এপিএস নিউজ ডেস্ক
সম্প্রতি অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড এর আইন কর্মকর্তা অ্যাডভোকেট বেল্লাল হোসাইন তাঁর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের একজন প্রিয় অগ্রজ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মীর হালিমের লেখা চিঠির জবাবে খোলা চিঠিতে জবাব দেন। চিঠিটি এপিএস নিউজের দৃষ্টিগোচর হয়। কাঠখোট্টা আইনজীবীদের সাহিত্য রসের খুনসুটি তাদের অনুমতি সাপেক্ষ এপিএস নিউজের সম্মানিত পাঠকের উদ্দেশ্যে হুবহু তুলে ধরা হলো।
” ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের প্রিয় অগ্রজ মীর হালিম ভাইয়ের চমৎকার লেখার কুৎসিত জবাব!
আল্লাহ পাকের রহমতে পরিপুষ্ট এই ক্ষুদ্র জীবনে কপাল হইতে যে একেবারে কিছু কাটিয়া ছাটিয়া যায় নাই, এমন নহে। তথাপি মাওলা পাকের কাছে শুকরিয়া না করার কোন হেতু নাই। ললাটের সেই কাটাকাটিতে মর্মান্তিকভাবে আহত হইয়াছিল আমার সাধের নামখানা!
বিদ্যা লাভের উপযুক্ত পাত্র না হওয়ায় শিক্ষা জীবনের নানা ডামাডোলে, সাকুল্যে, স্কুলে যাওয়া হয়েছিল অল্পদিন! ফলত, নিজের নামের শুদ্ধতা ও সঠিকতার ভার তুলে দিতে হয়েছিল অন্য লোকের ঘারে। নবম শ্রেণির নিবন্ধনকালেই এই দূর্ঘটনা ঘটিয়াছে বলিয়া ঐতিহাসিকেরা মত দিয়া থাকেন। কপাল ভালো যে, সে যাত্রায় পিতা মাতার নাম- তরিকায় আঘাত লাগে নাই!
আমি মুনসি মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন হইয়া জন্মাইলেও ভাগ্যবিড়ম্বনায় উহা হইতে ” মুনসি মোহাম্মদ ” তো কাটিলোই, সাথে বেলাল বিকৃত হইয়া বেল্লাল হইয়া গেলাম। ভদ্রপাড়ার লোকেদের সাথে তাই আমার নামের ডাকে তফাৎ আছে বৈকি। অশিক্ষা, কুশিক্ষা আর কিছু কিছু তাগুতি বিদ্যে অর্জনের ফলে নানা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক আমাকে যে কিছু মোটা কাগজ সরবরাহ করা হইয়াছে উহাতে আমার নাম কেবল ” বেল্লাল হোসাইন ” বলিয়া খুদিত আছে!
বাবা জাকারবার্গের বদান্যতায় নীল পর্দায় তাই আসল মুনসি মোহাম্মদ বেল্লাল হোসাইন হিসেবে লোকের কাছে পরিচিতি পাইয়াছি। কেউ কেউ আদর করিয়া মুনসি বেল্লাল বা বিল্লু মাস্তান এলএলবি বলিয়া ডাকিয়া থাকিলেও অদ্য আমার নাম মীর হালিম ভাই কর্তৃক পাল্টাইয়া গেলো। আমি আবু মিছিল হইলাম।
প্রিয় ভাইয়ের যুক্তিতে আবুল মনসুর আহমদ এর আ এবং বঙ্কিমচন্দ্রের ব নিয়া আমি আবু হইলেও ইহার ভিন্নার্থ কল্পনা করাও কম আনন্দের নহে! আবু অর্থ পিতা। মিছিলের বাবা হিসেবে আমি তো আসলেই আবু মিছিল। লেখার গন্ডি বাড়িতেছে। নিজেকে খোলসবন্দি করার সময় ভবিতব্য ভাবা অমূলক নয়। তাহার উপর সরকারের ক্ষুদ্র কেরানি বনিয়া সংসার চালাইতে বাধ্যগত হইয়াছি। কাজেই এহেন সময়ে নাম পরিবর্তনের এমন সুপ্রস্তাবে আমার শাপেবর-ই ঠাওর হইল। এবং বিনীতভাবে ভাইয়ের প্রস্তাব সম্মানের সহিত গ্রহণ করিয়া, আমি অদ্য আবু মিছিলরুপে আবির্ভূত হইলাম।
গতরাতে আমি দুইশত সাইত্রিশ টাকা কামাই করিয়া ঘুমাইতে যাই। জীবনে বহু কামাই করিয়াছি, খরচ করিয়াছি তাহার অধিক। তাই আমি কপর্দকহীন ঋণী লোক হিসেবে সাব্যস্ত। কিন্তু দুইশত সাইত্রিশ টাকার উত্তেজনায় মাথার বালিসখানা রাত্রির সিংহভাগে দুই উড়ুর মাঝখানে গদিনশিন করিয়াছি অসংখ্য বার! এই টাকার সংখ্যাটি কেবল টাকা নহে, ইহা একেকটি মুক্তোর ঝলক হইয়া বারবার আমার দৃষ্টিতে লাজ খেলিয়া গেছে। আর এই এহেন কান্ড কীর্তির স্বপ্নদ্রষ্টা যে, প্রিয় মীর হালিম ভাই তাহা কি এখনো খুলিয়া বলিতে হইবে?
