সব
facebook apsnews24.com
মাহে রমজানের ইবাদত ও করণীয় - APSNews24.Com

মাহে রমজানের ইবাদত ও করণীয়

মাহে রমজানের ইবাদত ও করণীয়

বিল্লাল বিন কাশেম উপ-পরিচালক ইসলামিক ফাউন্ডেশন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

রমজান হচ্ছে আরবি বারো মাসের মধ্যে নবম মাস। মুসলিম বিশ্ব তথা মুসলাম সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে এটি সর্বশ্রেষ্ঠ ও সবচেয়ে সম্মানিত মাস। রোজা শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে দিন। আর আরবিতে এর নাম সাওম বা সিয়াম। যার শাব্দিক অর্থ হচ্ছে কোনো কাজ থেকে বিরত থাকা। সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার এবং সেই সাথে যাবতীয় ভোগ-বিলাস থেকেও বিরত থাকার নাম রোজা। ইসলামের বিধান অনুসারে, প্রতিটি সবল মুসলমানের জন্য রমজানে রোজা রাখা ফরজ বা অবশ্য পালনীয় ইবাদত। পবিত্র কোরআন শরীফে আল্লাহপাক এরশাদ করেন, ‘হে ইমানদারগণ! তোমাদের জন্য রোজা/সিমাম ফরজ করা হলো, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তিদের উপর; যাতে করে তোমরা মুত্তাকি/তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ -সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৩।

মনে রাখতে হবে, রোজা বা সাওম তাদের ওপর ফরজ; যারা প্রাপ্তবয়স্ক, স্বাভাবিক জ্ঞানসম্পন্ন ও শারীরিকভাবে রোজা পালনে সক্ষম। যদি কোন ব্যক্তি সফর অবস্থায় থাকেন অথবা অসুস্থতার কারণে রোজা পালনে অক্ষম হন; তবে তিনি রোজা পরে কাজা আদায় করতে পারবেন। আর যদি কোনো ব্যক্তি সুস্থ হয়ে কাজা আদায় করার সুযোগ বা সামর্থ্য ফিরে না পাওয়ার আশঙ্কা করেন, তবে তিনি রোজার ফিদইয়া বা একজন গরীবকে এক ফিতরার সমান খাবার খাওয়াবেন অথবা প্রদান করবেন। সুরা-২ বাকারা ১৮৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ এরশাদ করেন, “রোজা নির্দিষ্ট কিছু দিন। তাই তোমাদের মধ্যে কেউ যদি অসুস্থ থাকে, বা সফরে থাকে, তাহলে পরে একই সংখ্যক দিন পূরণ করবে। আর যাদের জন্য রোজা রাখা ভীষণ কষ্টের, তাদের জন্য উপায় রয়েছে; তারা একই সংখ্যক দিন একজন গরিব মানুষকে খাওয়াবে। আর যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বাড়তি ভালো কাজ করে, সেটা তার জন্যই কল্যাণ হবে। রোজা রাখাটাই তোমাদের জন্যই ভালো, যদি তোমরা জানতে। [আল-বাক্বারাহ ১৮৪] আসন্ন রমজান একেবারেই সন্নিকটে। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৪ কিংবা ২৫ এপ্রিল শুরু হবে রমজান। রহমত, ইবাদত আর মাগফিরাতের এ রমজান মাসে বেশকিছু ইবাদতে ব্যাপক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। রমজানের তারাবি হলো সন্ধ্যাকলীন বিশেষ ইবাদত তথা নামাজ।

