নিজস্ব প্রতিবেদক, এপিএস নিউজ
বাংলাদেশসহ সমগ্র পৃথিবীতেই হঠাৎ করোনা ভাইরাসের আক্রমনে মানুষ যেন দিশেহারা হয়ে গেছে। ফলে যা কিছুদিন পূর্বেও মানুষের বেঁচে থাকবার জন্য কখনও আবশ্যক মনে হয়নি, তা এখন আবশ্যক মনে হচ্ছে। এরূপই একটি বিষয় হল বাংলাদেশের আদালতে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আদালতের কার্যক্রম পরিচালনা করা। রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের মধ্যে একটি হল বিচার বিভাগ। তাই আপদ-নিরাপদ কোন কালেই বিচার বিভাগকে কখনও নিস্ক্রিয় রাখবার কোন অবকাশ নেই। সব মানুষ না জানলেও এটিই বাস্তবতা যে, করোনা দূর্যোগের সময়ও প্রতিদিনই দেশের সমস্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট ও চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট নিরবে, নিভৃতে কাজ করে গেছে যেমনটি কাজ করে গেছে বাংলাদেশের পুলিশ।
এই দূর্যোগের সময়ও মানুষ অপরাধ করা ছাড়েনি অথবা যারা পূর্বেই অপরাধ করেছিল তাদেরকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করেছে। আদালত আইন অনুসারে অতপর আসামীদেরকে জেলে পাঠিয়েছে বা রিমান্ড দিয়েছে, ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ধারায় অথবা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২২ ধারায় আসামীদের/ভিকটিমের/সাক্ষীর জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেছে। বিচারকগণ প্রচার বিমুখ বলে তাঁদের কাজ মানুষ পত্রিকা মারফত বা ইলেট্রনিক মিডিয়া মারফত দেখতে পায়না। মূলত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট/চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট ও পুলিশের কাজ এমন যে তারা কখনও দায়িত্ব হতে অবসর নয়, যে কোন দূর্যোগপূর্ণ অবস্থাতেও দেশ ও জাতির স্বার্থে তাদেরকে কাজ করতেই হবে। যদিও সরকার সাধারণ ছুটির অবসান ঘটিয়ে সীমিত পর্যায়ে সতর্কতার সাথে অফিস পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তথাপিও যেখানে ‘আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ, ২০২০’ এর মত একটি অসাধারণ আইন আছে এবং করোনা মহামারিও আছে, সেখানে কোর্টের জরুরী কাজসমূহ করোনা দূর্যোগ দূর হবার পূর্ব পর্যন্ত ভাচুয়ালি করবার যথেষ্ট সুযোগতো আছেই, বরং ভার্চুয়ালি করাই সমীচিন ও কাম্য।
বাংলাদেশ ছোট্ট একটি দেশ হওয়া সত্ত্বে ও এখানে জনসংখ্যা যেমন বেশী, আদালত গুলোতে মামলার সংখ্যাও তেমন বেশী। তাই জেলা পর্যায়ের আদালত গুলোতে প্রতিদিন যে পরিমান মানুষের সমাগম হয় তা হয়ত জেলার অন্যান্য সকল অফিসে আগত মানুষের সমষ্টির চেয়েও অনেক বেশী হবে। তাই করোনা ভাইরাসের সংক্রমন হতে দেশের সকল বিচারক, আদালতের সহায়ক কর্মকর্তা/কর্মচারী, পুলিশ, আইনজীবী, জেল কর্তৃপক্ষ, বিচারপ্রার্থী মানুষ তথা দেশবাসীকে নিরাপদ রাখবার জন্য তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে আদালত গুলো পরিচালনা করা ছাড়া কোন কার্যকর বিকল্প আমাদের সন্মুখে এখন নাই। আর বাংলাদেশের মত একটি দেশে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে সফলভাবে আদালত পরিচালনা করতে একটি বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে যে বাংলাদেশের মানুষ এখনও তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারে অনেক পিছিয়ে।
