করোনাক্রান্তি
১৮.০৪.২০২০ খ্রিঃ
আবার বসন্ত এসেছিলো
আমাদের দরোজায়
দখিনা বাতাস বেয়ে,
কবোষ্ণ পরশ কই
মনউচাটন সমীরণ?
রন্ধ্রে রন্ধ্রে রোমে রোমে
কোথায় জাগর তৃষা?
প্রেমের বাখানি নেই
কুঞ্জে কুঞ্জে, বৃন্দাবনে–
কোকিলের কুহুতান তবু
পুরনো সুরেই বেজে চলে দিগন্ত ভাসিয়ে —
তেমনি এখনো আছে পুষ্পবীথি ফুলবাসর,
সাতরঙ শতবর্ণা হয়ে জ্বলেছে তাদের দেহে
ভ্রমর জুটেছে নানবিধ– রূপ ও রসের প্রত্যাশায়।
নিষ্কলুষ নীলিমায় তরল সোনার খেলা নিয়ে
এসেছে বাসন্তী ভোর, গোধুলির রাঙা রঙ মেখে
মলয়ব্যাকুল সন্ধ্যা আসে নীড়ে ফেরা পাখিদের মতো
তটিনী বয়েই যায় কুল-কুল কলশব্দে–
রূপালী চাঁদের মিহিদানা বুকে তার জ্বলে আর নেভে।
আপনাতে মন্ত্রমুগ্ধ ছিলো মোহময় বাসন্তী জগৎ
অথচ তোমার কবিতার খেরো খাতা বেমালুম খালি–
ও-মানুষ তুমি বিলকুল ভুলে গেছো বসন্ত এসেছে
মলয়বাতাস বইছে তবুও মুখোশের আড়ে শ্বাস
বনবীথিসাজ বৃথা গেলো আজ গৃহকোণে পরবাস।
জানিনে কোথায় হানা দিয়ে বসে আছে
অদেখা ঘাতকমারী করোনা সন্ত্রাস–
সঙ্গলিপ্সু ঋতুরাজ তবু
সঙ্গনিবারণ আবশ্যক ।
এরপর এলো রুদ্রচণ্ড কালহুতাশন প্রমত্ত বৈশাখ
ভেবেছিলে বুঝি জীবনের হালখাতা ভোর এলো
কালবোশেখি ঝড়ের আঘাতে ধুয়েমুছে যাবে ভয়
আবার উঠবে রাঙা রবি মারীর আঁধার ঘুচে গিয়ে–
পুরে নাই আশা, তাই অনুগামী হতাশানিকষ অন্ধকার;
বর্ষবরণের অভিলাষে ছাই দিলো করোনার অভিঘাত
থেমে গেল সাজ নববর্ষের, আয়োজন সব ধুলিসাৎ
দাঁতমুখ খিঁচে সামনে শ্বাপদ করোনা করাল গ্রাস
তুমি বেঁচে যাবে ভেবে যদি অবহেলা করো তাকে
মুহূর্তও লাগবে না তার প্রাণসংহারী হতে।
ও-মানুষ তুমি ঘরে থাকো আর ঘরে রাখো
নিজে বাঁচো আর জগৎ বাঁচাও
অনেক হয়েছে থামো; থামাও ভোগের উল্টোরথ
বাঁচতে চাইলে খোঁজো গৃহকোণ, সভয়ে লুকাও।
ও-মানুষ, দুহাতের তালু আজ অপরিচিত
ছুঁয়ো না তোমার প্রিয়তমদের
করোনা হয়তো খুঁজে নেবে ঠাঁই একান্ত নিঃশ্বাসে
তোমার আমার সকলের, তাই দয়া করে দূরে রও।
দূরে থাকো শরীরে শরীরে,
আবেগ ভুলোনা মননের
হৃদয়ে হৃদয়ে কাছাকাছি হও,
গাও জয়গান জীবনের
ও-মানুষ তুমি জেগে ওঠো,
প্রাণে প্রাণে বাঁধো অঙ্গীকার
দূরে থেকে কাছাকাছি রবে,
করোনাকে দেবে ধ্বংসমার।
লেখক ও কবিঃ অধ্যাপক মোঃ শাহিনুর রহমান, উপ-উপাচার্য, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া । ১৮ এপ্রিল ২০২০।