বিশ্বব্যাপী দীর্ঘ সময়ে পবিত্র কুরআন খতমের মাধ্যমে এ নামাজ আদায় করা হয়। তারাবিহ নামাজের সময় মসজিদে ব্যাপক জনসমাগম হয়। বিশ্বব্যাপী লকডাউন পরিস্থিতি অতিবাহিত করছে মানুষ। বর্তমান পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলে কোনো দেশই যথাযথ মর্যাদায় তারাবি নামাজ আদায় করতে পারবে না। তারাবির যে ঐতিহাসিক ঐতিহ্য সেটা কিছুটা ম্লান হবে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থেই এটি করতে হবে। বাড়িতে কিংবা ঘরে একাকি স্বল্প পরিসরে বা বাসার সবাইকে নিয়ে জামাতের সাথে আদায় করতে হবে তারাবির নামাজ। এ জন্য এখন থেকেই প্রত্যেক মুমিন মুসলমানকে প্রস্তুতি নিতে হবে।

করোনা সংক্রমণের কারণে এবার বিশ্বের বেশির ভাগ দেশেই চলছে লকডাউন। কেউ চাইলেও মসজিদে নামাজের জামাআতে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। তাতে সবাইকে ব্যক্তি উদ্যোগে নিরাপদ পরিবেশে স্বল্প আকারে ঘরেই নামাজ আদায় করতে হবে। পবিত্র রমজানে ব্যাপক জনসমাগমের মাধ্যমে অনেক ধর্মীয় আলোচনা কিংবা দোয়া অনুষ্ঠান উদযাপিত হয়। বিভিন্ন সংগঠন রমজান শীর্ষক আলোচনা ও ইফতার মাহফিল আয়োজন করে। অনেকে সেহরি রাত্রি নামের অনুষ্ঠান আয়োজন করেন। এবারের রমজানে এসব অনুষ্ঠান থেকে বিরত থাকতে হবে। এদিকে, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব এ্যাডভোকেট শেখ মোঃ আব্দুল্লাহ সবাইকে বাসায় তারাবি পড়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।

মসজিদে দুইজন হাফেজ’সহ মোট ১২ জন তারাবি পড়বেন। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়েরর সিনিয়র তথ্য অফিসার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে রমজান মাসে মুসুল্লিদের বাসায় তারাবির নামাজ আদায়ের অনুরোধ জানানো হয়েছে। তবে ১০ জন মুসুল্লী + ২ জন হাফেজ সহ মোট ১২ জনের অংশগ্রহণে রমজান মাসে মসজিদ সমুহে তারাবির নামাজ আদায় করা যাবে। একই সাথে ইতোপুর্বে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় জারিকৃত মসজিদে জু’মা ও জামাতেে নামাজ আদায় বিষয়ক নির্দেশনা কার্যকর থাকবে। এছাড়া রমজান মাসে ইফতার মাহফিলের নামে কোন ধরনের সমাবেশ করা যাবেনা। এ বিষয়ে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় নির্দেশনাসহ শুক্রবার একটি সার্কুলার জারি করেছে।

তাকওয়া অর্জনের মাস রমজান। এ মাসকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম দশদিন রহমত, দ্বিতীয় দশদিন মাগফিরাত ও মাসের তৃতীয় ও শেষ দশদিন হচ্ছে নাজাতের। পবিত্র এ মাসে আল্লহ কোরআন নাজিল করেন। শ বে কদরও রমজান মাসে। জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাত লাভের মাস এ রমজান।রমজানের পরিপূর্ণ সুফল পেতে হলে চাই পরিপূর্ণ প্রস্তুতি। শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক প্রস্তুতির পাশাপাশি প্রয়োজন রমজানের বিশেষ ইবাদতের প্রস্তুতিরও। রমজান ও রোজা, তথা সিয়াম সাধনার বিধিবিধান, নিয়মকানুন, রীতিনীতি, মাসআলা মাসায়িল ভালোভাবে জেনে আমল করলেই রমজানের পরিপূর্ণ ফজিলত পাওয়া যাবে। তা না হলে রোজা উপবাস ভিন্ন আর কিছুই নয়। সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত রমজানের ইবাদত করার সুযোগ লাভে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি তাওবা-ইসতেগফার করা। এ শাবান মাসে রমজানের রহমত বরকত মাগফেরাত ও নাজাত লাভের জন্য দোয়া করা। বিশ্বনিবর শেখানো এ দোয়া বেশি বেশি পড়া- اَللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِىْ شَعْبَانَ وَ بَلِّغْنَا رَمَضَانَ উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি শাবানা ওয়া বাল্লিগনা রামাদান।’ অর্থ : হে আল্লাহ! শাবান মাসে আমাদের বরকত দান করুন আর আমাদের রমজানে পৌঁছে দিন।’

