জরুরি কোভিড পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্বাস্থ্য খাতে নতুন করে সাড়ে ১৭ হাজার জনবল নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। মৌখিক পরীক্ষা (ভাইভা) ছাড়াই সংশ্লিষ্টদের নিয়োগ দেওয়া হবে। এর মধ্যে রয়েছেন ২ হাজার চিকিৎসক, ৪ হাজার নার্স, ১১ হাজার টেকনোলজিস্ট ও ৪০৯ জন জুনিয়র কনসালট্যান্ট।
অ্যানেসথেসিওলজিস্ট বা জুনিয়র কলসালট্যান্ট নিয়োগের ক্ষেত্রে চাকরিতে আবেদনের বয়স শিথিল করে ৫০ বছর পর্যন্ত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্নের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমান করোনার সময়ে এই নিয়োগ দ্রুত সম্পন্ন করা গেলে চিকিৎসাব্যবস্থায় ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
গত ৮ জুলাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের মাসিক সমন্বয়সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আরো ২ হাজার চিকিৎসক ও ৪ হাজার নার্স নিয়োগের জন্য প্রধানমন্ত্রী প্রস্তাব অনুমোদন করেছেন। এর বাইরে জুনিয়র কনসালট্যান্ট (অ্যানেসথেসিওলজিস্ট) ৪০৯ জন নিয়োগ দেওয়া হবে। এদের বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০। আর বয়স শিথিলসংক্রান্ত নথি অনুমোদন দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। সরাসরি লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে এদের নিয়োগ দেওয়া হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক স্থগিত ১১ হাজার টেকনোলজিস্ট নিয়োগ দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) এসব পদে নিয়োগের সুপারিশ সম্পন্ন করবে।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী সরকারি হাসপাতালগুলোতে পদ থাকা সত্ত্বেও প্রায় সাড়ে ১১ হাজার পদে কোনো চিকিৎসক নিয়োগ করা হয়নি। রোগীর প্রবল চাপে চিকিৎসক ও নার্সের অপ্রতুলতাসহ স্বাস্থ্যব্যবস্থার দুর্বলতা চিহ্নিত হয়েছে। স্বাস্থ্যব্যবস্থার নাজুক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ২০১৯ সালে ৩৯তম বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমে প্রথম ধাপে সাড়ে ৪ হাজার এবং ২০২০ সালের মে মাসে কোভিড পরিস্থিতি সামনে রেখে আরো অতিরিক্ত ২ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকেরা কর্মস্থলে যোগদান করেছেন। বাকি ৬ হাজার ১০৭ জন চিকিৎসক এখনো নিয়োগের অপেক্ষায় রয়েছেন। অপেক্ষমাণ ক্যাডারযোগ্যদের মধ্য থেকে ২ হাজার চিকিত্সক নিয়োগ দেওয়া হতে পারে।
এর বাইরে চলমান ৪২তম বিশেষ বিসিএস থেকে আরো ২ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। পিএসসি থেকে প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী ২০২০ সালের ৭ ডিসেম্বর ৪২তম বিশেষ বিসিএসের সার্কুলার প্রকাশিত হলে সাড়ে ৩১ হাজার আবেদনপত্র জমা পড়ে। চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এই প্রিলিতে ৬ হাজার ২২ জন পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হন। গত ৬ জুন মৌখিক পরীক্ষা শুরু হয়। কিন্তু কোভিড পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় সরকার লকডাউন জোরদার করায় গত ২৪ জুন পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করা হয়। এরই মধ্যে দেশে গত ৮ মে প্রথম শনাক্ত হওয়া ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট সীমান্তবর্তী জেলা থেকে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এক দিনে আক্রান্তের ও মৃত্যুর সংখ্যা উভয় দিক থেকেই রেকর্ড করে বাংলাদেশ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী এ পর্যন্ত যতগুলো ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে, তার মধ্যে ডেলটা ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমণের হার বেশি। আক্রান্তদের জটিলতা এবং মৃত্যুর হারও ঊর্ধ্বগামী। যদিও নিয়ন্ত্রণের আপ্রাণ চেষ্টা করছে সরকার। তবু এই সংকট চলতে থাকলে স্বাস্থ্যব্যবস্থা নাজুক হয়ে পড়বে! এই সংকট মাথায় রেখে মেডিকেল কলেজ থেকে সিনিয়র চিকিত্সকদের পেরিফেরিতে ট্রান্সফার করার ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হয়। যেহেতু ৩৯তম বিসিএস থেকে ইতিমধ্যে ৬ হাজার ৫০০ জন চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, সেহেতু নতুন যে ২ হাজার চিকিৎসক নেওয়া হবে, তা চলমান ৪২তম বিসিএস থেকে নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন পরীক্ষার্থীরা।
তবে ৩৯তম বিসিএসে অপেক্ষমাণ চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দেশের ক্রান্তিলগ্নে চিকিৎসকের সংকট নিরসনে সরকারের বিচক্ষণ পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। কোনো রকম কালক্ষেপণ না করে পিএসসির সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৩৯ বিসিএসের বাকি ৬ হাজার ১০৭ জন চিকিৎসক থেকে নিয়োগ দেওয়া খুব সহজেই সম্ভব। কেননা, এই মুহূর্তে নতুন কোনো পরীক্ষার আয়োজন করা কিংবা অন্য বিসিএসকে ত্বরান্বিত করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।