সব
facebook apsnews24.com
করোনায় এক ঝলক আশার আলো - APSNews24.Com

করোনায় এক ঝলক আশার আলো

করোনায় এক ঝলক আশার আলো

মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম

করোনা সংকটে আশা বাঁচিয়ে রাখা কঠিন। চ্যালেঞ্জ আছে অনেক পেশাতে এবং কর্মে। ডাক্তার ও পুলিশ পেশায় চাকুরীরতদের চ্যালেঞ্জটা একটু বেশি তা বোঝা যায়ই। কোভিড-১৯ মোকাবেলায় অনেক ডাক্তার ও পুলিশ শুধু কর্তব্য পালন করতে গিয়ে নিজের জীবন বিলিয়ে দিচ্ছে। বাংলাদেশ ও এর ব্যতিক্রম নই। এখানে ইতোমধ্যে পুলিশ বাহিনীর ৩ জন সদস্য ও করোনা যোদ্ধা মৃত্যুবরণ করেছে এবং সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের তালিকায় পুলিশের অবস্থান। তা স্বত্তেও পুলিশ কিন্তু তাদের দায়িত্ব পালনে থেমে নেই। পুলিশ সেবার মানসিকতা নিয়ে দুর্বার গতি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। যা সত্যিই হৃদয়গ্রাহী ও প্রশংসার দাবী রাখে। তাছাড়া পুলিশ ইতোমধ্যে কিভাবে জনগণের আশার জায়গায় পরিণত হয়েছে তা এই লেখার মধ্যে তুলে ধরবো।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হিসাবে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রম, আইন শৃঙ্খলা রক্ষা ও ব্যবস্থা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং আরও অনেক জাতীয় সঙ্কটে বাংলাদেশ পুলিশের অসাধারণ এবং অত্যন্ত প্রশংসনীয় অবদান রয়েছে। আমাদের জনসংখ্যার তুলনায় পুলিশের সংখ্যা কম যদিও সরকার পুলিশের সংখ্যা বাড়াতে চাইছে। এটা সত্য যে আর্থ সামাজিক অবস্থান এবং আধুনিক অস্ত্র, সরঞ্জাম ইত্যাদির সীমাবদ্ধতা থাকা স্বত্তেও বাংলাদেশ পুলিশ যা করে চলেছে তা যথেষ্ট। কিছু লোকের যুক্তি হতে পারে যে দুর্নীতি এবং পক্ষপাতমূলক দৃষ্টিভঙ্গি, রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি বাংলাদেশ পুলিশকে বিতর্কিত করে তুলেছে। তবে পুলিশের কিছু দুর্নীতিগ্রস্থ সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সমূহের তদারকি ও যথাযথ বিভাগীয় পদক্ষেপ নেওয়ায় বিশ্বাস করি পুলিশ প্রশাসন এখন আগের চেয়ে অনেক ভালো। এখনকার এই শৃঙ্খলাবদ্ধ শক্তি সামনে সবসময় অটুট থাকবে বলে বিশ্বাস করি।

এতদ্ব্যতীত, এটাও স্বীকার দ্বিধা নেই, বাংলাদেশের পুলিশ কেউই রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তির আদেশ ও হুমকি না মেনে চলতে পারে না। এবং কেউ তা পারলেও সেইসব পুলিশের অবৈধ উপার্জন ও দুর্নীতির করার পথ সংকুচিত হয়ে যায়। এখানে উল্লেখ্য যে বিভিন্ন মিডিয়া এবং নিউজ পেপারে এমন অনেক উদাহরণ পেয়েছি যে, রাজনৈতিক নেতাদের সাথে তাল না মিলাতে পেরে অনেক সৎ পুলিশ অফিসার/ কনস্টেবলকে শাস্তি ভোগ করতে হয়েছে এবং চাকুরিতে নানা ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। এটা ঠিক যে রাজনীতিবিদরা যখন অপির্ত দায়িত্ব পালনে বাঁধা প্রদান/ইন্টারঅপ্ট করেন তখন পেশাদার মনোভাব নিয়ে দায়িত্ব পালন করা অনেক কঠিন হয়ে যায় ব। হাসপাতালের অসুস্থ রোগী থেকে মৃত লাশের পাশে, কিংবা করোনায় আক্রান্ত মৃত লাশের সৎকারে। কৃষকের ধান কাটায়। আবার মাঠে-ময়দানে, পাড়া-মহল্লায়, হাটবাজার—সবখানে পুলিশ সদস্যরা। করোনার আতঙ্কে অজ্ঞাত লাশের পাশে যখন কেউ নেই, তখন পুলিশকে ওই লাশের পাশে দাঁড়াতে হয়। লাশের দাফনের সব ব্যবস্থা করতে হয়।

