আসাদুল্লাহ আল-গালিব
মেয়েটা নীল রঙের শাড়ি পরেছে। নীল শাড়িতে তাকে নীলপরীর মত লাগছে। শাড়ি পরতে অভ্যস্ত নয় সে, বার বার কুচি ঠিক করে শাড়ি ধরে ধরে হাঁটতে হচ্ছে। আজ মেয়েটির জন্মদিন।
প্রেমিকার জন্মদিনে রিকসা করে ঘোরা প্রেমিকের জন্মগত অধিকার। ছেলেটা প্লান করেছে আজ গোটা দিন রিকসা ঘুরবে।
ভার্সিটির করিডোরে দেখা হয় দুজনের। মেয়েটা বলতে থাকে ‘শাড়িটা ঠিকঠাক রাখতে পারছি না, কুচিও ভাল হয়নি, কেমন জানি সবকিছু গুলিয়ে যাচ্ছে। হাঁটতেও কষ্ট হচ্ছে।’
ছেলেটা হাঁটু গেথে বসে শাড়ির কুচি ঠিক করে দেয়। মেয়েটা শুধু অবাক হয়। আবাক হওয়া ছাড়া তার আর কি করার আছে।
দু’জনে মিলে একটা রিকসায় ওঠে। হুডতোলা রিকসায় যেন ছোট্ট সংসার। যেখানে নুন আনতে পান্তা ফুরালেও ভালোবাসা থাকবে টুইটুম্বর।রিকসায় দুপ্রান্তে দু’জন। ছেলেটার ইচ্ছা করে মেয়েটার হাতে হাত রাখতে। গরমে মেয়েটার নাকে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। অপলক তাকিয়ে থাকে ছেলেটা। হঠাৎ ফিরে তাকায় মেয়েটা। চোখে চোখ পরে দুজনের। আলতো করে অধর ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে হয় ছেলেটার।
মেয়েটা বলে, ‘কি দেখ?’উত্তরে ছেলেটা বলে,’পরী দেখি। নীল পরী।”হুম, কচু। আমি অত সুন্দরী না, তুমি শুধু বাড়িয়ে বলো’ মেয়েটা লাজুক চোখে জবাব দেয়।
ছেলেটা ভাবে জগতের এত সৌন্দর্য্য; তার থেকেও সুন্দর করে সৃষ্টি করা হয়েছে মেয়েদের। আচমকা ছেলেটা বলে,’আই লাভ ইয়্যু’। লজ্জা আরও জড়সড় হয়ে পরে মেয়েটা। কি উত্তর দিবে ভেবে পায় না সে। চোখ জুড়ে শুধু ব্যাকুলতা। মুখ নিচু করে বলে,’আই লাভ ইয়্যু টু।’
‘যদি বলি এই ব্যস্ততার শহর ছেড়ে অনেক দূরে ছোট্ট একটা সংসার বাঁধবো, তোমাকে নীল শাড়ি কিনে দিতে পারবোনা জানি,আলতা আর কাজল এনে দিব মাঝে-সাঝে,অভাবের দিনগুলোতে তুমি কি শুকনো মরিচ আর সরিষার তেল দিয়ে আলু ভর্তার সাথে এক থালা গরম ভাত বেড়ে দিতে পারবেনা?’ জিঙ্গেস করে ছেলেটা।
মেয়েটা মাথা নাড়িয়ে জবাব দেয়, ‘পারবো।’ তার চোখ ভর করে অশ্রু নামে। ছেলেটার কাঁধে মাথা রাখে, চোখের পানিতে কাজল ধুয়ে ছেলেটার সাদা পাঞ্জাবী একাকার।
ব্যস্ততার নগরীতেও মানুষ স্বপ্ন বুনে, নেমে আসে ভালোবাসাও।
আসাদুল্লাহ আল-গালিব, আইনজীবী ও লেখক