ভৌতিক গল্প কল্পতরু
নাজিয়া আমিন
ঘড়িতে তখন রাত তিনটা বাজে। কে যেন আমার রুমের জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ মনে পড়ল যে, আমি ১৫ তলায় থাকি।
হঠাৎ খুব কফি খেতে ইচ্ছা হল। রান্না ঘরে গিয়ে চুলায় কফির জন্য পানি বসালাম। এরপর ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে মোবাইলে ইন্সটল করা ‘সিমস৬’ গেম টি খেলা শুরু করলাম। বেশ কিছুক্ষণ পরে ফোনে একটি মেসেজ আসলো যে, ‘ তোমার কফির পানি গরম হয়ে গেছে ।’ আমি বাসায় একাছিলাম । তাহলে মেসেজটা কে পাঠালো?
আমার ছোট ভাই বলে যে, আমাদের প্রতিবেশী তাকে খুন করেছে। ভাবতাম কোন মানসিক সমস্যার কারণে একথা বলে । কিন্তু মা বলে যে, আমার কোন ছোট ভাই নেই।
হঠাৎ কি মনে করে যেন হাতের ডায়েরিটা পুকুরে ছুরে ফেলে দিল সুমি। ফেলে দিয়ে সেখান থেকে চলে গেল। কিন্তু সে খেয়াল করে নি যে, ডায়েরিটা পুকুরে ফেলা মাত্রই পানি থেকে একটি হাত উঠে এসে সেটা ধরে ফেলেছিল।
নিজের রুমের কিং চেয়ারে বসেছিল কুমুদ।কিছুক্ষণ পর খেয়াল করলো, ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় তার নিজের দাড়ানো একটি প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে ।
মাঝে মধ্যে অবসর সময় কাটানোর জন্য হরেক রকম মেক-আপলুক ট্রাই করি। সেদিনও তাই করলাম। কিছুক্ষণ পর দেখলাম আয়নায় লেখা ‘You Are Doing Good’ রুমে কেউ আসেনি এর মধ্যে । তাহলে এটা কে লিখলো ?
নিজের ফোন দিয়ে একা বেশ কয়েক টি সেল্ফি তুললো রওশন। এরপর সেগুলো চেক করতে গিয়ে দেখলো, ছবিতে তার সাথে আরেক টি মেয়ে আছে।
রোজ ভর দুপুরে সামনের বিল্ডিংয়ের ৩য় তলায় একটি মেয়েকে বারান্দায় বসে থাকতে দেখি। একদিন শুনলাম, সেই ফ্ল্যাট অনেক বছর থেকে খালি রয়েছে এবং সেটা তালা বন্ধ।
রাত ১১টা বাজে । কলিং বেলের আওয়াজ শুনে দরজা খুললাম। ছোট বোন রিমিতার এক বান্ধবীর হলুদের প্রোগ্রামে গিয়েছিল ।সেখান থেকে ফিরেছে ।তাকে বেশ ক্লান্ত লাগছিল । দরজা খোলার পর সে সোজা তার রুমে চলে গেল। কিছুক্ষ্ন পর আমার মোবাইল টা বেজে উঠলো । রিমিই কল দিয়েছে। রিসিভ করার পরও পাশ থেকে যা শুনলাম তা হল যে, হলুদের অনুষ্ঠান মাত্র শেষ হল। রিমির ফিরতে আর কিছুক্ষণ সময় লাগবে। তাহলে একটু আগে বাড়িতে কে প্রবেশ করলো?