পার্থক্যটা এখানে, আমরা করোনা মোকাবিলায় ঘরে আর তারা বাইরে। আমরা প্রিয়জনের সান্নিধ্যে আর তারা জীবনের ঝুঁকিতে। তারা দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আক্রান্ত হচ্ছে। আর আমরা অসচেতনতায় আক্রান্ত হচ্ছি। ইতিমধ্যে করোনা মোকাবিলায় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পুলিশের তিন সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। সূত্রঃ প্রথম আলো নাগরিক সংবাদ।

যাই হোক, আমরা এই জাতীয় যুক্তি ও বিতর্ক তৈরি করবে এমন চিন্তা পরিহার করে দেখি করোনা কালে বাংলাদেশে পুলিশ কি ধরণের ভূমিকা পালন করছে এবং পুলিশ আমাদের জন্য কী করছে তা দেখে নেওয়া যাক। আমিসহ বাংলাদেশের প্রায় সকল নাগরিক করোনার মহামারীতে বাংলাদেশ পুলিশের সেবার ও পরিষেবার মান দেখে খুব গর্বিত। বাংলাদেশ পুলিশ ভাল করছে এবং দায়িত্ব নিয়ে করোনা সংকটে কাজ করছে। সেজন্য জাতি পুলিশকে চিরকাল স্মরণ করবে। পুলিশ দেশবাসীর প্রতিটি হৃদয় জয় করেছেন। দেশের সর্বত্র লোকেরা পুলিশকে সাধুবাদ জানাচ্ছে।

প্রশংসা জোর করে আসে না। সন্তুষ্টি থেকে মনের গহীনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আসে। সাধারণত মানুষ বিভিন্ন কারণে আমাদের দেশে পুলিশের দিকে কলঙ্ক ছুঁড়ে মারত এবং এখনও মারে। তবে বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি ওইসব ধারণা আমূল পাল্টে দিয়েছে। জনগণ পুলিশকে পছন্দ করেছে। কীভাবে এবং কেন দেশবাসীর কাছে পুলিশ খুব প্রিয় হয়ে উঠল প্রশ্ন আসতে পারে। কারণগুলি অনেকগুলিই প্রকাশিত হতে পারে বা হয়েছেও। আমরা জানি যে বিশ্বজুড়ে করোনার মহামারীতে সবকিছু অচল ও স্থিতিশীল হয়েছে। আমরা বাংলাদেশীরাও এর বাইরে নই। সরকারের আদেশে করোনার ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিহত করার জন্য পুরো দেশটি লকডাউন হয়ে পড়েছে। আসলে, লোকেরা ঘরে ফিরছিল না এবং তাদের মধ্যে কেউ কেউ এখানে এবং সেখানে ঘুরে দেখার চেষ্টা করে যা ভাইরাসের সংক্রমণের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে।

তবে দেশব্যাপী লকডাউনে পুলিশ অত্যন্ত বিচক্ষণতা ও সেবার মন নিয়ে তাদের দায়িত্ব পালন করছে এবং দেশবাসীর সেবাদানে ব্রত থেকে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য লাশ হাসপাতাল থেকে কবরস্থানে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে পুলিশ নিয়োজিত রয়েছে। দেশে কোথাও পুলিশের পরিষেবাতে অসন্তুষ্টির কোনও খবর পাওয়া যায়নি। পুলিশ কী করে না? পুলিশ লোকজনদের পরীক্ষা করতে এবং জরুরি অবস্থা ব্যতীত তাদের ঘরে ফিরতে রাস্তায় রয়েছে।

