সব
facebook apsnews24.com
কিশোর উপন্যাস "রাতুলের অভিমান" - APSNews24.Com

কিশোর উপন্যাস “রাতুলের অভিমান”

কিশোর উপন্যাস “রাতুলের অভিমান”

লেখক: নাসির আহামেদ।
🥀🥀🥀🥀🥀🥀🥀🥀🥀🥀🥀
বিজ্ঞানের নানান রহস্য রাতুলের মাথায় গিজগিজ করে। ক্লাস ফাইভে পড়ার সময় একদিন বিজ্ঞান স্যার ক্লাসের সবাইকে একটা পুকুরের ধারে নিয়ে যেয়ে ছোট্ট একটি প্রাকটিক্যাল শিখিয়েছিলেন। স্যারের ব্যবহৃত রুমাল একটা কাঁচের গ্লাসের মধ্যে গুজে দিয়ে গ্লাসটি পুকুরের পানিতে উপুড় করে ডুবিয়ে দিলেন। কিছুক্ষণ পর গ্লাসটি উপরে তুলে গ্লাসের ভিতর থেকে শুকনা রুমাল বের করে দেখালেন অর্থাৎ রুমালে পানি লাগেনি। ছোট্ট ব্রেনে এটা কম আশ্চর্যের বিষয় ছিলনা। সেই থেকে রাতুলের মাথায় বিজ্ঞানের প্রতি অন্যরকম আকর্ষণ কাজ করে। পরীক্ষার আগের রাতে পাঠ্যবই বাদ দিয়ে সায়েন্স ফিকশন পড়া, টেবিল ল্যাম্পের স্ক্রুপ খুলে ব্যাটারি থেকে লাইটের সন্নিবেশ পর্যবেক্ষণ করা, হাতঘড়ি বা দেওয়াল ঘড়িতে সময় নির্ণয়ের রহস্য, ঘুম পেলে চোখের পাতা বন্ধ হবার কারণ , বিকালে বাসার ছাদে বসে পাখিদের শূন্যে উড়ে বেড়ানো দেখা সহ আরো অসংখ্য রহস্যময় কাহিনী মনের ভিতর উঁকি দেয়।

গ্রামের মনোরম সুন্দর পরিবেশে বেড়ে উঠা ছেলে রাতুল। তার বাবা ডাঃ নেয়ামত উল্লাহ পেশায় একজন নামকরা ডাক্তার এবং মা ফেরদৌসি বেগম প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকা। ছোটবোন ফারহানার সাথে দুষ্টুমির ভালবাসা লেগেই থাকা সারাক্ষণ। শহরের বড় হাসপাতালে অনেকবছর চাকুরী করলেও রাতুলের বাবা গ্রামের মানুষের কথা ভেবে শহরে স্থায়ী হতে পারেননি। তাই পূর্বপুরুষদের স্মৃতিকে বুকে ধারণ করে স্থায়ী বসবাসের জন্য জন্মস্থানকেই বেছে নিয়েছিলেন। নিজ বাড়ির পাশেই বড় একটি রুমে চেম্বার বানিয়ে নিয়মিত রোগী দেখেন তিনি । বর্তমান সময়ে যেখানে ডাক্তাররা ৫০০ টাকা ১০০০ টাকা ফিস নিয়ে রোগী দেখেন সেখানে ডাঃ নেয়ামত উল্লাহ ১০০ টাকার বেশি ফিস রাখেন না। ডাক্তারির মহৎ পেশায় বিনা পয়সায় গরীবদের চিকিৎসা দিতেও কখনো পিছপা হননা অত্যন্ত সহজ, সরল, পরহেজগার এ মানুষটি। বাবার এমন মানুষ্যপ্রেম দেখে প্রতিনিয়ত মুগ্ধ হয় রাতুল।

একবার ক্লাস এইটে পড়ার সময় রাতুল ভীষণ অসুস্থ হয়। তার বাবা তাকে ভালভাবে দেখে বেশ কিছু টেস্টের জন্য শহরের হাসপাতালে নিয়ে যান। পিতৃ আদর্শে বড় হওয়া রাতুলের মাথায় কি সব আজগুবি প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে লাগলো। পরক্ষণেই প্রশ্ন শুরু করলো,
রাতুল: আচ্ছা বাবা, এসব টেস্ট না করলে হয়না..?