উপর তলার ফ্ল্যাটটা বেশ অনেক দিন থেকে খালি। কিন্তু রোজ সন্ধ্যায় সেখান থেকে নুপুরের শব্দ শোনা যায়। মনে হয় কে যেন নৃত্য করছে।
বান্ধবী টয়ার বাড়ির কলিং বেল চাপতেই তার কাজের বুয়া দরজা খুললো। বলল যে, তারা কেউ বাড়িতে নেই । খুব তেষ্টা পাওয়ায় বুয়াকে বললাম একগ্লাস পানি দেয়ার জন্য। সে আমাকে ভিতরে এসে বসতে বলায় আমি সেখানে বসলাম ।পানি নিয়ে এসে সে আমার সাথে বিভিন্ন খুটিনাটি বিষয়ে কথা শুরু করলো। এক সময় সে বলল যে, এই বাড়িতে অনেক সময় আত্মা ঘুরে বেড়ানোর আভাস পাওয়া যায়। যদিও আমি বিশ্বাস করি নি তারপরও একটা কৌতুহল কাজ করলো । সাথে সাথে ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে টয়াকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম যে, তাদের কাজের বুয়া যা বলছে তা ঠিক কিনা ।উত্তরে সে যা বলল তাহল, ‘এটা কোন ভাবেই সম্ভবনা ।আমার বাসায় কোন কাজের বুয়া নেই।’
মধ্য রাতের ট্রেনে সিলেট যাচ্ছিল সৈকত। তার সামনের সীটে বসেছিল এক প্যাসেঞ্জার যার নাম শুভ্র ।তারা কেউ কাউকে আগে থেকে চিনতো না। ট্রেনে ওঠার পর একটু একটু করে পরিচিত হতে লাগলো। ধীরে ধীরে তাদের মাঝে হরেক রকম গল্প চলতে লাগলো । এক পর্যায়ে শুভ্র একটি খুনের ঘটনার বণনা দিল যা তার কথা অনুযায়ী, সেই দিনই রাত ১০ টায় ঢাকাতে হয়েছিল । কিন্তু এঘটনার বিবরণ যে শুভ্র দিয়েছে এটা সৈকতের পক্ষে কাউকে বলা সম্ভব হবে না। কারণ পরদিন পত্রিকায় একটি খবর ছাপা হল যার শিরোনা মহল, ‘ রাজধানীতে শুভ্র নামে এক যুবক খুন’। রাত দশটায় শুভ্র খুন হবার পর সেই মধ্য রাতের কাহিনী কেউ বিশ্বাস করবে না।
ঘড়িতে তখন রাত একটা বাজে। হাইওয়েতে একলা গাড়ি ড্রাইভ করছে অর্ক । হঠাৎ দেখল, একটু সামনে কেউ একজন হাত দেখিয়ে গাড়ি থামানোর জন্য বলছে। থামানোর পর সেই মানুষটি গাড়ির কাছে আসলো । বিশাল ওড়না দিয়ে ঘোমটা দেয়া এক তরুণী। সামনে এক জায়গায় লিফট দেয়ার জন্য বলছে । অর্ক রাজি হওয়ায় সে গাড়িতে উঠলো। যেতে যেতে এক পর্যায়ে মেয়েটি বেশ গল্প শুরু করলো। এক পর্যায়ে বেশ রহস্য জনক ভংগীতে বলে বসলো যে, সে কোন মানুষ নয়। বরং এক আত্মা।অর্ক কথাটি কে কোন গুরুত্ব না দিয়ে হেসে উড়িয়ে দিল। শেষ পর্যন্ত মেয়েটি যেখানে লিফট চাচ্ছিল সেখানে পৌছে গাড়ি থেকে নেমে পড়লো। যাবার সময় অর্ককে তার ভয় না পাওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করায় অর্ক উত্তর দিলো, ‘আমি নিজে এক আত্মা।’ বলেসে অদৃশ্য হয়ে গেল ।
কাঠের আলমারিটা খুলে চমকে উঠলেন সাজিদ সাহেব । দেখলেন, তার চার বছর বয়সী ছেলে শেজাদসেই আলমারির ভিতর বসে আছে। সে বলে উঠলো, ‘পাপা, ঐ পর্দার আড়ালে কে যেন দাঁড়িয়ে আছে। বার বার উঁকি দিচ্ছিল। ‘ ছেলের ভয় কাটাতে সাজিদ সাহেব পর্দার আড়ালে কেউ নাই জানা সত্তেও সেখানে দেখতে গেলেন । গিয়ে দেখলেন, হুবহু শেজাদের মত দেখতে আরেক জন সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। সে বলে বসলো, ‘পাপা, আলমারির ভেতর কে যেন বসে আছে।’
