বইমেলার শুরুটা ছিল খুবই সামান্য উদ্যোগে। সেটার উদ্যোক্তা ছিলেন চিত্তরঞ্জন সাহা। মুক্তধারার। তখন বাংলা একাডেমির মাঠে একটি মাত্র স্টল। সেখানে তিনটি ঐতিহ্য সৃষ্টি হয়েছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও চ্যানেই আই টিভিতে সাক্ষাৎ এ উক্ত কথা গুলো বলেন লেখক, প্রকাশক ও ডিইউজে সদস্য মোহাম্মদ অলিদ সিদ্দিকী তালুকদার।
প্রথমত, বইটি মানুষকে কিনতে হবে এবং বই একটি বিনিয়োগের বিষয়। যাঁরা বইটি প্রকাশ করেন তাঁরা অর্থ বিনিয়োগ করেন। এটা প্রবলভাবে তুলে ধরা হয়েছে। আগে তো বাংলাবাজারে গেলেই বইয়ের দেখা মিলত। নিউ মার্কেটে বইয়ের দোকান ছিল, স্টেডিয়াম মার্কেটে বইয়ের দোকান ছিল। বইমেলা আরো কেন্দ্রীয়ভাবে মনের ভেতর নিয়ে এলো। পাশাপাশি নতুন লেখক সৃষ্টিতে যে তাড়না থাকে বা নতুন লেখককে যে সমর্থন দিতে হয় সেটা জরুরি। এত দিনে এই মেলাটা শক্তিশালী হয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে।
দ্বিতীয় ঐতিহ্য ছিল লেখকদের সঙ্গে পাঠকদের সম্পর্ক সৃষ্টি। তখন তো মিডিয়ার এত প্রবল আকর্ষণ ছিল না। তখন পাঠকের সঙ্গে লেখকের একটা সম্পর্ক ছিল। এত সরাসরি সম্পর্ক ছিল না। ওই বইমেলায় দেখা যাচ্ছে একটা আড্ডার ঐতিহ্য ছিল। বিখ্যাত লেখক থেকে সেই স্বল্পখ্যাত লেখকরা সেই আড্ডায় যোগ দিতেন। পাঠকরা আমন্ত্রিত ছিল সেই আড্ডায়। এই যে আদান-প্রদান হতো এই আড্ডাগুলোতে, আমি মনে করি আমাদের সাহিত্যের উৎকর্ষের পেছনে তার একটা ভূমিকা আছে। যখন একজন পাঠক লেখককে সামনে থেকে দেখেন, তাঁর কথা শোনেন, তাঁর চিন্তাভাবনা দর্শনকে অনুভব করতে পারেন, তখন ওই পাঠকের জন্য ওই সাহিত্যিকের সাহিত্য একটা আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা হয়ে দাঁড়ায়।
এই ঐতিহ্য কিছুটা ম্রিয়মাণ হয়েছে এখন। এবারের একুশে বইমেলা ২০২১। মাঝখানে বাংলা একাডেমিতে লেখক কুঞ্জ নামে একটি কর্নার তৈরি হয়েছিল। কিছুদিন পর সেখানে পুলিশ বসতে শুরু করেছিল। আমি তখন এটির নাম দিয়েছিলাম পুলিশ কুঞ্জ। তাতে কোনো অসুবিধা নেই, কারণ বইমেলায় তো আইন-শৃঙ্খলার বিষয়টি গুরুত্ব পায়। আর বিশেষ করে যখন কয়েকটি আক্রমণ হলো লেখক-ব্লগারদের ওপর, তখন নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। শুরুর দিকে তো নিরাপত্তা নিয়ে কেউ ভাবত না। তখন সত্যিকার খোলামেলা, উদার, প্রাজ্ঞ সব চিন্তার মানুষজন মেলায় যেতেন এবং প্রত্যেকে মেলাকে একটা সুন্দর চোখে দেখতেন। সেটি অবশ্য এখনো আছে। কিন্তু নিরাপত্তার সমস্যাটি আমাদের দেখা দিয়েছে। এটি দ্বিতীয় ঐতিহ্য লেখক এবং পাঠকদের পাশাপাশি থাকা এবং তাঁদের ভেতর একটা অন্তরঙ্গ সংলাপ চালিয়ে যাওয়া। যখন মেলা কিছু বড় হলো, হুমায়ূন আহমেদ মেলায় বসে অটোগ্রাফ দিতে শুরু করলেন এবং হুমায়ুন আজাদ বিশেষ করে আগামী প্রকাশনীতে অটোগ্রাফ দিতেন, স্বাক্ষর দিতেন তাঁর বইয়ের জন্য; তখন সেটা আরেকটু ভিন্নভাবে দেখা দিল।
