ভূমি অধিগ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি।
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রত্যেক সাভিসের নিজস্ব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থাকে তেমনি জুডিসিয়ারির জন্য পৃথক একাডেমি করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চলেছে সরকার। সংবাদটি অবশ্যই ইতিবাচক পুরো বিচার বিভাগের জন্য। বর্তমান সরকার বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে বলেই অন্যান্য বিভাগের সাথে সমন্বয় করে বিচার বিভাগেও সামগ্রিক উন্নয়ন করতে বদ্ধপরিকর। জুডিসিয়াল একাডেমি প্রতিষ্ঠা তারই প্রতিফলন বলে আইন সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
উন্নত বিশ্বের সঙ্গে পাল্লা দিতে সক্ষম প্রশিক্ষিত আইনজ্ঞ বিকাশের লক্ষ্যে বিচারকদের উন্নততর প্রশিক্ষণ দিতে ও আধুনিক অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে স্বাধীনতার ৪৯ বছর পর বিচার বিভাগের জন্য এই প্রথম ‘ন্যাশনাল জুডিসিয়াল একাডেমি’ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে চলমান মুজিববর্ষেই এ প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হবে এমনটি ধারনা আইন সংশ্লিষ্টদের ।
মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার ময়নাকাটা নদীর তীরে শেখ হাসিনা সড়কের পাশে প্রায় ৪০ একর জায়গার ওপর এই জুডিসিয়াল একাডেমি গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এ লক্ষ্যে সম্ভাব্য কয়েকটি স্থান সরেজমিনে পরিদর্শন ও পর্যালোচনা করেন। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি আইনমন্ত্রীর চূড়ান্ত অনুমোদনের পর জমি অধিগ্রহণসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মাদারীপুরের জেলা প্রশাসককে চিঠি দিয়েছে মন্ত্রণালয়।
এর আগে দুই যুগ আগে বিচারকদের উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য রাজধানীর কলেজ রোডে কার্জন হলের পাশে বর্তমানে কবি সুফিয়া কামাল হলের নিকটে গড়ে তোলা হয় দেশের একমাত্র বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট। সেখানে এ পর্যন্ত প্রায় চার হাজার বিচারককে দেওয়া হয়েছে প্রশিক্ষণসহ নানা কার্যক্রম শিক্ষণ। তবে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ইনস্টিটিউটটির পর্যাপ্ত বিকাশ ও অবকাঠামোগত সুবিধা বাড়েনি। দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিসরও নেই এখানে। এ প্রেক্ষাপটে নতুন এ সিদ্ধান্ত এলো।
এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, বিচার বিভাগকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য প্রশিক্ষণের গুরুত্ব অপরিহার্য। তাই সরকার বিচারকদের প্রশিক্ষণের জন্য ন্যাশনাল জুডিসিয়াল একাডেমি স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি বলেন, কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন ও পর্যালোচনা করে পদ্মা সেতুর পাশে শিবচরে খুব সুন্দর নান্দনিক জায়গা পাওয়া গেছে। এখানেই ন্যাশনাল জুডিসিয়াল একাডেমি স্থাপন করা হবে। পাশাপাশি এখানে যুগ্ম জজ আদালতও স্থাপন হবে। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয় কাজ করছে।
উন্নত বিশ্বের আদলে দেশে ন্যাশনাল জুডিসিয়াল একাডেমি স্থাপনের বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরেই তৎপর ছিল আইন মন্ত্রণালয়। কিন্তু একাডেমি নির্মাণের মতো পর্যাপ্ত জমি না পাওয়ার কারণে উদ্যোগ বাস্তবায়নের কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। সম্ভাব্য জুডিশিয়াল একাডেমির রূপরেখা কেমন হতে পারে- এমন প্রশ্নে আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার বলেন, এই জুডিসিয়াল একাডেমি হবে আন্তর্জাতিক মানের। বর্তমানে বিচারকদের প্রশিক্ষণের জন্য বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট রয়েছে। সেখানে স্বল্প পরিসরে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কিন্তু জুডিসিয়াল একাডেমি হবে আবাসিক। এখানে দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। উন্নত দেশি-বিদেশি কোর্সের আওতায় বিচারকরা আবাসিক প্রশিক্ষণ পাবেন এ একাডেমিতে। এখানে নিজস্ব গবেষণা সেন্টার, স্থায়ী প্রশিক্ষক, প্রশাসন ভবন, ডরমিটরি, ডিজিটাল সেন্টার, সুইমিংপুলসহ আধুনিক সব অবকাঠামো থাকবে। আইনমন্ত্রীর এমন প্রস্তাবনা অনুযায়ী জুডিসিয়াল একাডেমি স্থাপনের জন্য প্রকল্প প্রণয়নের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।
সচিব বলেন, জুডিসিয়াল একাডেমি স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে ইতোমধ্যে মাদারীপুরের জেলা প্রশাসককে মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। জমিপ্রাপ্যতা নিয়ে জটিলতা না হলে যত দ্রুত সম্ভব প্রকল্প অনুমোদনের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে বা একনেকে উপস্থাপন করা হবে। আমরা চাই মুজিববর্ষে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের কার্যক্রম শুরু হোক।
আইন সচিবের মতে, নানামুখী পদক্ষেপের পরও বিচার বিভাগে মামলাজট ক্রমশ বাড়ছে। তাই বিচারকদের উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রশিক্ষিত করা না হলে এই সংকট মোকাবিলা করা কঠিন হবে। জুডিশিয়াল একাডেমি স্থাপন হলে দেশি-বিদেশি বিচারকদের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় আরও বাড়বে বলেও মনে করেন তিনি।
আইন মন্ত্রণালয়ের কার্যপত্রে বলা হয়েছে, জুডিসিয়াল একাডেমি স্থাপনের মাধ্যমে সরকার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, অধস্তন আদালতের বিচারক, বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা এবং বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্নিষ্ট অন্যান্য কর্মকর্তার কর্মদক্ষতা আধুনিক এবং যুগোপযোগী উন্নততর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বাড়ানো হবে। কাজের গুণগত মানোন্নয়নে সরকারি আইন কর্মকর্তাদেরও দেওয়া হবে সময়োপযোগী বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ। থাকবে বিচার ব্যবস্থার উন্নয়নে বিভিন্ন একাডেমিক গবেষণা পরিচালনা, আধুনিক প্রশিক্ষণ কারিকুলাম উন্নয়ন, আইন ও বিচারসংক্রান্ত শিক্ষা আধুনিকায়নে দেশি-বিদেশি সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে একডেমিক সহযোগিতামূলক কার্যক্রম। এতে বিশ্বের উন্নত বিচার ব্যবস্থাসম্পন্ন দেশগুলোর সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রও তৈরি করা যাবে।
অধিগ্রহণের জন্য জমি নির্বাচনের কাজ চলছে। উক্ত জমি নির্বাচনের বিষয়টি চূড়ান্ত হওয়ার পর আইন মন্ত্রণালয় থেকে এখন ভারত, জাপানসহ কয়েকটি দেশের জুডিসিয়াল একাডেমির অবকাঠামোসহ অন্যান্য দিক সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। সরকারের উদ্যোগে গত কয়েক বছরে যেসব বিচারক বিদেশে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন বা বর্তমানে নিচ্ছেন, তাদের কাছ থেকেও এ সংক্রান্ত আনুষঙ্গিক তথ্যাদি সংগ্রহ করা হবে। সুতরাং বলা যায় জুডিসিয়াল একাডেমি প্রতিষ্টার প্রাথমিক কাজ শুরু হয়ে গেছে।
এপিএস/নিউজ