এমনকি অনেক আইনজীবী এখনও স্মার্টফোন ব্যবহার করতে পারেনা, mycourt.judiciary.gov.bd, microsoft teams ইত্যাদি সফটওয়ার ব্যবহার করাতো দূরের কথা। তাই আদালতে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারকে সফল, জনপ্রিয় ও কার্যকর করতে চাইলে বিচারক, আইনজীবীসহ বিচার প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলের নিকট সহজ মনে হবে এরকম পদ্ধতিতে কাজ করবার পথ দেখাতে হবে, নইলে এ পদ্ধতি ব্যর্থ হতে বাধ্য। সহজ পদ্ধতি হলে যে সফলতা পাওয়া যায় তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে শেরপুরের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট। যেখানে সরকার সম্প্রতি অত্যন্ত সময়োপযোগী একটি আইন ‘আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ, ২০২০’ প্রণয়ন করেন।
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টও এই অধ্যাদেশকে কার্যকর করবার জন্য ক’টি পরিপত্র জারি করেন, এমনকি আদালতের জরুরী কার্যক্রম করোনা দূর্যোগের সময় পরিচালনার জন্য সরকারিভাবে একটি ওয়েব সাইটও চালু করা হয়, তথাপিও মূলত ভার্চুয়াল কোর্টরুম ম্যানুয়াল (লগ ইন mycourt.judiciary.gov.bd), microsoft teams ইত্যাদি সফটওয়ার ব্যবহারে জটিলতার জন্য জেলা পর্যায়ের বিচারক, আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্টরা কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়ে যায়। বিচারক, পুলিশ, আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্টরা যদিও উপলব্ধি করছিলেন কারোনা ভাইরাস মহামারির সময় অডিও-ভিডিও মাধ্যম ব্যবহার করে আদালতের কার্যক্রম পরিচালনা না করলে তারা সবাই মহামারিতে আক্রান্ত হবার মারাত্ত্বক ঝুকিতে পড়বেন, তথাপিও ভার্চুয়াল কোর্টরুম ম্যানুয়াল (লগ ইন mycourt.judiciary.gov.bd), microsoft teams ইত্যাদি সফটওয়ার তারা সহজে ব্যবহার করতে পারতে ছিলো না বিধায় বহু জেলায় আইনজীবী সমিতি ভার্চুয়াল শুনানি বর্জনের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়। এরূপ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার মত শেরপুর জেলাতেও আইনজীবী সমিতি আদালত বর্জনের সিদ্ধান্ত নেবার জন্য সাধারণ মিটিং ডেকে ছিল জানা যায়।
কিন্তু শেরপুরের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এস. এম. হুমায়ুন কবীরের দূরদর্শিতার জন্য শেরপুরে ভার্চুয়াল শুনানি বর্জন হয়নি, বরং সেরা সাফল্য এসেছে শেরপুর চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টেই। কারণ শেরপুরের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এস. এম. হুমায়ুন কবীর ভার্চুয়াল শুনানি শুরুর প্রাক্কালে অত্যন্ত কার্যকর কিন্তু সুচিন্তিত ও সহজ তিনটি আদেশ জারি করে সেগুলো ‘চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, শেরপুর’ ফেইসবুক পেইজে আপলোড করেন। এই আদেশের আলোকে তাঁর নিয়ন্ত্রণাধিন ম্যাজিস্ট্রেট, সহায়ক কর্মকর্তা/কর্মচারী, পুলিশ, জেল কর্তৃপক্ষ, আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্টদেরকে তিনি তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভাচুর্য়াল শুনানির বিষয়ে প্রশিক্ষণ/দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। যেখানে শেরপুর বারে ভার্চুয়াল শুনানি বর্জনের জন্য মিটিং ডাকা হয়েছিল, সেখানে চীফ জুুিডসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এস. এম. হুমায়ুন কবীরের নিকট হতে প্রশিক্ষণ নেওয়া এডভোকেটরা অন্যদেরকে দেখিয়ে দেন যে ভার্চুয়াল শুনানির প্রক্রিয়াটি খুবই সহজ। ফলে আদালত বর্জনের আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত হতে বেঁচে যায় শেরপুর আইনজীবী সমিতি। এর সুফল বিচারপ্রার্থী জনগণসহ আইনজীবীবৃন্দও পেয়েছেন। শেরপুর চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে মাত্র নয় দিনে ভার্চুয়াল শুনানির মাধ্যমে ২৬৮টি মামলা নিস্পত্তি হয়।
