সাধারণত বড় বড় এবং সাম্প্রতিক ঘটনার রিট, চাঞ্চল্যকর মামলার শেষে কী হচ্ছে; সবমিলিয়ে উচ্চ আদালতের খবর অনেক বেশি সামনে এলেও ঘটনা ও ঘটনার সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের ‘প্রফাইলের’ কারণে সবার চোখ এখন বিচারিক আদালতের দিকে। ক্যাসিনো ব্যবসায়ী সম্রাট, বিতর্কিত ঠিকাদার জিকে শামীম, ওয়েস্টিনের পাপিয়া এবং সর্বশেষ করোনা টেস্ট কেলেঙ্কারির সাহেদ-সাবরিনারা গত কয়েক মাস ধরে দৃষ্টি ঘুরিয়ে দিয়েছেন। এসব মামলার কোনও কোনোটির অভিযোগ গঠন হয়ে বিচার শুরু হলেও এখনও অনেক মামলায় তা হয়নি। আর গত মার্চের পরে করোনা সংক্রমণের কারণে আদালত পাড়া বন্ধ থাকায় এখনও ধীর গতিতে চলছে সব কার্যক্রম। পাবলিক প্রসিকিউটর বলছেন, করোনার কারণে কারাগার থেকে কোনও আসামি এখনও আদালতে না আনার সিদ্ধান্তের কারণে চোখ যতই আদালতে থাকুক এখনই পূর্ণ কার্যক্রম শুরু হচ্ছে না।
সর্বশেষ আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছিলেন সাহেদ করিম ওরফে মোহাম্মদ সাহেদ, আরিফ চৌধুরী ও ডা. সাবরিনা চৌধুরী। তাদের বিরুদ্ধে কোডিভ-১৯ এর পরীক্ষার ‘নেগেটিভ সনদ’ দিয়ে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা এবং কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ায় অভিযোগে মামলা হয়। প্রথমে জেকেজি হেলথ কেয়ার ফাউন্ডেশনের মালিক আরিফ চৌধুরীকে গ্রেফতার করা হয়। অতঃপর মামলার তদন্ত প্রক্রিয়ায় জেকেজি হেলথ কেয়ার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সাবরিনা চৌধুরীকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেওয়া হয়। ডা. সাবরিনা চৌধুরী ও তার স্বামী আরিফ চৌধুরীসহ আট জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়েছে ৮ আগস্ট। মামলাটি তদন্ত করেছে ডিবি। রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদকে করোনা টেস্টে জালিয়াতি ধরা পড়ার ৯ দিন পর গ্রেফতার করা হয়। সাহেদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে দায়ের করা মামলার চার্জশিট দেওয়া হয় ৩০ জুলাই।
পুলিশ সদর দফতরের মুখপাত্র এআইজি মো. সোহেল রানা বলেন, ‘র্যাব ১৪টি মামলা তদন্ত করে ১৩টির অভিযোগপত্র দাখিল করেছে এবং আদালতে একটি মামলার শুনানি মুলতবি রয়েছে। সিআইডি সাতটি মামলা তদন্ত করছে, ৬টিতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে এবং একটি তদন্তাধীন। ডিবি, ডিএমপি পাঁচটি মামলা তদন্ত করেছে, তিনটিতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে এবং দুইটি তদন্তাধীন। বাকি মামলাগুলো অল্প সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দেওয়া সম্ভব হবে বলে মনে করছি।’
এদিকে করোনাকালে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় অনেক মামলা পিছিয়ে যেতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন আইনজীবীরা। তারপরও পরপর বেশ কয়েকজন বড় ‘প্রফাইলের’ লোক গ্রেফতার হওয়ায় পরিবেশ বদলে গেছে উল্লেখ করে পাবলিক প্রসিকিউটর আবু আব্দুল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আলোচিত বেশিরভাগ মামলার চার্জশিট এসে গেছে। বাকিগুলোরও শিগগিরই চলে আসবে বলে আশা করি। এখন যেসব আসামি জামিনে আছেন, সেসব মামলার কাজ চলছে। এখনও কারাগারের আসামিদের আনা হচ্ছে না। আশা করছি, এ মাসে না হলেও সামনের মাসের শুরুতে পুরোদমে কার্যক্রম শুরু হবে।’
এ সময়ের আরেকটি আলোচিত মামলা বহিষ্কৃত যুব মহিলা লীগ নেত্রী শামিমা নূর পাপিয়ার বিরুদ্ধে। দুদকের মামলায় এই মাসেই চার্জশিট হতে পারে পাপিয়ার বিরুদ্ধে। গত ২২ ফেব্রুয়ারি দেশের বাইরে পালানোর সময় বিমানবন্দর এলাকা থেকে দুই সহযোগীসহ গ্রেফতার হন এই নেত্রী। তার বিরুদ্ধে দুদকের মামলার চার্জশিট দেওয়ার নির্ধারিত দিন ২৬ আগস্ট। পাপিয়ার বিরুদ্ধে মাদকের মামলাও আছে।
সবচেয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল জিকে শামীম। তার বিরুদ্ধে মোট চারটি মামলা। এর মধ্যে অস্ত্র মামলায় গত জানুয়ারি মাসে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু হয়। অপরাধের বিচারের মুখোমুখি হওয়ার আগেই শামীম আরও বড় অপরাধ করে বসে, তথ্য গোপন করে অস্ত্র ও মাদক মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে।
ক্যাসিনো কেলেঙ্কারির আরেক আলোচিত নাম ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের বিরুদ্ধে দুইটি মামলায় চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। অস্ত্র মামলায় গত ৬ নভেম্বর এবং মাদক মামলায় ১৫ ডিসেম্বর চার্জশিট দেওয়া হয়। তবে মামলাগুলোর বিচার এখনও শুরু হয়নি।
এ সময়ের বেশিরভাগ মামলায় চার্জশিট এসে গেছে উল্লেখ করে আবু আব্দুল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে ঢাকাসহ সারাদেশে ৩০টির বেশি মামলা হয়। বেশিরভাগ মামলায় এরই মধ্যে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। বাকি মামলাগুলোর অল্প সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন এসে যাবে বলে আশা করি। আসামিদের প্রফাইলের কারণে সবারই এখন দৃষ্টি এই দিকে। আশা করি, দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা যাবে।’
গত জানুয়ারিতে জিকে শামীমের অস্ত্র মামলার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হলেও তা করোনার কারণে থমকে যায়। করোনার কারণে ভার্চুয়াল আদালতে প্রধানত জামিন শুনানি হয়েছে। তবে ৫ আগস্ট থেকে নিম্ন আদালত খুলে গেছে। স্বাভাবিক কাজকর্ম শুরু হয়েছে। আর উচ্চ আদালতেও বুধবার থেকে স্বাভাবিক কাজ শুরু হয়। পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু বলেন, ‘এখন আলোচিত এসব মামলার অভিযোগ গঠন এবং বিচার শুরুর জন্য আবেদন করবো।’