ডাঃ নেয়ামত: শরীরের রোগ শনাক্ত করতে অবশ্যই মেডিকেল টেস্ট করাতে হয়।

রাতুল: কিন্তু মেডিকেল টেস্ট করতে অনেক খরচের বিষয় আছে যা গরীবদের জন্য কষ্টকর। আচ্ছা বাবা, কোন গাড়ীর ইঞ্জিনে সমস্যা দেখা দিলে মেকানিকরা ইঞ্জিনের শব্দ শুনেই সমস্যা ধরতে পারে। তাহলে মানুষের শরীরের সমস্যা ধরতে মেডিকেল টেস্ট করার প্রয়োজন কি?

ডাঃ নেয়ামত: মানুষ আল্লাহর সৃষ্টি কিন্তু গাড়ীর ইঞ্জিন মানুষের তৈরী। তাই ইঞ্জিনের যে কোন সমস্যা অভিজ্ঞরা সহজেই বুঝতে পারলেও মানুষের সমস্যা বেশ জটিল। তাই সঠিকভাবে রোগ নির্ণয়ের জন্য মেডিকেল টেস্ট প্রয়োজন হয়।

রাতুল: কিন্তু মেডিকেল টেস্ট করার মেশিন তো মানুষের তৈরী। তাহলে মানুষের তৈরী মেশিন মানুষের চেয়ে বেশি বোঝে কিভাবে?

ডাঃ নেয়ামত: সেই আদিকাল থেকে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতি সাধন করে আসছে। যার ফলে মেশিনের মাধ্যমে মেডিকেল টেস্ট করে খুব সহজেই রোগ নির্ণয় করা যায়। চিকিৎসা জগতের রয়েছে বহু ইতিহাস। যে ইতিহাস আজকের এই আধুনিক মেডিকেলের জন্ম দিয়েছে।

রাতুল: কি সেই ইতিহাস?

ডাঃ নেয়ামত: সে অনেক বড় ইতিহাস। চিকিৎসা বিজ্ঞান বা চিকিৎসা শাস্ত্র হল রোগ উপশমের বিজ্ঞান। মানব সভ্যতা দিনদিন যত উন্নত হচ্ছে ততই নতুন নতুন রোগ দৃশ্যমান হচ্ছে। তাই সেসব রোগ নিরাময়ে গবেষণা শুরু করে দেন বিশ্বের চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা। এই ধারাটা আজ থেকে হাজার হাজার বছর পূর্বে শুরু হয়। সে সময়ে সামান্য জ্বরে মানুষ মারা যেতো। তাই রোগ নিরাময় বা প্রতিষেধকের নানাবিধ পদ্ধতি প্রয়োগ করা হতো তখন। আর সে ধারাটা আজও বজায় আছে।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাস মানব ইতিহাসের মতোই অত্যন্ত প্রাচীন। ইতিহাসকে সহজে বুঝার জন্য একে ৪ টি যুগে ভাগ করা যায়। যথাক্রমে প্রাগৈতিহাসিক যুগ, প্রাচীন যুগ, মধ্য যুগ এবং বর্তমান যুগ।

মানব প্রজাতির বিকাশের সাথে সাথে চিকিৎসাবিদ্যাও বিকশিত হয়েছে। সেসময়ে ঔষধ হিসাবে প্রধানত উদ্ভিদের অংশ (herbalism) ব্যাবহার করা হতো। তাছাড়া পশুর দেহের বিভিন্ন অংশ, খনিজ পদার্থও ব্যাবহার করা হতো।

মহান গ্রীক চিকিৎসক হিপোক্রেটিস কে চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক বলা হয়। প্রাচীন গ্রীক-লাতিনের আরেকজন বিখ্যাত চিকিৎসক হলেন গ্যালেন।
প্রাচীন চিকিৎসার প্রমাণগুলি পাওয়া গেছে মিশরীয় ঔষধ, বেবিলনিয়ান ঔষধ, আয়ুর্বেদিক ঔষধ (যা ভারতীয় উপমহাদেশে সুপ্রচলিত ছিল), ক্লাসিক্যাল চীনা ওষুধ ( যাকে আধুনিক ঐতিহ্যবাহী চীনা ওষুধের পূর্বসূরি বলে ধারণা করা হয়), প্রাচীন গ্রিক ঔষধ এবং রোমান ঔষধ থেকে।

