করোনা সংকট যাচ্ছে। মানুষের কাজ নেই, গরিব মানুষের ঘরে খাবার নেই। দিনমজুর, কুলি ও শ্রমিক শ্রেনী লোকজন দিশেহারা। আগামীকাল কি হবে এই চিন্তায় ঘুম হারাম। সারা বিশ্ব গভীর উদ্বেগ ও উৎকন্ঠার মধ্য দিয়ে পার করছে। কোথাও সুচিকিৎসার গ্যারান্টি নাই। কেউ রাস্তায় চাইলেও বের হতে পারছে। একটা অজানা গন্তব্যে পৃথিবী চলছে । এমন পরিস্থিতিতে কেউ কেউ আবার নিজেদেরকে জাহির করতে ব্যস্ত। কোন বিপদগ্রস্থকে সাহায্য করে তা আবার প্রচারে নেমে যাচ্ছে অনেকে। যেটি ধর্মীয় ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি কোন দিক থেকেই কাম্য নয়।
কোন কিছু দান করলে নিজের আরেক হাতও যেন জানতে না পারে সে বিষয়টি সবারই জানা থাকার কথা। যারা লোক দেখানো কাজের সাথে জড়িয়ে পড়ছেন তাদের জন্য নিচের হাদীসের বাণীটি পড়ে দেখা উচিত। আর সকর্তকতা অবলম্বন জরুরী। কেননা কালকে আমি বা আপনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যদি মারা যায় তাহলে সবকিছু পড়ে থাকবে। কিছুই সঙ্গে যাবে না। সেজন্য জ্ঞানীদের জন্য এই হাদীসটি পড়া জরুরী বলে মনে করছি। মনোযোগ দিয়ে নিচের হাদিসটি পড়ি।
আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন তিনি রাসুল (সা.) কে বলতে শুনেছেন- কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম এমন এক ব্যক্তির ব্যাপারে ফয়সালা হবে যে শহীদ হয়েছিল। তাকে আনা হবে এবং তাকে যেসব সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়েছিল তা পেশ করা হবে। সে তা চিনতে পারবে। আল্লাহ তা’য়ালা তাকে জিজ্ঞেস করবেন, ‘আমি যে সমস্ত নিয়ামত তোমাকে দিয়েছিলাম, তার বিনিময়ে তুমি কি কাজ করেছ?’ সে বলবে, আমি আপনার পথে লড়াই করে শহীদ হয়েছি। তিনি বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ। বরং তুমি এজন্য লড়াই করেছ যে, লোকেরা তোমাকে বীর বাহাদুর বলবে! আর তা বলাও হয়েছে।
অতঃপর তার সম্বন্ধে নির্দেশ দেওয়া হবে এবং তাকে উপুড় করে টেনে নিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। অতঃপর আরেক ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হবে, সে ইলম অর্জন করেছে, তা লোকদের শিক্ষা দিয়েছে আর কুরআন পাঠ করেছে। তাকে উপস্থিত করা হবে এবং তাকে দেওয়া সুযোগ সুবিধাগুলোও তার সামনে তুলে ধরা হবে। সে তা দেখে চিনতে পারবে। তুমি তোমার নিয়ামতের কি সদ্ব্যবহার করেছ? সে বলবে আমি ইলম অর্জন করেছি, লোকদের তা শিক্ষা দিয়েছি এবং আপনার সন্তুষ্টির জন্য কুরআন পাঠ করেছি।
আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা কথা বলছ। বরং তুমি এই উদ্দেশ্যে বিদ্যা অর্জন করেছিলে যে, লোকেরা তোমাকে আলেম না বিদ্বান বলবে, এবং কুরআন এই জন্য পাঠ করেছিলে যে, তোমাকে ‘ক্বারী’ বলা হবে। আর তা বলাও হয়েছে। অতঃপর তার সম্বন্ধে নির্দেশ দেওয়া হবে এবং তাকে উপুড় করে টেনে নিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। অতঃপর আরেক ব্যক্তিকে আনা হবে, তাকে আল্লাহ অজস্র ধন দৌলত দান করেছেন এবং নানা প্রকারের ধন সম্পদ দিয়েছেন। তাকে দেওয়া সুযোগ সুবিধাগুলোও তার সামনে তুলে ধরা হবে। সে তা দেখে চিনতে পারবে।
আল্লাহ জিজ্ঞেস করবেন, তোমার এ সম্পদ দ্বারা তুমি কি কাজ করেছ? সে বলবে, যেখানে ব্যয় করলে আপনি সন্তুষ্ট হবেন এমন কোন খাত আমি বাদ দেইনি বরং সেখানেই খরচ করেছি আপনার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে। মহান আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ। বরং তুমি এই জন্য দান করেছ যে, লোকেরা তোমাকে দাতা বলবে। আর তা বলাও হয়েছে। অতঃপর তার সম্বন্ধে নির্দেশ দেওয়া হবে এবং তাকে উপুড় করে টেনে নিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (সহীহ মুসলিম : ৪৭৭১ ইফা)
সত্যিকার বিশ্বাসী লোক হয়ে উঠতে হবে। তাহলে এসব করোনা, ও মহামারি কিছুই আসবে না। আমাদের রব, সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন উপরের হাদীসটি আমল করার তৌফিক দান করুন। লোক দেখানো সকল কাজ ও প্রদর্শনেচ্ছা থেকে বিরত রাখুন এবং সবার নেক আমলগুলোকে কবুল করুন। যারা শুধু লোক দেখানের জন্য আমল করছেন তারা এই হাদীস থেকে শিক্ষা নিতে পারেন। আর যারা সহীহ ও শুদ্ধ নিয়ত নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন তারা নিশ্চয়ই উত্তম প্রতিদান দুনিয়া ও আখিরাতে পাবেন।
লেখকঃ মোঃ তাজুল ইসলাম, কলামিষ্ট ও গবেষক।