সব
facebook apsnews24.com
ছোট গল্পঃ বাবা তোমাকে বলা হলো না। - APSNews24.Com

ছোট গল্পঃ বাবা তোমাকে বলা হলো না।

ছোট গল্পঃ বাবা তোমাকে বলা হলো না।

লেখকঃ নাঈম আহম্মেদ
অনিরুদ্ধ !! স্বপ্নপুরের ছোট্ট একটি গ্রামে তার বাস। ছোটবেলা থেকেই পায়নি বাবা-মায়ের আদর। জন্মের সময় মা মারা যায়। তার ৬/৭ বছর পরেই একটা অ্যাক্সিডেন্টে তার বাবাও মারা যায়। মামা-মামির কাছেই মানুষ হয়েছে সে। মামির কাছে পর্যাপ্ত আদর পেলেও মামা তাকে ততটা ভালোবাসতো না। ব্যাপারটা ঠিক উল্টো তাইনা? শুনতে অদ্ভুত লাগলেও এটাই সত্যি। তার মায়ের অভাব মামি পূরণ করতে পারলেও বাবার অভাব পূরণ করতে পারেনি অনিরুদ্ধের মামা। তাই একটা শূন্যতা তার সবসময়ই থেকে গেছে। কোন কাজে এদিক থেকে ওদিক হলেই মামা তাকে অনেক বকা বকি করতেন। মাঝে মাঝে গায়ে হাত তুলতেন। সবকিছু সহ্য করেই বড় হয়েছে অনিরুদ্ধ। 

একদিন খেতে বসে অনিরুদ্ধ তার মামীর কাছে জানতে চাই বাবা-মায়ের ব্যাপারে। তার মামী তাকে বলে তার মা তার জন্মের সময় মারা যায়। এবং তার ঠিক ৬/৭ বছর পরেই তার বাবা মারা যায় একটা অ্যাক্সিডেন্টে। তারপর তোকে আমরা আমাদের কাছে নিয়ে আসি। অনিরুদ্ধ জানতে চায় তাদের বাড়ির কথা। কোথায় কেটেছিল তার ছোটবেলা। তখন তার মা আমি তাকে বললো ঢাকায় তোমাদের বাড়িটা এখনো পরে আছে। ওখানেই তুমি তোমার বাবার কাছে মানুষ হয়েছিলে। কিন্তু ভাগ্য তোমার বাবা কেও কেড়ে নিলো। ওখানে এখন আর কেউ থাকেন না। অনিরুদ্ধ বায়না করে “মামী তুমি আমাকে ঠিকানাটা দেবে, আমি একটু দেখে আসতে চাই। যদি সেখানে বাবার কোনো স্মৃতি পাই। আসলে কখনো বাবার আদর পায়নি তো! তাই ইচ্ছে হলো আরকি। তার মামী কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো দাড়া আমি তোকে ঠিকানাটা লিখে দিচ্ছি। কিছুক্ষণ পর যখন তার মামী তার হাতে ঠিকানা টা ধরিয়ে দিলো। অনিরুদ্ধা এক মুহূর্ত অপেক্ষা আর করেনি। ঝটপট তৈরি হয়ে রওনা হলো ঢাকার উদ্দেশ্যে। বিকেলে গোধূলির শেষ লগ্নে অনিরুদ্ধ পৌঁছালো ঢাকার সেই পুরনো পড়ে থাকা বাড়িটাতে। পুরো বাড়িটা ঘুরে দেখে এক পর্যায়ে সে তার বাবার ঘরটাতে গেলো। কি সুন্দর গোছালো ঘরটা। তার বাবার চশমা চেয়ার লুঙ্গি সবকিছু জায়গা মতই রয়েছে। দু চোখ বেয়ে অনবরত অশ্রু ঝরছে অনিরুদ্ধর চোখ থেকে। কাঁদো কাঁদো কন্ঠে একা একাই কথা বলছে ওই ঘরটার সাথে। অনিরুদ্ধ বলছিলো, 

