এপিএস নিউজ ডেস্ক
নভেল করোনাভাইরাসে প্রায় সবাই ঘরে বন্দি। দীর্ঘ সময় কাটছে আলস্যে। ঘরের কাজ কিছুটা বাড়লে ভারী-কর্মহীন শরীরে জমছে বাড়তি মেদ। তার ওপর এই সময়ে দরকার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সক্রিয়তা। এই দুইই একই সঙ্গে সামলাতে চাইলে বসে না এখনই শুরু করুন এসব ব্যায়াম।
এমনিতেই গা ঘামিয়ে প্রতিদিনের শরীরচর্চায় আলস্য রয়েছে অনেকের। ঘরের কাজ করা শুয়ে-বসে থাকার চেয়ে ভাল। তবে তাতে প্রয়োজনীয় সবটুকু ক্যালোরি তো ঝরে না। লকডাউনে যেহেতু হাতে উদ্বৃত্ত অনেকটা সময়। তাই বেশ কিছু ঝামেলাবিহীন ব্যায়ামে বাড়িয়ে নিতে পারেন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। তার সঙ্গে বাড়তি পাওনা মিলছে মেদ ঝরিয়ে।
রিউম্যাটোলজিস্টরা বলছেন, বয়স বেশি হলে, ডায়াবিটিস জাতীয় অসুখবিসুখ থাকলে, এভাবে বসে থাকাতে সমস্যা আরও বাড়ে। কাজেই শুয়ে-বসে থাকা চলবে না। দিনভর সচল থাকতে হবে। তাই বাড়াতে হবে ব্যায়ামের পরিমাণও।
কী ধরনের ব্যায়াম?
>>ব্যায়াম বলতে কেউ হয়তো নিয়মিত একটু জোরকদমে হাঁটছেন ছাদে বা ট্রেডমিলে আবার কেউ করেন যোগাসন। কিন্তু তাতে পুরো কাজ কখনো হয় না। ঠিক কী কী করলে শরীরের প্রয়োজনীয় ওয়ার্কআউট হয় তা জানতে হবে।
>>বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও আমেরিকান কলেজ অব স্পোর্টস মেডিসিন থেকে জানানো হয়েছে, ১৮ থেকে ৬৪ বছর বয়স্ক সুস্থ ও ফিট মানুষের সপ্তাহে ১৫০ মিনিট মাঝারি গতিতে বা ৭৫ মিনিট জোর গতিতে অ্যারোবিক ব্যায়াম করা দরকার। এর সঙ্গে নিয়মিত শরীরের নমনীয়তা বাড়ানোর ব্যায়াম করতে হবে। সপ্তাহে ২ থেকে ৩ দিন করতে হবে পেশীর শক্তি বাড়ানোর ব্যায়াম।
>>অ্যারোবিক এক্সারসাইজ বলতে হাঁটা, জগিং, সাইকেল চালানো. স্কিপিং, সাঁতার কাটা ইত্যাদি বোঝায়। তিন্তু এই লকডাউনে তা করবেন কী ভাবে! তাই ছাদে হাঁটুন, স্পট জগিং করুন, স্পট স্কিপিং করুন বা স্ট্যাটিক সাইকেল চালান।
>>সাধ্য মতো জোরে হাঁটলে হার্ট ও ফুসফুসের বেশি উপকার হয়। টানা ২০-৩০ মিনিট। টানা না পারলে সকালে ২০ মিনিট ও বিকেলে ২০ মিনিট হাঁটবেন। এমন গতিতে যাতে হাঁপিয়ে হলেও দু-চারটে কথা বলা যায়; কিন্তু গান গাওয়া যায় না।
>>তবে তার আগে হাঁটু-কোমর-গোড়ালির অবস্থা দেখে নেবেন। হার্ট-ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কম থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে অ্যারোবিক করুন। তবে হাঁটা বা জগিংয়ের আগে ভাল হাঁটার জুতো পরে নেবেন। না হলে পায়ে ব্যথা হবে।
