সব
facebook apsnews24.com
কোরআন ও হাদীসে জ্বিনের বর্ণনা। - APSNews24.Com

কোরআন ও হাদীসে জ্বিনের বর্ণনা।

কোরআন ও হাদীসে জ্বিনের বর্ণনা।

আল্লাহতায়ালা মানুষ ও জিনদের সৃষ্টি করেছেন তার ইবাদত-বন্দেগি করার জন্য। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি জিন ও মানুষকে কেবলমাত্র আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি।’ (সুরা আজ-জারিয়াত, আয়াত : ৫৬)

পবিত্র কোরআনের ৭২তম সুরা আল-জিন। জিন শব্দের অর্থ গুপ্ত, লুক্কায়িত, অদৃশ্য ও গোপন। জিনরা অদৃশ্য, মানুষ এদের দেখতে পায় না। তারা মানুষদের দেখতে পায়। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয় সে ও তার দলবল তোমাদের দেখে, যেখানে তোমরা তাদের দেখো না।’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ২৭)

তবে কিছু প্রাণী জিন ও শয়তানদের দেখতে পায়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যখন তোমরা গাধার চিৎকার শুনতে পাও, তখন আল্লাহর কাছে শয়তানের থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করো, কারণ শয়তানকে দেখতে পাওয়ার কারণেই তারা চিৎকার করে। (বোখারি, হাদিস : ৬/৩৫০; মুসলিম, হাদিস : ১৭/৪৭)

মানুষ সৃষ্টির প্রায় ২০০০ বছর আগে থেকে জিনরা পৃথিবীতে আছে বলে জানা যায়। জিনদের আদি পিতা সামুম। জিন তৈরি করে আল্লাহ সামুমকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তুমি আমার কাছে কিছু কামনা করো। সামুম দুটি বিষয় কামনা করেছিলেন। এক. জিন মানুষকে দেখতে পারবে কিন্তু মানুষ জিনকে দেখতে পারবে না। দুই. জিনরা বৃদ্ধ বয়সে যুবক হয়ে মৃত্যুবরণ করবে। আল্লাহপাক সামুমের দুটি চাওয়া পূরণ করেন। জিনদের কিছু বৈশিষ্ট্য হলো এক. জিন অদৃশ্য এবং খুব দ্রুত এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারে। দুই. পৃথিবী বাদে অন্য সব গ্রহ-নক্ষত্রে জিনরা চলাফেরা করতে সক্ষম। তিন. যেকোনো প্রাণীর রূপ ধারণ করতে পারে। চার. জিনরা অন্ধকারে থাকতে পছন্দ করে। মানুষের চেয়ে জিনরা অনেক বেশি দিন বেঁচে থাকে। কারও কারও মতে প্রায় ৫০০ বছর। তবে ৩০০ বছর বয়সে তারা প্রাপ্তবয়স্ক হয়। জিনদের মধ্যে নারী জাতি রয়েছে, যাদের পরী বলা হয়ে থাকে। জায়েদ বিন আরকাম (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘এই জায়গাগুলোতে (শৌচাগার) জিন ও শয়তানরা অবাধে বিচরণ করে। তোমাদের মধ্যে যে এই স্থানগুলোতে যাবে, সে যেন বলে আমি আল্লাহর কাছে পুরুষ ও নারী শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’ (আহমেদ ইবনে হাম্বল : ৪/৩৬৯)

মহানবী (সা.) বলেছেন, তিন ধরনের জিন রয়েছে। একদল যারা সর্বদা আকাশে উড়ে বেড়ায়। আরেক দল যারা সাপ ও কুকুরের আকার ধারণ করে থাকে। তৃতীয় দল পৃথিবীবাসী, যারা কোনো এক স্থানে বাস করে বা ঘুরে বেড়ায়। (বায়হাকি ও তাবরানি)।

জিনরা যেকোনো স্তন্যপায়ী প্রাণীর রূপ ধারণ করতে পারে। মানুষের রূপ ধরে মানুষের মধ্যে বসবাস করতে পারে। মানুষের সঙ্গে একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়াও করতে পারে। সাধারণত খারাপ জিনরা কালো কুচকুচে সাপ বা কুকুরের রূপ ধারণ করে থাকে।

