পেশাগত জীবনে যাবার পর অনেকেই তার মননশীলতাকে রুদ্ধ করে শুধু পেশাগত দ্বায়িত্ব পালনেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন । পেশাগত জীবন অনেকের সৃজনশীল কাজকে আটকে দিলেও শেখ ফিরোজ তাঁর অদম্য স্পৃহায় কবিতা লিখে যেমন প্রশংসা কুড়িয়েছেন, হয়েছেন পাঠক নন্দিত। তেমনই তার পেশাগত জীবনেও তিনি একজন সৎ, পরিশ্রমী এবং উদার মনের মানুষ । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। বর্তমানে তিনি পূবালী ব্যাংক লিমিটেড, ভাঙ্গা শাখায় ব্যবস্হাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন । সমসাময়িক সাহিত্য সংস্কৃতির পাশাপাশি তার সাথে কথা হয় নানা দিক নিয়ে। আইনী পাঠশালার পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো– আইনী পাঠশালার পক্ষে সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন- নূরুন্নবী সবুজ
কবিতা লেখা পড়া বা উপভোগের বিষয় কোনাটি সমর্থন করেন?
কবি শেখ ফিরোজ -কবিতা শুধু কল্পনা বা নিছক গাল-গল্প নয় কবিতা জীবনের গভীর বিষয়গুলো সাবলীভাবে তুলে আনে। জীবনের জন্য যে নান্দনিকতা আমরা প্রত্যাশা করি, তা কবিতার মাধ্যমে খুব সহজে তুলে আনা যায়। তাই কবিতা লেখা, পড়া বা শুধু উপভোগের বিষয় নয় বরং জীবন উপলবদ্ধির বিষয়। জীবনকে নান্দনিক আর মধুর করার বিষয়।
কাব্যগ্রন্থ পাঠক নন্দিত হলেই কি তাকে সফল গ্রন্থ বলা যায়?
কবি শেখ ফিরোজ – হ্যা,বলা যায়। আসলে পাঠক নন্দিত তখনই হয়,যখন তাতে জীবন এবং জগৎ সমন্ধে ইতিবাচক ধারণা আর জীবন বোধের স্বার্থক আল্পনা থাকে। যা সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের নিগুঢ় সম্পৃক্তাকে ব্যক্ত করে। সমাজ বাস্তবতার প্রেক্ষিতে বিভিন্ন অসঙ্গতিকে তুলে ধরে। অর্থাৎ,একটি স্বার্থক বা সফল গ্রন্হ হবে কালের কথন যা সমকালের কথা বলে এবং মহাকালের কথা বলে, প্রতিটি মানুষের নিজস্বতাকে স্পর্শ করতে পারে।একটি স্বার্থক কাব্যগ্রন্হ হবে কালের নির্দেশনা,আশা জাগানিয়া আলোকবর্তীকা। তবে,শুধু বিক্রয়ের মাপকাঠিতে গ্রন্হকে পাঠক নন্দিত বা সফল বলা যায়না।
পেশাগত জীবনে কবিতার জন্য অতিরিক্ত চাপ পড়ে কি?
কবি শেখ ফিরোজ -না,মোটেও না। মানুষের পেটের ক্ষুধা মিটলেও মনের ক্ষুধা মিটে না । এই কারনে আমাদের ভেতর একঘেয়েমি এবং ক্লান্তি দ্রুত কাজ করে । জীবনে বৈচিত্র্য না থাকলে তা অসুখী জীবনে পরিণত হয়। অতএব, জীবনকে যাঁরা উপভোগ করতে চায়, তঁরা পাশাপাশি কিছু না কিছু করে। ভালো লাগা অনুসারে সেগুলো করে। যেমন-কেউ বই পড়ে,ছবি আঁকে,গান গায় ইত্যাদি। পেশাগত কাজ আর সাহিত্য চর্চা দু’টোই আমার কাছে কাজ। দুটোর টাইম টেবিলও আলাদা। একটা করতে গিয়ে আরেকটাকে ঠকানোর পক্ষপাতি আমি নই। যতটুকু করি, পরিপূর্ণ মনোযোগের সাথেই করি। তাছাড়া,পেশাগত কাজ মনের মধ্যে যে একঘেয়েমি তৈরী করে,সাহিত্য চর্চা তা দূরীভূত করে। ফলে পেশাগত কাজে নতুন উদ্যোম পাওয়া যায়।
আর চাপ পড়ার কি আছে ? কেউ হয়তো বাসায় গিয়ে নাটক দেখে সময় কাটাচ্ছে। আর,একই সময়ে আমি কবিতা লিখছি। কবিতার প্রতিটি লাইনেইতো অসংখ্য চরিত্র থাকে। শুধু উপভোগের ভিন্নতা। একজন দেখছে টেলিভিশনে বা ইউটিউবে,আর অন্যজন দেখছে কল্পনায়।তাছাড়া, টাইম ম্যানেজমেন্টটা জীবনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাহলে কোন দিকটাই বঞ্চিত হয়না। অফিস,পরিবার পরিজন, সাহিত্য কোনটাই না।
কেউ হয়তো বাসায় গিয়ে নাটক দেখে সময় কাটাচ্ছে। আর,একই সময়ে আমি কবিতা লিখছি। কবিতার প্রতিটি লাইনেইতো অসংখ্য চরিত্র থাকে। শুধু উপভোগের ভিন্নতা। একজন দেখছে টেলিভিশনে বা ইউটিউবে,আর অন্যজন দেখছে কল্পনায়।তাছাড়া, টাইম ম্যানেজমেন্টটা জীবনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাহলে কোন দিকটাই বঞ্চিত হয়না। অফিস,পরিবার পরিজন, সাহিত্য কোনটাই না।
কবি নাকি ব্যাংকার কোন পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন?
