মোঃ নজরুল ইসলাম
সন্মানিত একজন ব্যাক্তিত্ব একবার একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে চট্টগ্রামের লোক কথায় কথায় গালি দিলেও সব গালি গালি নয়। আদর করেও গালি দেয়া হয়। আসলেই, আদর করেও যে কঠিন গালি দিয়ে ফেলা যায় এটা চট্টগ্রামে না গেলে বুঝবেন না। তিনি বলেছিলেন যে মনে করুন,একটি ছেলে সারা বছর ফেল করে বিশেষ বিবেচনায় মেট্রিক পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ পেয়ে “সোনালী এ প্লাস পাশ দিয়ে দিছে”। ছেলের বাবা ছেলের মাকে এসে বলছে, “…. পোয়া হাম এক্কান ত গরি ফেলাইয়্যি” ( মোটামুটি অর্থ- গালিটা দিয়ে- ছেলেতো দেখিয়ে দিয়েছে)।
তবে আদর করে হোক আর রাগ করে হোক গালি দেয়া উচিত নয়। ইদানিং রাস্তা ঘাটে,বাজারে, সোশ্যাল মিডিয়ায়, যেকোন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে, ব্যক্তি পর্যায়ে গালিটা বেড়ে গিয়েছে। রীতিমতো গালির তুবড়ি ছুটছে। স্বস্তির নিঃশ্বাস কিংবা হতাশা যাই প্রকাশ করিনা কেনো গালি এখন কথাবার্তার অংশ হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে।
ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী উলানা একবার বলেছিলেন যে গালি সাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে।এটা নাকি ভালো মানসিক যোগাযোগও নিশ্চিত করে। এগুলোর অবশ্য বৈজ্ঞানিক ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায়নি। এক সাংবাদিক তো অফিসে ধূমপান কক্ষের ন্যায় গালি দেয়ার জন্য একটা কক্ষ বানানোরও প্রস্তাব করেছিলেন।
তবে ইসলাম গালি দেয়াকে সমর্থন করে না। ইসলামে অন্যকে গালি দেয়া সম্পূর্ণ হারাম। যেকোনো কারণেই হোক, কাউকে গালি দেয়ার অনুমতি নেই। হাসি-কৌতুক ও ঠাট্টাচ্ছলেও অন্যকে গালি দেয়া ইসলামের দৃষ্টিতে অশোভনীয়। হাদিসে আছে, মুমিন কখনো দোষারোপকারী, অভিশাপদাতা, অশ্লীলভাষী ও গালিগালাজকারী হয় না। (তিরমিজি, হাদিস নং : ২০৪৩) ভদ্র মানুষ অন্যকে গালি দেয় না। অশ্রাব্য ভাষায় কারো সঙ্গে কথা বলে না। ক্রোধে অগ্নিশর্মা হলেও মার্জিত শব্দ ব্যবহার করে। ভদ্র ও সংযতভাবে শোকজ করে।
কিন্তু কিছু মানুষ রাগের অতিশয্যে হুঁশ-জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। অন্যকে অশ্লীল ও শ্রুতিকটূ বাক্যবাণে নাজেহাল করে। এটা উচিত নয়। বিশ্রি ভাষা ব্যাবহারের চেয়ে আগ্রাসী মনোভাব কমানোর ক্ষেত্রে কাজ করা যেতে পারে। সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপারটি হলো গালিতে অভ্যস্ত হয়ে গেলে অনেক সময় ভালো কথায় এমনকি ভালো বিষয়েও মুখে গালি চলে আসে। এর পরিনতি অনেক সময় খারাপ ফল বয়ে আনে। যেমনটি ঘটেছিলো একজন চেয়ারম্যানের ক্ষেত্রে- চেয়ারম্যান সাহেব লোক খারাপ না। উনি বিশেষ ক্রীড়ানুরাগীও বটে। শুধু কথায় কথায় একটু গালির স্বভাব আছে।
যা হোক। তাঁর ইউনিয়নের সাথে অন্য ইউনিয়নের ফুটবল ম্যাচ হবে। চেয়ারম্যানের টিম দূর্বল তবে তাঁর দলে এক তাগড়া ও দারুণ স্ট্রাইকার আছে। সেই দলের প্রাণভোমরা। বিপক্ষ দল শক্তিশালী। খেলা শুরু। চেয়ারম্যান দলের সে স্ট্রাইকার হাকান সুকুরের মতো খেলার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই প্রতিপক্ষের জালে বল জড়িয়ে দেয়। চেয়ারম্যান সাহেব উত্তেজনার আতিশয্যে লাফ দিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছিলো- “সাবাশ! কুত্তার বাইচ্চা”। পুনশ্চঃ চেয়ারম্যান সাহেব আর কখনো ঐ ইউনিয়নে নির্বাচিত হতে পারেননি। ২৮মে ২০২০।
মোঃ নজরুল ইসলাম, লেখক ও কথা সাহিত্যিক।