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, রাসুল (সা.) কয়েকজন সাহাবিকে সঙ্গে নিয়ে উকাজ বাজারে যাচ্ছিলেন। পথে নাখাল নামক স্থানে তিনি ফজরের নামাজের ইমামতি করেন। সে সময় একদল জিন ওই স্থান অতিক্রম করছিল। কোরআন তিলাওয়াতের শব্দ শুনে তারা থেমে যায়। গভীর মনোযোগসহকারে কোরআন শোনে।

কাজী আবু আয়ালা (রহ.) বলেছেন, জিন মানুষের মতো খাওয়া-দাওয়া করে। এরা চিবিয়ে ও গিলে খায়। অনেক সময় মানুষের সঙ্গে বসে খায়। ভালো জিনরা মানুষের উপকার করে থাকে। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা দুটি জিনিস অর্থাৎ হাড়-গোবর দিয়ে ইস্তেনজা করো না। কেননা, ওগুলো তোমাদের জিন ভাইদের খাদ্য।’ (তিরমিজি শরিফ)।

ভালো জিনরা নির্জনে থাকতে পছন্দ করে। বিশেষ করে পাহাড়-পর্বতে। তারা মানুষের কোনো ক্ষতি করে না। খারাপ জিনরা থাকে ময়লা-আবর্জনা, গোসলখানা, পায়খানা ইত্যাদি স্থানে। বাথরুমে যাওয়ার আগে তাই দোয়া পড়ে যাওয়া উত্তম। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে, জিনরা নোংরা ও গন্ধময় জায়গায় থাকতে পছন্দ করে। যেখানে মানুষের ময়লা এবং খাবারের উচ্ছিষ্ট অংশ ফেলে রাখা হয়।

ওয়াহাব ইবনে মুনাব্বিহ (রা.)-কে কেউ প্রশ্ন করে, জিনরা কি পানাহার ও বিয়ে-শাদি করে মারা যায়? জবাবে তিনি বলেন, তারা কয়েক প্রকার। এদের কেউ কেউ বাতাসের মতো। জিনরা পরস্পর বিয়ে-শাদি করে এবং তাদের সন্তান-সন্ততিও জন্মায়। ছেলেমেয়ে মানুষের চেয়ে সংখ্যায় বেশি হয়ে থাকে।

ঘরে নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত করলে সে ঘরে দুষ্ট জিন প্রবেশ করতে পারে না। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের ঘরগুলোকে কবরে পরিণত করো না। যে ঘরে সুরা বাকারা পাঠ করা হয়, সে ঘর থেকে শয়তান পালিয়ে যায়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৭৮০)

জিন নিয়ে আমাদের দেশে এক ধরনের ফকির-ওঝারা রমরমা ব্যবসা করে। মানুষ ঠকিয়ে এসব ব্যবসার বেশির ভাগই হয় প্রত্যন্ত গ্রামে। সহজ-সরল মানুষদের কাছ থেকে টাকাপয়সা হাতিয়ে নেওয়া হয়। যিনি জিন হাজির করেন, তিনিই জিনের স্বরে কথা বলেন। এমনটা ধরা পড়েছে অনেকবার।

জিনের বাদশাহ ফোন করে। বিশেষ করে নিরীহ গৃহবধূদের কাছে। ছলে-বলে কৌশলে টাকাপয়সা হাতিয়ে নেয়। জিনদের বশ করা ও তাদের মাধ্যমে কাজ করানো ইসলাম সমর্থন করে না। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আর এই যে মানুষের মধ্যে কিছু লোক জিন জাতির আশ্রয় নিত, ফলে ওরা তাদের পাপাচার বাড়িয়ে দিত।’ (সুরা জিন, আয়াত : ৬)

জিনরা গায়েবের খবর ও ভবিষ্যৎ জানে না। কোনোভাবেই মানুষের চেয়ে জিন জাতি শ্রেষ্ঠ নয়। মানুষ আল্লাহর সেরা সৃষ্টি। আশরাফুল মাখলুকাত। মানুষকে আল্লাহ শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন সব জীবের মধ্যে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি, আমি তাদের স্থলে ও জলে চলাচলের বাহন দান করেছি; তাদের উত্তম জীবন উপকরণ দিয়েছি এবং তাদের অনেক সৃষ্ট বস্তুর ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি।’ (বনি ইসরাইল, আয়াত : ৭০)

