সব
facebook apsnews24.com
রিমি খালা এবং আমাদের পহেলা বৈশাখ - APSNews24.Com

রিমি খালা এবং আমাদের পহেলা বৈশাখ

রিমি খালা এবং আমাদের পহেলা বৈশাখ

নাজিয়া আমিন

সকাল থেকে মেজাজ তেমন ভালো নেই প্রমিলার। আজ ১৪ ই এপ্রিল অর্থাৎ বাংলা বছরের প্রথম দিন। আর বাংলা বছরের প্রথম দিন মানেই বাসায় কাঁচা আমের শরবত, ইলিশ মাছ, কয়েক পদের ভর্তা, ঘন ডাল, সিরকা পেঁয়াজ এবং আরও নানা রকম বাংগালী খাবার রান্না হবে। দুপুরে মা, বাবা, ভাই, ভাবী সবাই মিলে এক সাথে বসে খাওয়া দাওয়া হবে। যেহেতু এই দিনে বাইরে প্রচন্ড তাপমাত্রা থাকে, গরমে তেমন একটা বের হওয়া হয় না। বাসায় খাওয়া দাওয়া, বিশ্রাম এভাবেই দিনটা কাটানো হয়। বাসায় কেউ বেড়াতে আসলে তাদেরকেও সময় দেয়া হয়। যা হোক, সবই ঠিক ছিল। কিন্তু  বাসায় রিমি খালা আসবে শুনেই প্রমিলার সব আনন্দ মাটি হয়ে গেল।

রিমি খালা সম্পর্কে তার মায়ের চাচাতো বোন। দেখা হলেই এটা ওটা খুঁত ধরবে বা নেতিবাচক মন্তব্য করবে যা প্রমিলার একেবারেই পছন্দ নয়।এই যেমন, একদিন মা গল্পে গল্পে শীল পাটায় বানানো  ভর্তা আর ব্লেন্ডারে তৈরি ভর্তার মধ্যে কি পার্থক্য তা বলছিল। শোনা মাত্র রিমি খালা বলে বসলো যে, ‘আপা, তোমার তো একটা মেয়ে আছে। এই সব ভর্তা বানানো বা টুকটাক রান্নার কাজ তাকে দিয়েই তো করাতে পারো। ওর তো শেখা দরকার।’তারপর আরেক দিন মা আমার লেখা একটি গল্প অনন্যা নামক একটি ম্যাগাজিনে যে ছাপা হয়েছে তা নিয়ে বলছিল। সেটা শোনা মাত্র রিমি খালা শুরুতে কিছুটা ভালো বললেও পর মুহুর্তেই বলল যে, মেয়েদের সংসার জীবনে এগুলো মূল্যহীন। ভবিষ্যতে এগুলোর ফলাফল কি হবে না হবে এগুলো নিয়ে বেশ জ্ঞান দিতে লাগলো। মা মাঝে মাঝে এতে ইনফ্লুয়েন্স ও হয়ে যান। এসব কারণেই রিমি খালার নাম শুনলেই প্রমিলার মধ্যে এক ধরনের বিরক্তি কাজ করে।

সকাল বেলা প্রমিলা বেশ সুন্দরকরে শাড়ি পড়ে টিপটপ করে সেজে বাসার নীচে তার বিউটি পার্লারে গেল। সে নিজে পার্লারটির তত্তাবধান করে।সাথে দুটো মেয়েও আছে কাস্টমার সামলানোর সুবিধার জন্য। পরিধি ছোট হলেও বেশ ভালোই চলে। আশেপাশের মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে এই পার্লারটি। প্রমিলা বেশ শখ করেই এই পার্লারটি দিয়েছিলসাইনবোর্ড সহ যেখানে নাম লেখা ছিল ‘ব্রিডা’। মেক আপের ক্ষেত্রে তার হাত বেশ ভালো। এর পাশাপাশি সে একজন লেখিকাও। নিজের ব্লগে শুরুতে গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ লিখতো। এরপর ধীরে ধীরে অন্যান্য ক্ষেত্রেও তার লেখা ছাপা শুরু হল। যা হোক, পহেলা বৈশাখে অনেকেই পার্লারে যান। যার জন্য ঐ দিন পার্লার খোলা রাখা লাভজনক। সে ভাবে প্রমিলার পার্লারটাও খোলা ছিল।কাস্টমারদের উদ্দেশ্যে কিছু কার্ড এবং লাল ও সাদা গোলাপ দিয়ে এক একটা ফুলের স্টিক তৈরি ছিল। প্রায় দুপুর দুটো পর্যন্ত পার্লারের কাজ কর্ম চললো। এর মধ্যে মা প্রমিলার মোবাইলে ফোন করলো।

– ‘হ্যালো। বাসায় আসবে না। খাওয়া দাওয়া তো সব তৈরি।’

– ‘হ্যা মা। এই তো, আর একজন কাস্টমার আছে। বিলের ব্যাপারটা সেরে চলে আসছি।’

