মোঃ নুরুল হক
মানবজাতির প্রতি মহাগ্রন্থ আল কোরআনের প্রথম বাণী হলো- ‘ইক্বরা’ অর্থাৎ পড় বা পড়ুন। সূরা আলাকের প্রথম ৫টি আয়াত এ সময় একত্রে নাযিল হয়। তা হুবহু তুলে ধরা হলোঃ *সূরা আল-আলাক আয়াত ১ بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ ইক্বরা বিছমি রাব্বিকাল্লাযী খালাক্ব। অর্থঃ পড় (পাঠ কর) তোমার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। *সূরা আল-আলাক আয়াত ২ خَلَقَ الْإِنْسَانَ مِنْ عَلَقٍ খালাক্বাল ইনছা-না মিন ‘আলাক্ব। অর্থঃ সৃষ্টি করেছেন মানুষকে রক্তপিণ্ড হতে।
*সূরা আল-আলাক আয়াত ৩ اقْرَأْ وَرَبُّكَ الْأَكْرَمُ ইক্বরা’ ওয়া রাব্বুকাল আকরাম অর্থঃ পাঠ করঃ আর তোমার রব মহা মহিমান্বিত, *সূরা আল-আলাক আয়াত ৪ الَّذِي عَلَّمَ بِالْقَلَمِ অাল্লাযী ‘আল্লামা বিলকালাম। অর্থঃ যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। *সূরা আল-আলাক আয়াত ৫ عَلَّمَ الْإِنْسَانَ مَا لَمْ يَعْلَمْ ‘আল্লামাল ইনছা-না-মা-লাম ইয়া‘লাম। অর্থঃ তিনি শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না। এখানে “ইক্বরা” বা “পড়” এর মধ্য দিয়ে ইহকালে মানবজাতির করণীয় শুরু হয়ে গেছে। শব্দটি “ইনসান” ব্যবহার করা হয়েছে, যার অর্থ “মানুষ”। ২ ও ৫নং আয়াতে ২ বার ‘ইনসান’ শব্দটি এসেছে, তা মুমিন কিংবা মুসলিম বলা হয়নি। এতে করে বুঝা যায় এ নির্দেশ সমগ্র মানবজাতির প্রতি, শুধু মুসলমানের জন্য নয়। এখানে আদি জ্ঞান- রব (সৃষ্টিকর্তা), মানব সৃষ্টি, রবের শ্রেষ্ঠত্ব, জানা-অজানা বিষয়ে শিক্ষা তথা জ্ঞান ও শিক্ষার উপকরণ কলম ইত্যাদি বিষয়ে ধারণা দেয়া হয়েছে।
অর্থাৎ মানবজাতিকে মহান আল্লাহপাকই সৃষ্টি করেছেন, তাই স্রষ্টার পরিচয় “রব” হিসেবে; মানুষকে জমাট বাধাঁ রক্তপিণ্ড -Blood Clotting (আ’লাক) থেকে সৃষ্টি করেছেন “রব”; তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেই ছেড়ে দেননি, তাকে (মানুষকে) কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন; অজানা বিষয়ে জ্ঞান দান করেছেন এবং এ সবের মূল উদ্দেশ্য সৃষ্টিকর্তার (রবের) মাহাত্ম্য বা শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করা কিংবা তাঁর ইবাদত করার জন্য। আবার পৃথিবীতে আমাদের যাবতীয় কার্যকলাপ মহান আল্লাহপাক পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি সংরক্ষণের কথাও বলেছেন।
যেমন- সূরা ইয়াসিনে এ বিষয়ে বলা হয়েছেঃ *সূরা ইয়াসিন আয়াত ১২ إِنَّا نَحْنُ نُحْيِي الْمَوْتَىٰ وَنَكْتُبُ مَا قَدَّمُوا وَآثَارَهُمْ ۚ وَكُلَّ شَيْءٍ أَحْصَيْنَاهُ فِي إِمَامٍ مُبِينٍ ইন্না-নাহনুনুহয়িল মাওতা-ওয়া নাকতুবুমা-কাদ্দামূওয়া আ-ছা-রাহুম ওয়া কুল্লা শাইয়িন আহসাইনা-হু ফীইমা-মিম মুবীন। অর্থঃ আমিই মৃতকে করি জীবিত এবং লিখে রাখি যা তারা অগ্রে প্রেরণ করে এবং যা তারা পশ্চাতে রেখে যায়, আমি প্রত্যেক বিষয়কে স্পষ্ট কিতাবে সংরক্ষিত রেখেছি।
তাছাড়া পবিত্র কোরআনের অসংখ্য আয়াতে এ বিষয়ে বলা হয়েছে এবং সম্মানিত লেখক হিসেবে দু’ জন ফেরেশতা – কেরামন ও কাতেবিন এর কথাও কোরআনে স্পষ্টভাবে এসেছে। তাঁরা সার্বক্ষণিক নিরপেক্ষভাবে রাতদিন আমাদের আমলনামা (হিসাব) তৈরি করছেন। আর পরকালে হাশরের ময়দানে এ আমলনামা প্রকাশ করা হবে। তখন মহান আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে বলা হবেঃ *সূরা বনি ইসরাইল/আল ইসরা আয়াত ১৪ اقْرَأْ كِتَابَكَ كَفَىٰ بِنَفْسِكَ الْيَوْمَ عَلَيْكَ حَسِيبًا ইক্বরা’ কিতা-বাকা কাফা-বিনাফছিকাল ইয়াওমা ‘আলাইকা হাছীবা-। অর্থঃ (আমি বলব) পড় তোমার কিতাব (আমলনামা) ; আজ তোমার হিসাব নিকাশের জন্য তুমি নিজেই যথেষ্ট। তাই “ইক্বরা” দিয়ে ইহকালে আল কোরআনের সাথে আমাদের পরিচয় আর “ইক্বরা” দিয়ে পরকালে আমাদের আমলনামা বুঝিয়ে দেয়া হবে।
স্রষ্টা ও সৃষ্টিকে জানতে হলে পড়ার কোন বিকল্প নাই। তাই ইহকালে ও পরকালে মুক্তির পাথেয় হোক এই “ইক্বরা”। পড়ুন, পড়ুন আর পড়ুন। আমল করুন। “বাল্লিগু আন্নি ওয়ালাও আয়াহ্”- “আমার নিকট হতে একটি আয়াত হলেও অপরের কাছে পৌঁছে দাও” বিদায় হজ্বের ভাষণে রাসুল (সাঃ) এর অমীয় বাণী।
লেখকঃ মোঃ নুরুল হক, সহকারি জজ, গাইবান্ধা