আমি মনে করি, হুমায়ূন আহমেদ এবং হুমায়ুন আজাদ দুজনই পাঠক সৃষ্টিতে বড় ভূমিকা রেখেছেন। সবচেয়ে বড় ভূমিকা অবশ্যই হুমায়ূন আহমেদের। তৃতীয় ঐতিহ্য ছিল, যেটা এখন আর দেখা যায় না। শুধু লেখক ও পাঠক মেলায় থাকবেন তা নয়, শিল্পীরাও মেলায় থাকবেন। এই বাংলা একাডেমির মাঠে এস এম সুলতান ছবি আঁকতেন মাত্র ৫০০ টাকায়; যদিও তখন ৫০০ টাকা অনেক টাকা ছিল। কারো কারো এক মাসের বেতন ছিল।এবারের বইমেলা খুব খারাপ অবস্থায় চলছে দেখতেছি। কারণ একদিকে মহামারি করোনাভাইরাস সেই সাথে লকডাউন। অনেক প্রকাশকরা মেলায় স্টল বন্ধ করে দিয়েছেন লোকসানের ঝুঁকির সম্মুখীন হয়ে। এবারের বইমেলায় আমি প্রতিদিনই আমার আসা হয়েছে।
কিন্তু বিগত সময়ের বইমেলার মধ্যে এবারের মেলা হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ এলোমেলো খড়াকাটা অবস্থা। মেলায় ঘুরে দেখা গেছে যে সমস্ত প্রকাশনা স্টলের লোকে লোকারণ্য ভরপুর উপস্থিতি দৃশ্য থাকার কথা সেখানে প্রকাশক ও কর্মচারীরা হতাশায় সময় কাটাচ্ছেন। এমনকি অনেক স্টলে বেলা ২ টা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত বিক্রি শুন্য কোটায়। প্রকাশকরা কর্মচারীদের প্রতিদিনের যাতায়াত খরচ দিতে ও হিমশিম খাচ্ছেন। এবারের বইমেলা নিয়ে বাংলা একাডেমি গাঁ ছাড়া ভাব অবস্থা। তারপরও খোরাকাটা এবারের বইমেলা নিয়ে আমার প্রত্যাশা, আমরা ও পাঠক দর্শক শ্রোতারা যেন অনেক ভালো বই পাই। কারণ প্রতিবছর তো একুশকেন্দ্রিক প্রকাশনা। আমি অনেক তরুণের লেখা পড়ি। আমি নিশ্চিত, আমরা এবার কিছু ভালো বই পাব।
মেলায় দেশের সুনামধন্য জ্ঞান সৃজনশীল প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান দি ইউনিভার্সেল একাডেমি ( প্যাভিলিয়ন-২৬) প্রতিবছরের মতো এবারও দেশের প্রখ্যাত সুনামধন্য লেখক, গবেষক, বুদ্ধিজীবি ও তরুণ প্রজন্মের লেখকসহ তাদের বইগুলো নিয়ে এসেছে এই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। উক্ত প্রকাশনায় গুণগত মানানসই মানসম্পন্ন বইগুলো পাওয়া যাচ্ছে । আমি গণমাধ্যমের সহায়তায় মেলায় আগত সু প্রিয় পাঠক দর্শক শ্রোতাদের নিকট আহবান জানাচ্ছি আপনারা আমাদের দি ইউনিভার্সেল একাডেমি থেকে মহামূল্যবান বইগুলো সংগ্রহ করুন । পরিশেষে উক্ত প্রকাশনা দি ইউনিভার্সেল একাডেমির পক্ষ থেকে পাঠক দর্শক শ্রোতাদের সাদর আমন্ত্রণ জানাচ্ছি সেইসাথে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা রইলো।