-আজও বলা হলো না কতটা ভালবাসি তোমায়। “বাবা” দুটি অক্ষরের নাম বহন করে হাজারো স্বপ্নের প্রতিচ্ছবি। বাবা মানে সন্তানের চোখে প্রথম সুপারম্যান।বাবা মানে নিজের ছেঁড়া জুতো পড়েও সন্তানের জন্য দামী জুতো কিনে আনা। বাবা এই শব্দটির মাঝেই কোথাও একটা লুকিয়ে আছে স্নেহের কনা। যে কণাটির তেমন গুরুত্ব পায় না ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার ইত্যাদি পদ প্রাপ্ত কিছু ব্যক্তির কাছে। সেই পদ প্রাপ্ত মানুষেরা হয়তো কখনোই জানতে পারবেন না তাদের সেই পদ পর্যন্ত নিয়ে যেতে সেই মানুষটির না খেয়ে কাটানোর দিনগুলোর কথা। আমরা কি কখনো ভেবেছি এই বাবাই আমাদের শত আবদারের অদ্ভুত ভান্ডার। বাবা তো সে জিনিস, যে সব বিপর্যয়ে বলেস- ভয় কিসের আমি তো আছি। বাবা তুমি বড্ড স্বার্থপর ,, হ্যাঁ কারণ তুমি নিজেকে পর্যন্ত কিচ্ছু দাওনি। সবটাই করেছো আমাদের সুখের জন্য। আজও আমার সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে বাবা। যখন গাড়ি ভাড়ার টাকা বাঁচিয়ে পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরে এসে যখন দেখতে আমি ঘুমিয়ে গেছি,, ঠিক তখনই কপালে চুমু দিয়ে বলতো,, খোকা ,,,, খোকা ঐ দেখ তোর জন্য কি নিয়ে এসেছি। সকালে যখন স্কুলের জন্য নিজ হাতে আমাকে রেডি করিয়ে দিতে, নিজে গিয়ে ছেড়ে আসতেই স্কুলের গেটে, আজও সেই স্মৃতি গুলো আমার চোখে ভেসে ওঠে। আজও ফিরে যেতে ইচ্ছে করে সেই ছেলেবেলায়। কিন্তু তা যে আর সম্ভব না বাবা। জানো বাবা তোমার লাগানো সেই পেয়ারা গাছটিতে আজও আগের মতোই ফুল আসে। থোকায় থোকায় পেয়ারা ধরে,, কিন্তু তুমি কোথায় বাবা? তোমার মনে আছে বাবা একদিন আমার জ্বর হয়েছিল। আমার স্পষ্ট মনে আছে,,তুমি সারারাত আমার মাথার কাছে জেগে ছিলে ,, সারা রাত আমার পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলে। কিন্তু এখন আর জ্বর হলে কেউ পাশে বসে থাকে না বাবা। কেউ আর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় না। তুমি কোথায় বাবা? 

আমি এখন বাবার রুমে বসে আছি। ঠিক বাবা যেখানে বসতেন ওইখানে। নাকে আসছে বাবার শরীরের ঘ্রাণ। এখনো পরে রয়েছে বাবার হাজারো হারানো স্মৃতি। এখনো আনমনা হয়ে শুনছি তার অদৃশ্য কন্ঠ। আবার মাঝে মাঝে কেমন যেন টের পাচ্ছি,,, বাবার পবিত্র আত্মার উপস্থিতি। হ্যাঁ এইতো বাবা,, এইতো তার চাদর গামছা এইতো অবহেলায় পড়ে থাকা বাবার প্রিয় চশমাটি। এসব যেন তাকে না পাওয়ার বেদনায় নিস্তব্ধ হয়ে আছে। চারপাশের দেয়াল গুলো বাবাকে না পেয়ে ব্যথা দূর দৃষ্টিতে চেয়ে আছে আমার দিকে। ওরা কি যেন বলতে চায়। কিন্তু আমার মতো বোধ হয় অধিক কষ্টে ওদের বলার ভাষা হারিয়ে গেছে। আমি জানি কষ্ট আর কষ্ট একসাথে হলে কখনো কখনো মুখের ভাষা হারিয়ে যায়। পূর্ব পাশে হ্যাঙ্গারে ঝুলানো বাবার একটা পাঞ্জাবী।

