মতিউর রহমান
প্রথমে সুবিধা কি তা বলে রাখি…
সুবিধাঃঃ (uniformity & Certainty) নিয়ম-কানুন সব সাজানো গোছানো থাকে। একেকজন খামখেয়ালি করে একেক রকম নিয়ম বলে বেড়াতে পারে না। সব আইনের ব্যাপারে বিচারকগণ একই রকম বোঝেন। জনগণও একই রকম বোঝে। কল্পনা করুন সমাজে কোন আইন নেই। বিচারকেরা কেবলমাত্র নিজেদের বিবেক অনুযায়ী বিচার করবেন। তাহলে দেখা যাবে আইন না থাকলে একই অপরাধের জন্য একেক জজ ইচ্ছামত একেক রকম বিচার করত৷ একই ধরনের ঘটনায় একেক রকম বিচার হত। আইন না থাকলে মানুষ বুঝত না কোনটা ন্যায় আর কোনটা অন্যায়। আইন না থাকলে বিচারকেরা স্বেচ্ছাচারী হয়ে যেত, দুর্নীতি করত, স্বজনপ্রীতি করত। আইন না থাকলে একজন ব্যক্তি বিচারক হিসেবে যে বিচক্ষণতার পরিচয় দিতেন, আইনে তার থেকেও বেশি লোকের বিচক্ষণতার সমন্বয় ঘটে। শত শত বিজ্ঞজনের চিন্তা, চেতনা, গবেষণা এবং সার্বিক বিষয়ে সমন্বয়ের মাধ্যমে আইন তৈরী হয়। ফলে আইন আরো অধিক তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে।
এ কারণে একজন ব্যক্তির ব্যক্তিগত চিন্তাভাবনার থেকে আইনের প্রতি বেশি আস্থা রাখা যায়। আইন না থাকলে জীবন অনিরাপদ এবং অনিশ্চিত হয়ে পড়ত। প্রভাবশালীরা যা খুশি তাই করতে পারত। আইন ছাড়া মানুষের জীবন আর বন্য প্রাণীর জীবন অনেকটা একই রকমের হত। কাজেই আইনের সুবিধা ছাড়া পরস্পরের উপর নির্ভরশীল এ জামানায় মানুষের স্বাভাবিক জীবন অচিন্তনীয় হয়ে যেত।
এখন আসুন আইনের #অসুবিধাগুলো বুঝতে চেষ্টা করি- আইনে ফর্মালিটি করা লাগে। যে নিরপরাধ, তাকেও এই ফর্মালিটি মেইনটেইন করতে গিয়ে ক্রিমিনাল কেসে অধিকাংশ ক্ষেত্রে জেলে যাওয়া লাগে। জজ জানেন সত্যটা কী। তবুও ফর্মালিটি মেইনটেইন করার জন্য তাকে অনেকদিন অপেক্ষা করতে হয়। প্রতিকার পেতে বিলম্ব হয়। আবার, সমাজ পরিবর্তনের সাথে সাথে আইনেরও পরিবর্তন হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু দেখা যায় একটা আইন প্রণীত হবার পর সমাজ যে হারে আগায়, আইন সে হারে আগায় না। ফলে সমাজের সাথে আইনের একটা গ্যাপ সৃষ্টি হয়। আইন অসামঞ্জস্য হয়ে যায়। জটিলতার সৃষ্টি হয়। ফলে আইন অনেক ক্ষেত্রে পরিস্থিতি অনুযায়ী কিছু মানুষের অনাকাঙ্ক্ষিত কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, রাজিশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।