কবি শেখ ফিরোজ -একজন মানুষের নানা পরিচয় থাকতে পারে। আমি কারো ছেলে। আমি কারো ছাত্র। এমন ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন সম্পর্ক ও পরিচয় নির্দেশ করে । কোন সম্পর্ক বা পরিচয়ই কম গুরুত্ব বহন করেনা। সুতরা, আমি একজন ব্যাংকার, আমি একজন কবি।
কবিতার বাইরে সাহিত্যের অন্য শাখায় আপনার লেখালেখি আছে?
হ্যাঁ,গল্প ও ছড়া লিখি। ছড়া দিয়েই আমার লেখালেখি শুরু। তখন সপ্তম শ্রেণীতে পড়ি।
আপনার প্রথম লেখা ছড়াটি সম্পর্কে বলবেন ?
কবি শেখ ফিরোজ -আমাদের স্কুলের সাথেই কবরস্থান। ওখানে আমার বাবার কবর। ঐ কবরস্থানে দুটি মৃতপ্রায় বড় গাছ ছিল। সেই গাছে অনেক বাদুর থাকতো। তো একদিন এ দৃশ্যটা আমাকে ভাবায়,কষ্ট দেয়। একটি উপলব্ধির জন্ম দেয়। পৃথিবীতে কতকিছু ঘটে। যে যার মত, কিন্তু কোথায় কার কোন অনুভূতি লুকিয়ে আছে অন্যরা তা জানেনা। এই প্রেক্ষিতে ছড়াটি লিখেছিলাম।
“ঐ গাছ দুটিতে, মনে হয় খুঁটিতে
ঝুলে থাকে কতগুলো বাদুড়ের ছানা।
তার তলে কার বাপ নেই তার জানা।
মনে খুব ব্যথা আমার
নেই তার জানা “
তখন তো ছন্দ,মাত্রা বুঝতাম না। আবেগ থেকে লিখেছিলাম।
খুব ছোট বয়সেই আপনি পিতাকে হারিয়েছেন। সেটা কত বছর বয়সে?
আমার বয়স যখন ৪ বছর,তখন পিতাকে হারাই।তিন ভাই বোনের মধ্যে আমিই বড়।আম্মা গৃহিণী। দাদা তখন বেঁচে আছেন। আমাদের যৌথ পরিবার ছিল। আমার ৪ চাচা আমাদেরকে অত্যন্ত স্নেহে লালন পালন করেছেন।
আপনার কখন নিজেকে সফল মনে হয় ?
কবি শেখ ফিরোজ -কোন ভালো কাজ করতে পারলে।কাউকে ভালো কাজে উদ্বুদ্ধ করতে পারলে।
কখনো যদি ১৬ বছরে ফিরে যেতে পারেন তাহলে কোন কাজটি করবেন ?
কবি শেখ ফিরোজ– অতিতের ভুলগুলোকে শুধরে নিতাম। আসলে সেটা তো কখনই সম্ভব নয়। তাই,বর্তমানকে উপভোগ করে,নিজের প্রতি ন্যায় বিচার করে এগিয়ে যেতে হবে।
নিজেকে কখনো একা মনে হয়?
কবি শেখ ফিরোজ -প্রত্যেক মানুষের ভিতর অবচেতন মন থাকে, যে মন মাঝে মাঝে জেগে উঠে এবং তাকে একা অনুভব করায়। মানুষ কিছু কিছু সময় একাকিত্বকে অনেক বেশী কাছে পেতে চায়। কিন্তু,কবিরা কখনও একা নয়। বিভিন্ন চরিত্রের সাথে সব কথপোকথন হয়। প্রকৃতির সাথে কথপোকথন হয়।
কোন কাজগুলো মানুষকে সাফল্য এনে দিতে পারে ?
কবি শেখ ফিরোজ -শুধু একটাই কাজ। নিজেকে ভালোবাসা।
নিজের সম্পর্কে নিজের ধারনা কি ?
কবি শেখ ফিরোজ– প্রত্যেকেই তার নিজের মত। তাই কেউ কারো মত নয়। তবে,এতটুকু বলতে পরি- আমি আত্নপ্রত্যয়ী।
আপনার কাব্যগ্রন্হের সংখ্যা কয়টি,কোথায় পাওয়া যায় ?
কবি শেখ ফিরোজ-কাব্যগ্রন্হের সংখ্যা দুইটি। কাকের মিছিল, অনিন্দ্য কঙ্কাল। rokomari.com এ পাওয়া যায়। তাছাড়া,ফরিদপুরে একটি বইয়ের দোকান ‘ বই পরিচয় ‘- এ পাওয়া যায়।
আপনার সাথে কথা বলে অনেক ভালো লাগলো । আইনী পাঠশালাকে সময় দেবার জন্য ধন্যবাদ।
আপনাকে এবং আইনী পাঠশালাকেও ধন্যবাদ।