আদালতে ভার্চুয়াল ব্যবস্থা চালু হবার দিনই(১১/০৫/২০২০খ্রি: তারিখ) শেরপুরের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে ০২টি আবেদন পড়ে এবং আইনের বাধ্যবাধকতার জন্য মামলা দু’টি পরের দিন শুনানির তারিখ ফেলে ১২/০৫/২০২০খ্রি: তারিখে ভার্চুয়াল শুনানির মাধ্যমে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এস. এম. হুমায়ুন কবীর নিষ্পত্তি করেন। এই দু’টি নিষ্পত্তি শেরপুরেতো বটেই আমাদের জানা মতে সমগ্র বাংলাদেশের জন্যই চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক সর্বপ্রথম ভার্চুয়াল শুনানির মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তি হিসাবে ইতিহাসের পাতায় স্থান পাবে। শেরপুরের সফলতা এখন রীতিমত সারা দেশে অনেক বিচারক, আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্টদের নিকট উদাহরণ হয়ে গেছে। শেরপুরের চীফ জুডিডিসয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এস এম. হুমায়ন কবীরের আদেশ তিনটি গভীরভাবে পর্যালোচনা করলে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট, জজ কোর্টসহ সমস্ত ট্রাইবুনাল ও আদালতে চাইলে আপদ-নিরাপদ উভয়কালে সহজে ও অতি স্বল্প খরচে/বিনা খরচে ভার্চুয়াল শুনানির মাধ্যমে আদালত পরিচালনার উপায় পাওয়া যেতে পারে।
আপদকালে ভার্চুয়াল শুনানির মাধ্যমে আদালত পরিচালনার আবশ্যকতা এতক্ষণে সবাই বুঝে গেছেন নিশ্চয়ই। কিন্তু নিরাপদকালেও যে ক্ষেত্র বিশেষে ভার্চুয়াল পদ্ধতি ব্যবহারের আবশ্যকতা/সুফল আছে তাও কিছুটা পরিস্কার করা দরকার। অনেক সময় এমন হতে পারে যে এমন কিছু আসামী আছে যাদের নামে বিভিন্ন জেলাতে মামলা আছে। তাদেরকে প্রত্যেক মামলার তারিখে যে জেলায় মামলা আছে সেই জেলার সংশ্লিষ্ট কোর্টে নিয়ে যেতে হয় যা একই সঙ্গে সময় সাপেক্ষ, ব্যয় সাপেক্ষ, কষ্টকর ও ঝুঁকিপূর্ণ। আবার এমনও হতে পারে যে একই আসামীর একাধিক জেলাতে একই দিন একাধিক মামলাতে হাজির করানোর তারিখ আছে। এমন সময় জেল কর্তৃপক্ষ একটি জেলাতে আসামীকে হাজির করেন, অন্য জেলাতে হাজির করতে পারেনা(আদালতের নিকট হতে সময় নেয়)। কিন্তু ভার্চুয়াল পদ্ধতি নিরাপদকালেও ব্যবহারের বিধান থাকলে এই সমস্যা থাকবেনা, একজন আসামীর বিরুদ্ধে যদি ৬৪ জেলাতেও মামলা থাকে, প্রত্যেক জেলার মামলাতেই সহজে আসামীর হাজিরা ভার্চুয়ালি নিশ্চিত করা সম্ভব।
আবার এমন অনেক দূর্ধর্ষ ডাকাত বা ভয়ংকর আসামী থাকতে পারে যাদের বিরুদ্ধে মানুষ তাদের সামনাসামনি দাঁড়িয়ে সাক্ষ্য প্রদানে ভয় পায়। ভার্চুয়াল পদ্ধতি চালু থাকলে আপদ-নিরাপদ উভয় অবস্থাতেই ভয়ংকর আসামীদের বিরুদ্ধেও সাক্ষ্য প্রদানে মানুষ স্বস্তি বোধ করবে। এরূপ আরও বেশ কিছু অবস্থা ব্যাখা করা যেতে পারে যখন নিরাপদ কালেও ভার্চুয়াল শুনানি অধিক সুবিধাজনক বুঝা যাবে কিন্তু লিখা দীর্ঘ হয়ে যাবে ভেবে সেদিকে আর যাচ্ছিনা। সরকার যদি সমগ্র বাংলাদেশে ভার্চুয়াল শুনানির মাধ্যমে আদালত পরিচালনাকে জনপ্রিয় ও অতি সহজে প্রায় বিনা খরচে বাস্তবায়ন করতে চায়, তবে শেরপুরের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এস. এম. হুমায়ুন কবীরের পদ্ধতি সব জেলায় ও আদালতে কার্যকরের ব্যবস্থা নিতে পারে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট বাংলাদেশ বিচার বিভাগে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহারকে
