তালহা জাহিদঃ পোষা প্রাণীগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বন্ধুবৎসল কে? প্রশ্নটা শোনামাত্র বেশির ভাগ মানুষের একটা প্রাণীর চেহারাই ভেসে উঠবে—কুকুর। মনিবের মনের কথা খুব সহজে বুঝে নেওয়া, তার সুরক্ষা নিশ্চিত করা কিংবা আনন্দ দেওয়া—কোনো কিছুতেই পোষা কুকুরের যেন ক্লান্তি নেই। কিন্তু এই প্রাণীটি কেন এত বন্ধুবৎসল? যুক্তরাষ্ট্রের একদল বিজ্ঞানী বলছেন, কুকুরের জিনেই এ প্রশ্নের উত্তর লেখা রয়েছে।
সায়েন্স অ্যাডভান্স জার্নালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বিজ্ঞানীরা বলেছেন, নেকড়ে থেকে কুকুর প্রজাতির উৎপত্তি। লাখো বছর আগে বিবর্তনের ধারায় নেকড়ের একটা শ্রেণি কুকুরে পরিণত হয়েছে। এই বিবর্তনের সময়টায় কিছু জিন কুকুরকে বন্ধুবৎসল করে তুলেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিতে অবস্থিত প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্রিজেট ভনহোলট বলেন, কুকুর ও নেকড়ের জিনগত পার্থক্যের অনুসন্ধান করেছেন তাঁরা। এই অনুসন্ধান প্রাণীর বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণের ওপর সম্ভাব্য আলোকপাত করেছে। এই গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে বলা যায়, বিড়ালসহ অন্যান্য গৃহপালিত প্রাণীর ক্ষেত্রেও এমন জিন হয়তো ভূমিকা রাখছে।
ব্রিজেট ভনহোলট আরও বলেন, গবেষণার সময় তাঁরা পোষা কুকুর এবং বন্দিদশায় থাকা ধূসর নেকড়ের আচরণ পরীক্ষা করেছেন। সমস্যা সমাধান এবং সামাজিকতার ক্ষেত্রে এসব প্রাণীর বেশ কয়েকটি দক্ষতার পরীক্ষাও নিয়েছেন। দেখা গেছে, কুকুরের মতো নেকড়েও সমস্যা সমাধানে ওস্তাদ। তবে কুকুরের আচরণ তুলনামূলক বেশি বন্ধুত্বপূর্ণ। ডিএনএ পরীক্ষায়ও নির্দিষ্ট কিছু জিনগত ও আচরণগত পার্থক্য দেখা গেছে। কুকুর প্রজাতি ৪০ হাজার থেকে ২০ হাজার বছর আগের মধ্যবর্তী সময়ে পোষ মানতে শুরু করে। শিকারি দলের ফেলে দেওয়া এঁটো খাবারের সন্ধানে নেকড়েদের ঘোরাঘুরির সময় এই প্রক্রিয়ার সূত্রপাত ঘটে। ইতিহাসের পথ ধরে একটা সময় এসব নেকড়ে পোষ মানে এবং বিবর্তনের ধারায় আকারে-আকৃতিতে আজকের কুকুরে পরিণত হয়।
কুকুর সম্পর্কে ইসলামের নির্দেশনাঃ জড়জগৎ, জীবজগৎ ও উদ্ভিদজগৎ এই পৃথিবীর উপাদান। জড়জগৎ প্রাণহীন। উদ্ভিদজগতেও আছে ন্যূনতম প্রাণের স্পন্দন। পশুপাখির মধ্যে প্রাণের উপস্থিতির পাশাপাশি রয়েছে আহার-বিহার, বিচরণ ও সন্তান ধারণের ক্ষমতা। এসব গুণ-বৈশিষ্ট্য আছে মানুষেরও। এরই সঙ্গে মানুষের আছে বিবেক ও বোধশক্তি; জ্ঞান অর্জনের যোগ্যতা এবং সত্য-মিথ্যা পরখ করার ক্ষমতা। এ গুণেই মানুষ শ্রেষ্ঠ জীবের আসনে সমাসীন। ইসলাম মনে করে, এই পৃথিবীতে মানুষের পরই প্রাণিজগতের স্থান। প্রাণিজগেক পৃথক জাতিসত্তার স্বীকৃতি দিয়ে কোরআন বলছে : ‘পৃথিবীতে বিচরণশীল যত প্রাণী আছে আর যত পাখি দুই ডানা মেলে উড়ে বেড়ায়, তারা সবাই তোমাদের মতো একেক জাতি।’ সুরা : আনআম, আয়াত : ৩৮) সে হিসেবে বলা যায়, কুকুর আল্লাহর বিশেষ সৃষ্টি। নিম্নে কুকুর সম্পর্কে ইসলামের নির্দেশনা উল্লেখ করা হলো— শিকারের উদ্দেশ্যে, ফসল হেফাজতের উদ্দেশ্যে, পাহারাদারির জন্য, ছাগল-ভেড়া ইত্যাদির হেফাজতের লক্ষ্যে, ঘরবাড়ি, দোকান ও অফিস পাহারার জন্য, অপরাধের উৎস সন্ধান ও অপরাধীকে চিহ্নিত করার উদ্দেশ্যে কুকুর লালন-পালন করা বৈধ। (ফতোয়াতে মাহমুদিয়া : খ. ১৮, পৃ. ২৬৪/ ফতোয়ায়ে আলমগিরি : খ. ৪, পৃ. ২৪২)।
শিকারির জন্য রাখা কুকুর, পাহারার জন্য রাখা কুকুর মেরে ফেলা সর্বসম্মতিক্রমে হারাম বা অবৈধ। পাগলা কুকুর, কষ্টদায়ক কুকুর মেরে ফেলা সব আলেমের মতে বৈধ। সাধারণ অবস্থায় থাকা কুকুর নিধন করা, মেরে ফেলা ইসলামের দৃষ্টিতে অপছন্দনীয়। (সূত্র : কুয়েতভিত্তিক ইসলামী বিশ্বকোষ ‘আল-মওসুআতুল ফিকহিয়্যা আল-কুয়েতিয়্যা : খ. ৩৫, পৃ. ১৩২-১৩৩)।
সম্ভব হলে কুকুরকে খাবার দেওয়া, পানি দেওয়া, কুকুর কোথাও পড়ে গেলে তাকে উদ্ধার করা ইসলামের দৃষ্টিতে সওয়াবের কাজ। বিশুদ্ধ হাদিসে কুকুরকে পানি খাওয়ানোর কারণে ব্যভিচারী নারীকেও জান্নাত দান করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘একবার এক পিপাসাকাতর কুকুর কূপের পাশে ঘোরাঘুরি করছিল। পিপাসায় তার প্রাণ বের হওয়ার উপক্রম হয়ে গিয়েছিল। হঠাৎ বনি ইসরাইলের এক ব্যভিচারী নারী তা দেখতে পায়। সে নিজের পায়ের মোজা খুলে কুকুরটিকে পানি পান করায়। এ কারণে তার অতীত পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।’ (বুখারি : ৩৪৬৭)।