যখন মহাদেব সাহার পরম্পরায় ” আমি তোর একটা কিছু হই ” বা মুনমুন মুখার্জির ” আজ হতে বছর চারেক পর ” কবিতার আবৃত্তি শুনে আমার বুক চিরিয়া উঠিত, তখনই টেই পাইতাম মনের মাঝেও আরেক মন আছে। যে মনের খোড়াক লাগে। সেই খোড়াকি যে জুগিয়েছে তাকে কী বলে ডাকা যায় ভাবিয়া চিন্তিত না হইয়া পারিনা। একদা শিশু পুত্রকে কোলে নিয়া ভাবিতেছিলাম, আল্লাহ পাক একে বাঁচাইয়া রাখিলে উহা কী হইবে বড় হইয়া? পিতা-মাতার বন্ধুমহল কাজে লাগাইয়া বিরাট আইনের ব্যবসায়ী হইবে নাকি মাঠের সাকিব আল হাসান? ও যাহাই হউক না কেন, ওর স্টেশনেও মাঝে মাঝে থামবে মন খারাপের গাড়ি। কী করিবে তখন সে? তাকে উদ্দেশ্য করিয়া তৎক্ষণাৎ উদ্যোগী হইয়া লিখিলাম এক গান।
[ ওরে ও, আমার বাহাদুর মন
মনের মাঝে লালন কইরো আরেক মন। (২)
পড়াশোনায় যখন যাইবা, দেখবা আছে শনি।
বাংলা পারবা যেমন তেমন, ইংরেজি বেশ কঠিন।
অংকে টেনেটুনে পাশে, ধর্মেতেতে ফেল।
সমাজেতে লাড্ডু পেলে, সমাজ দেয়না বেল।
এরচেয়ে ভালো ওইসব রেখে মনেরে দাম দেও।
যাহা পারবা তাহাতেতেই, ও মন খুশি হও।
ওরে ও, আমার বাহাদুর মন
মনের মাঝে লালন কইরো আরেক মন। (২)
কষ্ট করে জজ ব্যারিস্টার যদিও যাও হয়ে
এর ওর ফোনে জীবন তিতা, মুক্তি নাই জীবনে।
শত শত সালাম পাইবা, আরো পাইবা তেল।
এবার ভাবো কী করবা তা, না থাকলে জীবন?
ওরে ও, আমার বাহাদুর মন
মনের মাঝে লালন কইরো আরেক মন। (২)
এরচেয়ে ভালো বাউল পোষো, মনের ভিতর মন।
নিজের ডাকে সাড়া দিবে যখন তখন।
বৈশাখেতে কক্সবাজারে, ভাদ্র মাসে বিলে,
টইটম্বুর রূপের শোভা ঝিলিমিলি করে।
উত্তাল ঢেউয়ে ভয় পেয়ো না, পানিতে থৈ থৈ
এগুলোই স্রষ্টার লীলা, বুঝতে লাগে মন।
ওরে ও, আমার বাহাদুর মন
মনের মাঝে লালন কইরো আরেক মন। (২)
বুঝেশুনে পা ফেলো মন, লোক ঠকাইয়ো না।
বাড়ি গাড়ির স্বপনেতে বিভোর হইয়ো না।
জীবন পাইছো অল্প দিনের, যেতে হবে ফিরে
মাওলা পাকের কাছে বলার কীবা তোমার আছে?