>>স্ট্রেচিং কী ভাবে করতে হয় তা কমবেশি সবাই জানেন। যারা নিয়মিত যোগা করেন, তারা তো জানেনই। বিশেষ কিছু নয়, শরীরের প্রতিটি পেশীসন্ধিকে সচল রাখার হালকা ব্যায়াম। পা-কোমর-শিরদাঁড়ার স্ট্রেচিং এই সময় খুব কাজে আসবে। কোনও ব্যথা-বেদনা বা অস্থিসন্ধি ও পেশীর বড় কোনও সমস্যা না থাকলে করতেই পারেন।
>>পেশী জোরদার করার ব্যায়ামও দরকার। এটা দু’ভাবে করা যায়, ওজন নিয়ে ও শরীরের ওজনকে ব্যবহার করে। যাকে বডি ওয়েট ট্রেনিং। এর মধ্যে বিভিন্ন রকম স্কোয়াট যেমন আছে, তেমনই রয়েছে লেগ রাইজিং, প্ল্যাঙ্ক, পুশ আপ ইত্যাদি। তবে বয়স্ক বা ক্রনিক অসুখ আছে বা ফিটনেস কম বা হাঁটু-কোমর ব্যাথা আছে এমন মানুষের পক্ষে অভ্যাস না থাকলে বিশেষজ্ঞের সঙ্গে ফোনে কথা না বলে করা উচিত নয়। সুস্থরা অবশ্যই করতে পারেন এর সবক’টি ব্যায়াম।
>>এ ছাড়া আছে নিউরোমোটর স্কিল ট্রেনিং বা ব্যালান্স ট্রেনিং। এটাও শুরুতে বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধান ছাড়া করা ঠিক নয়।•
>>ইদানীং কয়েকটি নতুন ধরনের ব্যায়ামের ধারা চালু হয়েছে যাতে সুরের তালে তালে অ্যারোবিক্সের সঙ্গে স্ট্রেচিং, ব্যালেন্সিং, স্ট্রেংথ ট্রেনিং, সব হয়ে যায়। সে রকমই একটি হল টাবাটা। বয়স কম হলে, ফিটনেস থাকলে টাবাটা করা যেতই পারে।
>>জুম্বা করতে পারেন। তবে বয়স কম ও ফিটনেস বেশি থাকলে তবেই। বেশি বয়সেও ফিটনেস ভাল থাকলে, হাঁটু-কোমর ঠিক থাকলে করতে পারেন। যারা জুম্বা করেন এই সময় তা ছেড়ে দেবেন না। জুম্বাতে আপনার শরীর যেমন ভাল থাকবে, মনও হালকা হবে একটু।
>> এর পাশাপাশি বেশির ভাগ সময় সচল থাকার চেষ্টা করুন। এক জায়গায় টানা বসে থাকার অভ্যাস হলে ব্যায়ামের ফল সেভাবে পাবেন না।
ব্যায়ামের ফল
>>ঝরে যাবে শরীরের অতিরিক্ত চর্বি
>>হার্ট ও ফুসফুসকে তাজা রাখে। করোনাভাইরাসের জটিলতা ঠেকাতে যার বড় ভূমিকা আছে।
>>সুগার-প্রেশার-কোলেস্টেরল কম রাখতে সাহায্য করে। এর মধ্যে প্রথম দুটির সঙ্গে যে কোভিডের সম্পর্ক আছে, তা এখন সবাই জানেন।
>>হাড়ের স্বাস্থ্য ভাল থাকে। হাড় নরম হয়ে ভেঙে যাওয়ার প্রবণতা কমে।
>>ফিটনেস ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। করোনাভাইরাস ঠেকাতে ও হলে তার সঙ্গে যুঝতে যা এখন একান্ত দরকার। সূত্রঃ ঢাকাটাইমস/২১এপ্রিল/ডিএম।
এপিএস/২১এপ্রিল/এসএনআই