তবু কিছু অপরিণামদর্শী মানুষ জিনদের শরণাপন্ন হয়। তাদের কাছে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জানতে চায়। এটা শুধু একটা ভুল নয়; শিরকের মতো জঘন্য গুনাহ। জিনদের বুদ্ধিমত্তা কতটুকু এবং তারা ভবিষ্যৎ জানে কি না এর প্রমাণ সুলাইমান (আ.)-এর মৃত্যুর ঘটনায় দেখা যায়। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যখন আমি সুলাইমানের মৃত্যু ঘটালাম, তখন জিনদের তার মৃত্যু-বিষয় জানাল শুধু মাটির পোকা (উইপোকা); যা সুলাইমানের লাঠি খাচ্ছিল। যখন সুলাইমান (আ.) পড়ে গেলেন তখন জিনরা বুঝতে পারল যে, তারা যদি অদৃশ্য বিষয় জানত, তাহলে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তিতে আবদ্ধ থাকত না।’ (সুরা সাবা, আয়াত : ১৪)

রাসুল (সা.) বলেছেন, মানুষের বাড়িঘরে জিনরা থাকে। এদের মধ্যে কাউকে তোমরা যখন দেখবে, তখন তিনবার তাকে বের করে দেবে। এতে যদি সে চলে যায়, তো ঠিক আছে। অন্যথায় তাকে মেরে ফেলবে। কারণ (যে জিন এমন করে) সে কাফির হয়ে থাকে। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, মদিনার কিছুসংখ্যক জিন মুসলমান হয়েছে। এদের (প্রাণী হিসেবে) যদি কেউ দেখো, তাহলে তিনবার সাবধান করবে। তারপরও আবার এলে সেই প্রাণীকে হত্যা করবে। (মুসলিম, হাদিস : ২২৩৬)

জিন তাড়ানোর সবচেয়ে কার্যকর দোয়া হলো আয়তুল কুরসি। জিনে আছরের ঘটনা হাদিসে পাওয়া যায়। হাদিসে আছে, ‘রাসুল (সা.) একবার একটি অসুস্থ বালকের সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন, যার ওপর জিনের ভর ছিল। রাসুল (সা.) ছেলেটির দিকে ফিরে জোরে বলেন, ওহ আল্লাহর শত্রু, বের হয়ে আসো। ওহ আল্লাহর শত্রু বের হয়ে আসো। তখন ছেলেটি দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৫৪৮, আহমদ, হাদিস : ৪/১৭১,১৭২)

জিনে প্রভাবিত ব্যক্তির স্বাভাবিক আচার-আচরণ বদলে যেতে পারে। শরীরে শক্তি বৃদ্ধি পেতে পারে। আলো সহ্য করতে পারে না। আজানের সময় অস্থির হয়ে পড়তে পারে। রাতে বাসা থেকে বের হয়ে যেতে পারে। এ রকম সময় আল্লাহর আশ্রয় চাইতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘আর যদি শয়তানের পক্ষ থেকে কোনো প্ররোচনা তোমাকে প্ররোচিত করে তবে তুমি আল্লাহর আশ্রয় চাও। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’ (সুরা আল-আরাফ, আয়াত : ২০০)। সুরা নাছ ও সুরা ফালাক সর্বোপরি কার্যকর।

আপনার মতামত লিখুন :

লোক দেখানো ইবাদত মহান আল্লাহ পছন্দ করেন না

লোক দেখানো ইবাদত মহান আল্লাহ পছন্দ করেন না

রমযানের রোযা ও আমাদের প্রাপ্তি

রমযানের রোযা ও আমাদের প্রাপ্তি

হিজরি নববর্ষ বয়ে আনুক করোনামুক্ত পৃথিবীর নতুন পয়গাম : বাংলাদেশ ন্যাপ

হিজরি নববর্ষ বয়ে আনুক করোনামুক্ত পৃথিবীর নতুন পয়গাম : বাংলাদেশ ন্যাপ

বাংলাদেশ থেকে এবারও হজে যেতে পারবেন না কেউ

বাংলাদেশ থেকে এবারও হজে যেতে পারবেন না কেউ

বৃষ্টি আল্লাহ তাআলার বড় নেয়ামত

বৃষ্টি আল্লাহ তাআলার বড় নেয়ামত

৫৬০ মডেল মসজিদের মধ্যে অর্ধশত উদ্বোধন আজ

৫৬০ মডেল মসজিদের মধ্যে অর্ধশত উদ্বোধন আজ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার: ApsNews24.Com (২০১২-২০২০)

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
০১৬২৫৪৬১৮৭৬

editor@apsnews24.com, info@apsnews24.com
Developed By Feroj