নজরুল ইসলাম,
অ্যামেরিকা এখন “I can’t breath” স্লোগানে মুখরিত। এ সুযোগে লুটপাটের ঘটনাও ঘটছে। এক জায়গায় দেখলাম লোকজন সমানে লুটপাট করছে। যে শপে লুট হচ্ছে তার দরজাটি অত বড় নয়। ফাস্ট ফুড খাওয়া দশাসই শরীরের লোকগুলো মালামাল নিয়ে বের হওয়ার সময় পরস্পরের লাথি- গুতা খাচ্ছে। মালামাল হাত থেকে পড়ে যাচ্ছে। এর মধ্যেও তারা একজন অপরজনকে বলছে, “সরি, ইট’স ওকে কিংবা পড়ে যাওয়া জিনিস তুলে দিয়ে বলছে “ধন্যবাদ”। অর্থাৎ লুটপাটের মধ্যেও তারা তাদের সৌজন্য প্রকাশ কিংবা এক্সপ্রশন দিতে কার্পণ্য করছে না।
পাঠকদের ধন্যবাদ দেওয়ার জন্য লুটপাটে অংশগ্রহনে উদ্ভুদ্ধ করতে এ লিখা নয়। বলতে চাচ্ছিলাম যে, আমাদের কালচারটা ওভাবে গড়ে উঠে নি। আপনি কারও কাজটি করে দিলে ধন্যবাদ তো পাবেনই না দেখবেন, পশ্চাৎদেশ দেখিয়ে হাঁটা ধরছে। আমরা ধন্যবাদ বা কৃতজ্ঞতা জানাতে কার্পণ্য করি। অনেক সময় মনে করি এটা তো তার ডিউটি তাকে ধন্যবাদ দেয়ার কি আছে। না; এখানেও তার ধন্যবাদ প্রাপ্য আছে। আর এটাই সভ্যতা। সৌজন্য প্রকাশ কিংবা কৃতজ্ঞতা জানানোর অনেক ফায়দা আছে। প্রার্থীব জীবনে তো বটেই স্রষ্ট্রার সাথেও এর মারাত্মক যোগসূত্র আছে।
সষ্ট্রাকে ধন্যবাদ জানাতে “আলহামদুলিল্লাহ” বললে আল্লাহ নেয়ামত বাড়িয়ে দিবেন বলে প্রতিশ্রুত। কেউ আপনার কাজ করে দিলে তাকে ধন্যবাদ দিন। ক্ষেত্রবিশেষে “জাজাকাল্লাহ খাইরান” বলা যেতে পারে। এটা তার প্রতি একটি দোয়াও। -আপনাকে আল্লাহ এ কাজের উত্তম প্রতিদান দিন। “ইনশাআল্লাহ” আর “মাশাল্লাহ” এখন অবশ্য সার্বজনীন হয়ে গেছে। ইন্ডিয়ান ক্রিকেটারদের ও বলতে শুনেছি “ইনশাআল্লাহ কাল আমরা জিতবো”। আবার রিয়েলিটি শো তে পিচ্চি মেয়ের “চিকনি চামেলি” ডান্স দেখে জাজরা বলেন “মাশাল্লাহ”! তারা মনে হয় নজরুলে উদ্ভুদ্ধ- “জানিস না কি ধর্ম সে যে বর্ম সম সহনশীল তাকে কি ভাঙতে পারে ছোঁয়াছুঁয়ির ছোট ঢিল” নজরুল কে ধন্যবাদ দিয়ে “ধন্যবাদে” আসি।
ধন্যবাদ দেয়া চর্চার বিষয়। ছোট বেলায় বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসার চাঁদার বইয়ে দেখতাম “ধন্যবাদের সহিত গৃহীত হইলো”। বড় হওয়ার পর দেখেছি ধন্যবাদের সহিত প্রত্যাখাতও হয়। আধুনিক তরুণীদের হেল্প করতে গেলে তারা স্টাইল করে বলবে ” নো থ্যাংকস”। তার মানে আপনি ধন্যবাদের সহিত প্রত্যাখাত হলেন। আমার অনেকে বিভিন্ন জায়গায় “ধন্যবাদ! বড় করে লিখে রাখলেও মনে মনে ঐ “ধন্যবাদ” ধারণ করেনা। শপিং ব্যাগে লিখা থাকে “ধন্যবাদ আবার আসবেন” কিন্তু নিচের দিকে ছোট করে লিখা থাকে “বিক্রিত মাল ফেরত না দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ”। অথচ বিক্রিত মাল ফেরত নেয়া অসীম পূণ্যের কাজ। তাই মন থেকে ধন্যবাদ দিন।
উদার চিত্তে কৃতজ্ঞতা জানান। সুন্দর এক্সপ্রেশন দিন। দার্শনিক প্লুতার্ক বলেন- “আমরা যেভাবে ভিতর থেকে বদলাই সে অনুযায়ী আমাদের বাইরে বাস্তবতাও বদলে যায়।” আমরা অনেক সময় ভুলে যাই একটু আন্তরিকতার ছোঁয়া,একটি প্রাঞ্জল হাসি, একটি সুন্দর কথা, একটা ধন্যবাদ, একটু ভালো ব্যবহারের অসম্ভব ক্ষমতা আছে, যা মানুষের জীবনও বদলে দেয়। তবে ভুল অভিব্যাক্তি প্রকাশ বা ভুল জায়গায় ধন্যবাদের মতো দামী কিছু না লেখাই ভালো। যেমন- অনেকে “আপনি কেমন আছেন প্রশ্নে” উত্তরে বলেন, ইনশাআল্লাহ, ভালো আছি”। না। এটা হয়নি। পরের বিষয়টি অবশ্য ব্যাক্তগত অভিজ্ঞতা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ এর ল’ ক্লিনিকের নিচে একটি প্রক্ষালন কক্ষ ছিলো। কোন দুষ্ট ছাত্রের কান্ড হতে পারে এটি। আমরা সাধারণত ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে তাতে প্রবেশ করতাম বলে প্রথমে চোখে পড়ত না। প্রক্ষালন বিমুক্ত হইবার পর তৃপ্তি লইয়া দাঁড়াতেই চোখে পড়ে লেখাটি ” ধন্যবাদ, ভালোই দিয়া গেলেন”।।
লেখকঃ নজরুল ইসলাম, কথা সাহিত্যিক ও গল্পকার।