আবুল কাশেম রুমন,সিলেট: এদিকে পরিবেশ বাদীদের দাবী পরিবেশ বাঁচাও। পর্যটন শিল্পকে রক্ষা কর,সৌন্দর্যের ক্ষেত্রে। অন্য দিকে পেট চাও, জীবন রক্ষা কর শ্রমিকদের দাবী। কিন্তু প্রশাসন রয়েছে পরিবেশ রক্ষা ও সৌন্দর্যের দৃষ্টিতে অনড় অবস্থানে। জাফলংয়ের সনাতন পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলনের আদালতের অনুমিত পেয়ে অত্যাধুনিক কিছু যন্ত্রাংশের ব্যবহার করছে অসাধু কিছু পাথর খেকো চক্র। এসব অবৈধ যন্ত্রাংশের ব্যবহার ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে প্রায় প্রতিনিয়ত কোটি টাকার দামের যন্ত্রাংশ ধ্বংস করা হচ্ছে। নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে পরিবেশ অধিদপ্তর, র্যাপিড় অ্যাকশন ব্যাটলিয়ন-৯, বর্ডার গার্ড (বিজিবি) ও স্থানীয় প্রশাসন।
এসব প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়েও অসাধু পাথর খেকো নিয়মিত আমদানী করছে পাথর উত্তোলনের অত্যাধুনিক যন্ত্রাংশ যা চীন সহ আশ পাশের দেশ থেকে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু অনেক পাথর ব্যবসায়ী জীবনের ঝুকি নিয়ে, যেনে-শোনে এসব মেশিন জাফলংয়ে বসিয়ে থাকেন। এক দিকে নেই, সেই মেশিন ব্যবহারে জন্য প্রশাসনের বৈধতা, অন্য দিকে নেই,আগের তুলনায় জাফলংয়ে সে পরিমান পাথর। পাথর উত্তোলনের মেশিন ব্যবহারের আগেই অনেক ব্যবসায়ীর মেশিন, প্রশাসন ধ্বংস করে দিচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পাথর খেকোর একজন ব্যবসায়ী জানান, আমরা যেনে শুনেও প্রশাসনের আইন অম্যান্য করে, পাথর উত্তোলনের অত্যাধুনিক মেশিন বসাচ্ছি এতে আমরা ভ্রাম্যমান আদালতের কারণে অনেকে পথে বসে গেছি,এখন দেয়ালে আমাদে পিট লেগে গেছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট সূত্রে জানায়, ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে প্রায়ই ৭০ লাখ মুল্যের ১৭ টি বার্জ,১৫ লাখ টাকার একটি পে- লোডার, ১২ লাখ টাকার মূল্যের ক্রাশার মেশিনসহ বেশ কিছু ধরেণর সরঞ্জাম ধ্বংস করা হয়। পাশাপশি করা হয়, প্রায়ই ৭০ হাজার ৫০ হাজার টাকা সহ নানা মেয়াদী শাস্তি ও জারিমানা করে থাকে ভ্রাম্যমাণ আদালত। উচ্চ আদালত ও খনিজ সম্পদক ব্যুরোর নিষেধাজ্ঞা থাকার সত্ত্বে এসব যন্ত্রপাতির ব্যবহার করে থাকে অসাধু পাথর ব্যবসায়ী জাফলং, বিছনাকান্দি, ভোলাগঞ্জ পাথর স্পটে। জানা যায়, পরিবেশ ধ্বংসের মধ্যে সব চেয়ে বেশি ক্ষতিকারক হলো যন্ত্রাংশ বোমা মেশিন। গত কয়েক মাসে সিলেটের বিভিন্ন স্পট থেকে ৭০/ ৮০ বোমা মেশিন ধ্বংস করে প্রশাসন।
সূত্রে উল্লেখ্য যে, ২০১৪ সালের বেলার নামের একটি সমিতির আদালতে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সিলেটের সব পাথর কোয়ারি থেকে যান্ত্রিক উপায়ে পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ করে উচ্চ আদালত। এরপর থেকে প্রশাসন আইনি প্রদক্ষেপে অনড় হয়ে বেসে যান্ত্রিক মেশিনগুলোর বিরুদ্ধে। কিন্তু অবৈধ পাথর খেকো চক্র প্রশাসনের চোখে ফাঁকি দিয়ে কৌশলী হয়ে উঠে। অবৈধ এসব যন্ত্রগুলো বস্তায় মুড়িয়ে মাটির নিচে গর্তচাপা দিয়ে রেখে দেয়। এরকম গর্তচাপা দেওয়া প্রায় ৩০/৩৫টি মেশিনের সন্ধান পায় প্রশান গোয়েন্দার মাধ্যমে পরে তা ভ্রাম্যমান আদালত ধ্বংস করে।
সিলেটের সৌন্দর্য বৃদ্ধির পর্যটন কেন্দ্র জাফলং, বিছনাকান্দি, কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ ও কানাইঘাটের লোভাছড়া এলাকায় পাথর উত্তোলন করছে প্রায় বিগত কয়েক দশক ধরে। এসব এলাকায় পাথর উত্তোলন করতে গিয়ে গত ৩/৪ বছরে প্রায় অন্তত ৭৬ জন পাথর শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে যা গত বছরের ২০২০ সালে জানুয়ারিতে এক প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)।
সম্প্রতি উচ্চ আদালতের নির্দেশনা নিয়ে সনাতন পদ্ধতিতে আবারও সিলেটের জাফলং, বিছনাকান্দি, কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ ও কানাইঘাটের লোভাছড়া এলাকায় পাথর উত্তোলনের নির্দেশানা নিয়ে আসে স্থানীয় পাথর ব্যবসায়ীরা। কিন্তু আদালতের নিদের্শনা আমান্য করে পাথর খেকো আবার আশ্রয় নিচ্ছে বোমা মেশিন ও অত্যাধুনিক যান্ত্রাংশের।