স্রষ্টার এক অন্যতম দান হলো পিতা-মাতা। পিতা-মাতার গুরুত্ব আলোচনার উর্ধ্বে। পিতৃ-মাতৃহীনতার অপূর্ণতা পিতৃ-মাতৃহীন সকলের মনে কিঞ্চিৎ হলেও থাকে। ধর্মীয় কিংবা মানবিক দিক থেকেও পিতা-মাতার স্থান অনেক উপরে৷ তবে আফসোসের বিষয় হলো পিতা-মাতার ভরণপোষণের জন্য আইন- প্রণয়ন করতে হয়েছে যা পিতা-মাতা ভরণপোষণ আইন।
প্রত্যেকটা পরিবারের প্রারম্ভিকতা হলো পিতা-মাতা। আর পিতা-মাতার শেষ বয়সটা যদি হয় অসহায়ত্বের তাহলে তা নিশ্চয় পাশবিকতা ও অমানবিকতা দৃষ্টান্ত। সমাজের বেশিরভাগ পরিবার নির্ভর করে পিতা কিংবা মাতার আয়ের উপর। উক্ত পরিবারের বৃদ্ধি, সন্তানের জন্ম থেকে তাদের বেড়ে উঠা সহ সকল বিষয়ে পিতা-মাতা তাদের সর্বাধিক ক্রিয়ার ব্যবহার করে থাকেন। কোন পরিবারে একক সন্তান, কোন পরিবারে একাধিক সন্তান লালন পালন, তাদের কর্মক্ষম করে গড়ে তোলা পর্যন্ত পিতা মাতার প্রচেষ্টার কোন কমতি থাকে না। তবে খুবই কম ক্ষেত্রে বিচ্যুতিও লক্ষ করা যায়।
কোন ব্যক্তিকে তার কর্ম সক্ষমতায় পৌঁছে দিতে পিতা-মাতার অবদান এবং ত্যাগ কৃতজ্ঞতার উর্ধ্বে। জন্মদান থেকে শুরু করে এতো অবদান যাদের থাকে কোন ব্যাক্তির উপর, সে ব্যাক্তির কাছে যদি তার পিতা-মাতা পরিত্যক্ত বোঝা হয়, আর সে পিতা মাতার ভরণপোষণ, দেখাশোনা ও সন্তানের সাথে আশ্রয়ের জন্য আইন প্রণয়ন করতে হয় তাহলে তা হতভাগ্য ও আফসোসের বিষয় ।
পিতা-মাতার ভরণপোষণ আইন- ২০১৩ এর ৩ ধারার বিধান অনুযায়ী, প্রত্যেক সন্তান তার পিতা-মাতার ভরণপোষণ নিশ্চিত করবে। ভরণপোষণ বলতে কী কী বুঝাবে সে ক্ষেত্রে স্পষ্ট বিধান সাপেক্ষে পিতা-মাতার ভরণপোষণ আইন-২০১৩ এর ২(খ) ধারায় বিধান করা হয় যে, ভরণপোষণ বলতে খাওয়া-দাওয়া, বস্র, চিকিৎসা, বসবাসের সুবিধা এবং সঙ্গ প্রদান করাকে বুঝাবে।
প্রত্যেক সন্তান তাদের পিতা-মাতাকে ভরণপোষণ, সঙ্গ প্রদান কিংবা একইসাথে বসবাস করা এবং পিতা-মাতাকে কোন প্রকার বৃদ্ধাশ্রমে বসবাস করতে বাধ্য করা যাবে না মর্মে এই আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। নৈতিক দিক থেকে পিতা-মাতার বৃদ্ধ বয়সের বা কর্ম অক্ষম সময়ের ভরণপোষণ, দেখাশোনা সহ সকল দায়িত্ব পালন করা সন্তানের একটি নৈতিক আদর্শ ও কর্তব্য ।
পিতা-মাতার ভরণপোষণ আইন-২০১৩ এর ৫ ধারার বিধান অনুযায়ী, সন্তান পিতা-মাতাকে ভরণপোষণ না দিলে কিংবা দিতে অস্বীকৃতি জানালে দণ্ড স্বরুপ অনধিক ১ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড এবং তা অনাদায়ে অনধিক তিন মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে। উক্ত আইনের মাধ্যমে পিতা-মাতার অবর্তমানে দাদা-দাদী ও নানা-নানির ভরণপোষণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং তা পিতা-মাতার ভরণপোষণ হিসবে গন্য হবে। এবং কোন সন্তানের স্ত্রী, বা ক্ষেত্রমত, স্বামী কিংবা পুত্র-কন্যা বা অন্য কোন নিকট আত্নীয় ব্যক্তি, পিতা-মাতার বা দাদা-দাদীর বা নানা-নানীর ভরণ-পোষণ প্রদানে বাধা প্রদান করলে বা অসহযোগিতা করলে তা অপরাধ বলে বিবেচিত হবে এবং একই রুপ দণ্ডে দণ্ডিত হবে ।।
উক্ত অপরাধ আপোষযোগ্য, জামিন যোগ্য ও আমল যোগ্য। উক্ত অপরাধ পিতা-মাতার লিখিত অভিযোগের মাধ্যমে ১ম শ্রেণির জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে বিচার পরিচালনা করা হবে।
সন্তানের নৈতিক কর্তব্য পিতা-মাতার দেখাশোনা করা বা ভরণপোষণ প্রদান করা, যেহেতু তা প্রদানের জন্য সন্তানকে বাধ্য করা মূলক আইন প্রণয়ন করা হয়েছে সেহেতু বলা যায় বর্তমান সমাজে নৈতিকতা ও নৈতিক আদর্শে আদর্শবান সন্তানের বড়ই অভাব ।।
মোঃ লিয়াকত চৌধুরী শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ,বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়।Mail: anondoraj28@gmail.com