শেরপুর ম্যাজিস্ট্রেসীর কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শেরপুর বারের আইনজীবীদের নিকট হতে জানা যায় যে, আদালতে ভার্চুয়াল শুনানি শুরুর প্রাক্কালে শেরপুরের মাননীয় চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এস. এম. হুমায়ুন কবীর তাঁর সমস্ত ম্যাজিস্ট্রেট ও কিছুসংখ্যক সহায়ক কর্মকর্তা/কর্মচারীকে গভীর রাত্রি পর্যন্ত ভার্চুয়াল শুনানির মাধ্যমে আদালত পরিচালনার প্রশিক্ষণ প্রদান করেন।
সহজসাধ্য ও জনপ্রিয় করে তুলবার জন্য শেরপুরের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এস. এম. হুমায়ুন কবীরকে অন্তত এক/দুই বছরের লিয়েন প্রদান করে ইউ.এন.ডিপি স্ট্যান্ডার্ডে সম্মানি ও সুবিধাদি প্রদানের ব্যবস্থাসহ ইউ.এন.ডিপি’তে প্রজেক্ট প্রধান করে নিয়োগের ব্যবস্থা করতে পারে। অথবা ইউ.এন.ডিপি. যেহেতু বাংলাদেশ বিচার বিভাগের ডিজিটাইজেশননের জন্য কাজ করছে এবং ভার্চুয়াল মাধ্যমে আদালত পরিচালনার কর্মপরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে সার্বিকভাবে সাহায্য করছে, সেহেতু দেশের বিচারক, আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের নিকট সহজে ও জনপ্রিয়ভাবে কাজটি সম্পন্ন করবার জন্য শেরপুরের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এস. এম. হুমায়ুন কবীরকে প্রজেক্ট প্রধান করে কাজ করবার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। বর্তমানে বিদ্যমান ভার্চুয়াল শুনানি পদ্ধতি ও সফটওয়ার খুবই কঠিন ও অজনপ্রিয় হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে বিধায় সময় এসেছে শেরপুরের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে অত্যন্ত সহজ ও সফলভাবে ভার্চুয়াল শুনানির মাধ্যমে যেভাবে সফলতা এসেছে সেভাবে সারা দেশে সবাই কাজ করে সফল হবার।
শেরপুরের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এস. এম. হুমায়ুন কবীর শেরপুর বারের আগ্রহী এডভোকেটদেরকেও গভীর রাত পর্যন্ত জেগে আদালতে ভার্চুয়ালী শুনানি করবার প্রশিক্ষণ প্রদান করেন এবং সরকারের ঐতিহাসিক অধ্যাদেশ ‘আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ, ২০২০’ জনহিতকরভাবে কার্যকরের জন্য তিনি প্ল্যান এ, বি ও সি নিয়ে অগ্রসর হন। তাঁর প্ল্যান-এ ছিল শেরপুর বারের যতবেশী সম্ভব এডভোকেটকে রাতের মধ্যে আদালতে ভার্চুয়ালী শুনানি করবার প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং রাত পোহালে কোর্ট আওয়ারে তাঁদেরকে দিয়ে আদালতে সর্বপ্রথম ভার্চুয়াল শুনানি নিশ্চিত করে এডভোকেটদেরকে ভার্চুয়াল শুনানিতে আগ্রহী করে তোলা, অতপর আগ্রহী বাকি এডভোকেটদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়া।
