কুষ্টিয়ায় নেতাকে কটূক্তির অভিযোগ এনে যুবলীগ নেতার করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় এক শিক্ষককে রিমান্ডে দিয়েছে আদালত। ওই কলেজ শিক্ষক রাজিবুল আলমের (৫২) রিমান্ড আবেদন শুনানি শেষে একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।
বুধবার বিকেল ৪টায় কুষ্টিয়া মডেল থানায় করা মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পুলিশ পরিদর্শক মাসুদুর রহমান পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক রেজাউল করীমের আদালত শুনানি শেষে পুলিশ হেফাজতে এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
শিক্ষককে রিমান্ডে দেওয়ায় চরম আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বলে অভিযোগ পরিবারের।
আদালত সূত্রে জানা যায়, গত বছর ৪ ডিসেম্বর গভীর রাতে কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল দুর্বৃত্তরা ভেঙে ফেলে। পৌরসভার পক্ষ থেকে কুষ্টিয়া মডেল থানায় করা মামলায় সিসি ক্যামেরার ফুটেজের সূত্র ধরে দুই মাদ্রাসা ছাত্র ও এক শিক্ষককে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের দাবি করে কুষ্টিয়া জেলা পুলিশ। ঘটনটি দেশব্যাপী চরম আলোচিত ঘটনায় রূপ নেয়। যা দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও নানা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে পোস্ট করতে থাকেন নানাজনে।
তেমনই একটি ঘটনায় সাদ আহমেদ নামে ঈশ^রদীর পাকশী রেলওয়ে কলেজের রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকের ফেসবুক স্ট্যাটাস ছিল “ঘরে আশ্রিত পোলাও পায়েস অন্নে পালিত কেউটে সাপের বিষ দাঁতে চূর্ণ বিচূর্ণ জনকের সম্মান। হেফাজতের এই বিষদাঁত উপড়ে ফেলতে হবে”।
সহকর্মীর এই স্ট্যাটাসের সূত্রে মন্তব্য বক্সে একই কলেজের কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক রাজিবুল আলম লিখেছেন, “কুষ্টিয়ায় শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তি ভাঙলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কানাডার বেগম পাড়ার বাদশা মাহবুব উল আলম হানিফের ভাই আতা ও তার লোকজন। পুলিশ বাধা দেয় নাই। অথচ খুলনা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি নাহিদুল ইসলামের দাবি এটা স্বাধীনতা বিরোধীদের কাজ! স্থানীয়দের মতে, মূর্তি ভাঙার অভিযোগ তুলে বিরোধী পক্ষের হয়রানি করে আসন্ন পৌর নির্বাচনে একক প্রার্থী হতে আতা পরিকল্পিতভাবে একাজ করেছেন”।
কলেজ শিক্ষক রজিবুল আলমের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে এমন লেখা দেখে কুষ্টিয়া সদর যুবলীগ নেতা মো. মিজানুর রহমান মিজু ওই পেজটি স্ক্রিনশট নিয়ে গত ডিসেম্বরের ১৪ তারিখে কুষ্টিয়া মডেল থানায় ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাটি করেন।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কুষ্টিয়া জেলা কারাগারে কারারুদ্ধ রাজিবুল আলমের হঠাৎ করে রিমান্ড চাওয়ায় চরম উদ্বিগ্ন ও আতঙ্কিত পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে স্ত্রী আসমা খাতুনের (৪০) অভিযোগ। তিনি বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থ বিজ্ঞানে পড়ালেখা শেষ করে ঈশ্বরদীর পাকশী রেলওয়ে কলেজে কম্পিউটার শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন রাজিবুল। ব্যক্তিগত জীবনে দুই সন্তানের বাবা রাজিবুল বিভিন্ন সময় ফেসবুকে নানা অসংগতি তুলে ধরে পোস্ট দিতেন। আমি নিজেও এসব করতে না বলি। এই যে ঘটনায় মামলা হয়েছে সেটাও উনি জানতেন না। গত ডিসেম্বর মাসে কুষ্টিয়াতে ওনার নামে মামলার সংবাদ পাওয়ার পর উচ্চ আদালত থেকে ৮ সপ্তাহের জামিনে ছিলেন তিনি। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মতে ফেব্রুয়ারির ১৮ তারিখ কুষ্টিয়ার সংশ্লিষ্ট চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের বিচারক সৈয়দ হাবীবুল ইসলাম এর আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে আদালত নামঞ্জুর করে জেলহাজতে প্রেরণের আদেশ দেন। সেই থেকে তিনি কুষ্টিয়া জেলা কারাগারে কারারুদ্ধ আছেন। তিনি বলেন, বুধবার ছিল তার আদালতে হাজিরার ধার্যকৃত দিন। উনি ফেসবুকে যা লিখেছেন তার স্ক্রিনশট মামলার সঙ্গে সংযুক্ত আছে। বাদ বাকি তথ্যপ্রযুক্তিগত বিষয় পরীক্ষা নিরীক্ষা করলেই পাওয়া যাবে। এর জন্য পুলিশ রিমান্ড নেয়ার বিষয়টি আমাকে ও পরিবারকে চরম আতঙ্কিত করে তুলেছে।
ফেসবুকে নেতাকে কটূক্তির দায়ে কলেজশিক্ষকের বিরুদ্ধে যুবলীগ নেতার করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলার আসামি রাজিবুল আলমের কৌঁসুলি এ্যাড. এনামুল হক বলেন, এখানে মামলাটি করার ক্ষেত্রে যেমন যুবলীগ নেতার অতি উৎসাহপনা আছে ঠিক তেমনি তদন্তের যুক্তি দেখিয়ে মামলার আইও কারারুদ্ধ আসামিকে রিমান্ডে নিতে অতি উৎসাহ হয়েছেন। যেটাই হোক সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ন্যায় বিচার পাব বলে মনে করি।
এ বিষয়ে সরকারি কৌঁসুলি এ্যাড. তরুণ কুমার বিশ্বাস বলেন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে যে কোন সময়ই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা জড়িতদের জিজ্ঞাসাবাদ করতেই পারেন। যেহেতু মামলার আসামি কারাগারেই আছেন সে কারণে মামলাটির অধিকতর তদন্তের স্বার্থে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাইলে তা আদালত কর্তৃক অনুমতি নিয়েই করতে হবে।