পুলিশকে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। তারা করোনা প্রবণ দেশগুলি থেকে ফেরত ও পালিয়ে আসা লোকদের খুঁজে বের করার জন্যও কাজ করছে। পুলিশ খাবার ও প্রয়োজনীয় পণ্য / ওষুধ নিয়ে ঘরে ঘরে পৌঁছে যাচ্ছে। তারা তাদের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে দুস্থ লোকদের জন্য অনুদান দিচ্ছেন।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মানুষ করোনার রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সাহস করে না; তবে পুলিশ তত্ক্ষণাত্ সেখানে ছুটে আসে এবং তাদের প্রচেষ্টায় রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে যায়। শুধু তাই নয়, লাশগুলি যখন হাসপাতালের বিছানায় ফেলে রাখা হয় এবং কেউ বা আত্মীয়রা ওইসব মরদেহ কবর দেওয়ার জন্য এগিয়ে আসে না তখন পুলিশকেও এ জাতীয় তৎপরতা করতে দেখা গেছে।

করোনা মহামারীতে পুলিশ কোথায় অনুপস্থিত? কোথাও না। সব ক্ষেত্রে বিরাজমান। সর্বত্র তারা দেশবাসীর সেবায় সকল ধরণের দায়িত্ব পালনে সচেতন। বর্তমানে পুলিশ জনগণের জন্য যেভাবে কাজ করছে তা কেবল তাদের কাজের জন্য নয়, এই দেশের মানুষের প্রতি সামাজিক দায়বদ্ধতার একটি অংশ হিসেবে তা সম্পাদন করছে। ব্যক্তিগতভাবে বলবো পুলিশ তাদের কাজ ও আন্তরিকতার মাধ্যমে জনগণের ভালবাসা এবং আস্থা অর্জন করে জনগণের সেবক  ও বন্ধুর ভূমিকায় সবসময় থাকতে পারে।

অতীতে যা কিছু ঘটেছে তা ভবিষ্যতেও ঘটবে এমনটি ভাবার প্রয়োজন নেই। শুধু বিশ্বাস করি পুলিশকে বছরের পর বছর এমন সততার সাথে ভাল কাজ করা অব্যাহত রাখতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে বাংলাদেশ পুলিশ ইতিমধ্যে প্রমাণ করেছে যে তাদের উপর যদি কোনও রাজনৈতিক চাপ ও হস্তক্ষেপ না ঘটে তবে তারা অত্যন্ত সততা ও নিষ্ঠার সাথে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারে। আরও আশা করি যে বাংলাদেশ পুলিশ দেশের এবং বিশ্বের প্রতিটি কর্ণার থেকে প্রশংসা কুড়াতে সক্ষম হবে।

প্রকৃতপক্ষে, লেখাটি সংক্ষিপ্ত এবং সুনির্দিষ্ট করতে বাংলাদেশ পুলিশের সকল অবদান উল্লেখ করা সম্ভবপার হবে না তবুও চেস্টা করবো। তাছাড়া পুলিশের জীবন একটি দায়িত্বের কাঠামোর মধ্যে সীমাবদ্ধ। আমরা জনগণ রাত্রে ঘুমাই। পুলিশ শহরগুলিতে কিবা গ্রামে সর্বত্র টহল দেয়। আমরা ঈদের নামাজে ঈদগাহে যাই তবে তারা এখনও আমাদের সুরক্ষার জন্য রাস্তা বা থানা বা অন্য কোনও জায়গায় দায়িত্ব পালন করে।