জেনে নেয়া ভালো: রোজা রাখার নিয়ত نويت ان اصوم غدا من شهر رمضان المبارك فرضا لك ياالله فتقبل منى انك انت السميع العليم উচ্চারণ: (নাওয়াইতু আন আছুমা গাদাম মিন শাহরি রমাজানাল মুবারাকি ফারদাল্লাকা, ইয়া আল্লাহু ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আনতাস সামিউল আলিম।) অর্থ: হে আল্লাহ! পবিত্র রমযানে আপনার পক্ষ হতে ফরয করা রোজা রাখার নিয়ত করলাম, অতএব আপনি আমার পক্ষ হতে কবুল করুন, নিশ্চয়ই আপনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী। ইফতার করার দোয়া اللهم لك صمت و على رزقك افطرت. উচ্চারণ: (আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া আলা রিযক্বিকা ওয়া আফতারতু বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমীন।) অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনারই সন্তুষ্টির জন্য রোজা রেখেছি এবং আপনারই দেয়া রিযিক্ব দ্বারা ইফতার করছি। রোজা ভঙের কারণসমূহ; ১. ইচ্ছাকৃত কিছু খেলে; ২. স্ত্রী সহবাস করলে; ৩. কুলি করার সময় হলকের নিচে পানি চলে গেলে; ৪. ইচ্ছকৃত মুখভরে বমি করলে; ৫. নাকে বা কানে ওষুধ বা কিছু প্রবেশ করালে; ৬. জোর করে কেউ রোজা ভাঙালে; ৭. ইনজেকশান বা স্যালাইনের মাধ্যমে দেহে ওষুধ পৌঁছালে; ৮. সূর্যাস্ত মনে করে ইফতার করার পর দেখা গেল সূর্যাস্ত হয়নি; ৯. পুরো রমজান মাস রোজার নিয়ত না করলে; ১০. দাঁত থেকে ছোলা পরিমান খাদ্যদ্রব্য গিলে ফেললে; ১১. ধূমপান বা আগরবাতি জ্বালিয়ে ধোঁয়া গ্রহণ করলে; ১২. মুখ ভর্তি বমি গিলে ফেললে; ১৩. রাত আছে মনে করে সুবহে সাদিকের পর কিছু খেলে; ১৪. মুখে পান রেখে ঘুমিয়ে পড়ে সুবহে সাদিকের জাগনা পেলে।

রোজার মাকরুহ হওয়ার কারণসমূহ; ১. কোনো জিনিস চিবানো বা চাখা; ২. কোনো দ্রব্য মুখে দিয়ে রাখা; ৩. গড়গড়া বা নাকের ভেতর পানি টেনে নিলে। পানি যদি নাক দিয়ে গলায় পৌঁছে যায়, তাহলে রোজা ভেঙে যাবে; ৪. ইচ্ছাকৃত মুখে থুথু জমা করে গিলে খেলে; ৫. গীবত, গালা-গালি ও ঝগড়া-ফাসাদ করলে; ৬. সারা দিন নাপাক অবস্থায় থাকলে; ৭. অস্থিরতা ও কাতরতা প্রকাশ করলে ও ৮. কয়লা, পাউডার, পেস্ট ও মাজন দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করলে। রমজানে বিশেষ কিছু সুন্নত রয়েছে- ১. রজব ও শাবান মাস থেকে রমজানের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা; ২. রজব ও শাবান মাসে অধিক পরিমাণে নফল রোজা রাখা ও নফল নামাজ আদায় করা; ৩. শাবান মাসের চাঁদের তারিখের হিসাব রাখা; ৪. রমজানের চাঁদ দেখা; ৫. সাহ্‌রি খাওয়া, ৬. তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা, ৭. ইফতার করা ও করানো, ৮. বিশ রাকাত তারাবির নামাজ আদায় করা, ৯. পবিত্র কোরআন বেশি বেশি তিলাওয়াত করা এবং ১০. ইতিকাফ করা; এছাড়াও রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোয় শবে কদরের সন্ধান করা এবং এই দোয়া পড়া, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্নি।’ অর্থ, ‘হে আল্লাহ!

আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমা পছন্দ করেন, সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দিন।’ রমজানে বিশেষ নফল আমলসমূহ হলো- পবিত্র কোরআন একাধিকবার খতম করা; কালিমা তৈয়্যেবা অধিক পাঠ করা; দরুদ শরিফ সর্বাধিক পরিমাণে পাঠ করা; তওবা ও ইস্তিগফার করতে থাকা; সর্বদা তসবিহ তাহলিল ও জিকির আজকার করতে থাকা; দ্বীনি শিক্ষা ও দ্বীনি দাওয়াতি কাজে মশগুল থাকা; ধর্মীয় বই-পুস্তক, কোরআন তাফসির, হাদিস, ফিকহ ও ইসলামি সাহিত্য নিজে পড়া ও অন্যকে পড়তে সাহায্য করা; দ্বীনি মজলিশ আয়োজন করা; অধীনস্থ কর্মচারী ও শ্রমিকদের কাজের চাপ কমিয়ে দেওয়া এবং তাঁদের পূর্ণ মজুরি ও অতিরিক্ত সম্মানী প্রদান করা; বেশি বেশি দান–খয়রাত করা ইত্যাদি (বুখারি শরিফ, প্রথম খণ্ড, ইমান অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: ৩৭, হাদিস: ৪৮, পৃষ্ঠা: ৩৮)। এছাড়া রমজানের সঙ্গে সম্পৃক্ত ওয়াজিব দুটি। যথা: সদকাতুল ফিতর আদায় করা ও ঈদের নামাজ পড়া। ঈদের দিন সকালে যিনি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক বা অধিকারী থাকবেন, তিনি তাঁর নিজের ও পরিবারের সব সদস্যের ফিতরা আদায় করবেন। যদি কেউ নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক না–ও থাকেন, তবু সুন্নত বা নফল হিসেবে হলেও সদকাতুল ফিতরা প্রদান করা উত্তম। উল্লেখ্য যে, হালাল বা বৈধ উপার্জন এবং হালাল রিজিক বা পবিত্র খাদ্য ছাড়া নামাজ, রোজা, হজ, যাকাতসহ কোনো ইবাদতই আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না।

বৈশ্বিক এ মহামারি করোনায় লকডাউনে অবস্থান করছে পুরো বিশ্ব। এরই মাঝে উপস্থিত হচ্ছে পবিত্র রমজান মাস। এ মহামারি থেকে নিরাময় লাভ করতে এখনো কোনো প্রতিষেধক তৈরি হয়নি। এর নেই কোনো কার্যকরী চিকিৎসা। এ থেকে মুক্ত থাকতে প্রয়োজন ঘরে অবস্থান করা। তাই এসময় মসজিদে নামাজ ও জামাত সীমিত রয়েছে। কেউ চাইলেও মসজিদে নামাজের জামাতে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। তাতে সবাইকে ব্যক্তি উদ্যোগে নিরাপদ পরিবেশে স্বল্প আকারে ঘরেই নামাজ আদায় করতে হবে। পরিস্থিতির কারণে ঘরে কিংবা নির্জন পরিবেশে যথাযথ দূরুত্ব বজায় রেখে বিশেষ সতর্কতার সঙ্গে ইতেকাফ করতে হবে। ইতেকাফে সীমাবদ্ধতারমজান মাসের অন্যতম ইবাদতের নাম ইতেকাফ।