মনকে বুঝাও ওরে পাগল, মনের মাঝে মন
সেই মনেরে কর লালন, ওরে অবুঝ মন।
ওরে ও, আমার বাহাদুর মন
মনের মাঝে লালন কইরো আরেক মন। (৩)]
( বেসুরো কণ্ঠে গাওয়া গানটির ভিডিও লিংক কমেন্টে সংযুক্ত)
কিছু কিছু কমেন্ট স্ট্যাটাসকে হার মানায়। তেমনই এক মহাকাব্যিক সাহিত্যগুণ সমৃদ্ধ অভিধায় আমার প্রিয় ভাই আমাকে অভিষিক্ত করিয়া আমাকে ভরা হাটে কেবল লজ্জিতই করিলেন না, আমার ভবিষ্যৎ ইতরকান্ডে তিনি ছোটমোটো একখানি এস্টোপেল জারি করিয়াছেন।
তাসলিমা নাসরিনের কবিতায় তিনি দাবি করেছিলেন যে, এমন ভেঙে চুরে কেউ তাকে ভালোবাসেনি আগে। হয়তো কোনো মুগ্ধ মানুষ আমায় বেসেছিল কভু ভালো, তবে এ কেমন ভালো? যে ভালোতে এই বয়সে এসে আমারো মনে হয় সত্যিই তো, এমন ভেঙে চুরে কেউ তো আমাকে দেখেনি কভু। মনের মাঝেও আপনপুরে যে মন পুষেছি সযতনে কেউ তো ডাকেনি তাকে ফিরে।
আজ এতোদিন বাদে, কোথা থেকে এলো এ মায়ার ডাক?
কেউ আমাকে ভালো বললে আমি ভীষণ লজ্জিত ও বিব্রত হই। আমার ব্যাপারে কারো উচ্চ ধারণা আমাকে বিড়ম্বনায় ফেলে কারণ আমি অতোটা ভালো নই। তবে আমি দোয়া চাই, যাতে সঠিক পথের দিশা পাই।
আত্মায় বাধা কাউকে প্লাটিনাম, হীরক বা স্বর্ণখচিত উপহারে বাধিত না করিলেও চলে। নেহায়েৎ মাটির গয়না বা কাগজের ফুলেও বহু ললনার শূন্যে ভাষায় গল্প আমার অজানা নহে। জীবনে যাহা পড়িয়াছি, তাহার বহুগুণ দেখিয়াছি নিজ চোঁখে। ফলত আমার লেখায় হয়তো ওঁরাই ঘুরেফিরে আসে। তামাক, ভদকা, ভাং, তাড়ি সেবন করিতাম না, তাস জুয়ার আড্ডা চিনিতাম বটে তবে সাহস করিয়া সেদিক পানে পা ফেলার মতো শক্ত শক্তি ছিলোনা। আমি তো কাজী নজরুলের মত ভগবান বুকে পদচিহ্ন একে দেয়ার মত কেই নই। ছাপোষা মানুষ হয়েও মানুষ শব্দটি আমাকে ভীষণ আলোড়িত করতো সেই শৈশবেই। শিশুকালে যে মানুষ দেখেছি, হয়তো তোমরা দেখোনি তা কেউ! তাই ওই দোষের মধ্যে দোষ ছিল বেশি বেশি মানুষ দেখার নেশা! আমি যে এক মুগ্ধ শ্রোতা! অবাক দর্শক! স্থানীয় সোনা মিয়ার পুলের উপর মাঝেসাঝে যে দেশি শিং, কই মাছের বাজার বসানো হয়, তাহা যে ভিন্ন জেলার নির্ঘাত চাষের, সেই গল্পও আমার কান এড়ায়নি!