তবে সরকারের জনহিতকর অধ্যাদেশের সুদূরপ্রসারী কল্যাণের বিষয়টি না বুঝবার দরুন কোন কারণে শেরপুর বার ভার্চুয়াল শুনানি বর্জন করলে তিনি প্ল্যান-বি নিয়ে এগোনোর সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর প্ল্যান-বি ছিল শেরপুর জেলার পাশ্ববর্তী জেলার দক্ষ এডভোকেট যারা ভার্চুয়াল শুনানিতে আগ্রহী হবেন, তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে আদালতের কার্যক্রম ভার্চুয়ালী পরিচালনা করা যাতে সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়, জনগনের সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় এবং জনগন উপকৃত হয়। এরপর যদি কোন কারণে প্ল্যান-বি ব্যর্থ হয়, তখন তিনি প্ল্যান-সি নিয়ে এগুনোর প্রস্তুতি নিয়ে রাখেন। তাঁর প্ল্যান-সি ছিল সুপ্রীম কোর্টের এডভোকেট যারা ভার্চুয়াল শুনানিতে অংশগ্রহণে ইচ্ছুক তাদেরকে দিয়ে কাজ করানো। এভাবে তিনি প্ল্যান-এ, বি ও সি নিয়ে সরকার ও সুপ্রীম কোর্টের জনকল্যাণকর আইন ও সিদ্ধান্তকে বাস্তবায়নের জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকেন। মহান আল্লাহর তা’লার শুকরিয়া যে শেরপুরের নবাগত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এস. এম. হুমায়ন কবীর তাঁর দূরদর্শি নেতৃত্বের জন্য তাঁর প্ল্যান-এ বাস্তবায়নেই সক্ষম হন, প্ল্যান বি ও সি’র দিকে তাকানোরও প্রয়োজন পড়েনি। মজার বিষয় হল তিনি যখন ১ম মামলায় ভার্চুয়াল শুনানি নিচ্ছিলেন, তখন স্থানীয় শেরপুর বারের প্রেসিডেন্ট ভার্চুয়াল আদালত বর্জনের জন্য মিটিং করতেছিলেন।
কিন্তু আগের রাতে শেরপুরের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট যেসব এডভোকেটকে গভীর রাত পর্যন্ত ভার্চুয়াল শুনানির প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে বিশেষত এডভোকেট মো: রফিকুল ইসলাম আধার, এডভোকেট মো: আল-আমিন, এডভোকেট এম. কে. মুরাদুজ্জামান, এডভোকেট রওশন কবীর আলমগীর, এডভোকেট মেরাজ উদ্দিন চৌধুরী, এডভোকেট রূপম কুমার সিং, এডভোকেট তারিকুল ইসলাম ভাসানী, এডভোকেট নূরে আলম হীরা প্রমুখের সময়োচিত ভুমিকার কারণে আত্নঘাতি বর্জনের সিদ্ধান্ত থেকে বেঁচে যায় শেরপুর বার। এর ফলে শেরপুর চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে মামলা সংখ্যা মাত্র ৪০০০ এর কাছাকাছি হওয়া সত্তে¦ও মাত্র ৯দিনে ভার্চুয়াল শুনানির মাধ্যমে রেকর্ড পরিমান ২৬৮টি মামলা নিষ্পত্তি হয়, উপকৃত হয় বহু হাজতি ও তাদের পরিবারের মানুষ (আপনজনরা একত্রে ঈদ করবার সুযোগ পেয়েছে), ঈদের পূর্বে এডভোকেটদেরও অর্থকষ্ট বেশ লাঘব হয়েছে।
শেরপুর চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের প্রত্যেক ম্যাজিস্ট্রেটই ভার্চুয়াল শুনানির শুরু হতেই অত্যন্ত দক্ষভাবে আদালত পরিচালনা করেছেন। এখানেও ব্যতিক্রম শেরপুরের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এস. এম. হুমায়ুন কবীর। অন্যান্য জেলায় এক/একাধিক ম্যাজিস্ট্রেটকে ভার্চুয়াল শুনানির জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, বাকি ম্যাজিস্ট্রেগণ দায়িত্বহীন থেকেছেন বিধায় তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির সুযোগ হয়নি যেমনটি হয়েছে শেরপুর ম্যাজিস্ট্রেসীতে কর্মরত ম্যাজিস্ট্রেটবৃন্দের। শেরপুর ছাড়া বাংলাদেশের অন্যান্য জেলার মডেলে কোন ম্যাজিস্ট্রেট ভার্চুয়াল শুনানির মাধ্যমে পরিশ্রম করে আদালত পরিচালনা করে (করোনা ঝুঁকি মোকাবেলা করে) বেতন ভাতাদি নেবেন, আর কোন ম্যাজিস্ট্রেট পরিশ্রম না করে (করোনা ঝুঁকি মোকাবেলা না করে) বেতন ভাতাদি নেবেন। কিন্তু শেরপুরের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এস. এম. হুমায়ুন কবীরের মডেলে সব ম্যাজিস্ট্রেটই কাজ করেন, সব ম্যাজিস্ট্রেটই পরিশ্রম করে(করোনা ঝুঁকি মোকাবেলা করে) বেতনভাতাদি নেন যা সত্যিই অধিক যৌক্তিক ও নৈতিক বটে। কিছু কিছু জেলায় বেশী আবেদন পড়লে দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট স্বল্প