প্রচলিত মিথ হচ্ছে, আসামী আদালত থেকে খালাস পেয়েছে অর্থাৎ সে নির্দোষ (innocent)। অনেক ক্ষেত্রে সেটা হলেও বাস্তবে সকল ক্ষেত্রেই কি তাই? সকল ক্ষেত্রে আসামী খালাস পেলেই যদি তার মানে হয় সে নির্দোষ (innocent) তাহলে বাবরী মসজিদ ভাঙ্গার রায় কেন আমাদের মনোক্ষুন্ন করে? কেন-ই বা বলা হয় ‘নো ওয়ান কিলড জেসিকা’? কিংবা, কেন-ই বা বিশ্বজিৎ হত্যা, বুশরা হত্যায় আসামীদের খালাসপ্রাপ্তি আমাদের আহত করে?
বস্তুত, আসামী আদালত থেকে বিশেষত উচ্চ আদালত থেকে নানান কারণে খালাস পেতে পারে। যেমনঃ উচ্চ আদালত যদি দেখেন যে, অধস্তন আদালতে বিচারকারী জজ সাহেবের এখতিয়ার ছিলো না বা মামলায় গুরুত্বপূর্ণ কোন আইনগত বা পদ্ধতিগত ত্রুটি রয়েছে সেটি যেমন কোন আসামীর খালাস পাবার কারন হয় তেমনি আইনের ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে বিচারক টু বিচারকের সাইকোলজিক্যাল ডিফারেন্স জন্য-ও আসামী খালাস পেতে পারে। আবার ধরা যাক, কোন আসামীর বিরুদ্ধে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে কোন অপরাধে জড়িত থাকার ভিডিও থাকার পরেও বর্ণিত অপরাধ, সাক্ষীদের বক্তব্যের তারতম্য বা ডাক্তারী কাগজের হেরফের রয়েছে- সে ক্ষেত্রেও আসামী খালাস পেতে পারে। অর্থাৎ খালাস পেলেই যে আসামী সকল ক্ষেত্রে innocent এটা ভাববার কোন কারণ নেই।
ইদানিং বিভিন্ন জ্ঞানী লোকদের লেখায় যেখা যায় যে, আসামী খালাস হলে-ই তারা কোন না কোন ভাবে ইনিয়ে বিনিয়ে ট্রায়াল কোর্ট বিষয়ে নেতিবাচক এবং ক্ষেত্রবিশেষ নোংরা এবং অনাকাংখিত বক্তব্য প্রদান করেন। সকলের মনে রাখা উচিৎ, বিচারিক আদালতকে বলা হয় Kingpin; জুডিসিয়াল সিস্টেমে তারা-ই প্রাণ। বিচারিক আদালতের একজন বিচারকের সুযোগ হয় বাদী-আসামী-সাক্ষীদের সরাসরি দেখার; তাদের কথা শোনার; তাদের মানসিক প্রবৃত্তি উপলবদ্ধি করার- যে সুযোগ আপীল আদালতের অনেক ক্ষেত্রে থাকে না বা বিশেষ করে যারা কারণে অকারণে বিচারিক আদালতের বিচারকদের ভুল ধরতে ব্যতিব্যস্ত থাকেন তাদের-ও থাকে না।
সবচে’ বড় কথা হল, কোন বিচারক আসামীকে সাজা প্রদান করে পৈচশিক আনন্দ পান না; প্রত্যেক আসামীর সাজাপ্রদান একজন বিচারককে ব্যথিত করে থাকে। অনুরুপভাবে, বৈচারিক আদালতের একজন বিচারক যিনি ঘটনা, কাগজপত্র বা ভিকটিমকে স্বচক্ষে দেখার সুযোগ পান কিন্তু সাক্ষীর অভাবে বা কাগজপত্র বা তদন্তে ত্রুটির কারণে যখন একজন হত্যা-ধর্ষণ বা লোমহর্ষক অন্য কোন মামলায় আসামীকে খালাস প্রদান করতে বাধ্য হয়েন তখন-ও তিনি ভিকটিমকে বিচার দিতে না পারার কারণে আহত হয়েন-আঘাত প্রাপ্ত হয়েন।
সুতরাং, বোদ্ধাশ্রেণীর নিকট অনুরোধ থাকবে, প্রকৃত ঘটনা অনুধাবন না করে গড়পড়তা মন্তব্য না করার জন্য। পাশাপাশি, অনেকের ভেতর বিচারকদের বিষয়ে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে নেতিবাচক মন্তব্য করার যে মানসিকতা রয়েছে সেটিও পরিতাজ্য।
Facebook থেকে সংগৃহীত