মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম
সারা বিশ্ব যেখানে করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় তটস্থ সেখানে নতুন করে এই ভাইরাসটি আস্থা সংকট তৈরিতে সারা পৃথিবীতে শীর্ষ স্থান দখল করেছে। বিষয়টি নিয়ে কি চিন্তিত হয়ে গেলেন। না চিন্তার কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। তবে আস্থা ধরে রাখতে হবে শেষ অবধি। যতদিন এই দেহে প্রাণ আছে। কিভাবে আস্থা বিনষ্টকারী ভাইরাস হলো পাঠক নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছে করছে। আমি সেই কথাই বলব যে কিভাবে মানুষে মানুষে, পিতা-পুত্রের মধ্যে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে, এক দেশ আরেক দেশের মধ্যে, এক রাজা আরেক রাজার মধ্যে আস্থা বিনস্টকারী এক নম্বর স্থানটি করোনা ভাইরাস দখল করেছে। বিষয়টি একদিকে আতঙ্কের তেমনি অপরদিকে শিহরণ জাগানোর মতো ব্যাপার। আমি ভয় সৃস্টি করতে এই লেখা লিখছি না। সতর্ হতে হবে সচেতনতা বাড়াতে হবে। সামাজিক দূরত্ব থিওরি মানতে হবে। বেশি বেশি করে হাত ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে। মানুষকে ভালবাসতে হবে যেটা এই বিশ্বে এখন ভালোবাসা ও আস্থা সংকটে রুপ নিয়েছে। সন্তান তার মাকে বন জঙ্গলে ফেলে রেখে আসছে। করোনা শুনে স্ত্রী ছেলে-মেয়ে নিয়ে ৩০/৪০ বছরের সংসার ভেঙে চলে যাচ্ছে। একে অপরের মধ্যে ডিভোর্স নিচ্ছে। আরো কত কি?
করোনা ভাইরাস চীনা ভাইরাস বলে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চীন রাস্ট্রকে তুলোধুনা করছে। রাজনৈতিক, কূটনীতিক ও অর্নৈতিকসহ সব সম্পর্ ছিন্ন করার হুশিয়ারি দিচ্ছে বিবাদমান রাস্ট্র দুটি। আর এই আস্থা ও বিশ্বাসে চির ধরাতে সক্ষম হয়েছে এই ভয়াল করোনা ভাইরাস। চীন ও যুক্তরাস্ট্র দুটি বৃহৎ সমৃদ্ধ ও প্রাচুর্ ভরপুর অবস্থায় করোনার কাছে অসহায় আত্নসমর্ন করছে। যেখানে মানুষ একটা ধর্ কে সহ্য করত না সেই বিশ্বাস ও আদর্ আজ তারাই লালন করছে। একদিকে আস্থা তৈরি করেছে আবার অন্যদিকে আস্থা সংকট বহুগুণে বাড়িয়েছ।।
পিতা করোনা ভাইরাসে মারা গেলে পুত্র বা কন্যা কেউ কাছে যেতে পারছে না। স্বামী স্ত্রীর নিকট যেতে পারছে না, আত্নীয়স্বজন কেউ আজ কাজে লাগছে না। জানাজায় যেতেও পারছে না। আর এই পরিস্থিতি কে করছে তা বুঝতে আর বাকী নেই। করোনা ভাইরাস সত্যিই বড় নিদর্য় এবং ইতিহাসে আস্থা সংকটকারী ভাইরাস হিসেবে ইতোমধ্যে জায়গা করে নিয়েছে সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই।
সামাজিক দূরত্ব থিওরি বলতে মানুষের মধ্যে ৩ ফুট জায়গা খালি রাখা যদি এটা বুঝে থাকেন তাহলে মোটা দাগে ভুল করবেন। এই সামাজিক দূরত্ব আজ বিশাল বিচ্ছিন্নতা এনে দিয়েছে তা বুছতে আর বাকী নাই। সামাজিক দূরত্ব আদালতে বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করেছে। ব্যাংকিং আওয়ার সংক্ষেপ করেছে, মসজিদে নামাজে দাঁড়ানোর হাদিসকে ভুলুন্ঠিত করেছে, মানুষের মধ্যে ভালবাসার দূরত্ব তৈরি করে দিয়েছে, সহানুভূতি, সামাজিক মিথস্ক্রিয়া সবই আজ যাদুঘরে নিয়ে যাচ্ছে ইত্যাদি। আশংকা হয় যদি করোনা ভাইরাস আরও কিছুদিন বা ২০২২ সালে অবধি মহামারি রুপে বিরাজমান থাকে তাহলে সামজিক দূরত্ব মতবাদ আন্তর্তিক দূরত্ব হবে তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।