বেশ রাত হয়ে যাওয়ায় এক মহিলার সাথে সি.এন.জি শেয়ার করে বাসায় আসলো ফারজানা ।মহিলাটি ফারজানার বাড়ির পাশে একটি প্রাইভেট বাড়িতে থাকে বলে জানতে পারলো এবং সি.এন.জি থেকে নেমে সেখানেই গেল। পর দিন সকালে জানা গেল যে, সেই বাড়িটি বেশ অনেক বছর থেকে তালা বন্ধ। গত দশ বছরে কেউ সেখানে আসেও নি যায়ও নি।
ঘড়ির কাটা প্রায় রাত ২টায় পৌছাতেই সীমার মোবাইল বেজে উঠলো। তার খালা তার সাথে হঠাৎ দেখা করতে চাইছে এবং সে বাড়ির পাশের একটি রেস্টুরেন্টে দেখা করতে গেল। কিছুক্ষণ পর হঠাৎ মনে পড়লো , তার এই খালা প্রায় এক মাস আগে মারা গেছেন ।
ভোর পাঁচটা বাজে। ঘুম থেকে উঠে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আচরাচ্ছে নীলা। এক পর্যায়ে খেয়াল হলযে, তার প্রতিচ্ছবিটি স্থির দাঁড়িয়ে হাসছে এবং নীলার অঙ্গভঙ্গির সাথে তার কোন মিল নেই।
আমার বড় বোন বলে যে, আমার মাতা কে খুন করেছে ।কিন্তু মা বলে যে, আমার কোন বড় বোন নেই।
– হ্যাঁ মা, সত্যিই বলছি ।রেনেসা এসেছিল ।তুমি বের হবার কিছুক্ষণ পর। অবশ্য বেশিক্ষণ বসেনি । – অসম্ভব! এটা কোন ভাবেই হওয়া সম্ভব নয়। – অসম্ভব কেন হবে? সে তো আগেও প্রায়ই আসতো। – হুম, আগে আসতো। তবে আজকে…. – আজ কে হঠাৎ কি এমন হল যে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে ? – তুমি হঠাৎ শুনে ঘাবড়ে যাবে বলে বলি নি।আজ সকালে তোমার রিনা খালা ফোন করে বলে যে, তার ভাগ্নি রেনেসার মৃত দেহ পাওয়া গেছে তার নিজের রুমে। সে আত্মহত্যা করেছে নাকি খুন হয়েছে তা এখনো বের করা সম্ভব হয়নি ।বেশ রহস্য জনক লাগছে সব কিছু। একটু আগে গিয়ে দেখে আসলাম।
থাক, আপনার সময় নষ্ট হবে । আমার গাইডের থেকেই কাহিনী জেনে নেব। উনিও দিকে সিগারেট টানতে গেছেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবেন। – কিন্তু আমি আপনাকে বলবো। ওনার থেকে না হয় আরেক বার শুনে নেবেন। মেয়েটির আগ্রহ দেখে পার্থ ভাবলো যে, এই রাজ বাড়ির কাহিনী তার থেকে শুনে নেয়া যাক । দেখে মনে হচ্ছে পার্থর মত সেও রাজবাড়ি দর্শন করতে এসেছে। – ঠিক আছে । বলুন। – একটি খন্ড অংশ বলবো যা অনেকেরই অজানা। রাজ বাড়িটিতে এক রাজকন্যা ছিল। সে ছিল রাজা এবং রাণীর পালিত কন্যা। শুরুতে কেউ জানত না সেটা। এরপর যখন ধীরে ধীরে সবাই জানতে পারলো যে, সেই রাজকন্যা আসলে এক দরিদ্র কৃষকের কন্যা তখন সম্পত্তি গত অধিকার থেকে শুরু করে সব বিষয়ে ই নানা রকম প্রশ্ন উঠতে শুরু করলো । পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করলো । তারপর একদিন মেয়েটি এই ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করলো। কিন্তু সেটা গোপন করা হয়। রটানো হয় যে, সেই রাজকন্যা তার কোন নিকটাত্মীয় কে খুঁজে পেয়েছে এবং সেখানে চলে গেছে যেটা তার প্রকৃত ঠিকানা। – বেশ দুঃখ জনক কাহিনী । সেই রাজকন্যার কোন ছবি বা স্কেচ পাওয়া যাবে ? আপনার ধারণা আছে ? – সে আপনার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে। বলেই মেয়েটি অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো এবং কিছুক্ষণ পর হাওয়ায় মিলিয়ে গেল।