– ‘চলে আসো। বিকালে তো তোমার রিমি খালা আসবে। খাওয়া দাওয়া সেরে তার জন্য আয়োজন করতে হবে।’

বলে ফোন রেখে দিল।প্রমিলা মনে মনে ভাবলযে, রিমি খালার সাথে সময় কাটানোর চেয়ে পুরো দিন এই পার্লারে কাটানো ও অনেক সুখের। সেই কথা তো আর কাউকে বলা যায় না। ভালো না লাগলেও মায়ের জন্য তাকে যেতেই হবে। কাস্টমার বিল দিয়ে বের হয়ে গেল। প্রমিলাও মেয়ে দুটোকে সব গোছাতে বলে বাসায় চলে গেল।

বাসায় গিয়ে বেশ আনন্দের সাথেই কাটল খাওয়ার পর্ব।পুরো টেবিল জুড়ে আইটেম। পরিবারের সবাই ঝাল খেতে খুব পছন্দ করে। সে জন্য অন্যান্য খাবারের সাথে লাল মরিচের ভর্তা বানানো হয়েছেযা দেখতে খুব আকর্ষণীয় হয়েছে। সবাই খুব মজা করে খেল। খাওয়া শেষে মা ফ্রীজ থেকে আইস্ক্রীম বের করে দিল। আজকের দিনের জন্য মা স্পেশাল মালাই কুল্ফি বানিয়েছে। এই গরমের জন্য একদম উপযুক্ত।

খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ।এখন সবাই অপেক্ষা করছে রিমি খালার জন্য। প্রমিলার খুব ইচ্ছা করছে একটা ভাত ঘুম দিতে। কিন্তু দিলে সেটা ভালো দেখাবে না। কিছুক্ষণ পর দরজায় কলিং বেল বাজল। ভাবী দরজা খুলল। রিমি খালা চলে এসেছে। তাকে সব সময়ের মত ড্রয়িং রুমে বসতে দেয়া হল। বসা মাত্রই মায়ের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে গল্প শুরু করে দিল। প্রমিলা ইচ্ছা করেই সামনে যাচ্ছে না। এরই মধ্যে রিমি খালা মাকে বলল, ‘তোমার মেয়ে প্রমিলা কোথায়? বাসায় নাই? থাকলে ডাকো।’এরপর যা হল তার জন্য প্রমিলার মনে যেন সর্গ সুখ নেমে আসলো। তার ফোন বেজে উঠা মাত্র সে রিসিভ করল,

– ‘হ্যালো, প্রমিলা আহমেদ বলছেন?’

– ‘জ্বী বলছি।’

– ‘আমি অনন্যা ম্যাগাজিনের অফিস থেকে বলছি। আমাদের ম্যাগাজিনে আপনারা যারা নিয়মিত গল্প, কবিতা ইত্যাদি দিয়ে থাকেন তাদের নিয়ে আজকে আমরা একটা ছোট ইন্টারভিউয়ের আয়োজন করেছি। দুঃখিত যে, এত অল্প সময়ের নোটিশে জানানো হচ্ছে। খুবই সিম্পল ইন্টারভিউ যা আমাদের পেইজ কভার করবে। আপনি কি রাজি আছেন আমাদের অফিসে এসে ইন্টারভিউ দিতে? আমরা ছয়টার সময় শুরু করবো। হাতে এখনো সময় আছে।’

– ‘জ্বী, আমি আসবো (বেশ আনন্দের সাথে)।

তাহলে প্রমিলার এখন রিমি খালাকে এড়ানোর ব্যবস্থা হয়ে গেল। সুন্দর মত তৈরি হয়ে মা এবং বাবাকে বলে বের হয়ে গেল অনন্যার অফিসের উদ্দেশ্য। মনে  মনে ভাবল, আজকের দিনটা বেশ ভাল।

লেখকঃ নাজিয়া আমিন, আইনজীবী, ইমেইল – aminnazia@gmail.com

আপনার মতামত লিখুন :

ভারতের বিখ্যাত গজল শিল্পী পঙ্কজ উদাস এর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ

ভারতের বিখ্যাত গজল শিল্পী পঙ্কজ উদাস এর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ

কবিতা ‘তেলবাজি’

কবিতা ‘তেলবাজি’

কবিতা ‘যুদ্ধ মানে’

কবিতা ‘যুদ্ধ মানে’

রক্তে কেনা মাতৃভাষা

রক্তে কেনা মাতৃভাষা

কবিতা ‘হতে হলে’

কবিতা ‘হতে হলে’

কবিতা, ‘তাহলে কেমন হতো’

কবিতা, ‘তাহলে কেমন হতো’

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার: ApsNews24.Com (২০১২-২০২০)

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
০১৬২৫৪৬১৮৭৬

editor@apsnews24.com, info@apsnews24.com
Developed By Feroj