গ্রীক চিকিৎসক হিপোক্রেটিস যাকে “পশ্চিমা চিকিৎসা শাস্রের জনক বলা হয়”, তিনিই প্রথম ঔষধের যুক্তিসঙ্গত পদ্ধতির ভিত্তি স্থাপন করেন। হিপোক্রেটিসই প্রথম চিকিৎসকদের জন্য হিপোক্রেটিক ওথ চালু করেছিলেন, যা এখনও প্রাসঙ্গিক এবং আজ অবধি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তিনিই সেই ব্যক্তি যিনি রোগকে acute, chronic, endemic and epidemic হিসাবে চিহ্নিত করেছিলেন। তাছাড়া তাদেরকে “exacerbation, relapse, resolution, crisis, paroxysm, peak, and convalescence” হিসাবেও শ্রেণীবদ্ধ করেছিলেন। আরেকজন ব্যক্তি গ্রীক চিকিৎসক গ্যালেন। তাকে প্রাচীন বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সার্জন হিসাবে ধারণা করা হয় । মস্তিষ্ক ও চক্ষু অস্ত্রোপচার সহ অনেক অদ্ভুত অপারেশন তিনি করেছিলেন। পশ্চিমা রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর এবং মধ্যযুগীয় যুগের সূচনা হওয়ার পরে পশ্চিম ইউরোপে ঔষধের গ্রীক ঐতিহ্য হ্রাস পেতে থাকে, যদিও এই পদ্ধতিটি পূর্ব রোমান (বাইজানটাইন) সাম্রাজ্যের মধ্যেই অব্যাহত ছিল। ১ম সহস্রাব্দের দিকে প্রাচীন হিব্রু চিকিৎসা পদ্বতির অধিকাংশই তওরাত থেকে আসে । যেমন মুসা (আ) এর পাঁচটি বই, যা বিভিন্ন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত আইন এবং রীতিনীতিগুলি ধারণ করে। আধুনিক ঔষধের উন্নয়নে হিব্রুদের অবদান বাইজেন্টাইন যুগে শুরু হয়েছিল ইহুদি চিকিৎসক আসফ এর মাধ্যমে।

মধ্যযুগে চিকিৎসা ক্ষেত্র মুসলিম বিজ্ঞানীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় এবং এর প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়। মুসলিম বিজ্ঞানীদের মধ্যে আবু আলী হোসাইন ইবনে সিনা সবচেয়ে বিখ্যাত। মধ্যযুগীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের ভিত রচনায় তার অবদান অনস্বীকার্য। তার মূল অবদান ছিল চিকিৎসা শাস্ত্রে। তিনি চিকিৎসা শাস্ত্রের বিশ্বকোষ আল-কানুন ফিত-তীব রচনা করেন যা ঊনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল প্রতিষ্ঠানসমূহে প্রধান বই ছিল। আরবিতে ইবন সীনাকে আল-শায়খ আল-রাঈস তথা জ্ঞানীকুল শিরোমণি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। পশ্চিমে তিনি অ্যাভিসিনা নামে পরিচিত। তাঁকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের একজন জনক হিসেবে সম্মান করা হয়ে থাকে।
৭৫০ খ্রিস্টাব্দের পর মুসলিম বিশ্বের হাতে ছিল হিপোক্রেটস, Galen এবং Sushruta আরবি অনুবাদিত অনুলিপি । তাছাড়া ইসলামী চিকিৎসকগণ কিছু গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা গবেষণার সাথেও জড়িত ছিল। উল্লেখযোগ্য ইসলামিক চিকিৎসা অগ্রগামীদের মধ্যে রয়েছে ফারসি আভিসিনা, ইমহোটেপ ও হিপোক্রেটসের সাথে তাকেও “মেডিসিনের জনক” বলা হয়। তিনি কানুন অফ মেডিসিন গ্রন্থটি রচনা করেছিলেন যা চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে সবচেয়ে বিখ্যাত বইগুলির মধ্যে একটি বলে গণ্য করা হয়। এছাড়া আবুলকাসিস, আভেনজার, ইবনে আল নাফিস, এবং আভিরোস ও তাদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। Rhazes গ্রিক theory of humorism নিয়ে প্রথম প্রশ্ন করেছিল, যা মধ্যযুগীয় পশ্চিমা ও মধ্যযুগীয় ইসলামী চিকিৎসা পদ্বতিতে খুবই প্রভাবশালী ছিল। শিয়া মুসলমানদের অষ্টম ইমাম আলি-আল-রাধা Al-Risalah al-Dhahabiah রচনা করেছিলেন যা আজ অবধি চিকিৎসা বিজ্ঞানের সবচেয়ে মূল্যবান ইসলামি সাহিত্য হিসেবে সম্মানিত। ফারসি বিমরস্তান হাসপাতালগুলি পাবলিক হাসপাতালগুলির মধ্যে প্রাথমিক উদাহরণ হিসাবে গণ্য করা হয়।