মাঝে মাঝে নিজেকে জাদুকর ভাবি। কখনো নিজেকে শব্দ-কারিগর বলে ডাকি। তবে আমি জানি, আমি এর কিছুই নই।
একটি চমৎকার নামই যে একজন চমৎকার মানুষ উপহার দিবে এমন ভাবনা হয়তো অলীক। দেখা যায়; রাজা, বাদশা, সম্রাট, শাহেনশাহ নামে অনেক অভাবী লোক আছে। বহু নবাবের ঘরে চাল থাকে না। হামজা,রুস্তম নামের অনেকে আছে শারীরিকভাবে দুর্বল। আবার অনেক নিশ্চিন্ত লোক আছে যাহাদের নাম পেরেশান! অধিকন্তু, সন্তানের প্রতি পিতামাতার প্রথমত একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হইলো তাহার একটি অর্থপূর্ণ সুন্দর নাম রাখিয়া দেয়া যাহা তাকে অন্তত নামের প্রতি সুবিচারের তাগিদ অনুভব করাইবে। পুত্রের নামে মায়ের নামের আধিক্য নাই বলিয়া প্রিয় ভাই যে, আফসোস ফরমাইয়াছেন তাহা আপাতদৃষ্টিতে সত্য বলিয়া প্রমাণিত হয়। তবে বলিয়া রাখা ভালো, পুত্রের নামের আরিয অংশটি তাহারই অবদান। এমনিতেই নামটি এতোটাই দীর্ঘ হইয়াছে যে, মাঝে মাঝে বলিতে বিব্রত লাগে, তাই নতুন করিয়া কিছু যুক্ত করিবার হিম্মত পোষণ করিতেছি না। তবে এই মর্মে ইচ্ছে ছিল যে, রাজকন্যা আসিলে তাহার নাম হইতো ” আদিলাহ ফারহাত মিছিল! ” অর্থাৎ, আনন্দ মিছিলে মহিলা ন্যায় বিচারক! মাশাল্লাহ! একজন ন্যায়বিচারক মায়ের কন্যা আদিলাহ হইলে তো মায়ের সিফতই প্রকাশিত হয়। কিন্তু মাওলা পাক চাইলেন ভিন্নভাবে। তাহা যে নিসন্দেহে আমাদিগ কল্যাণে, সে কথা অবিশ্বাস করিতে পারিনা।
নিজের ভাগের নোংরা পাপের গল্প বিলানোয় কিছু লোকে আমাকে বোকা ও আহাম্মক বলিয়া বেড়ায়, কিন্তু আমি তো শিখিয়াছি, সত্য প্রকাশের মতো চৌকস কাজ আর হয়না! মিথ্যার বেসাতিতে বেসামাল সমাজে কিছু কিছু গল্প কানে খটকাই লাগে। কারণ আমরা যে মিথ্যাকে ভালোবাসি, ভালোবাসি ভণিতার রামধনু। যাহাই হউক, আমি ইহাতে চিন্তিত নহে। আমি ভাবিতেছি ইহাদিগের আমোদ প্রমোদ লইয়া। উহারা কী করিয়া কাটাইবে জীবন, খালি উর্দির ব্যারিকেড লইয়া? জীবন যদি জীবনের গল্প শুনিতে না চাহে, তবে কাহাকে শুধাইবে এ মন? লাভ-ক্ষতির পাকা হিসেবে হয়তো আমাদিগকে রোবট না বানাইয়া ছাড়িবে না। তবু কিছু লোক রবে যারা ভালোবাসা দিয়া জীবন কিনিবে। আমি না হয় ওই বোকাদের দলেই রইলুম! আশা আছে নিজেকে শুধরে নেয়ার। রফিক আজাদের কন্ঠে কণ্ঠ মিলাইয়া বলি,
” যদি ভালবাসা পাই আবার শুধরে নেব
জীবনের ভুলগুলি
যদি ভালবাসা পাই ব্যাপক দীর্ঘপথে
তুলে নেব ঝোলাঝুলি
যদি ভালবাসা পাই শীতের রাতের শেষে
মখমল দিন পাব
যদি ভালবাসা পাই পাহাড় ডিঙ্গাবো
আর সমুদ্র সাঁতরাবো
যদি ভালবাসা পাই আমার আকাশ হবে
দ্রুত শরতের নীল
যদি ভালবাসা পাই জীবনে আমিও পাব
মধ্য অন্তমিল। “
সত্যিই সুযোগ পেলে শুধরে নেবো নিজেকে!
পাশে থাকবেন তো?
আপনার,
আবু মিছিল, আমানতগঞ্জ, বরিশাল।
তারিখঃ ১০/০৪/২০২০ “