যখনই কোনও জরুরি বা জঘন্য অপরাধ ঘটে তখন পুলিশের বলার উপায় নেই যে ঘুমাচ্ছি বা বিশ্রাম নিচ্ছি বা তারা বলতে পারে না যে সবেমাত্র কোনও পারিবারিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসেছি। পুলিশের ডিউটি ২৪ ঘন্টা। জরুরী পরিস্থিতিতে পুলিশ ডিউটির জন্য নির্দিষ্ট সময়সূচী নেই। তবে তারাও মানুষ। তাদের ভালবাসা ও স্নেহও রয়েছে। তা সত্ত্বেও, পুলিশ তাদের পারিবারিক জীবনের সময়কেও ত্যাগ করে। দুঃখজনক বিষয় হ’ল ট্র্যাফিক পুলিশ এমনকি পরিবারের সাথে রমজানে তাদের পরিবারের সাথে ইফতার করতে পারে না। এরকম, পুলিশের পেশায় তাদের নিবেদনের কয়েক হাজার উদাহরণ প্রকাশিত হতে পারে। সর্বোপরি, পুলিশকে আমরা সেরা শৃঙ্খলাবদ্ধ বাহিনী হিসাবে দেখতে ও দেখাতে চাই। পাশাপাশি, আমাদের নাগরিকদেরও দায়িত্ব রয়েছে যে তারা পুলিশের ভাল এবং সৎ কাজকে সামনে আনার জন্য এগিয়ে আসবে যাতে অন্যরাও এগুলি করতে অনুপ্রাণিত হতে পারে।

বাংলাদেশ পুলিশ আরো সংস্কারের মাধ্যমে পেশাদার বাহিনী হিসাবে সারা বিশ্বেও খ্যাতি অর্জন করবে। বাংলাদেশে ও বিদেশে দেশপ্রেমিক বাহিনী হিসাবে পরিগণিত হোক এই বাংলাদেশ পুলিশ। আশাবাদী হই পুলিশ বাহিনী আমাদের দেশপ্রেমিক বাহিনী হয়ে থাকবে যার জন্য দেশে ও বিদেশে খ্যাতি অর্জন করবে।

সকলের উচিত পুলিশকে ঘৃণার চোখ দিয়ে নয়, ভালোবাসা আর শ্রদ্ধার চোখ দিয়ে তাকানো। যাতে সবাই মিলে সমাজ ও দেশ বদলে দিতে পারি। আসুন পুলিশকে শ্রদ্ধা করি, ভালোবাসি। তাদেরও বাবা-মা, স্ত্রী এবং পরিবার আছে। সন্তান আছে। পৃথিবীর বুকে মর্যাদার সঙ্গে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর স্বপ্ন ও সাধ আছে। সেটাকে বোঝার উপলব্ধি থাকতে হবে।

পরিশেষে, বাংলাদেশ পুলিশকে বলবো খুব ভালো করেছ এবং করছো। দেশ ও দেশবাসীর উন্নতির জন্য সবসময় পুলিশের এইরুপ মহৎ ও প্রশংসনীয় কাজ অব্যাহত থাকবে যাতে সেইসব ভালো কাজ বাংলাদেশের জনগণের হৃদয়ে চিরকাল স্থান করে নিতে পারে ।

লেখকঃ মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম, কলামিস্ট ও লেখক। ইমেইল-bdjdj1984du@gmail.com

আপনার মতামত লিখুন :

শ্রমিকের অধিকার ও নিরাপত্তা বিধানে আইন ও বাস্তবতা

শ্রমিকের অধিকার ও নিরাপত্তা বিধানে আইন ও বাস্তবতা

আইন ও প্রচারণা স্বত্তেও কেন সড়কে দুর্ঘটনা ও মৃত্যু কমছে না?

আইন ও প্রচারণা স্বত্তেও কেন সড়কে দুর্ঘটনা ও মৃত্যু কমছে না?

মরু অঞ্চলে বৃষ্টি ও বন্যা, প্রকৃতির প্রতিশোধ নাকি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব

মরু অঞ্চলে বৃষ্টি ও বন্যা, প্রকৃতির প্রতিশোধ নাকি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব

স্বাধীনতা দিবসের ভাবনাগুলো

স্বাধীনতা দিবসের ভাবনাগুলো

১৭ মার্চ স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য একটা স্মরণীয় দিন

১৭ মার্চ স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য একটা স্মরণীয় দিন

সর্বনাশা পরকীয়া, কারণ ও প্রতিকার

সর্বনাশা পরকীয়া, কারণ ও প্রতিকার

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার: ApsNews24.Com (২০১২-২০২০)

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
০১৬২৫৪৬১৮৭৬

editor@apsnews24.com, info@apsnews24.com
Developed By Feroj