১৬৭৬ সালে এন্টোনি ভ্যান লিউভেনহোক একটি মাইক্রোস্কোপ দিয়ে ব্যাকটেরিয়া পর্যবেক্ষণ করার মাধ্যমে প্রথম বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রে মাইক্রোবায়োলজির যাত্রা শুরু করেছিলেন। মাইকেল সার্ভেটাস ‘pulmonary circulation’ সন্ধান পেয়েছিলেন স্বাধীনভাবে ইবনে আল নাফিসের কাছ থেকে, কিন্তু এই আবিষ্কারটি জনগণের কাছে পৌঁছেনি কারণ এটি প্রথমবারের জন্য “Manuscript of Paris” এ লেখা হয়েছিল ১৫৪৬ সালের দিকে । পরবর্তীতে এটি ধর্মতত্ত্ব নামে প্রকাশিত হয়েছিল ১৫৫৩ সালে যা তার জীবনের সবচেয়ে কাজ ছিল এটি। পরবর্তীতে এটি রেনালডাস কলম্বাস এবং আন্দ্রে সিলেপিনোর মাধ্যমে বর্ণনা করা হয়েছিল । Herman Boerhaave কখনও কখনও তাকে “শারীরবৃত্তির জনক” হিসাবে উল্লেখ করেছিলেন লিডেন এবং পাঠ্যপুস্তক ‘ইনস্টিটিউশন মেডিয়াকে’ (1708) শিক্ষা প্রদান করার কারণে । পিয়ের ফৌচারকে “আধুুুুনিক দন্তচিকিৎসার জনক” বলা হয়।

চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে সবচেয়ে উজ্জ্বল যুগ হচ্ছে ঊনবিংশ এবং বিংশ শতক। এই দুই শতকে বিজ্ঞানের অন্যান্য সব শাখার ন্যায় চিকিৎসাবিজ্ঞানেও বিপ্লবাত্মক সব আবিষ্কার হয়। বিশেষ করে বিংশ শতকের প্রথমার্ধে সংঘটিত দুই দুটি বিশ্বযুদ্ধ চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। যুদ্ধকালীন প্রয়োজনেই আবিষ্কার হয় বহু চিকিৎসাকৌশল। যা আমাদের সামনে বর্তমান।

১৭৬১ সালে পশু চিকিৎসা ব্যাবস্থা শুরু হয়েছিল যা মানবদেহের চিকিৎসা ব্যাবস্থা থেকে একটু পৃথক ছিল। ফ্রান্সের পশু চিকিৎসক ক্লড বুগ্রেল্যাট ফ্রান্সের লায়নে বিশ্বের প্রথম পশুচিকিৎসা স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আগে মেডিকেলের ডাক্তাররাই মানুষের এবং অন্যান্য প্রাণীর চিকিৎসা করতো। এ সময় থেকেই পশু চিকিৎসা আলাদা বিভাগ হয়ে যায়।

