সব
facebook apsnews24.com
মু. আহসান হাবীব এর প্রবন্ধ- চিন্তা: সুখ ও দুঃখ - APSNews24.Com

মু. আহসান হাবীব এর প্রবন্ধ- চিন্তা: সুখ ও দুঃখ

মু. আহসান হাবীব এর প্রবন্ধ- চিন্তা: সুখ ও দুঃখ

মু. আহসান হাবীব

[ক]

চিন্তা করা ভালো কিন্তু কোনো বিষয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করা কখনোই উচিৎ নয়। অতিরিক্ত চিন্তা মানুষের ভিতরের সুখকে নষ্ট করে দেয়। ছোট্ট এক জীবন অসুন্দর চিন্তা করে অতিবাহিত করার কেনো অর্থই হয় না। যেটাতে নিজের সুখ থাকে, সেটা খুঁজে নিতে পারাটাই হলো সবচেয়ে বড় প্রজ্ঞা। সাধারণ মানুষ হওয়া যেমন সহজ নয়; তেমনি সাধারণভাবে জীবনযাপন করাও সহজ নয়। ‘সাধারণ’ কথাটা শুনতে সহজ মনে হলেও সাধারণ বিষয়টা নিজের মাঝে ধারণ করা অবশ্যই সহজ কোনো কাজ নয়। ‘সাধারণ জীবন মানেই সুন্দর জীবন’ এটা যেদিন আমরা ভিতর থেকে উপলব্ধি করতে পারবো, সেইদিন জীবন পাপ ও ব্যধি মুক্ত  হবে। যে জীবন পাপ ও ব্যধি মুক্ত, সে জীবনই প্রকৃত সুখী জীবন। গৌতম বুদ্ধ বলেন, “Overthinking is the biggest cause of unhappiness.” সুতরাং, সুখী জীবনযাপনের জন্য অতিরিক্ত চিন্তা করা কোনো অপরিহার্য কর্ম নয়। বরং যায়া অতিরিক্ত চিন্তামুক্ত তারাই প্রকৃত সুখী ও সমৃদ্ধ।

[খ]

জীবনে চলতে গিয়ে হয়তো অনেক মানুষের প্রয়োজন হয় কিন্তু সব মানুষ যে বন্ধুর মতো উপকারী ও আপন হবে এমনটা ভাবা কখনোই উচিৎ নয়। ‘মানুষ মানুষের জন্য’ এ কথা সবসময় সবার জন্য প্রযোজ্য নয়। এমন অসংখ্য উদাহরণ আছে যে, মানুষ সবচেয়ে বেশি হুমকির কারণ হয়েছে মানুষে জন্য। মানুষ যেমন সবচেয়ে বেশি সভ্য; ঠিক তেমনি মানুষ সবচেয়ে বেশি অসভ্যও। ডিকশনারিতে মানুষের একটা লিখিত সংজ্ঞা থাকলেও প্রকৃতপক্ষে মানুষের নির্দিষ্ট কোনো সংজ্ঞা নেই। কারণ পৃথিবীর প্রত্যেকটি মনুষ গঠন, চিন্তা ও সৃজনশীলতার দিক থেকে ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। কেবল শারীরিক স্ট্রাকচার (মানুষের পেট থেকে মানুষ জন্মানো) দেখেই মানুষকে মানুষ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করাটা একপ্রকার মূর্খতা। মানুষ রহস্যময়। মানুষের ভিতর যে পরিমাণ রহস্য লুকিয়ে থাকে সে পরিমাণ রহস্য আর কোনো সৃষ্টির মধ্যে নেই। এই রহস্যের পরিমাণ কত? ব্যক্তি তা নিজেও আন্দাজ করতে সক্ষম নয়। এটা ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণের বাহিরে। পরিবেশ ও পরিস্থিতির উপর মানুষের ভিন্ন-ভিন্ন রহস্যের দ্বার উন্মোচিত হয়। হয়তো সারাজীবন একজন মানুষকে আমরা যেমন বৈশিষ্ট্যের ধারক হিসেবে দেখে আসি, পরিবেশ ও পরিস্থিতির কারণে তাকে অনেকসময় দেখতে হয় সম্পূর্ণ বিপরীত বৈশিষ্ট্যে। এই বৈশিষ্ট্যগত পরিবর্তন ব্যক্তির অধীনে নয়। বরং ব্যক্তি তখন পরিবেশ ও পরিস্থিতির অধীন হয়ে যায়। প্রিয় মানুষটিকেও তখন কারো কাছে অপ্রিয় হয়ে ওঠে; কিংবা অপ্রিয় মানুষটিও হয়তো হয়ে ওঠে প্রিয়। আজ-অব্দি পৃথিবীর কোনো বিজ্ঞান, দর্শন ও মনস্তত্ত্ব এই ভিন্নধর্মী রহস্যের কারণ উদঘাটন করতে সক্ষম হয় নি। মানুষের রহস্যের কাছে এভাবেই পুঁথিগতবিদ্যা ও জ্ঞানের পরাজয় ঘটে।

