করোনার দিনগুলোতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম না থাকলে শ্বাসকষ্টে না হলেও দমবন্ধ হয়ে অনেকে মারা পরতাম! একাকিত্বকে ভুলিয়ে দিতে অন্যের বাড়ির রান্নাঘর থেকে শুরু করে ছাদবাগানের ছবিগুলো আমাদের সম্পৃক্ত রাখে। ভাবেন তো একবার, ভিডিও কল না থাকলে কীভাবে থাকতেন প্রিয় মুখগুলোর দর্শন ছাড়া! মানুষের কোয়ারেন্টিন মানা এতো সহজ হতো না সামাজিক যোগাযোগ না থাকলে। এই প্রেক্ষিতে আগে প্রকাশিত বাস্তব অভিজ্ঞতার নিরিখে লেখা ফিচারের একাংশ নিচে তুলে ধরলাম।
কানাডার আলবার্টা থেকে এক সিনিয়র ফ্রেন্ড তাঁর পরিবারের জন্য কী কী রান্না করেছে তার ছবি পাঠালো। ফিরতি মেসেজে আমি আমার বউয়ের জন্য যে জলপাই আচার বানিয়েছি তার একটা পাঁচ সেকেন্ডের ভিডিও সেন্ড করলাম। সে আবার আমাকে বিফ ছেঁচা কাবাবের রেসিপিটা দিতে বলল। আর মন্ট্রিলে সৃষ্টি আপুর মেয়ে হয়েছে, নজরুল ভাই ফেসবুকে বাবুর আপডেট জানালো। চিনদেশের এক অধ্যাপিকার সাথে শ্রম আইনের নানা টপিক নিয়ে অনেক ইমেইল চালাচালি করেছিলাম। সে তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাকে পড়তে যেতে আমন্ত্রণ করেছিল, যাওয়া হয়ে উঠেনি। ইতালির তুরিনে যে বন্ধুটা একটা পিৎজার দোকানে কাজ করে সে ভিডিও কলে ওর দোকানের কিচেনটা দেখিয়েছে একদিন। আমার এক প্রিয় ছাত্র নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইট এরিয়াতে কীভাবে ঝুলিয়ে গুলিস্তানের মত বদনা বিক্রি করে তা শুনিয়ে হেসে কুটিকুটি হল কয়েকদিন আগে। কিছুদিন আগে আরেক প্রিয়মুখ পোল্যান্ড গেলো স্কলারশিপ নিয়ে। ভালো মন্দ আপডেট জানি প্রতিদিনই।
ইন্ডিয়ার তামিল নাড়ু ভ্রমণের সময় যে ছেলেটার সাথে বন্ধুত্ব হয়ে ছিল, সে কিছুদিন আগে কেরালার এক নার্সকে বিয়ে করেছে। দাওয়াত দিয়েছিল। যাওয়া যায়নি! কিছুদিন আগে সে জার্মানি গেছে দেখলাম। আজ আবার সে তুরস্ক যাচ্ছে। কোলকাতার বারাসাতে রিলায়েন্স ট্রেন্ডস এর শো রুম থেকে একটা গেঞ্জি কিনেছিলাম। সে শপের সেলস গার্ল এক আপুর সাথে পরিচয় হয়েছিল, অনেকদিন পর দেখি সে ফেসবুকে পোক করেছে। মাইসুর এক্সপ্রেস ট্রেনে বালে কৃষ্ণা রেড্ডি নামের যে ভাইয়াটার সাথে দেখা হয়েছিল, তাকে আমি প্রায়ই ফেসবুকে সার্চ দেই। এখনও পাই নাই।
জাপান থেকে বন্ধু শাকিল ফিস ফ্রাইয়ের যে ছবি দিলো তাতে আমার লোল পড়েছিল! যে স্টুডেন্টকে এক সময় যত্ন করে পড়াতাম কিন্তু এখন আর সময় সুযোগের অভাবে যেতে পারি না, ও কোনো কিছু না বুঝলেই মেসেঞ্জারে প্রবলেম পাঠিয়ে দেয়। সুযোগ মত আমিও সলিউশান দিয়ে দেই। উপরে যাদের কথা বললাম, তাদের সাথে দেখা হয় না অনেক দিন। কিন্তু সোশাল মিডিয়ার কল্যাণে মনে হয় কাছেই আছি। এসব করতে ভালোই লাগে। কিন্তু খুব খেয়াল রাখতে হবে যেন দূরবর্তী প্রিয়জনকে বেশি সময় দিতে যেয়ে কাছের লোকেদের দূরে ঠেলে না দেই।
প্রযুক্তি এখন প্রতিটা মানুষকে এক একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপে রূপান্তর করতে চায়। ভুলেও ওই ফাঁদে পা ফেলা যাবে না। দুনিয়াটা অনেক ছোট হয়ে গেছে প্রযুক্তির কল্যাণে। কিন্তু আপন সম্পর্কগুলো ছোট হয়ে গেলে প্রযুক্তির বিশালতার সুফল আমরা পুরোপুরি নিতে পারবো না। এক্ষেত্রে, বাহিরের বন্ধু জগতের সাথে ঘরের লোকেদের সম্পৃক্ত করে নিলে একসাথেই গল্প আড্ডায় মেতে থাকা যায়। সময়টুকুনের কোয়ালিটি ইউটিলাইজেশন নিশ্চিত হয়। (করোনা প্রাদুর্ভাবের আগের লেখা)
লেখকঃ বেল্লাল হোসাইন, আইন কর্মকর্তা, অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড। তিনি “আমাদের স্বপ্ন ” সামাজিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সংগঠক। bellal.sincere@gmail.com