এসএসসি পরীক্ষার সনদ জালিয়াতির মামলায় ১৫ বছরের সাজা হয় নোয়াখালীর কামরুল ইসলামের। কিন্তু এক দশক ধরে মামলার তদন্ত শেষে আদালতের বিচারে যার সাজা হলো তার সঙ্গে অপরাধের সংশ্লিষ্টতা নেই বিন্দুমাত্র।
শুধু ঠিকানার সামঞ্জস্যতায় মূল আসামি কামরুলের জায়গায় নিরপরাধ কামরুলের বিরুদ্ধে সাজা এবং গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। এ ঘটনা গড়ায় উচ্চ আদালতপর্যন্ত। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পর হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছিলেন নিরপরাধকামরুল।
মঙ্গলবার দুদকের দেওয়া প্রতিবেদন ও রুলের শুনানি শেষে বিচারপতি এমইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ বিষয়ে রায়ের জন্য বৃহষ্পতিবার ধার্য রেখেছেন। প্রতিবেদনে ঘটনার জন্য ক্ষমা চেয়ে দুদক আদালতকে বলেছে, তাদের ‘সরল বিশ্বাসে’ চলা তদন্তে ভুল হয়েছে। গ্রামের নামে সামঞ্জস্যের কারণে আসল অপরাধীর পরিবর্তে ভুল ব্যক্তির নামে প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে।
আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশিদ আলম খান। রিটকারীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মিনহাজুল হক চৌধুরী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পি।
প্রসঙ্গত, সোনালি ব্যাংকের ঋন জালিয়াতির অভিযোগের মামলায় টাঙ্গাইলের নিরপরাধ যুবক জাহালমকে প্রায় তিন বছর কারাগারে থাকতে হয়েছিল। পরে হাইকোর্টের আদেশে মুক্তি পান জাহালম। তখন হাইকোর্ট দুদককে তিরস্কার করে আরও সতর্ক হতে বলে। এ ঘটনায় দুদক ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে।
আইনজীবীরা জানান, এসএসসির নম্বরপত্র জালিয়াতি করে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হওয়ার অভিযোগে ২০০৩ সালে তখনকার দুর্নীতি দমন ব্যুরো (বর্তমানে দুর্নীতি দমন কমিশন) কামরুল ইসলাম নামে এক ব্যাক্তির বিরুদ্ধে মামলা করে। অভিযুক্ত কামরুলের বাড়ি নোয়াখালী সদরের পশ্চিম রাজারামপুর গ্রামে। তার বাবার নাম মো. আবুল খায়ের ও মায়ের নাম ফাতেমা বেগম। মামলার শুরু থেকেই তিনি পলাতক।
আইনজীবীরা জানান, মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তণ হয়েছে একাধিকবার। মামলার প্রায় ১০ বছর পর২০১৩ সালে দুদক আদালতে যে অভিযোগপত্র দাখিল করে তাতে পশ্চিম রাজারামপুরের পাশের পূর্ব রাজারামপুর গ্রামের কামরুল ইসলামকে আসামি করা হয়। এই কামরুল ইসলামের বাবার নাম আবুল খায়ের, মায়ের নাম রওশন আরা বেগম।
সাক্ষ্য গ্রহণ ও যুক্তিতর্কের শুনানি নিয়ে ২০১৪ সালে নোয়াখালির সংশ্লিষ্ট বিচারিক আদালত পূর্ব রাজারামপুর গ্রামের কামরুল ইসলামকে সংশ্লিষ্ট আইনের তিনটি ধারায় পাঁচ বছর করে মোট ১৫ বছর কারাদ- ও ৩০ হাজার টাকা অর্থদ-ের রায় দেয়। একই সঙ্গেতার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত।আইনজীবীরা জানান, বিচারের এই প্রক্রিয়ার বিষয়ে কিছুই জানতেন না নিরপরাধ কামরুল। প্রকৃত আসামি কামরুলের জন্ম ১৯৭৭ সালে। নিরপরাধ কামরুলের জন্ম ১৯৯০ সালে। আর এসএসসির সনদ জালিয়াতি হয়েছে ১৯৯৮ সালে। যে সময়ের কথা বলা হচ্ছে সেসময় পূর্ব রাজারামপুরের কামরুল ইসলাম আট বছর বয়সী। তিনি এখন নোয়াখালীর মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের সহকারী হিসেবে চাকরি করছেন। বাড়িতে পুলিশের তৎপরতার পর তার বিরুদ্ধে সাজা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানার বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হন। এরপরই হাইকোর্টের দারস্থ হন তিনি। আদালত রিট আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে গত বছরের ৫ নভেম্বর রুল জারি করে। একই সঙ্গে ঘটনার বিষয়ে দুদকের কাছে ব্যাখ্যা চায় হাইকোর্ট।
দুদকের আইনজীবী মো. খুরশিদ আলম খান বলেন, ‘এই (নিরপরাধ কামরুল) ব্যাক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া হলেও তিনি কখনো কারাগারে থাকেননি। সাজা পরোয়ানা যাওয়ার পরে তিনি রিট আবেদনটি করেন। আমরা আদালতে বলেছি যে, তিনি যে কথাগুলো বলেছেন সেটি সঠিক। তিনি আসলে যার সাজা হয়েছে সেই কামরুল নন। আসল আসামি এখনো পলাতক। আমরা ভুল স্বীকার করেছি। তবে, এখানে পুলিশ ভেরিফিকেশনেও গাফিলতি ছিল।’