মাজহারুল ইসলাম
সকল মানুষের হৃদয় কখনও সমান হয় না। এ বিষয়ে কোরআন-হাদিস বা ইস
অতপর তোমাদের হৃদয় কঠিন (পাষাণ) হয়ে গেলো, (এমন কঠিন) যেন তা (শক্ত) পাথর কিংবা (মাঝে মাঝে মনে হয়) পাথরের চেয়েও বেশি কঠিন; (কেননা) কিছু পাথর এমন আছে যা থেকে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হয়, এবং কিছু পাথর এরূপ যে, তা ফেটে যায় এবং তা থেকে পানি নির্গত হয়। (অবশ্য) এর মধ্য থেকে (এমন কিছু পাথর আছে) যা আল্লাহর ভয়ে ধ্বসে পড়ে…। (সূরা বাক্বারাহ ৭৪)
এই আয়াত দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, পাথর কঠিন ও শক্ত হওয়া সত্ত্বেও তা থেকে উপকার পাওয়া যায়, তার মধ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় এবং এক প্রকার চেতনা ও অনুভূতি শক্তি তার মধ্যেও বিদ্যমান থাকে।
এখানে এটা জানা আবশ্যক যে, পাথরের উপর যে ক্রিয়াগুলো সংঘটিত হয় সেগুলো বাস্তব ঘটনা। প্রাণহীন জড়বস্তুর মধ্যেও আল্লাহ্ তা’আলা এ অবস্থা সৃষ্টি করে দেন। যেমন হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “এটা উহুদ পাহাড়, সে আমাদেরকে ভালবাসে, আমরাও তাকে ভালবাসি। ” [মুসলিম; ১৩৬৫]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন, “আমি মক্কায় এক পাথরকে চিনি, যে পাথর আমি নবী হওয়ার পূর্ব হতেই আমাকে সালাম করত, আমি এখনও সেটাকে চিনি। ” [মুসলিম; ২২৭৭]
কিন্তু আমাদের অনেক মানুষের দিল বরং কঠিন এবং শক্ত। অন্যের কষ্টে সহজে কষ্ট অনুভব করে না।
২। সব মানুষের উপলব্ধি কী আসলে সমান?
আর আমি বহু সংখক জিন ও মানুষকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি; তাদের যদিও (বুঝার মতো) হৃদয় আছে কিন্তু তা দ্বারা তারা উপলব্ধি করে না, তাদের (দেখার মতো) চোখ আছে তা দ্বারা তারা দেখে না এবং তাদের (শুনার মতো) কান আছে তা দ্বারা তারা শুনে না; আসলে তারা হচ্ছে চতুষ্পদ জন্তুর মত, বরং তার চেয়েও বেশী পথব্রষ্ট; এসব লোকেরাই মারাত্মক উদাসীন। (সূরা আল- আ’রাফ ১৭৯)
অর্থাৎ, আমি তো তাদেরকে হৃদয়, মস্তিষ্ক, কান, চোখ সবকিছুসহ সৃষ্টি করেছিলাম। কিন্তু এ বেকুফরা এগুলোকে যথাযথভাবে ব্যবহার করেনি এবং নিজেদের অসৎ কাজের বদৌলতে শেষ পর্যন্ত তারা জাহান্নামের ইন্ধনে পরিণত হয়েছে। সুতরাং তাদের আমলই তাদেরকে জাহান্নামের উপযুক্ত করেছে।
আর যা কিছু বুঝেছে, দেখেছে এবং শুনেছে, তা সবই ছিল সাধারণ জীবজন্তুর ‘ পর্যায়ের বুঝা, দেখা ও শুনা, যাতে গাধা-ঘোড়া, গরু-ছাগল সবই সমান। এ জন্যই উল্লেখিত আয়াতের শেষাংশে এসব লোক সম্পর্কে বলা হয়েছে— “এরা চতুস্পদ খাদ্য আর পেটই হলো তাদের চিন্তার সর্বোচ্চ স্তর।
অতঃপর বলা হয়েছে—“এরা চতুস্পদ জীব-জানোয়ারের চেয়েও নিকৃষ্ট ” তার কারণ চতুস্পদ জীব-জানোয়ার শরীআতের বিধি-নিষেধের আওতাভুক্ত নয়- তাদের জন্য কোন সাজা-শাস্তি কিংবা দান-প্রতিদান নেই। তাদের লক্ষ্য যদি শুধুমাত্র জীবন ও শরীর-কাঠামোতে সীমিত থাকে তবেই যথেষ্ট। কিন্তু মানুষকে যে স্বীয় কৃতকর্মের হিসাব দিতে হবে। সেজন্য তাদের সুফল কিংবা শাস্তি ভোগ করতে হবে। কাজেই এসব বিষয়কেই নিজেদের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য বলে সাব্যস্ত করে বসা জীবজন্তুর চেয়েও অধিক নির্বুদ্ধিতা। তাছাড়া জীব-জানোয়ার নিজের প্রভূ ও মালিকের সেবা যথার্থই সম্পাদন করে। পক্ষান্তরে অকৃতজ্ঞ না-ফরমান মানুষ স্বীয় মালিক, পালনকর্তার আনুগত্যে ক্রটি করতে থাকে। সে কারণে তারা চতুস্পদ জানোয়ার অপেক্ষা বেশী নির্বোধ ও গাফেল। কাজেই বলা হয়েছে “এরাই হলো প্রকৃত গাফেল।” [তাবারী; ইবন কাসীর]
লেখকঃ আইনজীবী ও ইসলামী চিন্তািবিদ