সাকিব আল হাসানের বক্তব্যে আলোচনার ঝড় বইতে পারে, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) দুই পরিচালক আকরাম খান ও নাঈমুর রহমান অনুজ ক্রিকেটারের আচরণে মনে আঘাত পেতে পারেন; কিন্তু বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানের চিন্তায় এসব একেবারেই নেই। তাঁর কথা, ‘সাকিব কী বলল না বলল তাতে কিছু যায় আসে না।’
শুধু তাই নয়, আইপিএলে খেলার অনাপত্তিপত্র চেয়ে ১৭ ফেব্রুয়ারি সাকিব যে চিঠিটি বিসিবিকে দিয়েছিলেন, সেটিও পড়ে দেখেননি নাজমুল হাসান। কাল মুঠোফোনে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথোপকথনে বোর্ড সভাপতি নিজেই বলেছেন, ‘ও (সাকিব) আমাকে বলেছিল, “আমি শ্রীলঙ্কা সিরিজে খেলতে চাই না।” এখন বাংলাদেশ যে শ্রীলঙ্কায় যাবে ওই সিরিজ, নাকি শ্রীলঙ্কা দল বাংলাদেশে আসবে ওই সিরিজ, এটা আমার মনে নেই। সত্যি বলতে কি আমি ওর চিঠিটি দেখিওনি। সাকিব চিঠি দেওয়ার পর আকরাম আমাকে জানালে আমি বলেছি এনওসি (অনাপত্তিপত্র) দিয়ে দাও।’
দুদিন আগে এক ফেসবুক লাইভে সাকিব অভিযোগ করেন, বিসিবি তাঁর চিঠির ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছে। চিঠিতে টেস্ট খেলতে চান না, এমন কিছুই তিনি বলেননি। বিসিবির কাছে আইপিএলে খেলতে দেওয়ার আবেদন করলেও ৯ এপ্রিল থেকে ৩০ মে পর্যন্ত চলা টুর্নামেন্টের কোন অংশে খেলতে চান, সেটি উল্লেখ করেননি আবেদনপত্রে। বরং বিসিবিই অনাপত্তিপত্রে উল্লেখ করে দেয় সাকিবের ছুটি ১ এপ্রিল থেকে ১৮ মে পর্যন্ত, যে সময়ে ক্যান্ডিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুটি টেস্ট খেলার কথা বাংলাদেশ দলের।
বিসিবির সমালোচনা করতে গিয়ে সাকিব তোপ দাগিয়েছেন বোর্ডের দুই পরিচালক ও জাতীয় দলের সাবেক দুই অধিনায়ক আকরাম খান ও নাঈমুর রহমানের দিকে। চিঠি ঠিকমতো না পড়া ও ভুল ব্যাখ্যা দেওয়ার অভিযোগটা তাঁর আকরামের বিরুদ্ধেই ছিল।
তবে বিসিবি সভাপতি বলেছেন, সাকিব টেস্ট খেলতে চান না, কথাটা আকরাম নন, বলেছেন তিনিই। সেটির কারণও ব্যাখ্যা করেছেন নাজমুল হাসান, ‘কথাটা আমি বলেছি। কারণ, তিন-চার বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ থেকেও সে বিশ্রাম চেয়েছিল। বলেছিল, বয়স হয়ে যাচ্ছে। সে এত বেশি টেস্ট খেলতে ইচ্ছুক নয়।’
নাঈমুরের অধীনে থাকা বিসিবির হাই পারফরম্যান্স বিভাগেরও সমালোচনা করেন সাকিব। এই বিভাগের কাজ জাতীয় দলের জন্য নতুন প্রতিভাবান খেলোয়াড় তৈরি করা। সেখানে প্রকটভাবেই ব্যর্থতা দেখেন ওয়ানডের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার, যে কারণে এখনো বাংলাদেশের ক্রিকেটে সাকিব-তামিম-মুশফিকদের বিকল্প তৈরি হয়নি। এ ব্যাপারেও বিসিবি সভাপতির দ্বিমত আছে সাকিবের সঙ্গে, ‘হাই পারফরম্যান্সের রিপোর্ট আমি প্রতি সপ্তাহে নিই। আমার জানা আছে সেখানে কী হচ্ছে না হচ্ছে। আমাদের পাইপলাইনে যথেষ্ট খেলোয়াড় আছে। অন্তত ২১টা ছেলে খেলার জন্য স্ট্যান্ডবাই আছে।’
বিশ্বকাপের প্রস্তুতির জন্য সাকিবের আইপিএল খেলতে চাওয়ারও কোনো যুক্তি দেখছেন না নাজমুল হাসান, ‘বিশ্বকাপের আগে আমরা ১৪-১৫টা টি-টোয়েন্টি ম্যাচ রাখছি। সেখানেই প্রস্তুতি হয়ে যাওয়ার কথা। একটা আইপিএলে খেলে কী হবে?’
তাঁর মতে, আইপিএলের চেয়ে জাতীয় দলকেই সাকিবের অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু বিসিবিও তো পারত সাকিবকে আইপিএলে খেলার অনুমতি না দিয়ে শ্রীলঙ্কা সিরিজের জন্য হাতে রাখতে। কেউ ছুটি চাইলেই যে ছুটি দিতে হবে, এমন তো কোনো কথা নেই! এ ব্যাপারে সভাপতির ব্যাখ্যা, ‘কাউকে জোর করিয়ে খেলিয়ে লাভ নেই। যে খেলতে চায় না, তাকে না খেলানোই ভালো।’
তবে জাতীয় দলের খারাপ সময়ে সাকিবের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের এমন আচরণ মানতে পারছেন না নাজমুল হাসান, ‘সময়টা ঠিক হয়নি। আমি ওর জায়গায় থাকলে এ সময় দলকে পরামর্শ দিতাম। ও আমাদের সেরা একজন খেলোয়াড়, ওকে সবাই অনুসরণ করে।’
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বর্তমান বাস্তবতায় অনেক ক্রিকেটারই যে ভবিষ্যতে জাতীয় দলের হয়ে সব ম্যাচ খেলতে চাইবেন না, সেটি অবশ্য বোঝেন নাজমুল হাসান। তিনি বলেন, ‘এ রকম আরও ঘটবে। এক বছর আগেই বলেছিলাম, এখন থেকে অভিজ্ঞ চারজনের মধ্যে আমরা একসঙ্গে দুজনের বেশি পাব না। এগুলোতে আমাদের অভ্যস্ত হতে হবে। এটাই বাস্তবতা।’