এপিএস নিউজ ডেস্ক
রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমায় ফাঁসি মওকুফের পর বিশেষ দিবসের সুবিধায় কারাগার থেকে বের হওয়ার তিন বছরের মধ্যেই আবারও হত্যা মামলায় জড়ালেন ভাঙ্গা উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি আসলাম ফকির (৫৩)। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে।
২০০৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ভাঙ্গার মানিকদহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান একেএম সাহেদ আলী ওরফে সাহেব মিয়াকে হত্যা মামলায় এই আসলাম ফকিরসহ অন্য দুই আসামি মৃধা ও ইমারত আলীকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন ফরিদপুরের জেলা ও দায়রা জজ আদালত। আসামিদের আপিলে হাইকোর্টে এ রায় বহাল রাখা হয়।
খুনের দোষ স্বীকার করে ২০১৩ সালের ১৯ মে রাষ্ট্রপতির নিকট প্রাণ ভিক্ষা চেয়ে আবেদন করেন আসলাম ফকির। ২০১৪ সালের ১৩ অক্টোবর এই আবেদন নামঞ্জুর হয়। ফলে ওই বছরের ১৩ নভেম্বর তার ফাঁসি কার্যকরের দিন ধার্য্য হয়। এজন্য জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে উপস্থিত থাকার জন্য চিঠি দেয়া হয়। তবে ফাঁসি কার্যকরের একদিন আগে কারাগারে ‘অস্বাভাবিক’ ও ‘অসুস্থ’ হওয়ার কারণে তার ফাঁসি স্থগিত করা হয়। ওই দিনই দ্বিতীয় দফায় রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করা হয়।
দ্বিতীয় দফায় আসলাম ফকিরের প্রাণভিক্ষার আবেদন গ্রহণ করেন রাষ্ট্রপতি। তার ফাঁসি মওকুফ করে ১৪ বছরের সাজা দেয়া হয়। এরপর ২০১৫ সালের ২৬ মার্চ বিশেষ দিবসে বন্দীদের সাধারণ ক্ষমা লাভের সুযোগ নিয়ে তাকে মুক্তি দেয়ার জন্য আবেদন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য কাজী নিলুফা জাফরউল্যাহ। তবে তাকে সেসময় মুক্তি দেয়া হয়নি। এরপর ১৩ বছর দুদিন কারাভোগের পর ২০১৭ সালের ২৫ আগষ্ট গাজীপুর হাই সিকিউরিটি কারাগার থেকে মুক্তি পান আসলাম ফকির।
কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি নিজ এলাকায় এসে আবার রাজনীতির মাঠে সক্রিয় হন। ফাঁসির শাস্তি থেকে ফিরে আসা এই আসলাম ফকিরের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ কথা বলতে সাহস পায়না। গত ২১ এপ্রিল তার নির্দেশে এলাকায় হত্যা ও লুটপাটের মামলা করেন প্রতিপক্ষ।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার এই মানিকদহ ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামে জমির পানি অন্যের জমিতে যাওয়াকে কেন্দ্র করে শাজাহান মাতুব্বর ও জাহাঙ্গির মাতুব্বরের সমর্থকদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বাঁধে। জাহাঙ্গির মাতুব্বরের পক্ষে মদদ দেন আসলাম ফকির। তার মদদে সেদিন শাজাহন মাতুব্বরের সমর্থক শহীদ শেখ নামে একজন কৃষককে পেটে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করার পর কয়েকটি বাড়ি ভাংচুর ও লুটপাট করা হয় বলে অভিযোগ করা হয়।
এ ঘটনায় শাজাহান মাতুব্বর (৫৪) বাদি হয়ে আসলাম ফকিরসহ ৫৪ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরো অজ্ঞাত ১৫ থেকে ২০ জনকে আসামি করে ভাঙ্গা থানায় একটি হত্যা, ভাংচুর, লুটপাট ও হামলার অভিযোগে একটি মামলা করেন পরের দিন বুধবার।
মামলায় শাজাহান মাতুব্বর বলেন, ওই গ্রামের লতিফ মাতুব্বরের ঘরের টিনের চালের পানি তার (শাজাহানের) ভাতিজা রফিক মাতুব্বরের বাড়ির উঠানে পড়াকে কেন্দ্র করে সামান্য ঝগড়াঝাটি হয়। এর জের ধরে আসলাম ফকির ও উসমান ফকিরের হুকুমে আসামিরা লাঠিশোঠা, লোহার রড, চাইনিজ কুড়াল, চাপাতি ও ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে প্রথমে রফিক মাতুব্বরকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে তার বাড়ি ভাংচুর করে। এ সময় শহীদ মাতুব্বর তাদের বাধা দিতে এগিয়ে এলে তাকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করা হয়। হাসপাতালে নেয়ার পর তিনি মারা যান।
ফরিদপুরের ভাঙ্গা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গাজী রবিউল ইসলাম মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, প্রধান আসামী আসলাম ফকিরসহ অন্যরা পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। সূত্রঃ ঢাকাটাইমস।
এপিএস/২৪এপ্রিল/টিএিএস