নকশাবহির্ভূত দোকান বরাদ্দে ৩৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনসহ সাতজনের বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিক পিছিয়ে আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেছে আদালত।
রাজধানীর ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২ এ এসব দোকান বরাদ্দসংশ্লিষ্ট মামলায় রোববার রবিবার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য ছিল।
তবে মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) প্রতিবেদন দাখিল না করার পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর হাকিম শহিদুল ইসলাম নতুন এ দিন ধার্য করে আদেশ দেন। আদালতের পেশকার মিজানুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর হাকিম আশেক ইমামের আদালতে মার্কেটের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন এ মামলা করেন। ৩০ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর হাকিম আশেক ইমাম আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে পিবিআইকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ইউসুফ আলী সরদার, সাবেক উপসহকারী প্রকৌশলী মাজেদ, কামরুল হাসান, হেলেনা আক্তার, আতিকুর রহমান ও ওয়ালিদ।
মামলাসূত্রে জানা গেছে, আসামি সাঈদ খোকন, ইউসুফ আলী সরদার ও মাজেদ পরস্পর যোগসাজশে ফুলবাড়িয়া সিটি সুপার মার্কেট-২ এর মূলভবনের নকশাবহির্ভূত অংশে স্থাপনা তৈরি করেন এবং দোকান বরাদ্দের ঘোষণা দেন। ঘোষণা শুনে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা দোকান বরাদ্দ নেয়ার জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরপর ব্যবসায়ীরা আসামি কামরুল হাসান, হেলেনা আক্তার, আতিকুর রহমান স্বপন ও ওয়ালিদের কাছে যান। তখন তারা বলেন, ‘আপনার টাকা জমাদানের ব্যবস্থা করুন। আমরা আপনাদের দোকান বরাদ্দ দিয়ে দেব।’
মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, ফুলবাড়িয়া সিটি সুপার মার্কেট-২ এর মূল মার্কেটে যাদের নামে দোকান বরাদ্দ রয়েছে তাদের কামরুল হাসান, হেলেনা আক্তার, আতিকুর রহমান স্বপন ও ওয়ালিদ ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ভুল বুঝিয়ে এ মার্কেটে দোকান বরাদ্দ নিতে বাধ্য করেন। আসামিরা মিলে প্রতারণা করে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন এবং ব্যবসায়ীদের নকশাবহির্ভূত দোকান বরাদ্দ দেন।
জানা যায়, দোকান বরাদ্দের অনৈতিক আইনবহির্ভূত বিষয় জেনে মামলার বাদী দেলোয়ার হোসেন দুলু আসামিদের দোকান বরাদ্দের প্রক্রিয়া বন্ধ এবং ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অনৈতিকভাবে কোটি কোটি টাকা লেনদেনে বাধা দেন। এরপর আসামিরা দেলোয়ারকে বিভিন্নভাবে প্রাণনাশের হুমকি দেন। ২০১৭ সালের ২০ আগস্ট আসামি ইউসুফ আলী সরদার, আতিকুর রহমান স্বপন ও ওয়ালিদ বাদী দেলোয়ারকে বনানীতে ডেকে বলেন, ‘তুই ফুলবাড়িয়া সিটি সুপার মার্কেট-২, এর এক্সটেনশন ব্লক- এ, বি, সি এর দোকান বরাদ্দে বাধা দেয়া বন্ধ কর, নইলে খুব খারাপ হবে।’
এর পরিপ্রেক্ষিতে তিনি নিজের ও পরিবারের কথা চিন্তা করে তাদের বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে সাহস পাননি। আসামি সাঈদ খোকন, ইউসুফ আলী সরদার ও মাজেদের নির্দেশে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আসামি কামরুল হাসান, হেলেনা আক্তার, আতিকুর রহমান স্বপন ও ওয়ালিদ দোকান বরাদ্দের কথা বলে বিনা রসিদে কোটি কোটি টাকা গ্রহণ করেন।
সাধারণ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বিনা রসিদে বা কোনো প্রকার ডকুমেন্টস ব্যতীত আসামিদের কাছে বরাদ্দের বিষয়ে টাকা জমা দিয়ে প্রতারণা ভয়ে ভীত হয়ে মামলার বাদী দেলোয়ারের কাছে পরামর্শের জন্য এলে তিনি তাদের বলেন যে, যেহেতু আপনারা অনেক টাকা ইতোমধ্যে বিনা রসিদে নগদ প্রদান করেছেন এবং ভবিষ্যতেও টাকা জমা দেবেন, সেহেতু আইনগত প্রমাণ রাখার জন্য ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের বৃহৎ স্বার্থের কথা চিন্তা করে ব্যবসায়ীদের অনুরোধে তার প্রতিষ্ঠানের নামে ফুলবাড়িয়া উত্তরা ব্যাংক লিমিটেডের অ্যাকাউন্টে টাকা জমার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর ভুক্তভোগীরা আসামি সাঈদ খোকনের অ্যাকাউন্টে বিভিন্ন সময় ৩৪ কোটি ৮৯ লাখ ৭০ টাকা জমা দেন।
বর্তমানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ফজলে নূর তাপস তার এখতিয়ারাধীন এলাকার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানের অংশ।