সব
facebook apsnews24.com
কান ধরানো’র বিচার ভাইরাল এবং করোনা ভাইরাস! - APSNews24.Com

কান ধরানো’র বিচার ভাইরাল এবং করোনা ভাইরাস!

কান ধরানো’র বিচার ভাইরাল এবং করোনা ভাইরাস!

আইনে আছে সহস্র অপরাধী ছাড়া পায় পাক কিন্তু একজন নিরাপরাধ লোক যেন অন্যায় ভাবে শাস্তি না পায়। বিচার করতে হলে এই জুরিসপ্রুডেন্স মাথায় রাখতে হয়। বিচার করলে শুধু হবে না এটাও দেখাতে হবে যে সেখানে ন্যায় বিচার হয়েছে। মোবাইল কোর্টের বিচার অতঃপর দুই জন বৃদ্ধের কান ধরিয়ে ছবি তোলার দৃশ্য ও এ ধরনের ঘটনা ফৌজদারী বিচারের নীতির সাথে ঠিক যায় না। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও সবসময় বলতেন কাউকে যেন মিথ্যা ভাবে হয়রানি করা না হয়। সবাই যেন ন্যায় বিচার পায় সেটি ও তিনি নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন।

মাস্ক না পরার দায়ে কিনা তিন বৃদ্ধকে কান ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখলো ভ্রাম্যমাণ আদালত। শুধু তাই নয়, সেই ছবি আবার আপলোড করা হয়েছে সরকারি ওয়েবসাইটে! শুক্রবার বিকেলে যশোরের মনিরামপুরে ম্যাজিস্ট্রেট সাইয়েমা হাসানের ভ্রাম্যমাণ আদালত তিনজন বৃদ্ধ নাগরিককে এ সাজা দেয়। শুধু সাজা দিয়েই ক্ষান্ত হননি বিজ্ঞ এসিল্যান্ড। কান ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখার পর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিজে ওই চিত্র তার মোবাইলে ধারণ করেন। রাতে এ ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে সামলোচনার ঝড় ওঠে।

ছবিঃ সংগৃহীত

করোনাভাইরাসের এ প্রাদূর্ভাবে লোকসমাগম যেন না হয় সে বিষয়টি দেখভালের জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইয়েমা হাসান উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে মনিরামপুর উপজেলার চিনাটোলা বাজারে অভিযানের সময় প্রথমে ভ্রাম্যমাণ আদালতের সামনে পড়েন দুই বয়ঃবৃদ্ধ। এর মধ্যে একজন বাইসাইকেল চালিয়ে আসছিলেন। অপরজন রাস্তার পাশে বসে কাঁচা তরকারি বিক্রি করছিলেন। তাদের মুখে মাস্ক ছিল না।

গণমাধ্যম সূত্রে জানতে পারি, পুলিশ ঐ দুই বৃদ্ধকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে হাজির করলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাস্তি হিসেবে তাদেরকে কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখেন। তিনি নিজে (নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট) আবার মুঠোফোনে এ চিত্র ধারণ করেন। এরপর একজন বৃদ্ধ ভ্যান চালককেও অনুরূপভাবে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকার দণ্ড দেন। এসব ছবি দ্রুতই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই বয়স্ক নাগরিকদের এভাবে সাজা দেয়াটাকে মেনে নিতে পারেননি। এমন দণ্ড ভ্রাম্যমাণ আদালতকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। পাশাপাশি এই ছবি সরকারি ওয়েবসাইটে আপলোডের পর সংশ্লিষ্টদের মানসিক সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটদের মোবাইল কোর্ট আইনের ক্ষমতা প্রয়োগে আরও প্রশিক্ষণ দরকার আছে কিনা তা কর্তা ব্যক্তিরা ভেবে দেখবেন। 

বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এর এমন কাজ সকলেই ধিক্কার জানাবেন এবং জানাচ্ছেন। মুরব্বিদের কান ধরিয়ে ছবি তুলে সেইটা আবার সোশ্যাল মিডিয়াতে পাবলিশ করা কোনভাবেই কাম্য নয়। মোবাইল কোর্ট আইন মেনে ম্যাজিস্ট্রেট এর ক্ষমতা প্রয়োগ হলো নাকি করোনা ভাইরাস ছড়ানো রোধে সচেতনতা সৃষ্টি হলো তা এখানে সুস্টষ্ট নয়। আগে ক্ষুধার্তদের খাবারের দায়িত্ব নিবে রাষ্ট্র তাহলে দেখবেন কেউ রাস্তায় আসবে না। এবং ছবিতে দেখা যায় যে নিচে বাজারের ব্যাগ, তারা নিশ্চয় কেনাকাটার উদ্যেশ্যে বাজারে এসেছিল। করোনা ভাইরাস ছড়াতে নয়।