আধুনিক বৈজ্ঞানিক বায়োমেডিকেল গবেষণা (যেখানে ফলগুলি পরীক্ষাযোগ্য এবং প্রজননযোগ্য হয়) শুরু হয়েছিল পশ্চিমা ঐতিহ্য ভেষজের উপর ভিত্তি করে। প্রথম দিকে গ্রীক “four humours” এর পরিবর্তে এবং পরে অন্যান্য ধরনের প্রাক-আধুনিক ধারণার পরিবর্তন শুরু হতে থাকে । আধুনিক যুগ আসলে শুরু হয়েছিল ১৮ শতকের শেষের দিকে এডওয়ার্ড জেনারের smallpox এর ভ্যাকসিন আবিষ্কার (এশিয়ায় প্রচলিত টিশুর পদ্ধতির দ্বারা অনুপ্রাণিত), ১৮৮৮ সলে রবার্ট কোচের ব্যাকটেরিয়া দ্বারা রোগের সংক্রমণের আবিষ্কার তারপর ১৯০০ এর কাছাকাছি এন্টিবায়োটিকের আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে ।
বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে চিকিৎসা ব্যাবস্থা ও ঔষধের উপর নির্ভরশীলতা বাড়তে থাকে । ইউরোপ জুড়ে অষ্টাদশ শতকের শেষের দিকে কেবল পশু ও উদ্ভিদজাত দ্রব্যই ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয় নি সাথে সাথে মানুষের দেহের অংশ এবং তরলও ব্যবহৃত হয়েছিল। ফারমাকোলজি বিকশিত হয়েছে হারবালিজম থেকে এবং কিছু কিছু ঔষধ (এট্রোপাইন, এফ্রেডিন, ওয়ারফারিন, অ্যাসপিরিন, ডাইগক্সিন, ভিনকা অ্যালকোলোড, ট্যাকোলোল, হাইস্কিন ইত্যাদি) এখনও উদ্ভিদ থেকে থেকে প্রস্তুত হয়। এডওয়ার্ড জেনার এবং লুই পাস্তুর টিকা আবিষ্কার করেছিলেন।
প্রথম অ্যান্টিবায়োটিকটি ছিল অ্যারফেনামাইন (সালভারসন) যা ১৯০৮ সালে পল এরিলিচ আবিষ্কার করেন। তারপর তিনা আবিষ্কার করেন ব্যাক্টেরিয়া যে বিষাক্ত রঞ্জন গ্রহণ করে মানুষের কোষে তা করেনা। প্রথম এবং প্রধান এন্টিবায়োটিকস হলো সালফা ওষুধ যা জার্মান রসায়নবিদ azo dyes থেকে সংগ্রহ করেছিলেন ।

ফার্মাকোলজি ক্রমবর্ধমানভাবে অত্যাধুনিক হয়ে উঠেছে; আধুনিক জৈবপ্রযুক্তি নির্দিষ্ট শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় মাদকদ্রব্যকে বিকশিত করতে সহায়তা করে, আবার কখনও কখনও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কমাতে শরীরের সাথে সামঞ্জস্যের ব্যবস্থা করা হয়। জিনোমিক্স এবং জেনেটিক্স সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান ঔষধের উপর কিছু প্রভাব ফেলেছে, কারণ বেশিরভাগ মনোজেনিক জেনেটিক ডিসঅর্ডারগুলির জিনগুলি এখন চিহ্নিত করা হয়েছে যা causative genes হিসাবে কার্যকারী। তাছাড়া আণবিক জীববিদ্যা এবং জেনেটিক্সের কৌশলগুলির বিকাশ ও চিকিৎসা প্রযুক্তি অনুশীলনের এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণকে অনেক প্রভাবিত করছে।

রাতুল: খুব আশ্চর্য তো! একই জিনিস দিয়ে মাদকদ্রব্য এবং ঔষধ দুই ই তৈরি হয়। একটা প্রক্রিয়া মানুষের জন্য উপকারী আরেকটা ক্ষতিকর কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব?

ডাঃ নেয়ামত: যেমন, আঙ্গুর ফল শরীরের জন্য উপকারী। কিন্তু এই আঙ্গুর ফল দিয়ে মাদকদ্রব্য তৈরী করে যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর।

রাতুল: কিভাবে?

ডাঃ নেয়ামত: মনে করো কিছু মাটি দিয়ে কাদা তৈরী করলাম। সেই কাদা দিয়ে ইট তৈরী করে আগুনে পুড়িয়ে সেই পোড়া ইট দিয়ে কারর মাথায় আঘাত করলে মাথার কি অবস্থা হবে?

