মুনতাসির রহমান মাহদীঃ আচ্ছা বলুন তো, পণ্যের কোয়ালিটি না-কি বিক্রয় কৌশল, ব্যবসায়ের পরিধি বাড়াতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কোনটি?
আজকে এমনই একটা প্রশ্ন পেলাম, মনে হলো এর উত্তরটা আপনাদের সাথে’ও শেয়ার করা প্রয়োজন। চলুন তবে, জেনে আসি ব্যবসায়ের পরিধি বাড়াতে তুলনামূলক বেশি প্রয়োজনীয় কোনটি।
শুরুটা করি পণ্যের কোয়ালিটি নিয়ে৷ প্রচলিত একটি প্রবাদ আছে, ‘কোয়ালিটি ইজ দ্য বেস্ট মার্কেটিং টুল’৷ নিশ্চয়ই জানেন, ব্যবসায়ের পরিধি বাড়াতে পণ্য বা সেবা আপনাকে বিক্রি করতেই হবে।
কারণ পণ্য উৎপাদন করতে পারলে বা সেবা দিতে পারলেই হবে না, অর্থ উপার্জন হবে বিক্রয় থেকে। আর ব্যবসায়ের প্রধান লক্ষ্য থাকে অর্থ উপার্জন করা।
তাই আপনাকে পণ্য বা সেবা বিক্রি করতে হবে। আর বিক্রি বাড়াতে পণ্য বা সেবার মান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
যখন কেউ আপনার থেকে পণ্য বা সেবা ক্রয় করার পর অনুভব করে যে সে ঠকেছে কিংবা পণ্যের গুনগত মান নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয় তার মধ্যে, তবে সে দ্বিতীয়বার আপনার থেকে পণ্য বা সেবা ক্রয় করবে এমন সম্ভাবনা খুব কম।
ফলে আপনি একজন গ্রাহক হারাচ্ছেন৷ একইসাথে যদি সে তার পরিচিতদের সাথে আপনার পণ্য বা সেবার মান নিয়ে আলোচনা করে, তবে আপনি সম্ভাব্য আরো কিছু গ্রাহক হারাতে পারেন৷
ব্যাপারটা উল্টো’ও হতে পারে। আপনার পণ্য বা সেবার মান ভালো হলে একজন ক্রেতা বারবার আপনার থেকে পণ্য ক্রয় করবে। একইসাথে তার পরিচিতদের কাছে আপনার প্রচার করে দিবে ফ্রি-তে।
এই ফ্রি-তে করা প্রচারণা বেশ কাজের। যেমন কেউ আপনার থেকে একটা স্মার্টফোন কিনলো, সে আপনার থেকে ভালো ব্যবহার আর পণ্য পেয়েছে। এবার তার পরিচিত কারোর স্মার্টফোন ক্রয়ের প্রয়োজন হলে সে তাকে আপনার ব্যাপারে বলে দিতে পারে।
যদি সে এটা করে, তবে আপনি আরো একজন ক্রেতা পাচ্ছেন। আর সে এটা করবে এমন সম্ভাবনা অবশ্যই আছে। কারণ আমরা নিজেরাই এমনটা করি। কারোর থেকে ভালো সার্ভিস পেলে তার ব্যাপারে অন্যদের কাছে বলি।
তো বুঝতেই পারছেন, ব্যবসায়ের পরিধি বাড়াতে পণ্য বা সেবার কোয়ালিটি কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
এবার আসি কৌশলে। ব্যবসায়ের পরিধি বাড়াতে কৌশল কতটা গুরুত্বপূর্ণ, জেনে নেয়া যাক।
ধরুন একটি দোকানে একইসাথে প্রাণ আর ফ্রেশে’র মিনারেল ওয়াটার পাওয়া যায়। দুটোর মূল্য সমান, বোতলের আকার সমান, পানির পরিমাণ সমান, স্বাদ একইরকম, মান’ও একই রকম।
তো একজন ক্রেতা এসে পানি ক্রয় করতে চাইলে দোকানদার তার দিকে প্রাণের এক বোতল পানি এগিয়ে দিলো। কিন্তু সে প্রাণের পানি না নিয়ে বলল, ফ্রেশ দিতে।
খেয়াল করুন, দুটো প্রতিষ্ঠানের পণ্যই একইরকম। তাও ক্রেতা নির্দিষ্ট একটি প্রতিষ্ঠানের পণ্য ক্রয় করতে আগ্রহী হলো।
এই যে আলাদা আলাদা প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত একই মানের পণ্যের ক্ষেত্রে গ্রাহকের চাহিদা বা বিক্রয়ের তারতম্য হয়, এর কারণ মূলত বিক্রয় কৌশল।
যদি আপনি পণ্য বা সেবা বিক্রয়ের জন্য যথোপযুক্ত কৌশল অবলম্বন না করেন, তবে পণ্যের মান ভালো হলে’ও গ্রাহক আপনার পণ্য ক্রয়ে আগ্রহী হবে না৷
কারণ এখন প্রত্যেকটা পণ্য বা সেবার ক্ষেত্রে গ্রাহকদের কাছে অপশন থাকে। যেহেতু একটি পণ্য নিয়ে একাধিক প্রতিষ্ঠান কাজ করে, তাই সবাই চেষ্টা করে গ্রাহকদের মনে জায়গা করে নিতে বা আস্থা অর্জন করতে।
এই দিক থেকে বিবেচনা করলে বলতে হয় ব্যবসায়ের পরিধি বাড়াতে তুলনামূলক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিক্রয় কৌশল। তবে শুধুমাত্র বিক্রয়ের কৌশল প্রয়োগ করে আপনি খুব বেশি দূর এগোতে পারবেন না।
আপনাকে পণ্য বা সেবার মানের দিকেও মনযোগী হতে হবে। আপনি হয়তো বুঝিয়ে-সুঝিয়ে একজনের কাছে পণ্য বিক্রি করে ফেললেন, কিন্তু যখন যে উপলব্ধি করবে যে আপনি তাকে ভালো পণ্য দেননি, তখন সে আপনার থেকে দ্বিতীয়বার পণ্য বা সেবা ক্রয় না করার সিদ্ধান্ত নিবে৷
ব্যাপারটা একেবারেই স্বাভাবিক। আর তাই আপনার উচিৎ হবে একইসাথে কৌশল আর মানের দিকে গুরুত্ব দেয়া। বিক্রয় কৌশল গ্রাহক তৈরি করবে আর গুনগত মান গ্রাহক ধরে রাখবে।
আশাকরি বুঝতে পেরেছেন ব্যাপারটা।