জাকারিয়া চৌধুরী। পেশায় রাজধানীর একটি রেস্তোরাঁর খাবার পরিবেশন কর্মী। তবে জাকারিয়ার ফেসবুক আইডি দেখলে অনেকেই ভুল বুঝবেন। বাস্তবে একজন হোটেলকর্মী হলেও ফেসবুকে নিজেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পরিচয় ব্যবহার করতেন তিনি। এমন কি তিনি অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাইবার ফরেনসিক এক্সপার্ট হিসেবে নিজের পরিচয় দিতেন।
আদতে স্কুলের গন্ডি না পেরোনো জাকারিয়া পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয়ে ফেসবুকে বিভিন্ন নারীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতেন। নারীদের সঙ্গে প্রেমের সর্ম্পক গড়ে তুলে দেখা সাক্ষাৎও করেছেন।
সিআইডির মনিটরিং টিমের সদস্যরা দীর্ঘদিন অনুসরণ করার পর বৃহস্পতিবার জাকারিয়াকে রাজধানীর রামপুরা থানা এলাকার একটি রেস্তোরাঁ থেকে গ্রেপ্তার করেন।
এ বিষয়ে সিআইডির সাইবার ক্রাইম শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, বর্তমান সময়ে অনলাইনে অনেকেই ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে প্রতারণা করছে। কেউ পুলিশ, কেউ র্যা ব, ম্যাজিস্ট্রেটসহ বিভিন্ন পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করছে। জাকারিয়ার বিষয়টি সাইবার ক্রাইমের মনিটরিং সদস্যদের নজরে আসার পর দীর্ঘ দিন তাকে পর্যবেক্ষণ করা হয়। এরপর প্রতারণার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে তাকে রাজধানীর রামপুরা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সিআইডির এই কর্মকর্তা আরো বলেন, গ্রেপ্তারের পর জাকারিয়ার আসল তথ্য অনেকটা চমকে ওঠার মতো। ফেসবুকে নিজেকে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয় দেন। কিন্তু বাস্তবে তিনি একটি রেস্তোরাঁর কর্মী। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এইচএসসি ফেল বলে জানান। তবে সেটি নিয়েও রয়েছে সন্দেহ। চুলের কাট ড্রেসআপে সুদর্শন ও স্মার্ট সেজে থাকেন এই যুবক। ফেসবুকে দেয়া তথ্যানুযায়ী চিটাগংয়ের প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে ডিগ্রি নেয়া জাকারিয়া ক্রিমিনাল জাস্টিস বিষয়ে ভার্জিনিয়া ইউনিভার্সিটিতে পড়ালেখা করেছেন। কাজ করছেন সিআইডির সাইবার ফরেনসিক এক্সপার্ট হিসেবে।
তবে শেষ রক্ষা হয়নি। পটুয়াখালি জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলার সাইবার এক্সপার্ট পরিচয় দেয়া জাকারিয়া ধরা পড়লো সাইবার ক্রাইম বিভাগেরই হাতে।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আরো বলেন, ফেসবুকে নিজেকে পুলিশ অফিসার পরিচয় দিলেও বাস্তবে এড়িয়ে চলতেন পুলিশদের। ফেসবুকে সম্পর্ক গড়ে তুলতেন আসল পুলিশ সদস্যদের স্বজনদের সঙ্গে। ফেসবুকে তাদের নানা পোস্টে তার সরব উপস্থিতিও দেখা গেছে। ফেসবুকে তার বন্ধুর সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার। এএসপি পরিচয়ে ঈদের দিনও রাজধানীল হাতিরঝিলে অনার্স পড়ুয়া এক মেয়ের সঙ্গে দেখা করেছেন তিনি।
গ্রেপ্তার জাকারিয়ার ফেসবুকে বিভিন্ন মেয়েদের সঙ্গে পুলিশ পরিচয়ে সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রমাণ মিলেছে উল্লেখ করে এই কর্মকর্তা বলেন, নিজেকে উপস্থাপনের বিশেষ চেষ্টা ছিলো তার। তবে ফেসবুকে পুলিশ পরিচয়ে প্রতারণা করার কোনো প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি। কারণ তিনি এই ধরনের যোগাযোগ শেষে কথপোকথনের মেসেজ ডিলেট করে দিতেন। তাই তার মাধ্যমে কেউ প্রতারিত হয়েছে কি না জানতে আমাদের পেইজে একটি পোস্ট দিয়েছি। যদি কেউ প্রতারিত হয়ে থাকে তাহলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার অনুরোধ করছি।
সাইবার এক্সপার্ট পরিচয় দেয়া জাকারিয়ার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি একদিনের রিমান্ডে।তার সঙ্গে জড়িত আরো কয়েক জনের নাম পরিচয় গেছে। তাদের বিরুদ্ধে খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে বলে জানান এই বিশেষ পুলিশ সুপার।