রাজশাহী বিশ্ববিদ্যাল অনেকের কাছে যেমন স্বপ্নের জায়গা, আমার কাছেও তা–ই। ভর্তি পরীক্ষার দিনই প্রথম পা রাখা রাবিতে, এর আগে কখনো আসা হয়নি। প্রথম দেখাতেই মনে হয়েছিল, যেমন করেই হোক, এই সুন্দর, ছিমছাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাকে চান্স পেতেই হবে। অবশেষে চান্স পেলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া ছিলো জীবনের সেরা অনুভূতি বিশেষ করে যখন আইনের মত একটি বিষয় নিয়ে পড়ার সুযোগ হলো তখন সে আনন্দ আমার ও আমার পরিবারের জন্য দ্বিগুণ হয়ে
বিশ্ব মনন সৃষ্টি করে বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর যখন ক্লাস শুরু হয় তখন নিজের চোখের সামনে বাস্তবতা ও কল্পনার এক নতুন দরজা খুলে যায়। দেখতে পাই তথ্য ও জ্ঞানের সাথে বাস্তব অভিজ্ঞতার মিশ্রণ কিভাবে মানুষকে জগতে প্রতিষ্ঠিত করে। শুধু আমি নই আমার মত আর সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশে ও শিক্ষকদের শিক্ষা দানে মুগ্ধ হয়। নিজের জগতকে বড় করতে থাকে। প্রথম বর্ষের ছাত্র-ছাত্রীর জন্য এটি এক ভিন্ন অনুভূিতি। ক্যাম্পাস, লাইব্রেরী, মাঠ ও বন্ধুর ভালোবাসায় ভালোই কাটছিলো দিন। কিন্তু বিশ্ব জুড়ে হানা দেয় কোভিড-১৯। বন্ধ হতে থাকে সব প্রতিষ্ঠান। অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মত প্রিয় রাবিও বন্ধ ঘোষণা করা হয়। অগত্যা সবার মত বাসায় চলে আসি। বাসায় আসার পর থেকেই ক্যাম্পাসের কথা মনে পড়তে থাকে। দীর্ঘ এ বিরতি ক্যাম্পাসের প্রতি ভালোবসাসা আরো বৃদ্ধি করেছে বহুগুণ।
ক্লাস চলাকালে প্রায়ই বন্ধুরা মিলে একেকজনকে ‘পচানি’ দিই। বেশির ভাগ সময় দেখা যায়, সেই একজনটা আমি! তখন বন্ধুদের এই খেপানোতে মন খারাপ হলেও ছুটিতে এটাই বেশি মিস করি। অদ্ভুত অদ্ভুত সব নামে ডাকা, দলবেঁধে খাওয়া দাওয়া, ঘুরতে যাওয়া, ক্যাম্পাসে দলবেঁধে হেঁড়ে গলায় গান গাওয়া…সবকিছুই মিস করি খুব।
রাবিতে মিস করার মতো অনেক কিছুই আছে— স্টেশন বাজারের চা, চারুকলার সিস্টেম, টুকিটাকির আড্ডা, আমতলীর গান, ইবলিশ চত্ত্বর, শহীদ মিনার …কিন্তু আমি সবচেয়ে বেশি মিস করি ক্যাম্পাসের সরু, প্যারিস রোডটা। রাস্তার দুই ধারে ঘন সবুজ গাছপালা আর পাখির ডাকে সব সময় এক অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করে। গাছের আড়াল থেকে ঝপ করে নামা সন্ধ্যা দেখে মনের কোণ থেকে সব দুশ্চিন্তা দূর হয়ে যায়। হঠাৎ কোনো কারণে মন খারাপ হয়ে গেলে মন ভালো করার সঙ্গী ওই রাস্তাই। বিকেলের মিষ্টি রোদে ক্যাম্পাসের রাস্তায় একাকী হাঁটলে মনের মধ্যে একটা স্বর্গীয় আনন্দ ভর করে। কোলাহলমুখর এই নগর জীবনে রাস্তাটা আমার কাছে খুব আপন, স্বস্তিদায়ক। ডিপার্টমেন্টে যাওয়ার সুবাদে যখনই আমার ইচ্ছে হয়, তখনই ছুটে চলে যাই এই রাস্তায়। শান্ত, পরিপাটি পথটা ঘিরে আমার চার বছরের রাবি জীবনে অনেক সুন্দর স্মৃতি রচিত হবে, এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত।
আমার এ অনুভুুতিগুলো আমার একান্ত নয়। অন্যান্যরাও তার মত করে হয়ত তার অনুভূতিগুলো উপলব্ধি করে। তাই বন্ধুর সাথে যখন কথা হয় বন্ধুর মাঝেও যেমন ক্যাম্পাসে ফেরার আকুতি দেখা যায় তেমনি বড় ভাইয়া ও আপুরাও তাদের প্রিয় ক্যাম্পাসের প্রিয় স্মৃতি ও স্বপ্নগুলোকে আকড়ে ধরে আগামীর সুন্দর পৃথিবীতে তাদের পদচারণার তাড়না অনুভব করে। আর এই তাড়নাতেও ক্যাম্পাসে ফেরার আকুতি আছে। পৃথিবীর স্বাভাবিক রূপ আমাদের আবার প্রিয় ক্যাম্পাসে নিয়ে যাবে এমন প্রত্যাশাই অনেকের মত আমার।
আকিল বিন তালেব
প্রথম বর্ষ, আইন বিভাগ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়