রাতুল: মাথা ফেটে রক্ত বের হবে।

ডাঃ নেয়ামত: ঠিক তেমনি আঙ্গুর দিয়ে মদ বানালে সেটা থেকে আঙ্গুরের পুষ্টিকর গুণাগুণ নষ্ট হয়ে শরীরের ক্ষতি করে।

রাতুল: তাহলে কোন জৈববস্তু দিয়ে ঔষধ বানালে সেটা কেনো শরীরের উপকার করে?

ডাঃ নেয়ামত: ঔষধ শরীরের শুধু উপকার করে এটা ঠিক নয়। সকল ঔষধে শরীরের জন্য ক্ষতিকর দিক থাকে।

রাতুল: তাহলে মানুষের রোগ হলে ডাক্তাররা ঔষধ খেতে বলে কেনো?

ডাঃ নেয়ামত: খুব সহজ বিষয়। যেমন, ১৯৭১ সালে সৈরাচার পাকিস্তান সরকারের নির্দয় সেনাবাহিনী রাতের আধারে বাঙালীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। বুলেটের আঘাতে ঝাঁঝরা করে দিয়েছিল অসংখ্য নিরীহ মানুষের বুক। এ জুলুম থেকে মুক্তি পাবার জন্য বাঙালিরা যুদ্ধ করে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছিল। এ যুদ্ধে বহু ক্ষয়ক্ষতি হলেও পাকসেনাদের অত্যাচার থেকে মুক্তি পেয়েছিল নিরীহ বাঙালিরা। ঠিক তেমনি মানুষের শরীরে যখন কেন রোগ দেখা দেয় তখন ঐ রোগের পেছনে এন্টিব্যাকটেরিয়া লেলিয়ে দেওয়া হয় রোগকে ধ্বংস করার জন্য। একেই এন্টিবায়োটিক বলে। এন্টিবায়োটিক প্রয়োগে যুদ্ধক্ষেত্রের ন্যায় শরীরের সামান্য ক্ষতি হলেও উপকারটাই বেশি হয়।

রাতুল: তার মানে এন্টিবায়োটিকে উপকার ও ক্ষতি দুই ই আছে।

ডাঃ নেয়ামত: হাঁ। তাই যে কোন কাজ করার সময় অবশ্যই পারসেন্টেজ হিসাব করতে হবে। অর্থাৎ সেই কাজের উপকার ও ক্ষতি ৫০/৫০ (Fifty-Fifty) করতে হবে। যদি ক্ষতির চেয়ে উপকার বেশি হয় তবে কাজটি করা যেতে পারে। যেনো, লস বাদ দিলে কিছু লাভ (Profit) অবশিষ্ট থাকে।

লেখকঃ নাসির আহামেদ
এলএল.বি অনার্স, এলএল.এম
লিগ্যাল এসোসিয়েট, ডকুমেন্টেশন এবং
ড্রাফটিং বিভাগ, চেম্বার অব জুরিস্ট, ঢাকা।
Email: nasir.goodlawyer@gmail.com
Website. www.chamberofjurist.com

মেডিকেল তথ্যসূত্রঃ ইউটিউব, উইকিপিডিয়া এবং বিভিন্ন জার্নাল থেকে সংগ্রহকৃত।

আপনার মতামত লিখুন :

ভারতের বিখ্যাত গজল শিল্পী পঙ্কজ উদাস এর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ

ভারতের বিখ্যাত গজল শিল্পী পঙ্কজ উদাস এর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ

কবিতা ‘তেলবাজি’

কবিতা ‘তেলবাজি’

কবিতা ‘যুদ্ধ মানে’

কবিতা ‘যুদ্ধ মানে’

রক্তে কেনা মাতৃভাষা

রক্তে কেনা মাতৃভাষা

কবিতা ‘হতে হলে’

কবিতা ‘হতে হলে’

কবিতা, ‘তাহলে কেমন হতো’

কবিতা, ‘তাহলে কেমন হতো’

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার: ApsNews24.Com (২০১২-২০২০)

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
০১৬২৫৪৬১৮৭৬

editor@apsnews24.com, info@apsnews24.com
Developed By Feroj