ইচ্ছে করছিল পাঞ্জাবি টা ধুয়ে দেই’। কিন্তু পাঞ্জাবির কাছে গেলে বাবার শরীরের ঘ্রাণ পাওয়া যায়। ঘ্রাণটা হারিয়ে যাবে বলে পাঞ্জাবিটা ধুতে ইচ্ছে করে না। রুমের এক কোনায় বাবার ভাঁজ করা লুঙ্গিটা একাকীত্বের যন্ত্রণায় নিথর হয়ে আছে। একাকীত্বের যন্ত্রণা যে কত নির্মম তা এখন ভালোভাবে বুঝতে পারি। বাবার মাথার বালিশটা কেমন যেন দুমড়ে-মুচড়ে আছে। হয়তো হারানোর শোক তাকেও ক্ষত-বিক্ষত করে দিচ্ছে। রাতের গভীরে বাবাকে না-পাওয়া বালিশটা রাতের আঁধারে আমার মতোই কি কাঁদে ? ছোট্ট টেবিলের উপর বাবার মোটা চশমাটা অযত্নে থেকে থেকে ধুলোর সাথে বন্ধুত্ব করেছে। একবার চেয়েছি ওর শরীর থেকে ধুলো টা মুছে দেই। কিন্তু বাবার ছোঁয়ার ওপর নতুন করে ছোয়ার ইচ্ছে করেনি। উত্তর পাশে জানালাটা বাবা লাগিয়ে রেখে গিয়েছিলেন।

সেদিন প্রচণ্ড গরমে জানালা খুলতে গিয়েও ফিরে এসেছি। কেন যেন মনে হইছে জানালাটা বাবার স্মৃতি হারাতে চাইছে না। তাই কঠোর হাতে জানালার শেষ স্মৃতি মুছে দেওয়ার সাহস আমার হয়নি। হোক কষ্ট। বদ্ধ ঘরে কাঠফাটা গরমে আমার না একটু কষ্টই হোক। তবুও ওরা বাবার স্মৃতি ধরে রাখুক। বাবার স্মৃতি সাথে নিয়ে ওরা ওদের মত ভালো থাকুক। আমি নিজের সুখের জন্য ওদের স্মৃতি মুছে দিতে পারবো না। বাবার ভাঁজ করা লুঙ্গি পাঞ্জাবী বালিশ মোটা ফ্রেমের চশমা আর রুমালের সাথে বাবা বেঁচে থাকুক। আমি না হয় মাঝে মাঝে ওদের থেকেই খুঁজে নেব প্রিয় বাবাটা কে। আজ তোমায় খুব মনে পড়ছে বাবা। ভালো থেকো ওপারে। শুধু একটাই আফসোস রয়ে গেলো বাবা। “তোমাকে বলা হয়নি” কতটা ভালোবাসি তোমাকে। অতঃপর অনিরুদ্ধ এ শহরেই থেকে গেলো। বাবা মায়ের স্মৃতি ঘিরে কাটিয়ে দিলো সারাটা জীবন। (সমাপ্ত)

আপনার মতামত লিখুন :

ভারতের বিখ্যাত গজল শিল্পী পঙ্কজ উদাস এর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ

ভারতের বিখ্যাত গজল শিল্পী পঙ্কজ উদাস এর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ

কবিতা ‘তেলবাজি’

কবিতা ‘তেলবাজি’

কবিতা ‘যুদ্ধ মানে’

কবিতা ‘যুদ্ধ মানে’

রক্তে কেনা মাতৃভাষা

রক্তে কেনা মাতৃভাষা

কবিতা ‘হতে হলে’

কবিতা ‘হতে হলে’

কবিতা, ‘তাহলে কেমন হতো’

কবিতা, ‘তাহলে কেমন হতো’

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার: ApsNews24.Com (২০১২-২০২০)

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
০১৬২৫৪৬১৮৭৬

editor@apsnews24.com, info@apsnews24.com
Developed By Feroj