[গ]

এই পৃথিবী কারো মতো নয়; পৃথিবী তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য নিয়ে চলে। ‘পৃথিবীটা আমার মতো হবে’ এমন চিন্তা করাটা বোকামি। পৃথিবী আসলে শুধুই পৃথিবীর মতো। যেমন- একজন মানুষ কেবলই নিজের মতো। তার (পৃথিবী) আপন বৈশিষ্ট্যে সে সবসময় অটল। পৃথিবীর কাছে কারো কোনো স্পেশাল মূল্য নেই। কেউ পৃথিবীতে থাকলেও পৃথিবী যেভাবে চলে, কেউ পৃথিবীতে না থাকলেও পৃথিবী একইভাবে চলবে এটাই ধ্রুব সত্য। পৃথিবী ও প্রকৃতি কারো মুখাপেক্ষী নয়; বরঞ্চ ব্যক্তি সর্বদাই পৃথিবী ও প্রকৃতির মুখাপেক্ষী। পৃথিবী তার কাছে তেমন হিসেবে ধরা দেয়; যার চিন্তা করার পদ্ধতি যেমন। মানুষ তার সুখ-দুঃখের জন্য যতই পৃথিবীকে দায়ী করুক না কেনো তাতে পৃথিবীর কিচ্ছু আসে যায় না। সত্য হলো- মানুষের সুখ-দুঃখের কারণ পৃথিবী, প্রকৃতি কিংবা অন্যকেউ নয়। মানুষ নিজেই তার সুখ-দুঃখের একমাত্র কারণ। বুদ্ধ বলেন, “Nobody can make you happy until you’re happy with yourself first.” সুখ-দুঃখ অগ্রভাগক্ষেত্রে দৃষ্টিভঙ্গির উপর নির্ভরশীল। যার পর্যবেক্ষণ করার সক্ষমতা যত গভীর তার দৃষ্টিভঙ্গি তত স্বচ্ছ। আর যার দৃষ্টিভঙ্গি যত স্বচ্ছ সে তুলনামূলকভাবে তত বেশি সুখী। আমরা যখন রেগে যাই তখন আমাদের ভিতরে থাকা সুখের অবস্থান নেমে যায় শূন্যের সীমানায়। আর সেই মূহুর্তে আমরা যাকিছু করি তাই ভুল ও নেতিবাচক হিসেবে সাব্যস্ত হয়। সেটা বুঝতে পারি তখন; যখন পরিবেশ ও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে। যেখানে পরিবেশ ও পরিস্থিতি যত স্বাভাবিক সুখের উপস্থিতি সেখান তত বেশি। সাধারণ পরিবেশ-পরিস্থিতি মাত্রই সুখী পরিবেশ। অধিকাংশ মানুষ-ই সেইসময় (রাগের মূহুর্তে) ভুলে যায় যে, “We are the first victim of our own anger.” যিনি এটা কখনো ভুলে যান না তিনি কখনোই রাগ করতে পারেন না। সুতরাং, সুখকে বিনাশ করার সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার হলো- রাগ। প্রচলিত প্রবাদে বলা হয়, “রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন।” এছাড়া মুহাম্মাদ (স.) বলেন, “শক্তিশালী সে, যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে।”

[ঘ]

