সব
facebook apsnews24.com
পিলখানা ট্র্যাজেডি: এক যুগ ঝুলছে বিস্ফোরক মামলা - APSNews24.Com

পিলখানা ট্র্যাজেডি: এক যুগ ঝুলছে বিস্ফোরক মামলা

পিলখানা ট্র্যাজেডি: এক যুগ ঝুলছে বিস্ফোরক মামলা

আজ শোকাবহ পিলখানা হত্যা দিবস। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) ও বর্তমানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদর দপ্তরে বিডিআরের ‘বিদ্রোহী’ সৈনিকদের হাতে প্রাণ হারান ৫০ জনের বেশি সামরিক কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন। ৩৬ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে ৫৭ সেনা কর্মকর্তা, দুই সেনা কর্মকর্তার স্ত্রী, ১ সৈনিক, ৯ বিজিবি সদস্য ও ৫ জন বেসামরিক ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়।

এ হত্যাকাণ্ডের বিচার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। হাইকোর্টের রায়ে দণ্ডপ্রাপ্তদের আপিল প্রক্রিয়া শেষ হলে মামলাটি শুনানির পর্যায়ে আসবে বলে জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। এদিকে এক যুগ আগের এ ঘটনায় বিস্ফোরক আইনের মামলাটি নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ঝুলে আছে।

এ মামলায় সাক্ষী ১ হাজার ৩৪৫ জন। ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৮৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা জানান, এ মামলা নিষ্পত্তিতে এত বেশিসংখ্যক সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ সময়সাপেক্ষ এবং অনেক সাক্ষীর বক্তব্য একই হওয়ায় এর প্রয়োজনও নেই। করোনাভাইরাসজনিত সংকটের কারণে প্রায় এক বছর সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি। এ জন্য গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের সাক্ষ্য নিয়ে মামলার সবশেষ ধাপ যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে চলতি বছরেই মামলাটি নিষ্পত্তির আশা করছেন তারা।

আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জানান, হত্যা মামলায় বিচারিক আদালত থেকে ২৬৯ আসামি খালাস পান। পরে ৬৯ জনের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। সেখানে ৩১ জনের যাবজ্জীবন সাজা হয়। কিন্তু বিস্ফোরক আইনের মামলা থাকার কারণে আসামিদের কেউই কারাগার থেকে মুক্তি কিংবা জামিন পাচ্ছেন না।

পিলখানা হত্যা মামলায় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর বিচারিক আদালতে ১৫২ জনের ফাঁসির রায় হয়। এর চার বছর পর আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের নথি) ও আপিলের ওপর শুনানি নিয়ে ২০১৭ সালের ২৬ ও ২৭ নভেম্বর হাইকোর্টের রায়ে ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকে। এ ছাড়া হাইকোর্টের রায়ে ১৮৫ জনকে যাবজ্জীবন সাজা (বিচারিক আদালতে ১৬১ জন) দেওয়া হয়। সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ডসহ ২০০ জনকে (বিচারিক আদালতে ২৫৬ জন) দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা। হাইকোর্টের রায়ে মোট ৫২৪ জন দণ্ডিত হন এবং ৪৫ জন খালাস পান। দেশের বিচারব্যবস্থায় কোনো মামলায় এত বেশিসংখ্যক আসামির সর্বোচ্চ সাজা (মৃত্যুদণ্ড) ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়নি। ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হওয়ার পর আসামিদের আপিলের প্রক্রিয়া শুরু হয়। আসামিরা সবাই বিস্ফোরক মামলারও আসামি।

এক যুগ ধরে ঝুলে আছে বিস্ফোরক মামলা : পিলখানায় হত্যাযজ্ঞের পর করা দুটি মামলার মধ্যে বিস্ফোরক আইনের মামলার বিচার চলছে রাজধানীর বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ ট্রাইব্যুনালে। এই মামলার আসামি ৮৩৪ জন। এখন পর্যন্ত (২৩ ফেব্রুয়ারি) এই মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন ১৮৫ জন। হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছিলেন ৬৫৪ জন।

আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জানান, বিস্ফোরক মামলায় কবে নাগাদ সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হবে, সে বিষয়ে সুষ্পষ্ট কোনো ধারণা নেই তাদের। যেভাবে শুনানি হচ্ছে তাতে এ মামলার বিচার দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা তাদের।

আসামিপক্ষের অন্যতম আইনজীবী মো. আমিনুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একই ঘটনায় দুটি মামলা একসঙ্গে নিষ্পত্তি হওয়ার কথা ছিল। অথচ হত্যা মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি হলেও বিস্ফোরক আইনের মামলাটি রাষ্ট্রপক্ষ অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবে চালাচ্ছে। এই শ্লথগতির পেছনে কোনো উদ্দেশ্য বা কৌশল আছে কি না, সেটি আমরা জানি না।’

তিনি আরও বলেন, ‘হাইকোর্টে মোট ৫২৪ জন দণ্ডিত হন। হত্যা মামলায় ২৩৮ জন খালাস পেলেও বিস্ফোরক মামলা থাকার কারণে তারাসহ আরও অনেকেই মুক্তি পাচ্ছেন না এবং জামিনও হচ্ছে না।’

আসামিপক্ষের আরেক আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখন যেভাবে সাক্ষ্যগ্রহণ হচ্ছে তাতে দ্রুত এ মামলার নিষ্পত্তির সম্ভাবনা নেই। বিচারিক আদালতের রায়ের পর হাইকোর্টের রায়ে যারা দণ্ডিত হন, তাদের সবাই বিস্ফোরক মামলারও আসামি। হত্যা মামলায় যারা খালাস পেয়েছিলেন আর যাদের লঘু সাজা হয়েছিল তারাও বিস্ফোরক মামলার আসামি। এই মামলার কারণে এখন পর্যন্ত দণ্ডিতদের কেউই কারাগার থেকে মুক্তি পাননি। আমরা চাই এ মামলাটির দ্রুত নিষ্পত্তি হোক।’

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল দেশ রূপান্তরকে বলেন, হত্যা ও বিস্ফোরক মামলায় একই সাক্ষী। গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী বিবেচনায় ৩০০ থেকে ৩৫০ জনের সাক্ষ্য নিয়ে চলতি বছরের মধ্যে বিচার নিষ্পত্তির চেষ্টা করা হবে। তিনি বলেন, ‘এমনিতেই করোনাভাইরাসজনিত সংকটের কারণে প্রায় এক বছর বিচারকাজ বন্ধ ছিল। এটি না হলে মামলাটি হয়তো দ্রুত নিষ্পত্তির পথে যেত। এখন এত বেশিসংখ্যক সাক্ষীর সবার সাক্ষ্য নেওয়া সম্ভব হবে না। অনেক সাক্ষীর বক্তব্য প্রায় একই হওয়ায় সবার সাক্ষ্য ও জেরার প্রয়োজন হবে না। এখন শুধু গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের বক্তব্য নিয়ে চলতি বছরেই মামলা নিষ্পত্তির চেষ্টা করা হবে।’

আইনজীবী কাজল আরও বলেন, ‘হত্যা মামলায় যারা আছেন তারা বিস্ফোরক মামলারও আসামি। যেসব আসামি হত্যা মামলায় খালাস পেয়েছেন কিন্তু বিস্ফোরক আইনের মামলায় কারাগারে রয়েছেন, তারা কীভাবে মুক্তি বা জামিন পাবেন, সেটি আইনগত ও আদালতের বিষয়। জামিন দেওয়া না দেওয়ার এখতিয়ার আদালতের।’

চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায় হত্যা মামলা : হত্যা মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া সাজার রায় থেকে খালাস চেয়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৯ আসামির পক্ষে সম্প্রতি ১৪০টি ভলিউমে ২৯ হাজার পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়সহ ৬৬ হাজার পৃষ্ঠার একটি পূর্ণাঙ্গ আপিলে প্রায় ১৫ লাখ টাকার খরচের হিসাব দেন আসামিপক্ষের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আসামিদের বেশিরভাগই আর্থিকভাবে অসচ্ছল হওয়ায় অনেকের পক্ষে আপিলের ন্যূনতম খরচ বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। এখন এই নয়জনের আপিল ও পেপারবুক ব্যবহার করে অন্য আসামিরা যাতে আপিল ফাইল করতে পারেন, এ নিয়ে প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন করা হলে তিনি প্রশাসনিকভাবে অনুমতি দিয়েছেন যে পেপারবুক ছাড়াই শুধু মেমো (আবেদন) দিয়ে অন্যদের পক্ষে আপিল ফাইল করা যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যে মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ২০৩ জন আসামির পক্ষে ৪৮টি আপিল ও লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করা হয়েছে। কারাগারে থাকা অন্যরাও পর্যায়ক্রমে আপিল করবেন। অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘পেপারবুক (মামলার বৃত্তান্ত) প্রস্তুতের পর হাইকোর্ট বিভাগে এ মামলাটির শুনানি ও নিষ্পত্তি হতে তিন বছর লেগেছে। আপিল বিভাগে যেহেতু উভয় পক্ষের আপিল আছে তাই মামলা নিষ্পত্তি হতে উল্লেখযোগ্য সময় তো লাগতেই পারে।’

অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে জানান, হাইকোর্টে যারা খালাস পেয়েছেন এবং যাদের অপর্যাপ্ত সাজা হয়েছে এ রকম ৮০ জন আসামির বিষয়ে ২০টি আপিল করা হয়েছে আপিল বিভাগে। শুনানি কবে নাগাদ শুরু হবেÑ এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আপিল বিভাগে বেঞ্চ কেবল দুটি। আপিল বিভাগে বিশেষ বেঞ্চ হয় না। আমরা আপিল ফাইল করেছি। আসামিপক্ষও আপিল করেছে। সবগুলো ফাইল প্রস্তুত হওয়ার পর শুনানির তারিখের জন্য আবেদন করা হবে। এরপরই বিষয়টি শুনানির পর্যায়ে আসবে।’

পিলখানা ট্র্যাজেডিতে নানা কর্মসূচি : শোকাবহ এ দিনটিতে নানা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। সকাল ৯টায় রাজধানীর বনানী সামরিক কবরস্থানে নিহত সেনা কর্মকর্তাদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে একজন করে প্রতিনিধি। এ ছাড়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তিন বাহিনীর প্রধানরা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও বিজিবি মহাপরিচালক সেনা কর্মকর্তাদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। বিকেল সাড়ে ৪টায় পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরে বীর উত্তম ফজলুর রহমান মিলনায়তনে বিশেষ দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।

আপনার মতামত লিখুন :

বৈষম্য ও বেকারত্ব লাঘবে আইনজীবী তালিকাভূক্তি পদ্ধতি সংস্কারের বিকল্প ভাবনা

বৈষম্য ও বেকারত্ব লাঘবে আইনজীবী তালিকাভূক্তি পদ্ধতি সংস্কারের বিকল্প ভাবনা

শিক্ষার্থী তাহিরের মৃত্যু: শেখ হাসিনা-কাদেরসহ ৪০ জনের নামে রংপুরে মামলা

শিক্ষার্থী তাহিরের মৃত্যু: শেখ হাসিনা-কাদেরসহ ৪০ জনের নামে রংপুরে মামলা

কারামুক্ত হলেন হেফাজত নেতা মাওলানা মামুনুল হক

কারামুক্ত হলেন হেফাজত নেতা মাওলানা মামুনুল হক

বিচারপতির স্বাক্ষর জাল করে মেয়র জাহাঙ্গীর এর জামিন আপিল বিভাগ থেকে স্থগিত

বিচারপতির স্বাক্ষর জাল করে মেয়র জাহাঙ্গীর এর জামিন আপিল বিভাগ থেকে স্থগিত

৪২ লক্ষ মামলাজটে বিচার বিভাগ

৪২ লক্ষ মামলাজটে বিচার বিভাগ

আপিল বিভাগে বিচারকাজ চলাকালে ছাদ থেকে বিচারকদের আসনে বৃষ্টির পানি

আপিল বিভাগে বিচারকাজ চলাকালে ছাদ থেকে বিচারকদের আসনে বৃষ্টির পানি

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার: ApsNews24.Com (২০১২-২০২০)

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
০১৬২৫৪৬১৮৭৬

editor@apsnews24.com, info@apsnews24.com
Developed By Feroj