতিক্ষণে তারা অনুসরণ করে কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত সকল বাণীকে। তারা সত্য ও সাফল্যের সরলপথে চলতেই সবচেয়ে বেশি আগ্রহী। তাদের জীবনযাপনের পদ্ধতিও কুরআন ও হাদিস কেন্দ্রিক।
সুতরাং, মানবসম্প্রদায়ের জন্য কুরআন ও হাদিস-ই হোক জীবনের শ্রেষ্ঠ গাইড ও অনুপ্রেরণার উৎস।
আমাদের সুন্দর ও সুস্থ জীবনের জন্য মহান আল্লাহ যতগুলো নিয়ামত নির্ধারণ করেছেন তারমধ্যে অন্যতম একটি নিয়ামত হলো- রোজা। এর ফজিলত সম্পর্কে সহস্রাব্দ বছর ধরে চিন্তা, আলোচনা ও গবেষণা হয়ে এসেছে। লেখা হয়েছে শত-শত বই, বিশ্লেষণধর্মী আর্টিকেল ও গবেষণাপত্র। সে-সবের ফলশ্রুতিতে অত্যন্ত আনন্দের সংবাদ এই যে, রোজা সম্পর্কে চিন্তা, আলোচনা ও গবেষণার মধ্যদিয়ে যে সিদ্ধান্ত গুলো সামনে এসেছে তার সবটুকুই মানুষের জন্য ইতিবাচক ও কল্যাণকর। যাকে সহজভাবে বলা যায় মানবদেহ-মনের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটা শুধু ইসলাম ধর্মের ভিত্তিতেই স্বীকৃত সত্য নয়; বরং এটি এখন বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত সত্য। কথিত আছে রোজার শারীরিক উপকারিতার বিষয় নিয়ে গবেষণা করে একজন বিজ্ঞানী নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন। নিশ্চয়ই এটি একটি দারুণ ব্যাপার। এমন সাফল্য সত্যিই কুরআন, হাদিস ও ইসলামকে আরো বেশি মর্যাদা প্রদান করে।
যে বিধান স্বয়ং আল্লাহ পাঠিয়েছেন সে বিধানের প্রসঙ্গ নিয়ে যাঁরাই চিন্তা, আলোচনা ও গবেষণায় নিজেদেরকে মগ্ন রাখবেন তাঁরাই সে-সবের বিস্ময়কর আবিষ্কার করতে সক্ষম হবেন। কুরআনের থেকে বিস্ময়কর ও যৌক্তিক কিতাব পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি নেই। এটাই সত্য নয় কি? সেই কুরআনে একাধিক জায়গায় বর্ণিত হয়েছে রোজা ও তার গুরুত্ব সম্পর্কে। রোজা সম্পর্কে আল্লাহ সূরা বাকারার ১৮৩ নম্বর আয়াতে বলেন, “হে বিশ্বাসীগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন করা হয়েছিল তোমাদের পূর্বসূরিদের ওপর। যাতে তোমরা আল্লাহ-সচেতন থাকতে পারো।” ফরজ অর্থ- যা অবশ্যই মেনে চলতে হয়। আর আল্লাহ সচেতন হওয়ার মানে হলো- আল্লাহ সম্পর্কে জানা। তাঁর বিধান সম্পর্কে সুস্পষ্ট জ্ঞান অর্জন করা। বস্তুত তাঁর সমস্ত হুকুম বিনাশর্তে ধারণ ও পালন করাই হলো আল্লাহ সচেতনতা।
প্রিয় পাঠক,যেহেতু বিশ্বাসীদের জন্য রোজা ফরজ করা হয়েছে। তাই নিজেকে এই গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামত থেকে বঞ্চিত করা অবশ্যই কোনো সচেতন বান্দার কাজ হতে পরে না। নিজেকে পরিশুদ্ধ করার জন্য এর চায়ে উত্তম সময় বছরের আর কোনো মাসে নেই। যার মন, চিন্তা ও কাজ শুদ্ধ তিনি আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় বান্দা হিসেবে বিবেচিত। একজন পরিশুদ্ধ মানুষ মাত্রই একজন মহামানব। আপনারা জানেন যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে এই মাসে বান্দার জন্য অতিরিক্ত রিজিক ও কল্যাণের ঘোষণা করা হয়েছে কুরআন ও হাদিসে। বিশেষ সমস্যা, অসুস্থতা ও সফরকারীদের জন্য দেওয়া হয়েছে বিকল্প সুবিধা। অর্থাৎ- কেউ রোজা রাখতে অক্ষম হলে সে কোনো অভাবগ্রস্থ এক বা একাধিক ব্যক্তিকে খাদ্য দান করবে।
অথবা অন্য কেনো মাসে তা (রোজা) আদায় করে নিবে। আরো বলা হয়েছ – কেউ যদি অতিরিক্ত কোনো কল্যাণকর কাজে নিজেকে নিয়জিত রাখে তাহলে আল্লাহও তাকে অতিরিক্ত কল্যাণ দান করবেন। এছাড়াও এই মাসের সবচেয়ে বড় তাৎপর্যের বিষয় হলো – সর্বোত্তম জীবন-বিধান কুরআন নাজিলের মাস। এর (কুরআন) থেকে উত্তম নিয়ামত বান্দার জন্য আর কী হতে পারে? এটা স্বীকার করতেই হয় যে, কুরআন বান্দার জন্য সবচেয়ে দামী নিয়ামত। কারণ কুরআন হলো মানুষের জন্যে সঠিক জীবনদৃষ্টি, সত্যপথের দিশারী, ন্যায়-অন্যায় ও সত্য-মিথ্যা নিরূপণের নিরঙ্কুশ মানদণ্ড। যারাই এই কুরআনকে জীবন পথে মেনে চলেছে তাদের-ই জীবন হয়েছে সুন্দর, কল্যাণময় ও আলোকিত। মূলত তারা লাভ করেছে আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ। আর যারা আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ লাভ করে তাদের দু’জীবন-ই কল্যাণকর। কুরআনের জ্ঞান অন্তভূক্ত হোক প্রত্যেক মানাবের ভিতর। আল্লাহ বলেন, “এ সেই কিতাব, যাতে কোনো সন্দেহ নেই। এই কিতাব আল্লাহ-সচেতনদের পথপ্রদর্শক।” [সূরা বাকারা, আয়াত: ২]
পুনশ্চ: মহান রব আমাদের সকলকে তাঁর নির্দেশিত পথে চলার তাওফিক দান করুন। এবং সেই সাথে সকলকে সুস্থ রাখুন যাতে রোজার ফরজ ও অন্যান্য বিষয় গুলো আদায় করা বান্দার জন্য সহজ হয়ে যায়।
লেখকঃ মু. আহসান হাবিব, শিক্ষক ও লেখক, ডাক্তার বাড়ি, গাইবান্ধা।