আন্তর্জাতিক ডেস্ক
বিজ্ঞানীরা মিয়ানমারের একটি প্রত্যন্ত জঙ্গলে নতুন এক প্রজাতির বানরের সন্ধান পেয়েছেন। যার সম্পর্কে এতদিন বিজ্ঞানীদের কিছুই জানা ছিল না। পোপা পর্বতের নামানুসারে বানরটির নামকরণ করা হয়েছে পোপা লাঙ্গুর। তবে এই প্রাণীটি এর মধ্যেই বিলুপ্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। কারণ এই প্রজাতির সদস্য রয়েছে মাত্র ২০০টির মত।
জুলজিক্যাল রিসার্চ জার্নালে এই আবিষ্কারের তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।
মিয়ানমার এক দশক আগে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীদের কাছে নিজেদের মেলে ধরতে শুরু করার পর নতুন ধরণের সরীসৃপ, উভচর নানা প্রাণীর আবিষ্কার হয়েছে। কিন্তু বানরের নতুন প্রজাতি আবিষ্কারের ঘটনা বিরল।
লাঙ্গুর হচ্ছে গাছের পাতা খায়, এমন ধরণের বানর, দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলোয় যে প্রজাতি দেখা যায়। এই প্রজাতির বানরটির বৈশিষ্ট্য হলো, এদের চোখে চশমাসদৃশ গাঢ় বর্ণের বৃত্তাকার রিং রয়েছে। যা আলাদা করে চোখে পড়ে। আর এর গায়ের পশমের বর্ণ ধূসর।
জিন গবেষণায় দেখা গেছে, পৃথিবীতে ১০ লাখ বছর আগে যেসব বানর ছিল বলে গবেষণায় জানা গেছে, তাদের চেয়ে এই পোপা লাঙ্গুর বানরের প্রজাতি আলাদা। আবাসস্থল ক্ষতি এবং শিকারের কারণে বানরের এই প্রজাতিটি বিলুপ্তির ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
বুনো বানরের মল-মূত্র থেকে পাওয়া ডিএনএ বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা অনেকদিন ধরেই ধারণা করছিলেন যে, মিয়ানমারে বানরের নতুন প্রজাতি রয়েছে। তবে এতদিন ধরে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ না পাওয়ায় তারা লন্ডন, লেইডেন, নিউইয়র্ক এবং সিঙ্গাপুরের প্রাকৃতিক ইতিহাসের জাদুঘরগুলোয় থাকা বানরের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করতে শুরু করেন।
মিয়ানমারে প্রথমদিকের অভিযাত্রীরা এসব নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন, কিন্তু যেগুলো তেমনভাবে পরীক্ষানিরীক্ষা করা হয়নি। সেই নমুনা থেকে পাওয়া ডিএনএ বুনো বানরের সঙ্গে যাচাই করে দেখার পর নতুন এই প্রজাতিটি শনাক্ত করেন বিজ্ঞানীরা।
মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলের জঙ্গলে পোপা লাঙ্গুরের এই প্রজাতিটি পাওয়া গেছে। পোপা পর্বতের তীর্থস্থানগুলোর কাছাকাছি অভয়ারণ্যে এদের বেশিরভাগ বসবাস করে।
সংরক্ষণবাদী গ্রুপ ফনা অ্যান্ড ফ্লোরা ইন্টারন্যাশনালের ফ্রাঙ্ক মোমবার্গ বলেছেন, বৈজ্ঞানিকভাবে এই বিশ্লেষণ বানরটির সুরক্ষায় কাজে আসবে। তিনি বলেছেন, সদ্য আবিষ্কৃত পোপা লাঙ্গুর এর মধ্যেই চরম বিপন্ন এবং বিলুপ্তির ঝুঁকিতে থাকা একটি প্রাণী। সুতরাং তাদের মধ্যে যেগুলো এখনো বেঁচে আছে, সেগুলো রক্ষা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এগুলোর নিরাপত্তায় স্থানীয় কমিউনিটির পাশাপাশি প্রাইভেট সেক্টরের সহায়তাও নিতে হবে।
এখন এই প্রজাতির ২০০ থেকে ২৫০ প্রাণী বেঁচে রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জার্মান প্রাইমেট সেন্টারের প্রাইমেট জেনেটিক্স ল্যাবরেটরির ক্রিস্টিয়ানা রোস বলেছেন, আবাসস্থানের ক্ষতি এবং শিকারের কারণে প্রাণীটি ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। শিকার একটি বড় সমস্যা। কিন্তু তার চেয়েও বড় সমস্যা হলো তাদের আবাসস্থান প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। মানুষের কর্মকাণ্ডের কারণে সেটা কমে যাওয়া, বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে।
সূত্র: বিবিসি