কান ধরানোর দণ্ডের কথা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট স্বীকার করেছেন বলে গণমাধ্যম জানিয়েছে। তবে সরকারি ওয়েবসাইটে ঐ ছবি কেন দিলেন তা কিন্তু বোধগম্য হয়নি। তবে নাগরিকদের এভাবে কান ধরিয়ে দাঁড় করার বিষয়টি দুঃখজনক বলে উল্লেখ করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আহসান উল্লাহ শরিফী। তার উচিত পুরো বিষয়টি তদন্ত করে জড়িতদের শাস্তির ব্যবস্থা করা।

ছবিটি দেখে কেউ নিজের আবেগকে ধরে রাখতে পারবে না সেটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৫ (৫) অনুচ্ছেদ অনুসারে এ শাস্তি সম্পূর্ণ বেআইনি। স্বাধীনতার ৫০ বছরের দাঁড়প্রান্তে এমন অরাজকতা ও বিচারের নামে কাউকে অসম্মান মেনে নেওয়া যায় না। শাস্তি প্রদানকারী ঐ কর্মকর্তা যেই হোক তার বেআইনি কাজের শাস্তি দাবি করা যেতে পারে। বিচারে কখনও কাউকে কান ধরে উঠবস করাইতে নেই। আইনের মধ্যে যতটুকু ক্ষমতা (দায়িত্ব) দেয়া আছে, তার মধ্যেই বিচার কার্যক্রম সীমিত রাখা উচিত। একটা সার্ভিসের যদি কেউ আইনের বাইরে কোন কাজ করে তার দায় সে নিজেই বহন করবে। যারা আইন ভঙ্গ করবে তাদের শাস্তি দেবে সার্ভিস এবং রাষ্ট্র। তবে এটা ঠিক আইনের বাইরে কাজ যে শুধু প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারাই করেন ব্যাপারটা এমন নয়। অনেক সার্ভিসের ব্যক্তিরা এমন কাজ করে থাকেন। এ ব্যাপারটা এমন যে, পরিবারের অবাধ্য ছেলেটা অন্যের বাসার ফল চুরি করে, মারপিট করে এবং সে অপরাধ করলে সবাই বলে এটা স্বাভাবিক কিন্তু সবচেয়ে ভদ্র ছেলেটি যদি সামান্য অপরাধ করে তবেই হয়েছে। প্রত্যেক সার্ভিসেই এরকম কিছু ব্যক্তি আছেন। তারাই সমস্যা তৈরি করেন। এর দায় পুরো সার্ভিস নিবে না।

দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হয়ে মোবাইলে ছবি তোলা আদৌ ঠিক হয়নি। আমার মনে হয়েছে উনি করোনা ভাইরাসের তীব্রতা অনুধাবন করে কান ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখাকে সামান্য কোন শাস্তি মনে করেছেন। কাউকে এভাবে শাস্তি দিলে যে সংবিধান বা বিদ্যমান মোবাইল কোর্ট আইন ও দেশের ফৌজদারী আইন সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করা হয় তা হয়তো তিনি বুঝতে পারেন নাই। যে ম্যাজিষ্ট্রেট বা বিচারক এই ধরণের ‘কান ধরানোর’ বিচার করলেন তিনি তো তার নিজের ক্ষমতা দেয়া মোবাইল কোর্ট আইন ২০০৯ ভালো করে পাঠ করে আসতে পারতেন। সেটি তিনি না পড়েই বিচার কাজে নেমে গেছেন। যা ঠিক হয়নি। আইন জানা থাকলে মানতে ও প্রয়োগ করতে সুবিধা হয়। করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে যাক কারও মাধ্যমে সেটিও কিন্তু এই সময়ে একেবারেই কাম্য নয়।

লেখকঃ মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম, কলামিষ্ট ও আইন বিশ্লেষক । ইমেইলঃ bdjdj1984du@gmail.com

আপনার মতামত লিখুন :

শ্রমিকের অধিকার ও নিরাপত্তা বিধানে আইন ও বাস্তবতা

শ্রমিকের অধিকার ও নিরাপত্তা বিধানে আইন ও বাস্তবতা

আইন ও প্রচারণা স্বত্তেও কেন সড়কে দুর্ঘটনা ও মৃত্যু কমছে না?

আইন ও প্রচারণা স্বত্তেও কেন সড়কে দুর্ঘটনা ও মৃত্যু কমছে না?

মরু অঞ্চলে বৃষ্টি ও বন্যা, প্রকৃতির প্রতিশোধ নাকি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব

মরু অঞ্চলে বৃষ্টি ও বন্যা, প্রকৃতির প্রতিশোধ নাকি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব

স্বাধীনতা দিবসের ভাবনাগুলো

স্বাধীনতা দিবসের ভাবনাগুলো

১৭ মার্চ স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য একটা স্মরণীয় দিন

১৭ মার্চ স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য একটা স্মরণীয় দিন

সর্বনাশা পরকীয়া, কারণ ও প্রতিকার

সর্বনাশা পরকীয়া, কারণ ও প্রতিকার

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার: ApsNews24.Com (২০১২-২০২০)

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
০১৬২৫৪৬১৮৭৬

editor@apsnews24.com, info@apsnews24.com
Developed By Feroj