হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থ রোগীকে চিকিৎসাসেবা দিতে অনীহা দেখালে এবং এতে ওই রোগীর মৃত্যু ঘটলে ‘তা অবহেলাজনিত মৃত্যু’, অর্থাৎ ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে বলে অভিমতসংক্রান্ত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ্
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা আজ মঙ্গলবার গণমাধ্যমকে বলেন, হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করেছে।
হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদনটি করা হয়েছে বলে জানান ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. নূরুজ্জামানের ভার্চ্যুয়াল চেম্বার কোর্টে আজ আবেদনটি উপস্থাপন করা হবে।
বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে, বিশেষত ঢাকা মহানগর, জেলা; চট্টগ্রাম মহানগর, জেলাসহ বিভাগীয় শহরের বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিকগুলো যাতে কোভিড ও নন-কোভিড (করোনা সংক্রমিত রোগী নন) সব রোগীকে চিকিৎসাসেবা দেয়, সে বিষয়ে সার্বক্ষণিক তদারকির জন্য একটি মনিটরিং সেল গঠন করারও নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আদালত বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত সরকারি হাসপাতালগুলোর ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমকে অধিকতর জবাবদিহিমূলক ও বিস্তৃত করতে হবে। আইসিইউতে চিকিৎসাধীন কোভিড-১৯ রোগী চিকিৎসার ক্ষেত্রে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো যাতে মাত্রাতিরিক্ত বা অযৌক্তিক ফি আদায় না করতে পারে, সে বিষয়ে মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
আদেশে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা প্রদান বিষয়ে গত ১১ মে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের (স্বাস্থ্য বিভাগ) জারি করা পৃথক নির্দেশনা ও স্মারক উল্লেখ করা হয়েছে। সরকারি হাসপাতালের ক্ষেত্রে নির্দেশনার ব্যত্যয় ঘটলে বা কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আর বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের ক্ষেত্রে নির্দেশনার ব্যত্যয় ঘটলে বা কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রচলিত বিধান অনুসারে লাইসেন্স বাতিলসহ প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জারি করা ওই সব নির্দেশনা যথাযথভাবে পালিত হচ্ছে কি না, এ বিষয়ে ৩০ জুনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে স্বাস্থ্যসচিব (স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ) ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আদালত বলেন, ওই সব নির্দেশনা পালনে ব্যর্থ ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত কোনো ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে কি না, তা প্রতিবেদনে উল্লেখ করতে হবে।
অপর নির্দেশনায় বর্তমান প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের নির্দেশনা বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো যথাযথভাবে পালন করছে কি না, সে বিষয়ে বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোর কর্তৃপক্ষকে ১৫ দিন পরপর একটি প্রতিবেদন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে পাঠাতে বলা হয়। এসব প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ১৫ দিন পরপর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে আদালতে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।