গৌতম বুদ্ধ বলেন, “Never show your weakness to the world. Becaus world is much interested to play with it.” জীবনে অসুখী ও বিপদগ্রস্ত হওয়ার অন্যতম একটি কারণ হিসেবে বিবেচিত হলো- নিজের দূর্বলতা অন্যের কাছে বলে বেড়ানো। কারো দূর্বলতার পূর্ণ সমাধান কেউ করে দিতে পারে না এই পৃথিবীতে এবং এটাই সত্য। নিজের দূর্বলতা নিজেকেই সমাধান করতে হয়। জ্ঞানী ও স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গির মানুষ মাত্রই তারা ঠিক এটাই করেন। কেউ যদি নিজে জেগে না ওঠে তাহলে তাকে কেউ জাগিয়ে তুলতে পারে না। নিজের দূর্বল দিক যখন অন্যের কাছে প্রকাশ করা হয় তখন তারা সেটার সুযোগ নিয়ে সহজেই ব্যক্তির ক্ষতি করতে পারে। আর এটাই পরিশেষে ব্যক্তির জন্য দুঃখের কারণ হিসেবে পরিণত হয়। আজ যে বন্ধু; কাল সে যে শত্রু হবে না এর কোনো গ্যারান্টি নেই। বরং এটাই দৃশ্যমান যে, সময়ের বিবর্তনে কাছের মানুষরাই সবচেয়ে বড় শত্রুতে রূপ নেয়। সুতরাং, নিজের দূর্বলতা নিজের ভিতরে রেখে প্রচুর স্টাডি ও আন্তরিক পরিশ্রম করে যারা নিজেকে  শক্তিশালী করতে পারে তারাই শেষপর্যন্ত জ্ঞানী, সুখী ও জয়ী হয়।

[ঙ]

বস্তুগত পার্থিব সুখের চেয়ে অন্তরের সুখ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কেবল অর্থ-বিত্তের ভিতর যারা সুখ অনুসন্ধান করে তাদের ভিতর দীর্ঘকালের জন্য প্রকৃত সুখানুভূতির সৃষ্টি হয় না। দীর্ঘকাল প্রকৃত সুখানুভূতির অভিজ্ঞতা লাভের আগেই তারা চিরবিদায় নিয়ে চলে যায় পৃথিবী থেকে। সুন্দর জীবন গঠন হয় সুন্দর চিন্তা দ্বারা। সুন্দর চিন্তার অধিকারী হওয়ার সাথে যদি কেউ অর্থ-বিত্তে সমৃদ্ধ হয় তাতে কোনো দোষ নেই। চাইলে এই অর্থ-বিত্ত মানব কল্যাণে কাজে লাগিয়ে আরো সুখানুভূতির সাথে বাঁচা সম্ভব। মনে রাখা জরুরি, “Our beautiful life is the creation of our conscious and sub-conscious mind.” মনের ভিতরে যা উৎপন্ন হয় জীবনের মধ্যদিয়ে ঠিক তাই প্রকাশ পায়। অতিরিক্ত নেতিবাচক চিন্তার ফলে ব্যক্তির সচেতন মনোভাব নষ্ট হয়ে যায় এবং অবচেতন ভাবেই সে হয়ে ওঠে আগ্রাসী মনোভাবাপন্ন। জীবনে অসুখী হওয়ার জন্য এই আগ্রাসী মনোভাবাপন্ন হওয়াই যথেষ্ট। কিন্তু জীবনের জন্য তো অবশ্যই অসুখী হওয়াটা প্রত্যাশার বিষয় হতে পারে না, তাই না? অতএব, ভালো চিন্তা দ্বারা সুখকে আকর্ষণ করতে হবে। আর খারাপ চিন্তা মোটেই করা যাবে না। জীবন সুন্দর হয় তখন; যখন জীবনের চিন্তা ও সিদ্ধান্ত গুলো সুন্দর হয়।

একটি শ্রেয় বাক্য দিয়ে লেখাটি শেষ করি, “খারাপ চিন্তা খারাপ জীবনকে আকর্ষণ করে; আর ভালো চিন্তা ভালো জীবনকে আকর্ষণ করে। চিন্তাই সকল ফলাফলের মূল।”___________________

লেখক ও প্রাবন্ধিকঃ মু. আহসান হাবীব।ডাক্তার বাড়ি, গাইবান্ধা।

আপনার মতামত লিখুন :

ভারতের বিখ্যাত গজল শিল্পী পঙ্কজ উদাস এর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ

ভারতের বিখ্যাত গজল শিল্পী পঙ্কজ উদাস এর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ

কবিতা ‘তেলবাজি’

কবিতা ‘তেলবাজি’

কবিতা ‘যুদ্ধ মানে’

কবিতা ‘যুদ্ধ মানে’

রক্তে কেনা মাতৃভাষা

রক্তে কেনা মাতৃভাষা

কবিতা ‘হতে হলে’

কবিতা ‘হতে হলে’

কবিতা, ‘তাহলে কেমন হতো’

কবিতা, ‘তাহলে কেমন হতো’

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার: ApsNews24.Com (২০১২-২০২০)

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
০১৬২৫৪৬১৮৭৬

editor@apsnews24.com, info@apsnews24.com
Developed By Feroj