বিধায় একই সঙ্গে দাখিলকৃত আবেদন শুনানি একই দিনে নাও হতে পারে কিন্তু শেরপুরের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এর মডেলে সব ম্যাজিস্ট্রেট কাজ করেন বিধায় এরূপ সমস্যা হবার কোন সম্ভাবনাই থাকেনা। সবচেয়ে বড় কথা শেরপুরের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এস. এম. হুমায়ুন কবীরের মডেলে দেশের জনগণের অর্থে যেসব ম্যাজিস্ট্রেটের বেতন ভাতাদি হয়, সাংবিধানিক অধিকার হিসাবে জনগণ সেসব ম্যাজিস্ট্রেট এর নিকট জামিন চাইতে সক্ষম হয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জামিন পায় এবং হাজারো মানুষের মুখে হাঁসি ফুটে।
শেরপুর জেলার পাশ্ববর্তী জেলাসহ দূরবর্তী জেলাগুলোও শেরপুরের ভার্চুয়াল শুনানীর সাফল্য পত্রিকায় ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখে শেরপুর বারের এডভোকেটসহ পরিচিত নানাজনকে ফোন করে ভার্চুয়াল শুনানিতে আগ্রহী হয়েছেন। সকলের নিকট শেরপুরের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এস. এম. হুমায়ুন কবীরের পদ্ধতি অত্যন্ত সহজসাধ্য হওয়ায় সংশ্লিষ্ট সকলে আদালতের ভার্চুয়াল শুনানিতে অংশগ্রহণ করতে সক্ষম হয়। এতে জনগণ, আইনজীবী সবাই উপকৃত হয়। কিছু জেলাতে ভার্চুয়াল শুনানির মাধ্যমে আদালতের কার্যক্রম পরিচালনা একদিনের জন্যও করা যায়নি জানা যায়। যেসব জেলাতে ভার্চুয়াল শুনানির মাধ্যমে আদালতের কার্যক্রম পরিচালিত হয়নি বা শুরু হবার পরও কঠিন মনে হওয়ায় সফল হয়নি, সেসব জেলায় শেরপুরের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এস. এম. হুমায়ুন কবীরের মডেল অনুসরণ করুন, এতে সবাই সহজে কাজ করতে পারবেন, দেশ ও জনগণের উপকার হবে ইনশা-আল্লাহ। বর্তমানে করোনা মহামারি সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকা সত্ত্বেও অর্থনীতিকে সচল রাখতে সরকার বাধ্য হয়েই হয়ত অফিস আদালত খুলে দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে অন্তত যতদিন পর্যন্ত করোনা ভাইরাসের মহামারি দূর না হবে, ততদিন পর্যন্ত বাংলাদেশের সকল চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টসহ জজ কোর্টেও ভার্চুয়াল শুনানির মাধ্যমে আদালত পরিচালনা করা সবার নিরাপত্তার স্বার্থেই আবশ্যক।
আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস শেরপুরের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এস. এম. হুমায়ুন কবীরকে দায়িত্ব দিলে তিনি ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের ন্যায় জজ কোর্টেও জরুরী কাজসমূহ ভার্চুয়ালী সম্পন্ন করবার সহজ পথ দেখাতে পারবেন। দেশের সবার স্বার্থে তাঁর মেধার যথাযথ মূল্যায়ন করা হোক। প্রয়োজনীয় তথ্য দেখতে ‘চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট, শেরপুর’ ফেইজবুক পেইজে প্রবেশ করুন এবং একটি লাইক দিয়ে রাখুন, তবে প্রতিবেদনকারীর মত সকলেই উক্ত পেইজে উপস্থাপিত চমৎকার তথ্যসমূহ দেখতে পাবেন, প্রয়োজনে ডাউনলোড ও শেয়ার করতে পারবেন। চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট, শেরপুরের ফেজবুক পেইজে যেমন সমস্ত তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, এরূপ অন্যান্য কোর্টেও ফেসবুক পেইজ পরিচালনা করলে সবার জন্য উপকার হবে। আশা করি সদাশয় সরকার ও মহামান্য সুপ্রীম কোর্ট সবার নিরাপত্তা ও সুবিধা চিন্তা করে যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন।
এপিএস/০১ জুন/পিটিআই/নিজস্ব