রমজানের শেষ দশকে মুমিন মুসলমান মসজিদে ব্যাপকভাবে ইতেকাফে অংশগ্রহণ করে। বিশ্বের অনেক দেশেই মসজিদে ব্যাপকভাবে ইবাদতে রয়েছে রাষ্ট্রীয় নিষেধাজ্ঞা। সে ক্ষেত্রে মসজিদে কোনো পুরুষই ইতেকাফ করতে পারবে না। লাইলাতুল কদর বা ২৬ রমজান দিবাগত রাতে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক আগ্রহ উদ্দীপনার মাধ্যমে মানুষ ইবাদত-বন্দেগিতে অতিবাহিত করে। এ রাতের ইবাদত-বন্দেগির মর্যাদা ও ফজিলত সম্পর্কে কুরআন সুন্নায় অনেক দিক-নির্দেশনা রয়েছে। যৌথভাবে এ রাতের কোনো ইবাদত-বন্দেগিই অনুষ্ঠিত হবে না। ফলে নিজ নিজ উদ্যোগে যথাযথ দূরত্ব ও নিরাপত্তার মাধ্যমে এ মর্যাদাপূর্ণ রাতের ইবাদত সম্পন্ন করতে হবে। ঈদের কেনাকাটারমজানের শুরু থেকেই ঈদের প্রস্তুতিতে চলে কেনাকাটার ধুম। এমনিতে বড় মার্কেট বন্ধ রয়েছে। যদিও স্বল্প পরিসরে এসব মার্কেট খোলা থাকে তাতেও বিচরণ কিংবা যাওয়া আসায় ব্যাপক সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে।

তাছাড়া মসজিদে ইতেকাফ অসম্ভব হবে এই কারণে যে, সীমাবদ্ধতা থাকলেও মসজিদে ব্যাপক জনসমাগম হয়। তাই মসজিদে ইতেকাফ করা হবে প্রত্যেক ব্যক্তির জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ। নারীরা এমনিতেই ঘরে ইতেকাফ করেন। সুতরাং তারা ঘরে একাকি সতর্কতা ও সচেতনতার সঙ্গে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশে ইতেকাফ করতে পারবেন। সর্বোপরি রমজান শেষে ঈদ উদযাপনেও থাকবে সীমাবদ্ধতা। ব্যাপক ও বড় আয়োজনে ঈদে নামাজেও থাকবে কড়াকড়ি। সে ক্ষেত্রে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি তাওবা ইসতেগফার করতে হবে। মহামারি করোনা থেকে মুক্তির জন্য বিশ্ববাসীর জন্য তথা প্রত্যেক মুসলমানের জন্যই দোয়া করা আবশ্যক। আল্লাহ বিশ্ববাসীকে প্রাণঘাতী মহামারি করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি দান করুন। রমজানের রহমত বরকত মাগফেরাতের মাধ্যমে দুনিয়া ও আখেরাতের নাজাত লাভের তাওফিক এনায়েত করুন। আমিন।

১৮০ কোটি মুসলিমের বেশিরভাগের অবস্থাও তাই। এমনই এক পরিস্থিতিতে তাদের জীবনে এসেছে রমজান। মুসলিমদের কাছে সবচেয়ে পবিত্র মাস। সারা পৃথিবীর মুসলমানদের জন্য এ এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা। এমন রমজান তাদের জীবনে আগে কখনও আসেনি। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই মসজিদে বড় জামাতে এখন নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। যে কারণে মসজিদে গিয়ে তারাবির নামাজ পড়ার সুযোগ এবার তাদের হচ্ছে না। ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব মালয়েশিয়ার গবেষক ফাইজাল মূসা আল জাজিরাকে বলেছেন,‘এমন পরিস্থিতি অতীতে কখনও হয়েছে আমার জানা নেই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ গেছে, অনেক প্রাকৃতিক দুর্যোগ এসেছে, কিন্তু অতীতের কোন লেখালেখিতে বা সাহিত্যে বর্তমান পরিস্থিতির মত কিছু পাওয়া যায় না। যুদ্ধের সময়, দুর্যোগের সময়েও মুসলামনরা একসাথে তাদের ধর্মীয় আচার পালন করেছে।’ নজিরবিহীন এক পরিস্থিতির মুখোমুখি বিশ্ব। চারদিকে কেবল ইয়া নাফসি, ইয়া নাফসি। এমন পরিস্থিতি কারও কল্পনাতেও ছিল না। হতাশা চারদিকে।