জিনিয়া, লুডু খেলবে? – হুমম – তাহলে শুরু করি। বোর্ড আর গুটি এখানেই আছে। মহুয়ার রুমে বসে কিছুক্ষণ লুডু খেলল জিনিয়া ও মহুয়া। এর কিছুক্ষণ পর মহুয়ার মা সেখানে প্রবেশ করলো। – মহুয়া, আজ কেমনে হচ্ছে সময় কাটছে না। – কই? লুডু খেলে বেশ ভালো সময় যাচ্ছে। – একা একা লুডু খেলছো । সে জন্যই বললাম। – একা কোথায়? জিনিয়া আমার সাথে খেলছে। – জিনিয়াকে ইমাজিন না করে বরং ফোন দিয়ে ডেকে আনো। আমিও ও কে অনেক দিন দেখিনা। – এই যে, জিনিয়া তো এখানে। – কই? কেউ তো নেই।
রুণীঃ এই নাও, সুনীল লাইনে আছে। মাহিমাঃ না থাক (বেশ ভয়ার্তহয়ে ), পরে কথা বলবো। রুণীঃআরে, ভয় পাচ্ছো কেন। সুনীল বলছে যে, তোমাকে জরুরী কি যেন বলবে। তুমি এখানে আমার বাড়িতে এসেছো শুনেতো মাকে ফোনটা দিতে বললো। মাহিমাঃ বললাম তো এখন না। রুণীঃ সমস্যা কি? মাহিমাঃ উমম.. .কিছুনা। তুমি সিউর যে ফোনটা সুনীলই করেছে। রুণীঃ ও প্রতিদিন একবার হলেও ফোন করে। একটু শোন কি বলে। মাহিমাঃ তুমি শুনে নাও।পরে আমাকে বলো। রুণীঃতুমি এত নার্ভাস হচ্ছো কেন ? মনে হচ্ছে যেন সুনীলের সাথে আগে কোন দিন দেখা হয়নি। মাহিমাঃ (সুনীলের পক্ষে এই মুহুর্তে রুণীর মোবাইলে ফোন করা সম্ভবনা । কারণ গতকাল রাতে আমার নিজের গাড়ির সাথে এক্সিডেন্ট করে সুনীল মারা যায়।)
ভর দুপুরে ছাদে দাঁড়িয়ে – হ্যালো, শেফালী – হ্যাঁ, বলো – তোমার বাসায় এসেছি ।করিডোরে তোমার বুয়াকে পেলাম ।বললো যে, তুমি বাসায় নেই। এখন তোমার বাসার ছাদে আমি। আচ্ছা, বাসার দরজার সামনে একটা তাবিজ ঝুলানো ।বুয়া নানা ভাবে তখন থেকে বলছে যে, ঐ তাবিজটা যেন আমি সরিয়ে দেই। বাইরে থেকে কেউ এসে নাকি ওটা টাংগিয়ে গেছে। – তা একদম করতে যেওনা । ওই তাবিজটা আমিই ঝুলিয়েছি। মাঝে মাঝে সেখানে আত্মার অস্তিত্ব আছে বলে মনে হয়। বাসা সেইফ রাখার জন্য তাবিজটা নিয়েছি। আর আমার বুয়াকে তুমি কোথায় পেলে? বেশ অনেক দিন থেকে আমার কোনো মেইড সারভেন্ট নেই।
মেয়েটি বেশ অনেকক্ষণ থেকে তদন্তে থাকা পুলিশ কে বলে যাচ্ছে যে, ঐ দিকে চায়ের দোকানে যে লোকটি বসে আছে সে-ইতার বন্ধুদের কে খুন করেছে। কিন্তু পুলিশ তাকে কোন পাত্তাই দিচ্ছে না। তার কথা শুনছে বলেও মনে হচ্ছেনা । কোন রকম রেসপন্সনেই। কিছুক্ষণ পর মেয়েটি মৃত বন্ধুদের সাথে তার নিজের ডেড বডি দেখতে পায় ।বুঝতে পারে যে, গতকাল রাতে সেও তাদের সাথে খুন হয়েছে এবং এখন সে আত্মা হয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে আছে ।
তোমার ছোট চাচাকে জিজ্ঞেস করো। ওনার কাছেই গতকাল সন্ধায় বইটা দিয়েছি তোমাকে রিটার্ন করার জন্য। ঐ পুকুর পাড়ে দেখা হয়েছিল ওনার সাথে। – কাহিনী না বানালেও চলবে। – জিজ্ঞেস করো ওনাকে। – আমার ছোট চাচা গত দুই মাস থেকে ইটালিতে আছেন । ওনার সাথে কিভাবে তোমার দেখা হয়? – তাহলে গতকাল কে……..
লেখিকা- নাজিয়া আমিন, এসোসিয়েট আমির এন্ড আমির ল এসোসিয়েটস ।
নিছক একটি গল্প। কারো সাথে মিলতে নাও পারে।