আবুল কাশেম রুমন,সিলেট: সিলেটে সূর্যমুখী ফুলের চাষ বাণিজ্যিক সম্ভাবনা রয়েছে বলে কৃষিবিদ মনে করছেন। সিলেটের জৈন্তাপুর থানায় সুর্যমুখী ফুলে হাসিতে কৃষকরা। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, মনে হবে এ যেন এক ফুলের স্বগরাজ্য। নীল নদ নামে খ্যাত সারী নদীর তীরে আগফৌদ গ্রামে সবুজে ঘেরা প্রকৃতির মাঝে মনোরম পরিবেশে শোভা পাচ্ছে হলুদ রঙের সূর্যমুখী ফুলের বাগান। এই ফুলের বাগান দূর থেকে যে কোন বয়সী মানুষের মন কেড়ে নিচ্ছে। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী মেঘালয়ের সবুজ পাহাড়ের পাদদেশে ঝর্ণা বেষ্টিত সারী নদীর পাশে সূর্যমূখী ফুলের বাগান।
দরবস্ত এবং শাপলা বিলের প্রবেশ দ্বারে রঙিন সূর্যমূখী ফুলের বাগান। সূর্যমূখীর বাম্পার ফলন গ্রামীণ অর্থনীতিতে সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে। সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায় দ্বিতীয়বারের মতো সূর্যমূখী চাষ করেছে স্থানীয় চাষিরা। সূর্যমুখী চাষের ফলে অনেকের আয় ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সূর্যমূখী ফুলের বীজ বিক্রি করে এবার কৃষকের মুখে হাসি ফুটবে বলে আশা করছেন স্থানীয় কৃষি বিভাগ। বাণিজ্যিক ভাবে অনাবাদী জমিতে সূর্যমূখী চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা দেখছেন কৃষি কর্মকর্তারাও। তাছাড়া এই ফুল চাষে লাভের সম্ভাবনা বেশি বলেও জানিয়েছেন তাঁরা। সিলেটের মাটিতে সূর্যমুখী ফুল চাষ করার লক্ষ্যে বিগত চার বছর যাবৎ বিভিন্ন জেলা উপজেলায় গবেষণা চালাচ্ছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনিস্টিটিউট সিলেট শাখার গবেষকরা।
গত পৌষ মাসের প্রথম দিকে সংশ্লিষ্ট কৃষি অফিস থেকে বীজ সংগ্রহ করে চাষ শুরু করেছেন কৃষকরা। একটি পরিণত সূর্যমুখী ফুলের গাছ থেকে ৯০ দিন থেকে ১২০ দিনের মধ্যেই কৃষকরা বীজ ঘরে তুলতে পারবেন। যদি প্রাকৃতিক দুর্যোগে কোন প্রকার ক্ষতি না হয় তবে প্রতি বিঘা জমিতে ৮ থেকে ১০ মণ সূর্যমূখী ফুলের বীজ পাওয়া যাবে। ১মন বীজ থেকে ১৮ কেজি তেল পাওয়া যাবে। সূর্যমূখীর তেল ছাড়াও এ থেকে পাওয়া খৈল দিয়ে মাছের খাবার এবং গাছ গুলো জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করা যায়। এর কোনো অংশই ফেলে দেওয়ার মত নয়।
জৈন্তাপুর উপজেলার আগফৌদ গ্রামের কৃষক কামাল আহমদ জানান, আবুল ফয়ছল, সুলতান আহমদ, মোহাম্মদ আলী ও মস্তাক আহমদ সহ আমরা ৫জন মিলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার দেয়া পরামর্শে প্রথমবারের মতো ১০ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছি। কৃষি অফিস থেকে আমাদেরকে বিনামূল্যে বীজ, সার ও নগদ টাকা দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রতিটি গাছে ফুল ধরেছে। ভাল ফলনে আমরা আশাবাদী।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারুক হোসাইন জানান, সূর্যমুখী ফুল থেকে পাখির খাবারের পাশাপাশি কোলেস্টেরল মুক্ত তেল উৎপাদন করে ক্ষতিকর পাম অয়েল ও সয়াবিনের স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে রক্ষা পাবে মানুষ। চলতি বছরে জৈন্তাপুর উপজেলায় প্রায় ২০ থেকে ২৫ বিঘা জমিতে কৃষকেরা সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের বিনামূল্যে সূর্যমুখীর বীজ, সার ও আন্ত-পরিচর্যার জন্য উপকরণ ও অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। যদি প্রাকৃতিক দুর্যোগে কোন প্রকার ক্ষতি না হয় তাহলে প্রতি বিঘা জমিতে ৮ থেকে ১০ মন সূর্যমূখী ফুলের বীজ পাওয়া যাবে। ১ মন বীজ থেকে ১৮ কেজি তেল পাওয়া যাবে। সূর্যমুখী চাষের ফলে অনেকের আয় ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সূর্যমূখীর বীজ উৎপাদন ও ফুলের বীজ বিক্রি করে এবার কৃষকের মুখে হাসি ফুটবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।