করোনা ভাইরাস কত বড় নিষ্ঠুর ভাইরাস তা ডাক্তার-রোগীর সম্পর্ দেখলে সহজেই অনুমেয়। স্বাভাবিক অবস্থায় ডাক্তারদের বিরুদ্ধে বলতে শোনা যায় তারা রোগীদের কাছ থেকে বেশি ফি আদায় করে। করোনা কালে সাধারণ রোগীগণ ঠিকঠাক চিকিৎসা পাচ্ছে না এই ভয়ে যে, না জানি ডাক্তার সাহেব করোনায় আক্রান্ত হয়ে না যান। কোন ডাক্তার লক্ষ টাকার বিনিময়েও জেনেশুনে করোনা রোগী দেখতে চাইবেন না। তবে সেই সব ডাক্তারদের স্যালুট জানায় যারা নিজেদের জীবন বাজী ধরে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। একথা নির্ধায় বলা যায় করোনা ভাইরাস ডাক্তার ও রোগরি মধ্যে আস্থা পুরোপুরি ভেঙ্গে দিচ্ছে। যা কোন শুভ লক্ষন নয়। করোনার কারণে সাধারণ রোগীরা চরম ভোগান্তির মধ্যে দিনাতিপাত করছে তাতে কেউ দ্বিমত করবেন না।
ছাত্র-শিক্ষকদের মাঝেও করোনা ভাইরাস দারুণভাবে প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়েছে বলা যায়। দেখুন এখন শিক্ষা ব্যবস্থা থমকে গেছে। এক জায়গায় গ্যাদারিং ঠেকাতে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যারয় বন্ধ রয়েছে। শিক্ষকগণের উপর ছাত্রদের ও ছাত্র-ছাত্রীর উপরে শিক্ষকদের পুরোপুরি অবিশ্বাসী কে করলো তা জানার জন্য করোনা ভাইরাসকে কিছু জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন হবে না। করোনাকালে শিক্ষাব্যবস্থা কেমন হবে তা অনলাইনের মাধ্যমে ক্লাস নেয়া ছাড়া অন্য কোন উত্তম পন্থা এখনও শিক্ষাবিদরা গবেষণা করে বের করতে পারেনি। পারবে বলেও মনে হচ্ছে না। করোনার থাবা শিক্ষাব্যবস্থাকে ইতোমধ্যে অচল করে দিয়েছে। শুধু বাংলাদেশের জন্য এই আস্থা সংকট তৈরি হয়নি সারা বিশ্ববাসীর জন্য মূর্মান আতঙ্ক এই ভয়াল করোনা ভাইরাস।
শ্রমিক-মালিক, রোগী-ডাক্তার, রাজা-প্রজা, পিতা-পুত্র, স্বামী-স্ত্রী এবং শিক্ষক-ছাত্রের যে বিশ্বস্থতার রিলেশন বিদ্যমান তা পুরোপুরি ভেঙ্গে দিতে ওস্তাদ দানব রুপী জীবানু করোনা ভাইরাস। আমরা কোথাও আজ নিরাপদে নেই। মসজিদ, মন্দির, গির্জা সবখানে আতঙ্ক বিরাজমান। মানুষের স্বাভাবিক আচরণে দারুণভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে এই করোনা। বর্মানে ওে অতীতে যত ভাইরাস এসেছিল তার মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর এই ভাইরাস।
পরিবহণ খাতে, কৃষিতে, ব্যবসা বাণিজ্যে কোথায় প্রভাব ফেলেনি করোনা ভাইরাস বলতে পারেন। নিশ্চয়ই বলবেন করোনা ভাইরাস পৃথিবীর নকল স্থানে ও ক্ষেত্রে দারুণভাবে প্রলয় সৃস্টিতে পারদর্ ও সক্ষম একটি জীবানু অস্ত্র। যা দানব আকারে আবির্ূত হয়েছে। মানুষকে ঘরবন্দিতে করোনা ভাইরাসের জুড়ি নেই। কেউ ঘর থেকে বের হওয়া রুখতে না পারলেও করোনা ভাইরাস ঠিকই পেরেছে। করোনা ভাইরাস থেকে কিছু বিষয়ে শিক্ষা নেওয়ারও আছে। ধরুন আমাকে আপনাকে পরিস্কার ও পরিচ্ছন্ন থাকতে, হাত ধুতে ও মাস্ক পরা শিখিয়েছে বটে তবে তা ক্ষতির তুলনায় নিতান্তই যৎসামান্য। যার ক্ষতিকর প্রভাব বেশি সে দুএকটা ভালো দীক্ষা দিলেও তা মানুষ মনে রাখে না।
আজকে আমার আপনার পরিবার, সমাজ, রাস্ট্র ও আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙ্গে দিয়েছে এই করোনা ভাইরাস। আপন সকল সম্পর্ বিচ্ছিন্ন করেছে, মানুষের মধ্যে আস্থার জায়গাগুলো বিনস্ট করেছে। পারিবারিক বন্ধন, সামাজিক বন্ধন, রাস্ট্রীয় ভ্রাতৃত্ব, বৈদেশিক, বাণিজ্যিক, রাজনৈতিক, অর্নৈতিক এবং কুটনৈতিক সব বন্ধুত্ব ও বন্ধন বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। যে আস্থার সংকট এই করোনাকালে ইতোমধ্যে ঘটেছে তা সহসা পুনরুদ্ধার বিশ্বব্যাপী হবে কিনা তা গবেষণার দাবী রাখে। তবে করোনা ভাইরাস এক নম্বর ভাইরাস হিসেবে কতদিন টিকে থাকে সেটি ইতিহাস বিবেচনা করবে।
লেখকঃ মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম, কলামিস্ট ও লেখক। ইমেইলঃbdjdj1984du@gmail.com