কিন্তু মুমিনের জীবনেতো হতাশ হওয়ার সুযোগ নেই। ইসলামি স্কলাররা বলছেন, মুসলিমরা প্রয়োজনীয় প্রচেষ্টা চালাবে আর আল্লাহর ওপর ভরসা করবে। মানুষ মারা যাচ্ছে। দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। সারা পৃথিবীতে দ্রুতগতিতে ছড়াচ্ছে করোনা। এটা খুবই যন্ত্রণাদায়ক। আবার এই পরিস্থিতিতে বহু মানুষ তার স্রষ্টার কাছে, আল্লাহ’র কাছে ফিরে গেছেন। মানুষ নিজেকে সমর্পণ করেছেন আল্লাহর কাছে। আমাদের জীবনযে কত ক্ষণস্থায়ী, যেকোন মুহুর্তে যে তা চলে যেতে পারে সে চিরন্তন সত্যটা আবার মানুষ বুঝতে শুরু করেছে। স্রষ্টা আমাদের কতোটা করুণা করেন তা আমরা প্রতিটা মুহুর্তে অনুভব করতে পারছি। মানুষের এই অসহায়ত্বের সময়ে ভিন্ন এক মহিমায় আমাদের দেশেও হাজির হচ্ছে রমজান। সংযমের মাস।

এবারের রমজান আমাদের সামনে সুযোগ হয়ে এসেছে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শণের। ইসলামি স্কলাররা বাড়িতে তারাবির নামাজ পড়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে খোঁজ নিন আপনার প্রতিবেশির। নিজেদের সাধ্য অনুযায়ী আমরা অসহায় মানুষ পাশে দাঁড়াই। আর আত্মসমর্পণ করি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে। ফিরে যাই আল্লাহর কাছে। সুরা আত-তাগাবুনের ১১ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন, কোন মুসিবত কখনও আল্লাহর অনুমতি ছাড়া আসে না। যে আল্লাহর উপর ঈমান রাখে আল্লাহ তার দিলকে হেদায়াত দান করেন। আর আল্লাহ সব বিষয়ে জানেন।

বিল্লাল বিন কাশেম উপ-পরিচালক ইসলামিক ফাউন্ডেশন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় bellalbinquashem@gmail.com

আপনার মতামত লিখুন :

লোক দেখানো ইবাদত মহান আল্লাহ পছন্দ করেন না

লোক দেখানো ইবাদত মহান আল্লাহ পছন্দ করেন না

রমযানের রোযা ও আমাদের প্রাপ্তি

রমযানের রোযা ও আমাদের প্রাপ্তি

হিজরি নববর্ষ বয়ে আনুক করোনামুক্ত পৃথিবীর নতুন পয়গাম : বাংলাদেশ ন্যাপ

হিজরি নববর্ষ বয়ে আনুক করোনামুক্ত পৃথিবীর নতুন পয়গাম : বাংলাদেশ ন্যাপ

বাংলাদেশ থেকে এবারও হজে যেতে পারবেন না কেউ

বাংলাদেশ থেকে এবারও হজে যেতে পারবেন না কেউ

বৃষ্টি আল্লাহ তাআলার বড় নেয়ামত

বৃষ্টি আল্লাহ তাআলার বড় নেয়ামত

৫৬০ মডেল মসজিদের মধ্যে অর্ধশত উদ্বোধন আজ

৫৬০ মডেল মসজিদের মধ্যে অর্ধশত উদ্বোধন আজ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার: ApsNews24.Com (২০১২-২০২০)

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
০১৬২৫৪৬১৮৭৬

editor@apsnews24.com, info@apsnews24.com
Developed By Feroj